চীনের 'দুই অধিবেশনে' ক্ষুদে সাংবাদিকদের গল্প, 'দুই সন্তান নীতি' ও চীনে ফুটবল প্রশিক্ষণ
  2017-03-20 15:08:27  cri

 


চীনের দ্বাদশ জাতীয় গণকংগ্রেস (এনপিসি)-র পঞ্চম অধিবেশন ও দ্বাদশ গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলন (সিপিপিসিসি)-র পঞ্চম অধিবেশন সম্প্রতি বেইজিংয়ে সমাপ্ত হয়েছে। এ 'দুই অধিবেশনের' মাধ্যমে প্রতি বছর চীনের সমাজ ও অর্থনীতির উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বা নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়।

আজকের অনুষ্ঠানে আমরা এবারের 'দুই অধিবেশনে' ক্ষুদে সাংবাদিকদের গল্প, 'দুই সন্তান নীতি' ও চীনে ফুটবল প্রশিক্ষণ সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরবো।

প্রতি বছরের দুই অধিবেশনের ওপর দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যম ব্যাপক মনোযোগ রাখে;অংশ নেন বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক। গত কয়েক বছরের মতো এবারের দুই অধিবেশনেও চীনের একটি বিশেষ সাংবাদিকদল অংশগ্রহণ করে। তারা সবাই চীনের বিভিন্ন প্রদেশের প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থী।

২০১৩ সাল থেকে এই ক্ষুদে সাংবাদিকদলটি 'দুই অধিবেশনে' অংশ নিয়ে আসছে।

এ ধরনের ক্ষুদে সাংবাদিকদল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে চীনের ফিউচার নেটওয়ার্কের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা চাং সিং তুং বলেন,

'শিক্ষার্থীদের অনুশীলনের সুযোগ প্রদান করার জন্য ক্ষুদে সাংবাদিকদল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন সাক্ষাত্কার নেওয়ার মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন কর্মসংস্থান ও শিল্প সম্পর্কে আরো বেশি তথ্য জানতে পারে এবং এভাবে তারা জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পারে'।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের এ ধরনের শিক্ষার্থীদের কাছে সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা একটি চমত্কার অনুভূতি। এই অনুভূতি তাদেরকে লেখাপড়ায় ভীষণ উত্সাহ প্রদান করেছে। দুই অধিবেশনে সাক্ষাতকার নেওয়ার মাধ্যমে তাদের জীবনে স্মরণীয় মুহূর্ত যোগ হয়েছে। এ সম্পর্কে চীনের চেচিয়াং প্রদেশের নিংবো শহরের হুয়ামাও বিদেশি ভাষা স্কুলের শিক্ষার্থী হুয়াং ইয়ো তিং জানায়,

'দুই অধিবেশনে নিয়মিত সাক্ষাত্কার নেওয়ার মাধ্যমে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র দক্ষতা অর্জিত হয়েছে। প্রতিদিন খবর তৈরি করা ও সাক্ষাত্কার নেওয়া আমাদের লেখাপড়ায় ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছে। এতে আমার অন্য দক্ষতা ও সামর্থ্য অনেক উন্নত হয়েছে।'

চীনের হারবিন শহরের হুয়াইউয়ান প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রী চাং ইয়া ছিয়ানও একই মন্তব্য করে। সে জানায়,

'আমরা দুই অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ লোকজনের সাক্ষাত্কার নিয়েছি। যাদের আমাদের সাহায্য দরকার, তাদেরও সাক্ষাত্কার নিয়েছি। আমি অনেক প্রবন্ধ লিখেছি। এতে সাংবাদিক হিসেবে আমার লেখার দক্ষতা অনেক উন্নত হয়েছে, দক্ষতা তৈরি হয়েছে ভাষার প্রকাশেও। এ ছাড়া, আমি আমার আত্মক্ষমতার চর্চাও করতে পেরেছি'।

দুই অধিবেশন ক্ষুদে সাংবাদিকদের বিভিন্ন বিষয় জানা ও সামাজিক দায়িত্ব উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে এবং তারা চীনা জনগণের ব্যাপকভাবে দুই অধিবেশনে অংশগ্রহণের বিষয়টি উপলবব্ধি করতে পেরেছে। তারা সামাজিক বিভিন্ন সমস্যায় নিজেদের চিন্তাভাবনা ও প্রস্তাবও পেশ করেছে। মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের প্রস্তাব নিয়ে দুই অধিবেশনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করেছে ক্ষুদে সাংবাদিকরা। এ সম্পর্কে নিংবো শাখার প্রধান শিক্ষক ছিউ সিয়াও ছুন বলেন,

'এবার দুই অধিবেশনের আগে কয়েকটি স্কুলের পাঁচ বা ছয় হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী দরিদ্র অঞ্চলের বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করা নিয়ে প্রস্তাব প্রণয়নে অংশ নেয়। কারণ তারা মনে করে, দুই অধিবেশন চলাকালে চীনের বিভিন্ন প্রদেশের এনপিসি ও সিপিপিসিসি'র প্রতিনিধি ও সদস্যদের সাথে দেখা করতে পারবে ক্ষুদে সাংবাদিকরা। তারা আশেপাশের আত্মীয়স্বজনের মতামত ও প্রস্তাব শুনে নিজেদের প্রস্তাবে যোগ দেয় এবং দুই অধিবেশনে পেশ করে থাকে'।

ক্ষুদে সাংবাদিকদের অনুরোধ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। এ সম্পর্কে ফিউচার নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি চাং বলেন,

'দুই অধিবেশনে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সদস্য ও প্রতিনিধিদের মতামত প্রকাশ করা একটি ভালো সুযোগ। নিংবো শহরের একজন ক্ষুদে সাংবাদিক কয়েক বছর আগে দুই অধিবেশনে শহরের ডেপুটি-মেয়রের কাছে প্রস্তাব পেশ করে। প্রস্তাবটি ছিলো পরিবারের পুরনো কাপড়চোপড় সম্পর্কে। সে জানায়, বাসার অনেক জায়গায় পুরনো কাপড়চোপড় রাখা হয়, যদি আবাসিক এলাকার মধ্যে কাপড়চোপড় পুনর্ব্যবহারযোগ্য বিন স্থাপন করা যায় তাহলে এসব কাপড়চোপড় কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। তখন ডেপুটি-মেয়র তার এ প্রস্তাব বেশ সমর্থন করেন। দুই অধিবেশনের পর তাদের আবাসিক এলাকায় এমন পুর্ব্যবহারযোগ্য বিন স্থাপন করা হয়।'

ছাত্রছাত্রীদের গভীরভাবে দুই অধিবেশনের তাত্পর্য অনুভব করার জন্য অধিবেশন চলাকালে ফিউচার নেটওয়ার্ক এনপিসি ও সিপিপিসিসি'র প্রতিনিধি ও সদস্যদের ক্ষুদে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানায়।

এনপিসি'র প্রতিনিধি, চীনের হোনান প্রদেশের আধুনিক চিত্রকলা ও ক্যালিগ্রাফি শিল্প একাডেমির মহাপরিচালক চৌ সেন ক্ষুদে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় করেন। তাদের তত্পরতার বিশেষ তাত্পর্য রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। চৌ সেন বলেন,

'ছোটবেলা থেকে নাগরিকদের দায়িত্বশীল মর্ম প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। বিভিন্ন সাক্ষাত্কারের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীসহ আরো বেশি লোকদের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির সম্পর্কে ধারণা তৈরি করা সম্ভব হবে। এ প্ল্যাটফর্মের মধ্য দিয়ে তারা আরো বেশি তথ্য জানতে পারবে।চীনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্ষুদে সাংবাদিকদের বেইজিংয়ে এসে দুই অধিবেশনে যোগ দেওয়া অতি তাত্পর্যপূর্ণ ব্যাপার। যদিও তাদের প্রধান কাজ লেখাপড়া, তবে এর পাশাপাশি কল্যাণমূলক কাজে অংশ নেওয়াও অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের প্রশ্ন সহজ, সরল ও আন্তরিক। তারা আজকের প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে দেশের সুন্দর ভবিষ্যতে গড়ে তুলবে। তারা তাদের বর্ণনার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের ইতিবাচক অগ্রগতি প্রতিফলন করতে সক্ষম'।

বিভিন্ন সাক্ষাত্কার নেওয়া ছাড়াও ক্ষুদে সাংবাদিকরা বিভিন্ন সামাজিক দাতব্য তত্পরতায় অংশ নেয়। তাদের উদ্যোগে দরিদ্র অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের কাছে বই ও কলমসহ বিভিন্ন পণ্যদ্রব্য প্রদান করা হয়। গত বছর তারা নিজের খরচ সংগ্রহ করে ২০ হাজারেরও বেশি ইউয়ান দরিদ্র অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠায়। এরপর তাদের সহপাঠীরাও অর্থ ও বিভিন্ন দ্রব্য দান করে। এভাবে শহরের শিক্ষার্থীদের সঞ্চয় অভ্যাস প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি তাদের সামাজিক দায়িত্বও জোরদার করা হয়েছে।

ক্ষুদে সাংবাদিকদের সাক্ষাত্কার ও অনুশীলন তত্পরতা সমাজের বিভিন্ন মহলের সমর্থন ও প্রশংসা পেয়েছে। যদিও তাদের বয়স কম, তবে তাদের সাক্ষাত্কার নেওয়ার ধরণ ও পরিশ্রম পেশাদার সাংবাদিকদের চেয়ে দুর্বল নয়। ছোটবেলা থেকেই তাদের রাষ্ট্রীয় কাজের প্রতি মনোযোগ ও দায়িত্বশীল কাজের প্রশিক্ষণ অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কে ক্ষুদে সাংবাদিকদলের বিশেষ বিশেষজ্ঞ, চীনের ন্যাশনাল কলেজের উপ-প্রধান চাই চিয়ে বলেন,

'তারা খুব সরাসরি প্রশ্ন করে থাকে, এসব প্রশ্ন শুনতে একটু সরল, তবে আমাদের প্রত্যাশা হলো তাদের মনোযোগ। আমার ছোটবেলায় খুব সম্ভবত তাদের মতো এমন প্রশ্নও জিজ্ঞেস করতে পারি নি। রাষ্ট্র, সমাজ ও জাতির ওপর বেশ মনোযোগ দেয় ছাত্রছাত্রীরা। তাদের প্রশ্ন রাষ্ট্র, সমাজ ও শিক্ষার উন্নয়ন সম্পর্কিত। এমন ইস্যু অতি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শিশুরা হবে দেশের ভবিষ্যত। তাদের চিন্তাভাবনা ভবিষ্যতে চীনাদের চিন্তাধারার প্রতীক, তাই আমাদের এখন থেকেই তাদের ওপর বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত'।

আচ্ছা, বন্ধুরা, এতক্ষণ আপনারা 'দুই অধিবেশনে' ক্ষুদে সাংবাদিকদের গল্প শুনলেন। এখন আমরা এবারের এ দুই অধিবেশনে চীনের 'দুই সন্তান নীতি' সম্পর্কে প্রতিনিধি ও সদস্যদের প্রস্তাব সম্পর্কে জানবো।

গত বছর থেকে চীনে 'দুই সন্তান নীতি' চালু হয়। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কমিটির পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এ নীতি চালুর পর দ্বিতীয় সন্তান জন্মগ্রহণের হার অনেক বেড়েছে, তবে তাদের জন্মগ্রহণের কারণে পরিবারের অর্থনৈতিক চাপও স্পষ্টভাবে বেড়েছে। এ সমস্যা ব্যাপকভাবে পরিবারে দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার ওপর প্রভাব ফেলেছে।

বেইজিংয়ের অধিবাসী মি. চিয়ার পরিবারে গত বছরের শেষ দিকে দ্বিতীয় সন্তান জন্মগ্রহণ করে। এবার সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাত্কার দেওয়ার সময় তার কণ্ঠে হঠাত্ ক্লান্তির ছাপ লক্ষ্য করা যায়, কারণ তার পরিবারে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তবে দ্বিতীয় সন্তান জন্মগ্রহণে তিনি অসুখী নন। তিনি বলেন,

'সর্বপ্রথম সম্মুখীন সমস্যা হলো অর্থনীতি। দুই সন্তানের শিক্ষা ও ডায়াপারসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার পর আমাদের বেতন স্পষ্টভাবে কমেছে। তা ছাড়া, শারীরিক পরিশ্রমও অনেক বেড়ে গেছে। এখন পরিবারের বিভিন্ন সদস্যকে দুই সন্তানের যত্ন নিতে হচ্ছে। আমরা ভাবি যে, দুই সন্তান হলে তারা বড় হওয়ার পর পরস্পরকে যত্ন নিতে পারবে এবং পরিবারে আরো বেশি সুখ অনুভব করা যাবে। তবে এ ভাবনা বাস্তবায়নে অবশ্যই আরো বেশি পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন'।

চীনা পরিবারে দুই সন্তান নেওয়ার উদ্বেগ সম্পর্কে চলতি বছরের দুই অধিবেশনে এনপিসি ও সিপিপিসিসি'র প্রতিনিধি ও সদস্যরা নিজ নিজ প্রস্তাব পেশ করেন। সিপিপিসিসি'র সদস্য, চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের প্রবাসী চীনা সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট লি ওয়েই বলেন,

'নীতিমালার দিক থেকে বিবেচনা করে আমার ধারণায় দুই সন্তান নেওয়ার পর নারীদের ছুটি নিয়ে সরকারের আরো বেশি সুবিধা দেওয়া উচিত। এ ছুটিতে তাদের বেতন মালিকের মাধ্যমে দেওয়া উচিত নয়, বরং তা সরকারের দায়িত্ব'।

এনপিসি'র প্রতিনিধি ও চীনর নারী একাডেমির প্রধান সুন সিয়াও মেও বলেন,

'চিকিত্সা খাতে নারী ও শিশু হাসপাতালে সেবা কর্মীর অনেক অভাব রয়েছে, বিশেষ করে ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞদের অনেক প্রয়োজন। দুই সন্তান নেওয়ার পর নারীদের চাকরিতে অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। নারীরা কিভাবে পরিবারের বাচ্চার সমস্যা ও চাকরির অসঙ্গতি সমাধান করবে এবং সরকারি কিন্ডারগার্টেন স্থাপন নিয়ে প্রস্তাব করেছি আমি'।

চীনা নাগরিকদের উদ্বেগ সরকারের প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। চলতি বছরের সরকারি কার্যবিবরণীতে দুই সন্তান নীতি সম্পর্কে চিকিত্সা ও সেবার মান উন্নত করার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কমিটির পরিচালক লি বিন দুই অধিবেশনে সাক্ষাত্কারে বলেন,

'সর্বপ্রথমে পরিসেবা বাড়াতে হবে। চীনের ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনা চলাকালে হাসপাতালে গর্ভবতী নারীদের জন্য ৮৯ হাজার বিছানা বাড়াবে সরকার। চিকিত্সার দক্ষতা উন্নত করা হবে। বিভিন্ন হাসপাতালে গুরুতর আক্রান্ত গর্ভবতী নারী ও নতুন সন্তান জন্মগ্রহণের চিকিত্সা কেন্দ্র স্থাপন জোরদার করা হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় চিকিত্সকদের প্রশিক্ষণও জোরদার করা হবে। সন্তান জন্মগ্রহণ সম্পর্কে ধারাবাহিক সেবা পূরণ করা হবে। গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্য রক্ষা, পরীক্ষা, সন্তানের জন্ম ও টিকা এবং নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতনতাসহ বিভিন্ন সেবার মান উন্নত করা হবে।'

তিনি আরো বলেন, দুই সন্তান নীতি শুধু চিকিত্সা ও গণস্বাস্থ্যের ব্যাপার নয়, বরং শিশুশালা ও সন্তানদের যত্নসহ শিক্ষা ও নারী কর্মসংস্থানের সাথে জড়িত। এ সম্পর্কে চীনা অর্থমন্ত্রী সিয়াও চিয়ে বলেন, ব্যক্তিগত আয়কর সংস্কারে পরিবারের দুই সন্তান সম্পর্কে বিশেষ সুবিধাজনক নীতি প্রদান করা হবে। তিনি বলেন,

'পরিবারে সন্তানের খরচসহ বিভিন্ন ব্যয়ের কর কমানো হবে বলে পরিকল্পনা করেছে সরকার। বিশেষ করে দুই সন্তান পরিবারের শিক্ষার ব্যয়ের কর কমানো বিবেচনা করা হবে।'

বন্ধুরা, এখন আপনারা চীনের ফুটবল প্রশিক্ষণ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন শুনবেন।

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, চীনে বিভিন্ন ধরনের ক্রিড়া বা খেলাধুলা ভীষণ জনপ্রিয়। বিশ্বে ফুটবল খেলা উত্পত্তি হবার পর থেকেই খেলাটি চীনে একটি জনপ্রিয় খেলা হিসেবে প্রচলিত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনে ভালো বা নামীদামী ফুটবল খেলোয়াড়ের বেশ অভাব। এমন প্রেক্ষাপটে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও চীনের ফুটবল সমিতি ফুটবল প্রশিক্ষণ প্রকল্প চালু করেছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, বর্তমানে চীনে মোট ১৩ হাজারেরও বেশি ফুটবল প্রশিক্ষণ স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ চীনে ফুটবল প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা ৫ কোটিতে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এত প্রচুর পরিমাণ প্রশিক্ষণার্থীর মধ্য দিয়ে কি আরো শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় বাছাই করা হবে? স্কুলের ফুটবল এবং পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়ের মধ্যে কিভাবে সমন্বয় করা হবে? এ সম্পর্কে সিআরআইয়ের সাংবাদিকের একটি প্রতিবেদন তুলে ধরবো এখন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের স্কুলগুলো ব্যাপকভাবে ফুটবল খেলার উন্নয়নের ওপর নজর দিয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে সারা দেশে ফুটবল প্রশিক্ষণ স্কুল বাছাই করতে শুরু করে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে আরো বেশি যুব শিক্ষার্থীদের ফুটবল শেখার প্রতি আগ্রহী করে তোলা হয়।

চীনে ১৩ হাজারেরও বেশি ফুটবল প্রশিক্ষণ স্কুলের মধ্যে ৬৯টি স্কুলের পরীক্ষামূলক কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চীনের যুব স্কুল ফুটবল কর্মদলের কার্যালয়ের পরিচালক ওয়াং তেং ফেং বলেন, স্কুলের ফুটবল ব্যবস্থার কাঠামো মোটামুটি নির্মিত হয়েছে। প্রাথমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল, উচ্চ বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় চার শ্রেণির ফুটবল প্রতিযোগিতা ও গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্প ধাপে ধাপে আয়োজন করা হয়েছে এবং তার মাধ্যমে কিছু শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় বাছাই করা হয়েছে। তিনি বলেন,

'আঞ্চলিক প্রতিনিধিদল স্থানীয় অঞ্চলের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ যুব ফুটবল প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়ে গঠিত। বিভিন্ন অঞ্চল গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা চালু করে থাকে। গত বছরের অক্টোবর মাসে স্পেনের মাদ্রিদ ফুটবল একাডেমির সাথে চার বারের মতো খেলেছে চীনের প্রশিক্ষণার্থীরা, এর মধ্যে দু'বার জয়লাভ করেছে। তা থেকে বোঝা যায়, চীনের শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধিদলের প্রতিযোগিতামূলক দক্ষতা অনেক উন্নত হয়েছে।'

চীনের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণে উত্সাহ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্কুলে খেলাধুলার সংস্কার চালু করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো ব্যাপকভাবে স্কুলের ফুটবল উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে হবে, যা চীনের ফুটবল খেলার মানের উন্নতি ও শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় তৈরি করতে সহায়তা করবে। এ সম্পর্কে জনাব ওয়াং বলেন,

'২০২৫ সাল নাগাদ ৫০ হাজার ফুটবল স্কুল নির্মাণ করা হবে, তখন প্রতি স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০০০ জন হিসাব করলে মোট ৫ কোটি শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে। পেশাদার ফুটবল প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় বাছাই করা সম্ভব, তাই ভবিষ্যতে চীনের ফুটবল খেলার মান উন্নতি এখন শুধুমাত্র আর স্বপ্ন নয়।'

জনাব ওয়াং মনে করেন, স্কুলের পেশাগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রচুর যুব খেলোয়াড় তৈরি করা সক্ষম, তবে চীনের ফুটবল সমিতিকে ভিন্ন বয়সের খেলোয়াড়দের জন্য পেশাদার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, যার মাধ্যমে চীনের শ্রেষ্ঠ পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় খুঁজে বের করা সম্ভব হবে। জাপানের ফুটবল দলের উদাহরণ দিয়ে ওয়াং বলেন, বর্তমানে জাপানের স্কুলের ফুটবল ব্যবস্থা থেকে নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় এবং পেশাগত ফুটবল দলের খেলোয়াড়ের সাথে প্রতিযোগিতা করলে স্কুলের খেলোয়াড়দের আরো শক্তিশালী ও চমত্কার বলে মনে হয়। চীনও দুই ব্যবস্থার মাধ্যমে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ ফুটবল খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দিতে পারবে।

সুপ্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠানে চীনের দুই অধিবেশনে ক্ষুদে সাংবাদিকদের গল্প, 'দুই সন্তান নীতি' ও ও চীনের ফুটবল প্রশিক্ষণ সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

বন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়, আমাদের অনুষ্ঠানও তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে এলো। এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn, caoyanhua@cri.com.cn

তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। থাকুন সুন্দর ও আনন্দে। আগামী সপ্তাহে একই দিন একই সময় আবারো কথা হবে। চাই চিয়ান। (সুবর্ণা/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040