'বেক্সিট' প্রশ্নে ব্রিটেন-ইইউ আলোচনা
  2017-04-29 16:40:17  cri
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউ'কে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরিসা মে। এখন ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার গোটা প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন হবে, তা নিয়ে দু'পক্ষের মধ্যে আলোচনা হবে। আজ (শনিবার) সে আলোচনা ব্রাসেলসে শুরু হবারও কথা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ আলোচনা সহজ হবে না। বিশ্লেষকদের সঙ্গে একমত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য জোসেফ লিনেন এবং ব্রাসেলসভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাংক ইইউ-এশিয়া কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফ্রেজার ক্যামেরন। সম্প্রতি সিআরআইকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে তাঁরা বলেন, 'বেক্সিট' আলোচনা কঠিন হবে। সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন হচ্ছে: ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইউরোপের বাজারে ব্রিটেনের মর্যাদা কী হবে?

জোসেফ লিনেন ইইউ পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিগত ১৮ বছর ধরে। বর্তমানে তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কূটনীতি কমিশনের সদস্য এবং আন্তর্জাতিক ইউরোপীয় আন্দোলনের চেয়ারম্যান। তিনি মনে করেন, ব্রিটেনের সাথে ইইউ'র 'ব্রেক্সিট আলোচনা' সহজ হবে না। কারণ, এ আলোচনার সাথে জড়িয়ে আছে ইইউ'র সহস্রাধিক আইন বা আইনের ধারা। তিনি বলেন, ইইউ ত্যাগ করার আগে ব্রিটেনের উচিত ইতোমধ্যে কৃত আর্থিক প্রতিশ্রুতি পূরণ করা।

জোসেফ লিনেন বলেন, "আমাদের যৌথ বাজারের একাধিক মৌলিক অবাধ নীতি রয়েছে। ইইউ'তে পণ্য, পরিসেবা, অর্থ ও মানবসম্পদ বিনিময়ের স্বাধীনতা স্বীকৃত। এ চারটি আবার পরস্পরের সাথে সংযুক্ত। তাই যদি ব্রিটিশ সরকার 'ব্রেক্সিট'-এর পর ইউরোপের অভিন্ন বাজারে পণ্য, পরিসেবা ও অর্থ নিয়ে অবাধে প্রবেশ করতে চায়, তবে ইইউ'র অন্য সদস্যদেশগুলোর ব্যক্তিবর্গের অবাধে ব্রিটেনে প্রবেশাধিকারও নিশ্চিত করতে হবে। অথচ ব্রিটেন মানবসম্পদের অবাধ বিনিময়ে রাজি নয়। এখানে এসেই আলোচনা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।"

তিনি আরও বলেন, আসলে ইইউ ত্যাগ করা ব্রিটেনের জন্য মঙ্গলজনক নয়। কারণ, বেরিয়ে যাবার পর ব্রিটেন ইইউ'র সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। পাশাপাশি ব্রিটেনের ব্যাংকিং ও শিল্প খাতেও 'ব্রেক্সিট'-এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিনিয়োগকারীরা স্বাভাবিকভাবেই ব্রিটেনের একক বাজারের পরিবর্তে ইইউ'র যৌথ বাজারকে অগ্রাধিকার দেবে।

ইইউ-এশিয়া কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফ্রেজার ক্যামেরন একজন ব্রিটিশ কূটনীতিক। ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমার মনে হয় এটি একটি নির্বোধ সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত ইইউ ও ব্রিটেন—উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। তবে ব্রিটেনের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব বেশি পড়বে।"

তিনি মনে করেন, 'ব্রেক্সিট' প্রশ্নে ব্রিটেন-ইইউ আলোচনা হবে খুবই জটিল। তিনি বলেন, ইইউ'র সাথে ব্রিটেনের দীর্ঘ ৪০ বছরের সম্পর্কের ইতি ঘটানো কোনো সহজ ব্যাপার নয়। এ জন্য বহু সময় লাগবে। এ অবস্থায় ব্রিটেনের উচিত ইইউ'র সাথে একটি অস্থায়ী চুক্তি স্বাক্ষর করা। তবে, এ ধরনের চুক্তির জন্য ব্রিটেনকে ইইউ'র আইন ও নিয়ম মেনে চলতে হবে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের চীনের সাথে সম্পর্কবিষয়ক প্রতিনিধিদলের চেয়ারম্যান হিসেবে জোসেফ লিনেন বলেন, ইইউ চীনের সাথে সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব দেয়। তিনি বলেন, "ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া শেষ না-হওয়া পর্যন্ত ব্রিটেন চীনসহ অন্য কোনো দেশের সাথেই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক চুক্তি করতে পারবে না বা এ সংক্রান্ত কোনো আলোচনায়ও যেতে পারবে না। আর প্রক্রিয়াটি শেষ হতে সময় লাগবে দুই বছর। তার মানে, এ দু'বছরে চীনসহ অন্য কোনো দেশের সাথে ব্রিটেনের কোনো দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বা চুক্তি হবে না। হ্যা, দু'বছর পর ব্রিটেন স্বাধীনভাবে যে-কোনো দেশের সাথে বাণিজ্যিক আলোচনা বা চুক্তি করতে পারবে।"

তিনি বলেন, যদি ব্রিটেন ইইউ'র যৌথ বাজার ত্যাগ করে, তাহলে ইইউ ব্রিটেনের বিভিন্ন পণ্য বা সেবার ওপর কর বৃদ্ধি করবে এবং সীমান্তে বিভিন্ন ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে। (ছাই/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040