বাঁশির সুর
  2017-03-17 14:19:35  cri


সুপ্রিয় শ্রোতবন্ধুরা, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান। সবাই ভালো আছেন তো? আশা করছি আপনারা ভালো আছেন এবং আনন্দে দিন কাটাচ্ছেন। শুরু করছি আজকের সংগীতানুষ্ঠান 'সুরের ধারায়'। আপনাদের সঙ্গে আছি আমি লতা।

বন্ধুরা, গত অনুষ্ঠানে আমরা শুনেছি চীনা বাদ্যযন্ত্র জিথেরের সুর। আপনাদের এ কথা অবশ্যই মনে আছে। তাই না? আমি বিশ্বাস করি, সে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আপনারা চীনের ঐতিহাসিক বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কে কিছু জানতে পেয়েছে।

আজকের অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো আরেকটি ঐতিহাসিক বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে। চীন এবং বাংলাদেশে এ বাদ্যযন্ত্র ব্যাপক জনপ্রিয়। তার নাম বাঁশি। আপনারা নিশ্চয় বাঁশির নাম জানেন। বাঁশির সুরও শুনেছেন। তবে আপনারা কি জানেন বিশ্বে প্রথম বাঁশি আবিস্কারের ইতিহাস? দুটি সুর শোনার পর আমি উত্তর দেবো। এখন বাঁশির দুটি সুর দিয়ে শুরু করছি আজকের সুরের ধারায়।

শ্রোতা বন্ধুরা, সুরগুলো আপনাদের কেমন লাগলো? এখন আমি বাঁশি সম্পর্কে বলছি। নবপ্রস্তর যুগে মানুষ পশু হত্যা করতো এবং পশুর মাংস খেতো। আগুণের ওপর পশুর মাংস ঝলসে নিয়ে সে মাংস খাওয়া হতো। এ সময় আদিম মানুষরা আগুণের চারদিক দিয়ে নৃত্য করে আনন্দ প্রকাশ করতো। তারা পশুর মাংসগুলো কেটে নিয়ে সেই হাড়ের মধ্য ছোট ছোট ছিদ্র তৈরি করতো। তারপর এ হাড়ে ফুঁ দিয়ে সুন্দর-শ্রতিমধুর সুর সৃষ্টি করতো আর মহানন্দে নৃত্য করতো। এভাবেই বিশ্বের প্রথম বাঁশির জন্ম হয়। হাজার হাজার বছর পর সেই হাড় বতর্মানের আধুনিক বাঁশিতে রূপান্তর হয়েছে। মজার গল্প, তাই না? ‌আশা করি ভবিষ্যতে আপনারা বাঁশির সুর শোনার সময়ে এ কাহিনী মনে রাখবেন। এখন আরেকটি চমতকার বাঁশির সুর আপনাদের জন্য প্রচার করবো।

সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা শুনছেন সিআরআইয়ের বাংলা বিভাগ থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠান 'সুরের ধারায়'। বাঁশি এক ধরনের সুষির অর্থাত ফুত্কার (ফুঁ) দিয়ে বাজানো যায় এমন বাদ্যযন্ত্র। বর্তমানে বাঁশ দিয়ে বাঁশি তৈরি হয়। সে কারণে এর নাম বাঁশি। বাংলায় বাঁশিকে মুরালি, মোহন বাঁশি, বংশী অথবা বাঁশরিও বলা হয়। বাঁশির পাশ্চাত্য সংস্করণের নাম ফ্লুট (flute)।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাঁশি তৈরিতে তরলা বাঁশ ব্যবহার করা হয়। কেউ কেউ সখের বশে ষ্টিলের, তামার, পিতলের, রূপার এমনকি সোনার পাইপ দিয়েও বাঁশি তৈরি করিয়ে থাকেন ।

বন্ধুরা, আজ আমরা বাঁশির সুর শুনছি। এ সুরগুলো মাধ্যমে আমরা চীনের বেশ কিছু বিষয় অনুভব করতে পারবো। জানতে পারবেন অনেক কিছু। এই প্রাচীন এবং মনহরানো বাদ্যযন্ত্রের গায়ে সাতটি (মাঝে মাঝে আটটিও করতে দেখা যায়) ছিদ্র থাকে। যে নল বা পাইপ দিয়ে বাঁশি তৈরি করা হয় তার একপাশ সম্পূর্ণ আটকে বায়ুরোধী করে দেওয়া হয়। বাঁশের তৈরি বাঁশিতে গিট বা গিরা একপাশকে বায়ুরোধী করার কাজে ব্যবহার করা হয়। বন্ধ এবং খোলা প্রান্তের মাঝামাঝিতে ছিদ্রগুলো করা হয়। যে ছিদ্রটি বন্ধ প্রান্তের ঠিক কাছাকাছি থাকে সেটা দিয়ে নিয়মানুযায়ী ফুঁ দিতে হয় এবং বাকি ছ'টি ছিদ্র ডান হাতের মধ্যবর্তী তিনটি এবং বাম হাতের মধ্যবর্তী তিনটি আঙ্গুল দিয়ে কখনো আটকে কখনো ছেড়ে দিয়ে সুর তুলতে হয়। বাঁশি বাজানোর কৌশল রপ্ত করতে হলে গুরুর স্মরণাপন্ন হবার বিকল্প হয়না।

বন্ধুরা, এখন আমরা আরো দুটি সুর শুনবো। চলুন তাহলে এখন মিষ্টি দুটি সুর শুনি আমরা।

প্রিয় শ্রোতা, আজ সুরের ধারায় অনুষ্ঠানের থিম : 'বাঁশির সুর'। বাঁশি তৈরিতে লাগে বিশেষ ধরনের মুলিবাঁশ। বাঁশটির পুরুত্ত পাতলা হলে সুন্দর মিষ্টি এবং নিখুত সুর আসবে। বাঁশ রোদে শুকিয়ে বাঁশি অনুসারে মাপমতো কেটে টুকরো করা হয়। এরপর টুকরোগুলো মসৃণ করে নিতে হয়। পরে কয়লার আগুনে পোড়ানো লোহার শলাকা দিয়ে ছিদ্র করা হয়। আঁকা হয় নকশা। এরপর মাটির প্রলেপ লাগিয়ে আবার আগুনে সেঁকে পানিতে ধুয়ে বাঁশিগুলো পুনরায় রোদে শুকানো হয়। শুকানোর পর বার্নিশ করা হয়। এরপর দেখতে হয় বাঁশিতে ফুঁ-সুর উঠল কিনা। বাঁশি নানা রকম স্কেলের হয়। যেমন ছয়, সাড়ে ছয়, সাত, সাড়ে সাত, আট, সাড়ে আট, নয়, সাড়ে নয়, এগার, সাড়ে এগার প্রভৃতি স্কেল গোল বাঁশির আকার ও স্বরের ওপর নির্ভর করে আলাদা করা হয়।

প্রিয় বন্ধুরা, বাঁশির সুর শুনতে শুনতে আজকের 'সুরের ধারায়' শেষ হয়ে গেলো। আশা করছি এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আপনারা আনন্দ পেয়েছেন। অবশেষে বাঁশির আরেকটি নান্দনিক সুর বাজিয়ে শেষ করছি আজকের 'সুরের ধারায়'।

শ্রোতা বন্ধুরা, 'সুরের ধারায়' আবারো আপনাদের শোনাবো সুন্দর ও নতুন নতুন গান বা সুর। আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকুন। কথা হবে। (লতা/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040