পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিরত
  2017-06-26 16:45:21  cri


মাস ব্যাপী রোজা পালন শেষে গতকাল ও আজ (সোমবার) অনেক মুসলিন দেশে ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে। সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, ইয়েমেন, ইরাক, জর্দান, লেবানন, ফিলিস্তিন, মিশর, লিবিয়া, আলজেরিয়া ও সুদান গতকাল(রোববার) জাকজমকপূর্ণভাবে ঈদ পালন করেছে। ওমান ও মরক্কো আজ(সোমবার) ঈদ পালন করছে। বাংলাদেশর আকাশে গতকাল শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ দেখা যাওয়ায় আজ সেখানে ঈদ পালন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে চীন আন্তর্জাতিক বেতারের পক্ষ থেকে আমাদের সকল শ্রোতা বন্ধুদের ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ঈদ মোবারক।

রুবি: মহসীন, এবারে আপনি প্রথমবারের মতো চীনে ঈদ পালন করছেন? চীনেও অনেক মসলমান বসবাস করেন? বেইজিংয়ে বেশ কয়েকটি মসজিদ আছে। এখানে আপনি কীভাবে ঈদ পালন করছেন? একটু বলুন তো?

মহসীন: রুবি শ্রোতা বন্ধুদের এবং আপনাকে পবিত্র ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা।ঈদ মোবারক। আপনি যেমনটি বলছিলেন বেইজিং এ এটি আমার প্রথম ঈদ। পৃথিবীর অন্যতম বড় এই মহানগরীতে কিন্তু বেশ কয়েকটি মসজিদ আছে। শ্রোতা বন্ধুদের জানিয়ে রাখি, চীনে কিন্তু মুসলিম জাতি গোষ্ঠীর সংখা খুব কম নয়। এখানকার ৫৬ টি জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে ১০ টির মানুষ মুসলিম। যে কথা বলছিলাম, বেইজিং এ এটি আমার প্রথম ঈদ। আমার কর্মস্থল এবং বাসা সিজিংসান জেলা থেকে বেশী দূরে নয় হাইতিয়ান মসজিদে সকালে ঈদের নামাজ পড়েছি। দুপুরে এক সহকর্মীর বাসায় আমারা একত্রিত হয়েছি। সেখানে আমারা সবাই মিলে দুপুরের খাবার খেয়েছি। খাবারে আমাদের দেশের মতই বিভিন্ন পদ সেমাই , পায়েস এইসব ছিল। পরিবার ও বন্ধু- বান্দবদের মিস করছি। এছাড়া ভালই কাটছে আমার ঈদ। তবে বাংলাদেশে ঈদ উদযাপনের একটা অনুষঙ্গ সালামী দেওয়া এবং পাওয়াটা মিস করছি।

রুবি: বাংলাদেশে থাকার সময় কিভাবে ঈদ পালন করেন?

বাংলাদেশে ঈদ উদযাপনটা একটু ভিন্ন রকম। এই ঈদ অর্থাৎ ঈদ উল ফিতরের আনন্দটা শুরু হয় আগের দিন সন্ধ্যা থেকে। পশ্চিম আকাশে ঈদের নতুন চাঁদ দৃশ্যমান হওয়ার সাথে সাথে মানুষ আনন্দে ফেটে পড়ে।

ঈদের দিন সকালে নতুন জামা পড়ে মুরব্বীদের সালাম করে সবাই রওনা হয় ঈদগার দিকে। নামাজ শেষে মৃত পিতা মাতা, আত্মীয় স্বজনের কবর জিয়ারত করে সবাই বাড়ী ফিরে। বাড়ীতে সেমাই, আরও নানারকম মিষ্টান্ন, উন্নত খাবার ইত্যাদি তৈরি করা হয়। সবাই মিলে মজা করে খাওয়া হয়। তবে সব চেয়ে বেশী মজা করে বাচ্চারা। নতুন জামা কাপড় পড়ে অনেক সাজগোছ করে তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যায়।

মহসীন: রুবি, আপনি উল্লেখ করেছেন যে, চীনেও অনেক মসলমান বসবাস করেন, এ সম্পর্কে কিছু বলবেন।

মহসীন : জি। চীনের সর্বশেষ এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, দেশটিতে বর্তমানে মোট ২ কোটিরও বেশি মুসলমান বসবাস করেন, যা চীনের মোট জনসংখ্যাড় ১.৬৪ শতাংশ, চীনের সংখ্যালঘু জনসংখ্যার ১৯.৩১ শতাংশ এবং বিশ্বের মোট মুসলমানের ১.৭ শতাংশ। চীনের মসলমানরা প্রধানত সিন চিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে বসবাস করেন। এখানে এক কোটিরও বেশি মুসলমান বাস করে। এ অঞ্চলে মসজিদের সংখ্যা ২৪শটিও বেশি। এর পর নি সিয়া হুই জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে ২৫ লাখ মসলমান বসবাস করে এবং মসজিদের সংখ্যা ৪ হাজারটি। বেইজিং নগরীতে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ ৯ হাজার দু'শ জন। এ মহানগরে থাকে দুটি হু জাতির জেলা, জেলা দুটি হচ্ছে থোং চৌ ইয়ু অঞ্চলের চিয়া উ হু জাতির জেলা এবং ছাও ইয়াং অঞ্চলের ছাং ইং হুই জাতির জেলা। মহসীন, আপনি বেইজিংয়ের মসজিদে গিয়েছেন? এ সম্পর্কে কিছু বলবেন?

মহসীন: জি, আমি সকালে হাইতিয়ান মসজিদে নামাজ পড়েছি। অনেক মানুষ সেখানে জমায়েত হয়েছিলেন। মসজিদটি বেশ বড় এবং সুসজ্জিত।

রুবিঃ বিশ্বের নানা দেশের মসলমান আনন্দের সঙ্গে ঈদ কাটাচ্ছেন। কিন্তু কাতারের নাগরিকদের জন্য এ ঈদে অন্য বছরের ঈদের তুলনায় একটু আলাদা। সম্প্রতি সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে এবং দেশটির ওপর বিশেষজ্ঞা আরোপ করেছে।

কাতারের মসলমানরা জাকজমকপূর্ণভাবে ঈদ পালনের পাশাপাশি বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

কাতার একটি প্রবাসী দেশ। ২২ লাখের জনসংখ্যায় ৮০ শতাংশ লোক ভিন্ন দেশের প্রবাসী। এখানে অনেক চীনা প্রবাসী বসবাস করেন।

কাতারের পরিস্থিতি কেমন হবে আমরা অব্যাহতভাবে নজর রাখবো। এ পরিস্থিতিতে চীনের চে চিয়াং প্রদেশের সু লি পিং উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কাতারের ওপর যে নিষেধাজ্ঞ আরোপিত হয়েছে, তা তার ব্যবসার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। কারণ তার কোম্পানির অধিকাংশ মালামাল দুবাই থেকে আমদানি করা হয়। এখন তিনি দুবাই্ থেকে আর মালামাল আমদানি করতে পারছেন না। সু লি পিং বলেন, এভাবে ৩ থেকে ৫ মাস চললে তাঁর ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাবে।

সম্প্রতি সম্পর্ক পুনরায় প্রতিষ্ঠার জন্য কাতারের প্রতি ১৩টি দাবি জানিয়েছে সৌদি আরব দেশসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। এ পর্যন্ত কাতার সে দাবির জবাব দেয় নি। তবে দু একটি দাবী যেমন, আল জাজিরা টেলিভিশন চানেল বন্ধ করার দাবীর ব্যাপারে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন, এটি তাঁর দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।

কাতার সংকটের পরবর্তীতে কোন দিকে মোড় নেয় আমরা অব্যাহতভাবে নজর রাখছি। আশা করি এ সমস্যা তাড়াতাড়ি সমাধান হবে এবং অঞ্চলটির শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আসবে। (ওয়াং তান হোং/মহসীন)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040