ওজন কমাতে সহায়ক ফল
  2017-08-13 18:42:10  cri

আধুনিক জীবনে সবাই ওজন নিয়ন্ত্রণে সচেতন। হ্যাঁ, কেউ কেউ আরো ওজন কমাতে চান। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো উপায় আছে কি? সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইটে 'ওজন কমাতে সহায়ক ফল' শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আজকের জীবন যেমন অনুষ্ঠানে আমরা এ বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো।

এরকম ৯টি ফলের খবর পাওয়া গেছে। প্রথম ফলটি হলো।

কলা

আমরা জানি, এক বোল চালে ১৬০ ক্যালরি আছে। তবে একটি কলায় মাত্র ৮০ থেকে ১০০ ক্যালরি থাকে। যদি প্রত্যেক বেলায় এক বোল চাল বা ভাতের পরিবর্তে কলা খান, তাহলে ওজন কমাতে পারবেন আপনি। এভাবে প্রতিদিন শরীর থেকে ২০০ থেকে ৩০০ ক্যালরি কমানো সম্ভব। আরেকটি কথা, কলা খেলে পেট ভরে যায়। কলায় যেমন সমৃদ্ধ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন রয়েছে, তেমনিও ত্বক মসৃণ করে কলা। আপনার রক্তে সুগার লেভেল ঠিক রাখে কলা। গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিদিনকার খাদ্যাভ্যাসে কলা রাখলে ৪০% স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়! তা ছাড়া, ভিটামিন বি৬, বি১২, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম শরীর থেকে নিকোটিনের প্রভাব দূর করতে সাহায্য করে। সুতরাং, ধূমপান ছেড়ে দেবার জন্য কলা'র জুড়ি নেই। পটাশিয়াম আপনার হার্টবিট ঠিক রাখে। অক্সিজেন মস্তিষ্কে নিয়মিত পৌঁছে দেয়, শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে। যা প্রচুর পরিমাণে কলায় পাওয়া যায়।

আপেল:

আপেল বলতে গেলে সবার পরিচিত। আপেল ওজন কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আপনি তিনদিন ধরে আপেল ও পানি পান করুন। দেখবেন, তিন দিন পর আপনার ওজন ৩ থেকে ৫ কিলোগ্রাম কমে যাবে। কিন্তু, এই তিন দিন শুধুমাত্র আপেল আর পানি, এই দুটো ছাড়া আরও কিছুই খাওয়া যাবে না। অন্য কিছু খেলে এ পদ্ধতি অকার্যকর হয়ে পড়বে। কারণ আপেলের মধ্যে প্রচুর ফুড ফাইবার, যা আপনার পাকস্থলী ও কোলন পরিষ্কার রাখবে। সেই সঙ্গে, আপেলের পটাসিয়াম প্রস্রাবের দ্রুত প্রবাহে ভূমিকা পালন করে। আপেল ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক। এভাবে মাসে একবার করাই যথেষ্ট। তা নাহলে শরীর দুর্বল হয়ে যাবে।

"An apple a day, keeps the doctor away"

অন্যান্য ফলের মত আপেলের চিনি রক্তের চিনির মাত্র বাড়িয়ে দেয় না| ফলে diabetes এর রোগীরা নিশ্চিন্তে পরিমাণমত আপেল খেতে পারেন |

আপেলে কোনো লবন নেই, তাই আপেল থেকে অতিরিক্ত লবন খাবার কোনো সম্ভাবনা নেই|

আপেলে সামান্য ভিটামিন সিও আছে| তাই আপেল রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে | তাছাড়া ভিটামিন সি তাড়াতাড়ি রোগ সারাতে সাহায্য করে|

টমেটো:

একটি ১২০ গ্রাম ওজনের টমেটোতে ৩০ ক্যালোরি আছে, পানির পরিমাণ ৯৫ গ্রাম, প্রোটিন ১.৫ গ্রাম, চর্বি ০.৩ গ্রাম, শর্করা ৬.৩ গ্রাম এবং ফাইবার ১.৪ গ্রাম। এ ছাড়া, টমেটোতে আরও সমৃদ্ধ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন সি, ভিটামিন ইসহ বিভিন্ন পদার্থ রয়েছে। শুধু টমেটো সরাসরি ওজন কমাতে ভূমিকা পালন না করলেও এর ক্যালরি খুবই কম এবং এটি খেলে পেটের ক্ষুধা চলে যায়। সুতরাং, প্রতিবার খাবার খাওয়ার আগে একটি টমেটো খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ছাড়া, টমেটোর আরো কিছু উপকারিতা আছে। যেমন, ক্যানসার কোষ বিনষ্টকারী প্রাকৃতিক অ্যানটি-অক্সিডেনট এর প্রাকৃতিক উৎস হল টমেটো। তাই ক্যান্সারের ঝুঁকি রোধে খেতে পারেন টমেটো।

টমেটোতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি। হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে টমেটো খাওয়ার বিকল্প নেই।

টমেটোতে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনকে, যা দেহের হাড় মজবুত করে এবং ভাঙ্গা হাড়কে জোড়া লাগায় দ্রুততার সঙ্গে।

টমেটো একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। এতে যে ভিটামিন এ রয়েছে, সেটা রাতকানা রোগ নিরাময় করে।

টমেটোতে যেই পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে, সেটা আমাদের চুল পড়া কমায় এবং চুলকে মজবুত করে।

যাদের কিডনিতে সমস্যা রয়েছে, তারা আজ থেকেই খাদ্যতালিকায় টমেটো রাখবেন। কারণ হলো, টমেটো কিডনিতে পাথর জমতে দেয় না।

আনারস

আনারস খেয়েও ওজন কমানো যায়। তবে একটু সচেতন হওয়া উচিত। কারণ আনারসের প্রোটিন আলাদা করে ইউরিয়া। এটি মুখের শ্লৈষার ঝিল্লীর ক্ষতি করে। যদি এ কষ্ট সহ্য করতে পারেন, তাহলে আনারস খেয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করতে পারেন। উপায়টি খুবই সহজ, দিনে তিনবেলা খাবারের মধ্যে শুধু একবেলা মূল খাবার হিসেবে আনারস খাবেন। এক সপ্তাহ পর, দেখবেন, ওজন অন্তত ২ থেকে ৩ কিলোগ্রাম কমে গেছে।

জাম্বুরা

জাম্বুরা দেখতে গোলাকার, মোটাসোটা। অথচ এ ফলটিই আপনার-আমার ওজন কমিয়ে দেবে। চমত্কার, তাইনা?  কীভাবে? সেটি হলো, তিনবেলা খাবারে অর্ধেক জাম্বুরা থাকতে হয়। এটিই হলো ডায়েট চার্ট। এ কাজটি পর পরই ১২দিন করতে হবে। তারপর দুই দিন গ্যাপ দিয়ে আবারও একটা ১২ দিনের সিরিজ শুরু করতে হবে।

ড্রাগনফল

বাংলাদেশ ও ভারতের বাজারে এখন ড্রাগনফল দেখতে পাওয়া যায়, তাইনা ? এটি সাধারণত তিন রকমের হয়। কোনোটার খোসা রক্তবর্ণ, ভেতরে সাদা। একটির খোসা লাল রঙের, ভেতরেও লাল রঙের। আর অন্যটির খোসা হলুদ রঙের, ভেতরে ফল সাদা রঙের। পুষ্টির দিক থেকে হলুদ খোসার ড্রাগনফল সবচেয়ে ভালো। এ ফলে সমৃদ্ধ খনিজ পদার্থ রয়েছে। ১০০ গ্রাম ড্রাগনফলে ৬০ ক্যালরি রয়েছে। যা আপেলের চেয়ে একটু বেশি। তবে ভিটামিন সি'র পরিমাণ আপেলের তিন গুণ। ওজন কমাতে চাইলে, ড্রাগনফল একটা ভালো সিদ্ধান্ত, তাইনা?

এবার আমরা একটি খাবারের কথা বলবো

কলা, ভিনেগার ও ব্রাউন সুগারের মিক্স।

কলার সঙ্গে ভিনেগার মিক্স করা। কখনো শুনেছেন? হ্যাঁ, এটি জাপানের একটি খাবার। ধীরে ধীরে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ভিনেগারসহ এক কাচের পাত্রে কলা ভিজিয়ে রাখুন। তিন বেলা খাবারের সময় প্রত্যেকবারে তিন চামচ কলা ও ভিনেগার খান। হ্যাঁ, কখন খেতে পারেন ? আপনি খাবারের আগে বা পরে খেতে পারেন। এভাবে অতিরিক্ত চর্বি দূর করা সহায়ক। এর স্বাদ আপনার পছন্দ না হলে, তাহলে খাবারে আপনি কিছুটা ব্রাউন সুগারও দিতে পারেন। তাহলে খেতে আরও ভালো লাগবে।

স্ট্রবেরি

কোমরে বা পেটে চর্বি জমেছে? যদি এ সমস্যা আপনার থাকে, তাহলে এখনই থেকে স্ট্রবেরি খাওয়া শুরু করেন। কারণ স্ট্রবেরির মধ্যে এক ধরনের পদার্থ আছে, যা কোমরের অতিরিক্ত পানি ও অতিরিক্ত চর্বি দূর করতে সহায়ক। গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের অনেক সুপারস্টার এভাবে উপকার পেয়েছেন কিন্তু।

তা ছাড়া স্ট্রবেরির আরো কিছু দারুণ উপকারিতা আছে। যেমন,

স্ট্রবেরিতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি; যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন রকম সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। মাত্র এক কাপ স্ট্রবেরি প্রতিদিনের ভিটামিন সি'র চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।

দেখতে কিছুটা হার্টের মত এই ফলটিতে আছে প্রচুর পরিমাণ ফ্ল্যাভনয়েড ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এ উপাদান গুলো শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদপিন্ড ভালো রাখে। এছাড়াও স্ট্রবেরি রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা ঠেকায়।

অন্য সব ফল ও সবজির মত স্ট্রবেরিতেও আছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এ ছাড়াও স্ট্রবেরিতে আছে লুটেইন ও জিয়াথানাসিন যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি হ্রাস করে। এতে উপস্থিত ভিটামিন সি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

স্ট্রবেরির ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে বিভিন্ন ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া নিয়মিত স্ট্রবেরি খেলে ত্বকে সহজে বার্ধক্যের ছাপ পরে না।

আলুবোখারা বা পাম

আলুবোখারাতে ক্যালোরির পরিমাণ কম। যা খেতে একটু তিক্ত। ১০০ গ্রাম আলুবোখারায় ৩৬ ক্যালরি রয়েছে। মাঝে মাঝে আলুবোখারা খাওয়া আমাদের পেট ও পাকস্থলীর জন্য ভালো। আলুবোখারা হজমে সহায়ক। আলুবোখারার মধ্যে প্রচুর ফাইবার ও ভিটামিন সি রয়েছে। গ্রীষ্মকালে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে আলুবোখারা খুবই ভালো।

(ওয়াং হাইমান/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040