চীন ও 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের সাথে 'রেলওয়ে সহযোগিতা সংস্থা'র সম্পর্ক
  2017-05-27 16:27:03  cri
'রেলওয়ে সহযোগিতা সংস্থা' একটি আন্তর্জতিক সংস্থা। এ সংস্থাটি গত ১৪ থেকে ১৫ মে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত 'এক অঞ্চল, এক পথ' আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষফোরামে অংশ নেয়। সংস্থার চেয়ারম্যান তাদেউজ জোজদা (Tadeusz Szozda) ফোরামে সংস্থার মূল দায়িত্ব সম্পর্কে ধারণা দেন। 'এক অঞ্চল, এ পথ' উদ্যোগে সংস্থাটির দায়িত্ব সম্পর্কে সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান দং চিয়ান মিন বলেন, এ উদ্যোগে সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।

'রেলওয়ে সহযোগিতা সংস্থা' ১৯৫৬ সালে পোল্যান্ডের ওয়ারশে প্রতিষ্ঠিত হয়। সংস্থাটির সদস্যরাষ্ট্র ২৮টি। চীন সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাসদস্য। ভাইস চেয়ারম্যান দং চিয়ান হুয়া বলেন, রেলওয়ে সহযোগিতা সংস্থা বিভিন্ন সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত। তবে সংস্থাটি বেসরকারি পর্যায়েও ভূমিকা পালন করে। আর এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইউরোপ ও এশিয়ার রেলওয়ে পরিবহনব্যবস্থায় গঠনমূলক ভূমিকা পালন করা। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "রেলওয়ে সহযোগিতা সংস্থার একটি আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব হচ্ছে পরিবহন করিডোরের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। বিভিন্ন সদস্যদেশে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে, চীন-ইউরোপ রেলওয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন খুবই কঠিন। সংস্থাটির সদস্যদেশগুলো ১৩টি রেলওয়ে নির্মাণ করেছে, যাতে সদস্যদেশগুলো পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হতে পারে। চীন-ইউরোপ রেলওয়ে'র পূর্ব, মধ্য ও পশ্চিম—এ তিনটি লাইন গড়ে তোলা হয়েছে।"

ট্রানজিট প্রক্রিয়া সহজতর করার ক্ষেত্রে রেলওয়ে সহযোগিতা সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংস্থাটি বহুবার সদস্যদেশগুলোর পরিবহন মন্ত্রণালয়, শুল্ক বিভাগ, পণ্যদ্রব্য পরিদর্শন ও সীমান্ত পরিদর্শন বিভাগের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে ট্রানজিট প্রক্রিয়া সহজতর করার বিষয়ে আলোচনা করেছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক রেলওয়ে পরিবহন আইনও প্রণয়ন করেছে; যেমন, পণ্য পরিবহনের আইন 'আন্তর্জাতিক পণ্যদ্রব্য চুক্তি', যাত্রী পরিবহনের আইন 'আন্তর্জাতিক যাত্রী চুক্তি', এবং বিপজ্জনক পণ্য পরিবহন আইন, ইত্যাদি। বিভিন্ন সদস্যদেশের উচিত এসব আইন ও নিয়ম মেনে চলা। এসব আইন ও নিয়ম চীন-ইউরোপ রেলওয়ে'র সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে।

আইনের ভিত্তিতেই প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে রেলওয়ে সেবার মূল্য নির্ধারিত হয়। কিন্তু বিভিন্ন সদস্যদেশ এ মূল্যের ক্ষেত্রে কিছুটা কমবেশি করতে পারে। সংস্থার একটি স্থায়ী বিভাগ রয়েছে। এ বিভাগ সদস্যদেশগুলোর মধ্যে মতভেদ দূর করতে কাজ করে। এ ছাড়াও, সংস্থাটির একটি ঐক্যবদ্ধ পরিবহন পরিকল্পনা বিভাগ রয়েছে। এ বিভাগ মালামাল পরিবহনব্যবস্থা কার্যকর করতে ভূমিকা রাখে। এ সম্পর্কে দং চিয়ান মিন বলেন, "রেলওয়ে সহযোগিতা সংস্থার মূল দায়িত্ব হচ্ছে ইউরোপ-এশিয়া রেলওয়ে পরিবহনব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো। সংস্থাটি চীনের রেলওয়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একটি বড় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।"

'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগে রেলওয়ে সহযোগিতা সংস্থার ভূমিকা সম্পর্কে দং চিয়ান মিন বলেন, সংস্থাটির সম্পর্ক রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ। চীন থেকে মধ্য-এশিয়া পর্যন্ত, এমনকি ইরান, রাশিয়া, বেলারুশ, পোল্যান্ড, ইউক্রেন ও আফগানিস্তানও সংস্থাটির সদস্যদেশ। রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চলসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে তুরস্ক ও আর্মেনিয়া ছাড়া সব দেশ রেলওয়ে সহযোগিতা সংস্থার সদস্য। এ সম্পর্কে দং চিয়ান মিন বলেন, "রেলওয়ে সহযোগিতা সংস্থার ভূমিকা হচ্ছে ইউরোপ ও এশিয়ার রেলওয়েকে সংযুক্ত করা; 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অভিন্ন উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা। এ ছাড়া, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদেশে বিনিয়োগ, পণ্য বিনিময়, দক্ষ কর্মীর বিনিময় ও যোগাযোগ জোরদার করার ক্ষেত্রে সহায়তা করাও সংস্থাটির একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকেই নিজ নিজ রেলওয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ, প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতার সমাবেশ ঘটাতে হয়। চীনা রেলওয়ে'র মান বিশ্বের প্রথম পর্যায়ে উঠে গেছে। চীন রেলওয়ে সহযোগিতা সংস্থার কাজে অংশ নিলে উপকৃত হবে। পাশাপাশি এতে তাদের অভিজ্ঞতা অন্যান্য সদস্যদেশ কাজে লাগাতে পারে। সেজন্য 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়নে রেলওয়ে সহযোগিতা সংস্থা ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে।"

গত ৮ জুন 'চীন-ইউরোপ রেলওয়ে' চালু হয়। গত ২০ জুন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পোল্যান্ড সফরকালে, চীন থেকে প্রথম ট্রেনের ইউরোপে পৌঁছানোর মুহূর্তটি নিজে উপস্থিত থেকে উপভোগ করেন। তখন রেলওয়ে সহযোগিতা সংস্থার চেয়ারম্যান জোজদা অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সম্পর্কে দং চিয়ান মিন বলেন, "এতে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়নে রেলওয়ে এবং রেলওয়ে সহযোগিতা সংস্থার গুরুত্ব বোঝা যায়। আসলে চীন-ইউরোপ রেলওয়ে চালু'র ভিত্তিই হচ্ছে রেলওয়ে সহযোগিতা সংস্থা। রেলওয়ে সহযোগিতা সংস্থা না-থাকলে, চীন-ইউরোপ রেলওয়ে চালু করা যেত কীভাবে? আগে সমুদ্রপথে চীন থেকে মালামাল পোল্যান্ডে যেতো। কিন্তু এতে সময় লাগতো অনেক বেশি, পরিবহনব্যয়ও ছিল বেশি। কিন্তু এখন চীন-ইউরোপ রেলওয়ে দিয়ে মাত্র ১০ থেকে ১৫ দিনে চীন থেকে পোল্যান্ডে পৌঁছানো যায়।"

চীন-ইউরোপ রেলওয়ে চালু হওয়ার কয়েক বছরে, বিশেষ করে গত বছর প্রেসিডেন্ট সি'র পোল্যান্ড সফরের পর, এ রেলপথটি আরও জনপ্রিয় হয়। চীনা ব্যবসায়ীরা পোল্যান্ড থেকে পণ্যদ্রব্য কিনে এ পথে চীনে পাঠাচ্ছেন। এ পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। তবে, রেলপথে মালামালের পরিবহনব্যয় আরও কম হওয়া দরকার, পরিসেবাও উন্নত হওয়া জরুরি। এ সম্পর্কে দং চিয়ান মিন বলেন, "রেলওয়ে'র উন্নয়ন 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের সাথে সম্পর্কযুক্ত। রেলওয়ে সহযোগিতা সংস্থা অব্যাহতভাবে চীন-ইউরোপ রেলওয়ে করিডোর নির্মাণকাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং ট্রানজিট প্রক্রিয়া সহজতর করার চেষ্টা করবে। বর্তমানে পরিবহন আইন কার্যকর করতে কাগজের ব্যবহার হয়। এতে গোটা প্রক্রিয়াটি হয়ে গেছে কঠিন ও জটিল। এতে ভুলের পরিমাণও বেশি হয়। এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আমরা এখন আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহনব্যবস্থাকে ডিজিটালব্যবস্থায় উন্নীত করার চেষ্টা করছি। সংস্থাটিতে এখন সংস্কারকাজ চলছে। ইংরেজি সংস্থার সরকারি ভাষা হিসেবে নির্ধারিত হবে।"

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040