সুর ও বাণী: হাংচৌর সাবওয়ে সম্পর্কিত গান
  2017-04-10 17:53:27  cri


২০ মার্চ নিটেসি ক্লাউড মিউজিক গেল পাঁচ বছরে সংগ্রহীত সংগীত বিষয়ে বিভিন্ন মন্তব্য থেকে সেরা ৫০০০টি বাছাই করেছে। তারপর হাংচৌ শহরের এক নম্বর সাবওয়ে লাইন ও চিয়াং লিং সাবওয়ে স্টেশনে সাজিয়ে রাখা হয়। ২০ মার্চ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত সংগীতের মন্তব্য প্রদর্শন করা হয়। এর নাম দেয়া হয়েছে 'সংগীতের শক্তি দেখুন'। এটি নিটেসি ক্লাউড মিউজিক ওয়েবসাইটের প্রচার করে। যাতে যাত্রীরা সাবওয়েতে যাতায়াতের সময় সংগীত থেকে সৃষ্ট নানা মন্তব্য দেখে নিজের কিছু বিশেষ স্মৃতি স্মরণ করতে পারেন এবং সংগীতের বিশেষ শক্তি উপলব্ধি করেন। এর পাশাপাশি নিটেসি ক্লাউড মিউজিককে ভালোভাবে জানতে পারে। এ সংগীত ওয়েবসাইটে সংগীত দিয়ে মনের অনুভূতি ও আবেগ প্রকাশ করা যায় এবং নিজেদের পছন্দের সংগীতগুলো অন্যজনকে শেয়ার করা যায়।

অতীতে হাংচৌর সাবওয়েতে দেখা যেতো, যাত্রীরা অনেক দ্রুত হাঁটছে। এ কয়েক দিন অনেক যাত্রী তাদের দ্রুত গতির পা থামিয়ে বড় করে দেওয়ালে বা সাবওয়েইর কেবিনে লাগানো মন্তব্যগুলো পড়তে থাকে। এ লেখাগুলো পড়লে নিজের অতীতের কথা মনে পড়ে যায়। বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনুন চেন ই শু'র কণ্ঠে 'অনেক দিন আমাদের দেখা হয়নি' নামের গান। তারপর আমরা আবার সংগীতের মন্তব্য নিয়ে আলোচনা করবো।

নিটেসে ক্লাউড মিউজিক ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার হয়। নিটেসে ক্লাউড মিউজিক প্রধানত অনলাইনে গান পরিবেশন করে। এ ছাড়া, সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিল্পীদের পরামর্শ দেওয়াসহ সংগীত সংশ্লিষ্ট নানা পরিষেবা দেয়।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এ ওয়েবসাইটে গান শোনার পর মন্তব্য করেন। নিটেসে ক্লাউড মিউজিক সংগীতের মাধ্যমে মানুষের মনের কথাগুলো তুলে ধরে। এবার তারা সাবওয়েতে শ্রোতাদের মন্তব্যগুলো তুলে ধরে শ্রোতাদের মনের নিঃসঙ্গতা প্রকাশ করেছে এবং যাত্রীদের একই ধরনের আবেদনগুলোকে তুলে ধরেছে। প্রত্যেক যাত্রী সাবওয়ে স্টেশনে প্রবেশের পর এ লেখাগুলো দেখেছেন। কথাগুলো কারও মনে আঘাত হানে অথবা কাউকে মুগ্ধ করে। সাবওয়ের পাশাপাশি আরো বিস্তৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লোকজন এ বিষয়ে আলোচনা করে এবং ছবি পাঠান। নিটেসে ক্লাউড মিউজিকের এ বিজ্ঞাপন বেশ সফল হয়েছে।

বন্ধুরা, এখন শুনুন চাও লেই এর গাওয়া 'আদর্শ' নামের গান। গান শোনার পর আমরা আবার আলোচনায় ফিরবো।

চীনে সংগীতের বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট আছে। যেমন কিউ কিউ মিউজিক, খুওয়ো মিউজিক, খুগো মিউজিক ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে নিটেসে ক্লাউড মিউজিকের বৈশিষ্ট্য হলো তার সংগীত পর্যালোচনা বা মন্তব্য করার সুবিধা। জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি ব্যবহারকারী এ বৈশিষ্ট্যের জন্য সান্ত্বনা পেয়ে থাকেন।

কোনো একটি গান শোনার পর কিছু অনুভূতি তৈরি হয়। তার নিজের গল্প মনে পড়ে। অন্যজনের অভিজ্ঞতা বা মনের কথা পোড়ে, নিজের স্মৃতিও ভেসে ওঠে। তখন আপনারও আলোচনায় যোগ দিতে ইচ্ছে হয়। এভাবে পর্যালোচনার সংখ্যা বাড়তে থাকে। মন্তব্যের কারণে একটি সাধারণ গানও অনেকের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। কারণ, সুর ও গানের সঙ্গে যখন আরেকজনের জীবনের সুখ-দুঃখ মিশে যায়, তখন সেই সাধারণ গানটি বিশেষ এক আবেদন তৈরি করে। তখন আপনার মনে হয়, শুধু আপনি একা নন, আপনার মতো আরো অনেকেই একইভাবে ভাবছেন, অনুভব করছেন!

সংগীত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কথা বলার সুযোগ করে দেয়। তাদের কথাগুলো আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। আরো অনেক বিষয় তৈরি হয়। একা গান শোনার পরিবর্তে অনেক লোক একসাথে গান শুনছে, এ অনুভূতি তৈরি হয়। নিটেসে ক্লাউড মিউজিক যেনো এক দারুণ খনি আবিষ্কার করেছে।

বন্ধুরা, এখন শুনুন 'সে আমার সংগীতানুষ্ঠান শুনতে এসেছে' নামের গান শুনুন। গেয়েছেন চাং শুয়ে ইয়ো।

হাংচৌর সাবওয়েতে 'সংগীতের শক্তি দেখুন' বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর নিটেসে ক্লাউড মিউজিক-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট লি ইন মোবাইল ফোনে অনেক অভিনন্দন পান। অনেকে জানতে চেয়েছেন, এ বিজ্ঞাপনের জন্য তারা কত খরচ করেছেন? কিন্তু লি ইন বলেন, আসলে এজন্য বেশি খরচ হয়নি। এমনকি বিজ্ঞাপন কোম্পানির অংশগ্রহণেরও দরকার হয়নি। তার দল ৪০ কোটি পর্যালোচনা থেকে হিটের ওপর ভিত্তি করে ৫০০০ মন্তব্য বাছাই করেছে, তারপর এ ৫০০০ মন্তব্য থেকে চূড়ান্তভাবে ৮৫টি মন্তব্য নির্বাচন করেছে। নির্বাচনের মৌলিক শর্ত ছিলো, সরল, স্পষ্ট অর্থ, গান ছাড়াও সহজ বুঝা যায় এবং প্রাসঙ্গিক বিষয় ইত্যাদি। এ মন্তব্যগুলো পড়া যেনো একটি মানুষের জীবনকে উপলব্ধি করার মতো!

যেমন, কেউ লিখেছেন, 'তোমাদের সুখ-শান্তিকে শুভকামনা জানাই, এটা মিথ্যা। তবে, তোমার সুখ কামনা করি, এটাই সত্য।'

কেউ লিখেছেন, 'পছন্দ এমন একটি বিষয়, যা মুখ বন্ধ রাখলেও চোখ দিয়ে বেরিয়ে যায়।'

বন্ধুরা, এবার শুনুন লি ই লিয়ানের গাওয়া 'কথা দিয়ে মনের কথা প্রকাশ করা যায় না' নামের গান।

নিটেসে ক্লাউড মিউজিক নিজেই 'সংগীতের শক্তি দেখুন' বিজ্ঞাপনের পরিকল্পনা করেছে, তবে এ বিজ্ঞাপনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ রয়েছে, সেটা হলো হাংচৌ-হংকং সাবওয়ে কোম্পানি। এটি হাংচৌ সাবওয়ে লিমিটেড কোম্পানি ও হংকং রেলপথ লিমিটেড কোম্পানির যৌথ মালিকানা কোম্পানি। বেইজিং সাবওয়ে লিমিডেট কোম্পানির সঙ্গেও এর সহযোগিতার সম্পর্ক আছে। এর আগে তারা বেইজিংয়েও 'মাস্টারদের ভাষণ' নামে ধারাবাহিক বিজ্ঞাপন করেছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক সম্প্রচার করেছে। সাবওয়ে হলো শহরের মৌলিক অবকাঠামো। এখানে কোনো একটি আকর্ষণীয় ছবি বা লেখা সহজেই যাত্রীদের চোখ পড়ে। অনেক যাত্রী এ ছবিগুলো দেখার পর মোবাইল ফোনে ছবি তোলেন।

একজন লিখেছেন, 'আমার বাবা আট বছর আগে মারা যান। প্রতিদিন রাতে কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে আমি মনে করি, রাতের আকাশে সবেচেয়ে উজ্জ্বল তারা হলো আমার বাবা। তিনি সবসময় আকাশ থেকে আমাকে দেখেন। এটা ভেবে আমার চোখের পানি চলে আসে। বাবা, তুমি কি জানো, আমি তোমাকে খুব মিস করি।' বন্ধুরা, শুনুন 'রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা' নামের গান।

কেউ লিখেছেন, কত লোক আছে, বন্ধুর নামে চুপে চুপে অন্যজনকে ভালোবাসছে।

কেউ লিখেছেন, এমন এক গান আছে, যা তোমাকে ভালো জানে। সে গান শুনে, তোমার চোখের পানি পড়ে।

কেউ লিখেছেন, একবার আমি আকাশের সবচেয়ে কাছে ছিলাম, তখন তুমি হাত দিয়ে আমাকে তোমার কাঁধের ওপর তুলে ধরেছো।

কেউ লিখেছেন, আমার সবচেয়ে অক্ষমতা বয়সে; আমরা আজীবন দেখাশোনা করতে চাই এমন ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়েছে।

বন্ধু, যদি তুমি কাউকে ভালোবাসো, সেটা তুমি জানো, আকাশও জানে। শুনুন, 'প্রেমের নিয়তি' নামের গান।

বন্ধুরা, এতক্ষণ আপনাদের চীনের হাংচৌর সাবওয়েতে 'সংগীতের শক্তি দেখুন' শীর্ষক বিজ্ঞাপনের কথা শোনালাম। সংগীত আমাদের মুগ্ধ করে, সংগীত থেকে আমার শক্তি পাই, সংগীত আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়।

আজকের সুর ও বাণী আসর এ পর্যন্তই। ভালো থাকুন সবাই। আবার কথা হবে।

(ইয়ু/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040