শিক্ষা সম্পর্কিত খবর
  2017-07-03 14:27:35  cri
১. কাঠমন্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার দশম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে সেমিনার

সম্প্রতি নেপালের কাঠমন্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার দশম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক বিশেষ সেমিনার আয়োজিত হয়। নেপালে নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের রাজনৈতিক কাউন্সিলার ইয়াং শি ছাও, কাঠমন্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুরেশ মান শ্রেষ্ঠা, চীনের হোপেই চিংমাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিউ চিয়ান পিং এবং কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের চীনা পরিচালক ওয়াং শেং লি সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।

চীনা রাজনৈতিক কাউন্সিলার ইয়াং বলেন, ২০০৭ সালে কাঠমন্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট নেপালে প্রথম চীনা সংস্কৃতি প্রচারের বহুমুখী এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অতীতে নেপালের জনগণের কাছে চীনা ভাষা শেখা ছিলো খুব কঠিন একটি বিষয়। তবে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর শিক্ষক ও বইসহ এখানে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয় পূরণ করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন এখন কাঠমন্ডুতে চীনা ভাষা শিখতে পারছেন এবং চীনা সংস্কৃতিও জানতে পারছেন।

কাঠমন্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুরেশ মান শ্রেষ্ঠা বলেন, কাঠমন্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার দশম বার্ষিকীর বিশেষ তাত্পর্য রয়েছে। কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট হলো ভবিষ্যতে নেপাল ও চীনের পেশাগত ও সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ এক প্ল্যাটফর্ম।

উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত নেপালে মোট ৪টি কনফুসিয়াস ক্লাসরুম ও ১৪টি চীনা ভাষার প্রশিক্ষণবিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে। দেশটিতে বর্তমানে চীনা ভাষার শিক্ষার্থীর মোট সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি।

২. সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের গ্রামে দোভাষী শিক্ষকের সংখ্যা ৬০ হাজারেরও বেশি

চীনের শহর ও গ্রামাঞ্চলের বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের সুষম উন্নয়ন বাস্তবায়নের জন্য বিগত ৫ বছরে চীনের সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে অনেক বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য অঞ্চলটির থিয়ানশান পাহাড়ের আশেপাশের গ্রামাঞ্চলের কিন্ডার গার্টেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে ৬০ হাজারেরও বেশি দোভাষী শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে।

সিনচিয়াং উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের শিক্ষা বিভাগ থেকে জানা গেছে, স্থানীয় অঞ্চলের গ্রামে শিক্ষক সংকট সমাধানে গত ৫ বছরে শিক্ষক নিয়োগব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা চীনা ভাষা ও সিনচিয়াংয়ের উইগুর ভাষা বলতে পারেন। শিক্ষকদের স্থায়ীভাবে গ্রামাঞ্চলের স্কুলে চাকরি করার জন্য ২০১০ সাল থেকে তাদের খাওয়া, বাসস্থান ও বেতনসহ বিভিন্ন ভর্তুকি বৃদ্ধি করেছে স্থানীয় সরকার। এর সঙ্গে সঙ্গে সিনচিয়াংয়ের ১ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি গ্রামের শিক্ষকদের বেতন বাড়াতে মাসিক ২০০ ইউয়ান ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের সবচেয়ে দরিদ্র ও প্রত্যন্ত এলাকার ১ লাখেরও বেশি গ্রামের শিক্ষকদের বার্ষিক ৮৪০০ ইউয়ান কর্ম ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে স্থানীয় অঞ্চলে যে শিক্ষক সংকট ছিলো তা এখন দূর হয়েছে।

৩. মালয়েশিয়ায় চোং চিং মেডিকেল একাডেমি প্রতিষ্ঠিত

চীনের হোনান চীনা ঐতিহ্যিক চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয় ও মালয়েশিয়ার লিনটন বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে মালয়েশিয়ায় চোং চিং মেডিকেল একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তির কাজ শুরু হয়েছে।

চাং চোং চিং চীনের একজন বিখ্যাত চিকিত্সক ছিলেন। তিনি চীনের ঐতিহ্যিক চিকিত্সা পদ্ধতি গবেষণা করেন এবং অনেক রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। মূলত তার নাম অনুসারেই এ একাডেমির নামকরণ করা হয় চোং চিং মেডিকেল একাডেমি।

চীনের হোনান ঐতিহ্যিক চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যালয়ের পরিচালক সুন কে শিং বলেন, মালয়েশিয়ায় চোং চিং একাডেমি প্রতিষ্ঠা দু'দেশের চিকিত্সাবিষয়ক বিনিময় ও সহযোগিতার একটি অংশ, তা দু'দেশের চিকিত্সা ও চীনা ঐতিহ্যিক ওষুধের অভিন্ন উন্নয়নের জন্য সহায়ক।

মালয়েশিয়ায় শিক্ষার্থী ভর্তি করার পাশাপাশি চীনের হোনান প্রদেশও ঐতিহ্যিক চীনা চিকিত্সা ও চীনা ও পাশ্চাত্য মেডিসিন বিষয়ে প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। তারা তিন বছর মালয়েশিয়ায় এবং শেষ দু'বছর হোনানে লেখাপড়া করবেন।

পরিচালক সুন আরো বলেন, ভবিষ্যতে চোং চিং মেডিকেল একাডেমি চিকিত্সা বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ, বাস্তব অনুশীলন, বিজ্ঞানসম্মত গবেষণাসহ উচ্চ মানের দক্ষ চিকিত্সকদের কেন্দ্র ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রাকৃতিক উদ্ভিদবিষয়ক ওষুধের গবেষণারে পরিণত হবে।

দু'পক্ষের সহযোগিতামূলক চুক্তি অনুসারে, দুই বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে ঐতিহ্যিক চীনা উদ্ভিদবিষক ওষুধের আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ চালু, ঐতিহ্যিক চীনা ওষুধের চিকিত্সা সেবা ও স্থানীয় অঞ্চলের মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ প্রাকৃতিক উদ্ভদবিষয়ক ওষুধ গবেষণা ও প্রয়োগ করবে, যাতে দু'দেশের ঐতিহ্যিক চিকিত্সাবিষয়ক বিনিময় বাস্তবায়ন করা যায়।

৪. টেকসই উন্নয়নে শিক্ষাদানের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে জাতিসংঘের উদ্যোগ

পুঁজি বাড়ানো, নারী ও পুরুষের সমান অধিকার ও শিক্ষাদানের নব্যতাপ্রবর্তনসহ বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের ২০৩০ টেকসই উন্নয়নে শিক্ষাদানের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করা হবে বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট পিটার থমসন ও ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভাসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা। ২৮ জুন জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় তারা এ উদ্যোগের কথা জানান।

থমসন বলেন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি শিক্ষাদান। সহনশীল ও সমান গুণগতমানসম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণ ও সকলের সারা জীবনের লেখাপড়ার সুযোগ প্রদান-এমন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করতে চাইলে আরো বেশি প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

জাতিসংঘের উপমহাসচিব আমিনা জে. মোহাম্মদ বলেন, শিক্ষার টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে চাইলে সারা বিশ্বে বিশেষ পুঁজি ও অর্থ সহায়তা দিতে হবে।

তিনি বলেন, অস্থায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অনলাইন প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বিভিন্ন পদ্ধতিতে দূরবর্তী এলাকা ও শরণার্থী শিশুদের শিক্ষার সুযোগ প্রদান করতে হবে এবং মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্য আরো বেশি সুযোগ দিতে হবে। তিনি বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে চেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান।

ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা বলেন, শিক্ষা গ্রহণ মানুষের মৌলিক অধিকার। শিক্ষা সহনশীল ও টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি এবং ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষা গ্রহণে নারীরা অনেক সমস্যা ও বাধার সম্মুখীন হন। এ অবস্থার পরিবর্তন না করলে শিক্ষার টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। শিক্ষাকে বিভিন্ন দেশের সরকারের বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।(সুবর্ণা/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040