সুর ও বাণী: সুরকার ও গায়ক ছাং শি লেই
  2017-06-06 17:43:50  cri


প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, আপনারা চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান শুনছেন। আমি আনন্দী বেইজিং থেকে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজকের 'সুর ও বাণী' আসরে চীনের তরুণ সুরকার ও গায়ক ছাং শি লেইয়ের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো।

ছাং শি লেই

বন্ধুরা, এখন আপনারা শুনছেন ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের থিম সং 'আমি আর তুমি'। গানের কথা লিখেছেন ছাং শি লেই, মা ওয়েন, ও চেন ছি কাং। গানটির সুর করেছেন চেন ছি কাং। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী লিউ হুয়ান ও ব্রিটিশ গায়িকা সারাহ ব্রাইটম্যান গানটি গেয়েছিলেন। তাদের দ্বৈতকন্ঠে গানটি গোটা বিশ্বের দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। কিন্তু এ গানটি প্রথমে গেয়েছিলেন চীনের তরুণ গায়ক ছাং শি লেই। তিনি বেইজিং অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সংগীতদলের কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে এ গানটি গেয়ে প্রধান পরিচালক চাং ই মৌ'র মন জয় করেন। অলিম্পিক গেমসের পর তিনি পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে সরাসরি মঞ্চে ওঠেন এবং একজন গায়ক হিসেবেও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন।

ছাং শি লেই ১৯৮১ সালের ২১ জুলাই কুয়াংতোং প্রদেশের কুয়াংচৌ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাঁচ বছর বয়স থেকে ইলেক্ট্রনিক কিবোর্ড বাজানো শিখতে শুরু করেন। নয় বছর বয়স থেকে পিয়ানো বাজাতে শেখেন এবং অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন। ১৯৯৩ সালে তিনি শাংহাই সংগীত ইনস্টিটিউটের অধীনস্থ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হন। তখন থেকে তার দশ-বারো বছরের আনুষ্ঠানিক সংগীত শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ১৯৯৯ সালে তিনি শাংহাই সংগীত ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন।

২০০৮ সালের অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছাং শি লেই থিম সং গাওয়ার সুযোগ না-পেলেও, তার কণ্ঠস্বর প্রধান পরিচালক চাং ই মৌ'র নজর কাড়ে। ২০১০ সালে চাং ই মো 'হথর্ন গাছের প্রেম' শীর্ষক চলচ্চিত্র তৈরির সময় ছাং শি লেইয়ের কণ্ঠ ব্যবহার করেন। চলচ্চিত্রটির টিকিট বিক্রি হয় ১৬ কোটি ইউয়ান মূল্যের। তা ছাড়া, এটি চীনের 'হুয়াং বিয়াও' অ্যাওয়র্ডের শ্রেষ্ঠ কাহিনীচিত্র পুরস্কার লাভ করে। ছাং শি লেই এ চলচ্চিত্রে ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডের একটি গান গেয়েছেন। মর্মস্পর্শী এই গানটি তিনি ১৬ বার রেকর্ডং করেন।

ছাং শি লেই আর চাং ই মৌ

চীনের সংগীতজ্ঞ ইয়ু বিন হান একবার ছাং শি লেইয়ের বাসায় গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, 'আমি অনেক সুরকারের বাসায় গিয়েছি। তবে ছাং শি লেইয়ের বাসা আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছে। শয়নকক্ষ হচ্ছে তার কর্মশালা। বিছানার পাশে তার বাদ্যযন্ত্রগুলো। তার জীবনের অনেকটাই কেবল ঘুম আর সংগীতের সাথে জড়িত। ইনি তার গোটা জীবন সংগীতের জন্য উত্সর্গ করেছেন। সাফল্য তার জন্য ছিল অপরিহার্য ব্যাপার।'

বন্ধুরা, এবার শুনুন হংকংয়ের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী লি ই লিয়ানের গাওয়া 'গেয়া' গানটি। ছাং শি লেই এ গানটির সংগীত পরিচালক। তিনি একই নামের অ্যালবামের সকল গানের সংগীত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন এবং এর জন্য ২৪তম তাইওয়ান গোল্ডেন মেলোডি অ্যাওয়ার্ডসের শ্রেষ্ঠ অ্যালবাম প্রযোজক ও শ্রেষ্ঠ সংগীত অ্যারেন্‌জারের পুরস্কার লাভ করেন।

২০০৮ সালে চীনের সিনিয়র গীতিকার ওয়াং পিং চিউ'র মাধ্যমে ছাং শি লেই হংকংয়ের বিখ্যাত গীতিকার লিন সি'র সঙ্গে পরিচিত হন। প্রথম সাক্ষাতেই তারা সংগীত নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন। আলাপ করার সময় আবেগে কখনও কখনও তার চোখ বেয়ে জল পড়েছে। লিন সি বুঝতে পারেন, এ ছেলে সত্যি সত্যি সংগীত ভালোবাসে। তিনি ছেলেটির মধ্যে নিজের যৌবন দেখতে পান। পরে, ২০১২ সালে, এ দু'জন শিল্পীর যৌথ প্রচেষ্টায় সৃষ্টি হয় গান 'ফাঁকা'। লিন সি গানটির কথা লিখেছেন; ছাং শি লেই দিয়েছেন সুর। গানটি সে বছরের সেরা দশটি জনপ্রিয় গানের অন্যতম হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে। শুনুন ওয়াং ওয়ান চি'র গাওয়া এ গানটি।

ছাং শি লেই আর লিন ই লিয়ান

সংগীত মহলে ছাং শি লেই যথেষ্ঠ স্বীকৃতি পেয়েছেন; হয়েছেন পুরস্কৃত। তবে সাধারণ দর্শক ও শ্রোতাদের কাছে ছাং শি লেই খুব একটা পরিচিত নাম নয়। কারণ, তিনি দীর্ঘকাল ধরে পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করেছেন। ২০১২ সালে তিনি শাংহাই টিভির এক সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে অংশ নেন। তখন অনেকে তার গান শুনে অবাক হন।

বন্ধুরা, এবার শুনুন ছাং শি লেই'র গাওয়া 'বিশ্ব আমার অপেক্ষায় আছে'। গানটি চীনের শিশু-নিরাপত্তা ও শিশু-স্বপ্ন বাস্তবায়নসংশ্লিষ্ট একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের থিম সং।

২০১৪ সালে হংকংয়ের শিল্পী মো ওয়েন ওয়েইর বাবা মারা যান। পিতাকে হারানো ব্যথা মো ওয়েন ওয়েইর মনে জীবন সম্পর্কে নতুন অনুভূতি সৃষ্টি করে। তিনি ভাবলেন, মানুষের জীবন হচ্ছে মিলনের পর বিচ্ছেদ এবং তারপর আবার মিলনের একটি চক্র। তার এ চিন্তাভাবনা তুলে ধরে গীতিকার লি চো সিয়াং'বিচ্ছিন্ন না-হওয়া, দেখা না-করা' শীর্ষক একটি গান লেখেন। ছাং শি লেই এ গানে সুর করেছেন। ২০১৫ সালে ছাং শি লেই এ গানের জন্য ২৬তম তাইওয়ানের গোল্ডেন মেলোডি অ্যাওয়ার্ডসের শ্রেষ্ঠ সুরকার পুরস্কার পান।

জ্যাকি চ্যান বলেন, ছাং শি লেইয়ের সংগীত অতি পবিত্র ও পরিষ্কার। তিনি খুব সরল মানুষ।

সুরকার সি খ্য বলেন, ছাং শি লেইয়ের সংগীত শ্রোতাদের মন স্পর্শ করে এবং তাদের বিস্মিত করে।

বন্ধুরা, অনুষ্ঠানের শেষে শুনুন ছাং শি লেইয়ের লেখা গান 'তোমার শুভ কামনা করে বেইজিং'। গানটিতে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে লন্ডন অলিম্পিক গেমসের শুভ কামনা করা হয়েছে। ২০১২ সালের ২২ জুলাই এ গানটি ইন্টারনেটে প্রচারিত হলে, ৩৩ ঘন্টার মধ্যে ৫০ লাখ হিট হয়।

প্রিয় বন্ধুরা, এতোক্ষণ আপনারা চীনের তরুণ সুরকার ও গায়ক ছাং শি লেই সম্পর্কে জানলেন, শুনলেন কয়েকটি গান। আশা করি, অনুষ্ঠানটি আপনাদের ভালো লেগেছে। 'সুর ও বাণী' আসর আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। ভালো থাকুন সবাই। আবার কথা হবে। (ইয়ু/আলিম)

২০১৭/৬/৬

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040