নানলিং গ্রামের দারিদ্র্যমুক্তির গল্প
  2017-08-05 19:27:05  cri

হুয়াং খে ফেং হলেন কুয়াংসি চুয়াং জাতির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ছংজুও শহরের থিয়ানদেং জেলার থুওশেন থানার নানলিং গ্রামের একজন বাসিন্দা। একদিন সকাল নয়টা। তিনি তার গোয়ালের প্রায় এক ডজন গবাদিপশুকে খাওয়ানোর কাজ শেষ করেছেন। এখন তার স্ত্রীর সঙ্গে গল্প করার পালা। তিনি বললেন, "কয়েক বছর আগেও এখানে কোনো মানুষ গবাদিপশু লালন-পালন করতো না। তখন ভুট্টার খোসাগুলো আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হতো। কারণ, সেগুলো কোনো কাজে লাগতো না। কিন্তু এখন লোকজন গবাদিপশু লালন-পালন করে। ভুট্টার খোসা এখন খুব কাজে লাগে।"

হুয়াং খে ছিয়াংর পরিবার আগে থুওশেন থানার দরিদ্র পরিবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। গবাদিপশু লালনের মাধ্যমে তাঁর পরিবার দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, "গবাদিপশু লালন করা আসলে কঠিন। সকালে ও বিকালে দু'বার পশুগুলোকে খাওয়াতে হয়। দু'মাসে একবার খামারটি পরিষ্কার করতে হয়।"

হুয়াং খে ফেং'র গবাদিপশুর খামারটির আয়তন ৩শ' বর্গমিটার। তার খামারে কোনো দুর্গন্ধ নেই। তাঁর উত্সাহে তার দুই প্রতিবেশীও গবাদিপশু লালন শুরু করেন। তিনি বলেন,  

"আমার খামারে ১৫টি গবাদিপশু আছে। এগুলোর মধ্যে আমার ১৩টি, বাকি দু'টি হল প্রতিবেশীর। আগে আমি অন্য খামারে পশু লালনপালনের কৌশল শিখেছি। তারপর নিজেই খামার দিয়েছি। স্থানীয় সরকার আমাদের ভর্তুকি দিয়ে থাকে। আমরা একেকটি গবাদিপশু কিনেছি দুই হাজার ইউয়ান করে। এখন প্রতিটির মূল্য ১০ হাজার ইউয়ান করে হবে।"

থুওশেন থানা থিয়ানদেং জেলার অন্তর্গত। থিয়াদেং চুয়াং জাতির ভাষায় 'থুওশেন' মানে 'দাঁড়ানো পাথর'। গোটা থানায় পাহাড় অনেক। সেজন্য ফসলের জমি খুবই কম। থুওশেন থানায় গবাদিপশু লালন-পালনের ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু গতানুগতিক পদ্ধতিতে গবাদিপশু লালনপালন করে তারা দারিদ্র্যের কবল থেকে রেহাই পায়নি।

বেনবেন খামারটি স্থানীয় সরকার নির্মাণ করেছে। এ খামারেই হুয়াং খে ফেং পশুপালনের কৌশল শিখেছেন। তিনি বলেন, চায়না লাইফ-এ তার বীমা করা আছে। তাঁর খামার নির্মাণের অর্থ এখান থেকে এসেছে। নিয়ম অনুযায়ী, ঋণ নিতে হলে দুর্ঘটনা বীমা করতে হয়। এ বীমার প্রিমিয়াম হয় ঋণের ০.৩ শতাংশ। উদাহরণস্বরূপ, ৫০ হাজার ইউয়ান ঋণ নিতে চাইলে, ১৫০ ইউয়ান প্রিমিয়ামের বীমা করাতে হবে। মাত্র ১৫০ ইউয়ানও তখন হুয়াং খে ফেং'র জন্য ছিল অনেক টাকা।

চায়না লাইফ ও থিয়াদেং জেলার স্থানীয় সরকার যৌথভাব জেলাটির সকল দরিদ্র পরিবারের জন্য বীমার প্রিমিয়াম ফি যোগান দেয়। হুয়াং খে ফেং এই ৫০ হাজার ইউয়ান ঋণ নিয়ে বেনবেন খামারে কাজ শুরু করেন। তিনি সেখানে চারটি গবাদিপশু লালন করতে থাকেন। ২০১৬ সালে তাঁর মোট আয় হয় ৩৫,৩২০ ইউয়ান আরএমবি।

গত বছর থিয়ানদেং জেলায় একটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ উদ্যোগের আওতায় হুয়াং খে ফেং গত মে মাসে নিজস্ব খামার গড়ে তোলেন। নতুন খামারের প্রতি বর্গমিটারের জন্য তিনি ২০০ ইউয়ান করে ভর্তুকি পান। হুয়াং খে ফেং'র খামার প্রায় তিন শ' বর্গমিটার আয়তনের। তিনি খামারটি নির্মাণে ভর্তুকি পেয়েছেন ৬০ হাজার ইউয়ান। এ বছর হুয়াং খে ফেং'র দু'টি সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপাড়ার ফি তাকে বহন করতে হবে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "সন্তানের লেখাপড়ার খরচ আছে। তবে, মাত্র দু'টি গরু বিক্রি করেই আমি সে খরচ বহন করতে পারবো।"

বেনবেন ছাড়াও থুওশেন থানায় আরেকটি খামার আছে। এটি হচ্ছে দাহুয়ানানলিং খামার। চায়না লাইফ ৫ লাখ ইউয়ান ব্যয়ে দাহুয়া গবাদিপশুর খামারটি গড়ে তোলে। এ খামারের সাথে বেনবেনের পার্থক্য আছে। এ খামারে লোকেরা ব্যক্তিগতভাবে গবাদিপশু লালনপালন করতে পারে না। তারা বরং অর্থ বিনিয়োগ করে এ খামারের অংশীদার হতে পারে। অন্যভাবে বললে, যে কেউ ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার ইউয়ান ঋণ নিয়ে দাহুয়া খামারে বিনিয়োগ করতে পারে। এতে বছরে তারা জনপ্রতি ৪ হাজার ইউয়ান করে লভ্যাংশ পেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে চুক্তি হবে তিন বছরের। চুক্তিশেষে ব্যক্তি তার পুরো অর্থ ফেরত পাবেন।

দাহুয়া কোম্পানির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার থাং সং ইউন বলেন, কোম্পানিটি খুব বেশি দিন হয়নি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই গবাদিপশু লালন ও বিক্রির ক্ষেত্রে এটি যথেষ্ট অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, "আমাদের কোম্পানি ২০১২ সালে ছংজুও শহরের চিয়াংচৌ এলাকা প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের সদর সফতরে গবাদিপশু আছে ২ হাজারেরও বেশি। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি থুওশেন থানায় নিয়ে এসেছি।"

মাস্টার চাও ও তাঁর স্ত্রী দাহুয়া কোম্পানির কর্মী। তারা খামারটিতে ৪০টি গরু লালনপালনের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর স্ত্রী বলেন, "আমি এখানে কাজ করছি প্রায় এক বছর। আমি গত সেপ্টেম্বরে এখানে কাজ শুরু করি। আমার কাজ হল গরু লালন করা, খামারটি পরিষ্কার করা ও হিসেব রাখা।"

থাং সং ইউন বলেন, "সাধারণত ৭০-৮০টি গরু দু'জন লালনপালন করতে পারেন।"

থুওশেন থানার কমিউনিস্ট পার্টি কমিশনের সম্পাদক নং ওয়েন চিয়ে বলেন, ভুট্টার বোঁটা ও পাতা দিয়ে পশুর খাদ্য তৈরী করা হয়। থুওশেন থানায় ২৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফসল চাষ হয়। এর মধ্যে ২৪ বর্গকিলোমিটার জমিতেই ভুট্টা চাষ হয়। এই ভুট্টার পরিত্যক্ত অংশ পশুখাদ্য তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া, পশুর বিষ্ঠা জমিতে সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফলে খামার থাকে পরিষ্কার। এ সম্পর্কে নং ওয়েন চিয়ে বলেন, "আমরা বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে খামারকে দুর্গদ্ধমুক্ত রাখি। পশুর বিষ্ঠা প্রক্রিয়াকরণের পর সার হিসেবে বিক্রি হয়।"

আসলে নং ওয়েন চিয়ে গবাদিপশু লালন-পালনের ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ। গত নভেম্বরে নানলিং গ্রাম দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। এতে নং ওয়েন চিয়ে অনেক অবদান রেখেছেন। তিনি বলেন, "নানলিং গ্রামে একটি দরিদ্র পরিবার ছিল। পরিবারে দু'টি সন্তান রয়েছে। স্বামী কুয়াংতংয়ে কাজ করেন। স্ত্রী গবাদিপশু লালন করতে চাচ্ছিলেন না। পরে অবশ্য তিনি দু'টি গবাদিপশু লালন করেন এবং এতে পরিবারের আয় বৃদ্ধি পায়। এখন তাঁর একেকটি গরু ১০ হাজার ইউয়ানে বিক্রি হতে পারে। সেজন্য তিনি আরও দু'টি গরু লালন করছেন। তাঁর পরিবারের অবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে।"

পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত বছর নানলিং গ্রামে মাথাপিছু আয় ছিল ৪৮৬৯ ইউয়ান, যা ২০১৫ সালের চেয়ে ৯.৯ শতাংশ বেশি। বর্তমানে নানলিং গ্রামে ৭টি গবাদিপশুর খামার আছে এবং আরও তিনটি নির্মিত হচ্ছে। গোটা গ্রামের ২৪৫টি পরিবার ৮২৬টি গরু লালন করে।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040