20170412yinyue.mp3
|
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি আনন্দী বেইজিং থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজকের সুর ও বাণী আসরে জনজীবনের প্রয়োজনীয় পণ্যের স্বাদ নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করবো।
চীনারা বলেন, লাকড়ি, চাল, তেল, লবণ, সস্, ভিনেগার ও চা হলো মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সাতটি পণ্য। মানুষ প্রতিদিন এ সাতটি জিনিস নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এটা চীনের সুদীর্ঘ ঐতিহাসিক খাবার সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত। এ সাতটি জিনিস সম্পর্কে বলা হয়, 'দরজা খুলে সাতটি কাজ'। বর্তমানে এ সাতটি জিনিসের তাত্পর্য প্রাচীনকালের তুলনায় অনেক ভিন্ন। তবে একথা বললে সবাই বুঝতে পারে এসব জনজীবনের সঙ্গে কতটা ঘনিষ্ঠ!
বন্ধুরা, এখন শুনুন 'লাকড়ি, চাল, তেল, লবণ, সস্, ভিনেগার ও চা' নামের গান। গেয়েছেন ওয়াং লি হোং। এ গানটি ওয়াং লি হোং নিজেই সুর করেছেন। গানে 'দরজা খুলে সাতটি কাজ-লাকড়ি, চাল, তেল, লবণ, সস্, ভিনেগার ও চায়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব জিনিস মানুষের জীবনে খুবই ছোট বিষয়, কিন্তু অপরিহার্য।
গানটিতে বলা হয়েছে, প্রবল প্রেমে পড়ার পর বাস্তব জীবন শুরু হয়। আমরা প্রত্যেকে নিজের সুখ, শান্তি ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা করি। এ প্রক্রিয়ায় অনেক বাধা রয়েছে। কষ্টে চোখের পানি পড়তে পারে, তবে বিশ্বাস করুন, অবশেষে প্রত্যেকই নিজের অবস্থান খুঁজে পায়। আমাদের সুখী জীবন প্রতিদিন এমন সাধারণ জিনিষের মধ্যেই রয়েছে।
সাধারণভাবে সবাই জানে যে, 'দরজা খুলে সাতটি কাজ' প্রবাদটি সোং রাজবংশের সময় চালু হয়। তখন এ সাতটি কাজ বলতে বিশেষ করে কোনো নতুন জিনিষ বুঝাতো। চাল ছিল সোং রাজবংশের প্রধান খাদ্য। এখানে সস্ বলতে সোয়া সস্ বুঝায়। সোং রাজবংশের আগে ভিনেগার খাবার টেবিলের অপরিহার্য দ্রব্য ছিলনা। থাং রাজবংশ আর উত্তর সোং রাজবংশে চা ছিল বিলাসী পণ্য। সাধারণ মানুষ তা খেতে পারতো না। তবে তেল, বিশেষ করে তিল বা গাঁজা থেকে তৈরি ভোজ্যতেল দক্ষিণ সোং রাজবংশে বেশ জনপ্রিয় ছিল।
বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন ইয়ু ছেং ছিংয়ের গাওয়া 'ডিম দিয়ে ভাজা ভাত' নামের গান। ডিম দিয়ে ভাত ভাজা অনেকের প্রিয় খাবার। এ গানের কথাও খুব মজার। যদিও এটি চীনা ভাষার গান তারপরও এর সুর আপনাকে আনন্দ দেবে।
আধুনিক সমাজের অগ্রগতি আর মানুষের জীবনযাপনের মান উন্নত হওয়ার সাথে সাথে 'দরজা খুলে সাতটি কাজ' এর বিষয়গুলো পরিবর্তন হয়েছে। এখন চীনের বেশিরভাগ জায়গায় লাকড়ির পরিবর্তে প্রাকৃতিক গ্যাস বা কয়লার তাপ ব্যবহৃত হয়। তবে চাল, তেল, লবণ, সোয়া সস্ আর ভিনেগার এখনো চীনাদের খাদ্য সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর চা আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে চা সংস্কৃতি নামে বিশ্বখ্যাত হয়েছে।
বন্ধুরা, এবার শুনুন 'ছিয়ান মানের বড় বাতির চা' নামের গান। গেয়েছেন হাং থিয়ান ছি। গানে বেইজিংয়ের স্থানীয় অপেরা সুরের ভিত্তিতে বেইজিং সংস্কৃতির বিশেষ স্মৃতি তুলে ধরা হয়েছে।
ছোটবেলার স্মৃতি স্মরণ করলে আমার চোখে ভেসে ওঠে পপকর্ন তৈরির দৃশ্য। তখন সুপারমার্কেট ছিল না। মাঝে মাঝে একজন মানুষ একটি কালো রঙের ভারী চুলা নিয়ে আসতো আমাদের আবাসিক এলাকায়। সে চুলার সাথে থাকতো চামড়া দিয়ে তৈরি এক বড় থলি। আমরা পপকর্ন বা খই খেতে চাইলে একটু চাল বা ভুট্টা দেওয়ার জন্য মাকে অনুরোধ করতাম। মিষ্টি পপকর্ন খেতে চাইলে একটু চিনি দরকার হতো। এসব নিয়ে সেই লোকটির কাছে যেতাম, তিনি কালো চুলার মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে দিতেন। কিছুক্ষণ পর চুলায় জোরালো আওয়াজ শোনা যেতো। আর সে আওয়াজের সাথে বের হয়ে আসতো সাদা রঙের খই বা পপকর্ন! সেই সুগন্ধ অনেক দূরে ছড়িয়ে যেতো! এটা আমার শৈশবের বড়ই মজার স্মৃতি। বন্ধুরা, এখন শুনুন 'পপকর্নের স্বাদ' নামের গান। গেয়েছেন ছাই ই লিন।
মানুষের জীবন সবসময় এক ছন্দে চলে না। টক, মিষ্টি, ঝাল, তিতা যেমন খাবারের অংশ তেমনি এসব স্বাদ আমাদের বৈচিত্র্যময় জীবনেরও অংশ। বন্ধুরা, এবার এ সংক্রান্ত গান শুনুন।
বাচ্চারা সাধারণত মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন। মিষ্টি খেলে নিম্ন রক্তচাপ সমস্যা ও ব্লাড-সুগারের ঘাটতি কেটে যায়। ক্ষুধার্ত অবস্থায় মিষ্টি খেলে দ্রুত শরীরে শক্তি ফিরে আসে। কারণ অন্যান্য খাবারের চেয়ে রক্ত দ্রুত চিনির পুষ্টি শোষণ করে। তবে এখন অনেকে স্বাস্থ্য রক্ষায় সচেতনভাবে মিষ্টি এড়িয়ে চলেন। কারণ মিষ্টি খেলে ওজন বাড়ে, সহজে ক্লান্তি আসে, নানা রোগ আক্রমণ করে। ফলে মিষ্টি খাওয়ার মজা থেকে অনেকেই বঞ্চিত। এটা আসলে দুঃখের ব্যাপার। তবে আমরা কিন্তু যে কোনো সময় মিষ্টি সুর ও কণ্ঠের গান শুনতে পারি। বন্ধুরা, এখন 'মিষ্টি' নামের গান শুনুন। আপনার মন সবসময় ভালো থাকুক, এ কামনা করছি।
চীনাদের জীবনে দ্রুত প্রস্তুতযোগ্য নুডুলস একটি বিশেষ খাবার। বয়স্করা সবসময় বলেন, এ ধরনের নুডুলস কম খাওয়া ভালো। কারণ এর মধ্যে পচনরোধক দ্রব্য আছে, পুষ্টি নেই। তবে বাচ্চা বা যুবক-যুবতীরা এ ধরনের নুডুলস খেতে পছন্দ করে। কারণ এটা তাড়াতাড়ি খাওয়া যায়, রান্নার দরকার নেই। কেবল একটু গরম পানি হলেই যথেষ্ট। আমার ছেলের একটি বড় শখ হলো রোজ একটা দ্রুত প্রস্তুতযোগ্য নুডুলস খাওয়া। যদিও আমার এটি একদম পছন্দ না। বন্ধুরা, শুনুন দ্রুত প্রস্তুতযোগ্য নুডুলস সম্পর্কিত একটি গান।
বন্ধুরা, আজকের সুর ও বাণী আসরে আপনাদের সঙ্গে জীবনের স্বাদ এবং কয়েকটি বিশেষ খাবার সম্পর্কে আলোচনা করেছি। অনুষ্ঠানটি এ পর্যন্তই। আমি বিদায় নেই। ভালো থাকুন সবাই। আবার কথা হবে।
(ইয়ু/তৌহিদ)