সুর ও বাণী: সিছুয়ানের রাজধানী চেং তু'র গান
  2017-03-09 15:45:46  cri


প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি আনন্দী বেইজিং থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে চীনের সিছুয়ান প্রদেশের রাজধানী চেং তু'র সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো; শোনাবো এ শহরসম্পর্কিত কয়েকটি গান।

গায়ক চাও লেই

সম্প্রতি চীনের হুনান টেলিভিশন চ্যানেলে 'আমি গায়ক' শীর্ষক সংগীতানুষ্ঠানে চাও লেই 'চেং তু' শিরোনামে গান গেয়ে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এমনকি চীনের পিপলস ডেইলি পত্রিকার ব্লগেও তার প্রশংসা করা হয়। 'চেং তু' শহরটি নিয়েও নতুন করে আলোচনা হচ্ছে। আমরা প্রথমে চাও লেই'র কণ্ঠে 'চেং তু' গানটি শুনি।

বন্ধুরা, এতোক্ষণ আপনারা চাও লেই'র গাওয়া 'চেং তু' নামের গান শুনছিলেন। আগেই বলেছি চেং তু চীনের সিছুয়ান প্রদেশের রাজধানী। এ শহর দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও অর্থনীতির কেন্দ্র। এটি চীনের গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ প্রযুক্তির শিল্পকেন্দ্র এবং পণ্য স্থানান্তর কেন্দ্র।

গায়ক চাও লেই জানান, তিনি ২০০৭ সালে প্রথম চেং তু'তে যান। তখন তিনি বন্ধুদের সঙ্গে লাসা থেকে চেং তু পৌঁছান। প্রথম দেখায় চেং তু তার ভালো লাগে। এর পর তিনি গানের প্রয়োজনে বেশ কয়েকবার চেং তু গিয়েছেন। চেং তু'র অনেক স্থানীয় লোক তার বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। চেং তু'তে গেলেই স্থানীয় বন্ধুদের সঙ্গে তার আড্ডা জমে ওঠে। চেং তু'কে তিনি তার 'দ্বিতীয় জন্মস্থান' মনে করেন। তিনি বলেন, 'চেং তু গিয়ে ক্ষুদ্র বারে, বা ওয়েন শু মন্দিরে না-গেলে, মনেই হয় না যে চেং তু এসেছি। বেইজিংয়ের পর চেং তু আমার দ্বিতীয় বাড়ি।'

গায়িকা চাং লিয়াং ইং

একটি গানের জন্য একজন মানুষ অন্য মানুষকে ভালোবাসতে পারে; একটি গানের জন্য একজন মানুষ একটি শহরকে ভালোবাসতে পারে। বন্ধুরা, এখন শুনুন 'আমি এ শহরকে ভালোবাসি' গানটি। গেয়েছেন চাং লিয়াং ইং। ২০০৮ সালে সিছুয়ানের ওয়েনছুয়ানে মারাত্মক ভূমিকম্প আঘাত হানে। তখন সমাজের বিভিন্ন মহল সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়; চেং তু কাটিয়ে ওঠে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি। দুঃসময়ে যারা শহরবাসীর প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে এবং ছেং তু যে এখন নিরাপদ, তা প্রচার করতেই এ গানটি রচিত হয়। গায়িকা চাং লিয়াং ইং নিখুঁতভাবে গানটি রেকর্ড করার জন্য প্রায় এক'শ বার রেকর্ড করেছেন। বন্ধুরা, শুনুন 'আমি এ শহরকে ভালোবাসি' গানটি।

চেং তু চীনের ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক নগর, দশটি প্রাচীন মহানগরের অন্যতম। খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে এ শহর গড়ে ওঠে। পশ্চিম হান রাজবংশ আমলে চেং তু চীনের ছয়টি বৃহত্তম রাজধানীর অন্যতমে পরিণত হয়। উত্তর সোং রাজবংশ আমলে চেং তুতে বিশ্বের সর্বপ্রথম কাগজি মুদ্রা 'চিয়াও জি'চালু হয়েছিল। এ শহরের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে অনেক গল্প।

বন্ধুরা, এবার শুনুন ওয়াং চেং লিয়াংয়ের গাওয়া 'চেং তুর দৃষ্টান্ত' শীর্ষক গান। ওয়াং চেং লিয়াং চেং তু'র বাসিন্দা। তিনি গান দিয়ে গোটা বিশ্বের কাছে নিজের জন্মস্থান – চেং তুকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। এ শহরের আধুনিকায়ন প্রক্রিয়ায় প্রতিটি নাগরিকের অংশগ্রহণ আছে। তারা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে কঠোর পরিশ্রম করেন এবং নিজের শহরের উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন।

বন্ধুরা, শুনুন 'চেং তুর দৃষ্টান্ত' গানটি। গানে বলা হয়েছে: 'সূর্যালোকে গাছের পাতা মেঘের মতো সুন্দর/ নতুন দিনের শুরু হাসিমুখে/ মনের আশা কখনও পরিবর্তিত হয় না/ মায়াভরা মন ও বন্ধুত্বপূর্ণ চোখ সময়কে নরম করে/ হলুদ ত্বক ও কালো চোখের চীনা স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবেই।'

গায়িকা লি ইয়ু ছুন

চেং তু প্রাচীনকাল থেকেই এক সমৃদ্ধ নগর। হান রাজবংশ আমলে চেং তু ছিল বিশ্বের বার্নিশ শিল্পের কেন্দ্র। এটি চীনের চা-সংস্কৃতির জন্মস্থান। সোং রাজবংশ আমল থেকে চেং তুর সূচিকর্মও বিখ্যাত হয়ে ওঠে এবং এর 'শুসিউ' নামকরণ হয়। তখন সারা চীনের ৭০ শতাংশ সূচিকর্ম চেং তুতে উত্পাদিত হতো। ২০১৫ সালে চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে বসন্ত উত্সবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে লি ইয়ু ছুন 'শুসিউ' নামক গান পরিবেশন করেন। লি ইয়ু ছুনকে বলা হয় 'শুসিউ' সংস্কৃতির দূত। চেং তুর অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার উত্সবের থিম সং হিসেবে ২০০৮ সালে তিনি প্রথমবার এ গান গেয়েছেন। গানটি শ্রুতিমধুর। তবে আসল 'শুসিউ' এ গানের চেয়ে সুন্দর। বন্ধুরা, শুনুন গানটি।

চেং তুতে হান জাতি ছাড়া আরও ৫৪টি সংখ্যালঘু জাতির মানুষ বাস করেন। এ শহরে হাজারের বেশি লোকসংখ্যার সংখ্যালঘু জাতি আছে দশটি। এ জাতিগুলো হচ্ছে: হুই, তিব্বতি, মান, মঙ্গোলীয়, মিয়াও, ঈ, থুচিয়া, ছিয়াং, চুয়াং ও কোরীয় জাতি। এখানে হান জাতির লোকসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ। চেং তুকে 'স্বর্গীয় রাজ্য' নামে ডাকা হয়। ২০১৫ সালে এটি 'সবচেয়ে ফ্যাশনেবল শহর'-এর পুরস্কার পেয়েছে।

বন্ধুরা, শুনুন 'স্বর্গীয় রাজ্য' নামের গানটি, গেয়েছেন লি চিয়া লিন। গানে চেং তুর সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য ও এর বাসিন্দাদের আতিথেয়তার কথা বলা হয়েছে।

  চেং তুতে সিছুয়ানের আঞ্চলিক ভাষা প্রচলিত। সিছুয়ানভাষী আছেন প্রায় ১৬ কোটি। এ সংখ্যা মোট জার্মানভাষীর চেয়েও বেশি। চেং তুর ভাষা সিছুয়ান অপেরা এবং সেখানকার স্থানীয় অপেরার ভাষা। তবে এ ভাষা ও ম্যান্ডারিন ভাষার মধ্যে অনেক পার্থক্য। এমনকি আমিও এ ভাষা বুঝতে পারি না।

বন্ধুরা, শুনুন সিছুয়ানের আঞ্চলিক ভাষার গান'আমি চেং তুয়ে থাকতে পছন্দ করি', গেয়েছেন সিয়ে ডি।

বন্ধুরা, ইউনেস্কো চেং তুকে 'বিশ্ব সুস্বাদু নগর' নাম দিয়েছে। চেং তুতে উত্পাদিত 'বিন পেস্ট' সিছুয়ান খাবারের মূল উপাদান। এ বিশেষ মশলা ছাড়া সিছুয়ানের খাবারের মজা অনেক কমে যায়। যদি আপনারা চেংতুতে যান, অবশ্যই সেখানকার খাবার খাবেন।

গায়িকা ইয়ু খ্র ওয়েই

বন্ধুরা, আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছি চীনের সিছুয়ান প্রদেশের রাজধানী চেং তুর সাথে। অনুষ্ঠানের শেষভাগে এসে শুনুন ইয়ু খ্য ওয়েইয়ের গাওয়া 'হিবিসকাস ফুল ফুটেছে' শীর্ষক গানটি। ইয়ু খ্য ওয়েইও চেং তুর বাসিন্দা। হিবিসকাস ফুল হচ্ছে চেং তু শহরের ফুল। এ সুন্দর ফুল এ শহরকে দিয়েছে তার আকর্ষণীয় শক্তি।

বন্ধুরা, 'সুর ও বাণী' আসর আজকের মতো এখানে শেষ করছি। সুযোগ পেলে আপনারা চীনের চেং তু ভ্রমণে আসবেন আশা করি। আপনাদের ভালো লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস। আজ তাহলে এখানেই বিদায় নিই। ভালো থাকুন সবাই। আবার কথা হবে। (ইয়ু/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040