চলুন বেড়িয়ে আসি'ঝর্ণার নগর' -চি নান
  2017-08-18 15:54:53  cri

 

চি নান, চীনের শান তোং প্রদেশের রাজধানী। এক কথায় প্রদেশটির রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাকেন্দ্র হলো চি নান। শহরটির বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে চোখ-ধাঁধানো অনেক ঝর্ণা। আর সেজন্য শহরটিকে 'ঝর্ণার নগর' বলেও ডাকা হয়। শহরটি চীনের বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক শহর। পর্যটকদের কাছে এটি চীনের উত্কৃষ্ট পর্যটন শহর হিসেবে পরিচিত।

চি নান শহরের আয়তন ৮১৭৭.২১ বর্গকিলোমিটার। ২০১৫ সাল পর্যন্ত এর জনসংখ্যা ছিল ৭০.৬ লাখ। শহরের কেন্দ্র থেকে মাত্র ২৮ কিলোমিটার দূরে চি নান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অবস্থিত। এখান থেকে প্রতিদিন বেইজিং, ছাং শা, ছেং দু, ছোং ছিং, কুয়াং চৌ, হাংচৌ, হারবিন, খুনমিং, নান চিং, শাংহাই, শেন ইয়াং, শেন জেন, উ হান ও সিয়া মেনসহ বিভিন্ন শহরের উদ্দেশে বিমান আকাশে ওড়ে। ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর চিন নান-তাই পেই সরাসরি নিয়মিত ফ্লাইট চালু হয়। চি নান থেকে তাইওয়ানের হুয়া লিয়ান, সিউল, ব্যাংকক, হংকং ও সিঙ্গাপুরগামী নিয়মিত ফ্লাইটও আছে।

চি নানে রয়েছে শক্তিশালী দ্রুতগতির রেলপথ। বেইজিং থেকে দ্রুতগতির ট্রেনে বিমানের চেয়েও সহজে চি নানে পৌঁছানো যায়। রাজধানী বেইজিংয়ের দক্ষিণ রেলস্টেশন থেকে মাত্র দেড় থেকে দু'ঘণ্টায় পৌঁছানো যায় পর্যটনকেন্দ্র চি নানে। দ্বিতীয় শ্রেণীর টিকিট ১৮৪.৫ ইউয়ান এবং প্রথম শ্রেণীর টিকিট ৩১৪.৫ ইউয়ান।

কেনাকাটা

চি নান শহরের কালো মৃত্শিল্প, সবুজ চীনা পেঁয়াজ, ভুট্টা, মালকড়ি এবং "লু" নামক সূচিকর্ম অনেক বিখ্যাত। তাই ঘুরে বেড়ানোর সময় ইচ্ছেমতো কিনে নিতে পারেন পছন্দের এসব জিনিস। এ ছাড়া, চিন নান শহরে নানা শপিং মল আছে। শহরটির বিখ্যাত ছুয়ান ছেং মহাচত্বরে অবস্থিত হেং লুং শপিং মলে উচ্চ মানের বিভিন্ন কাপড় ও পণ্য পাওয়া যায়। এই মলে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও অনেক ভালো।

থাকার ব্যবস্থা

চি নানে বিভিন্ন ধরনের বহু হোটেল রয়েছে। তারকা পর্যায়ের হোটেল প্রায় ৫০টি। ৫ স্টার হোটেলের ভাড়া ৬০০ ইউয়ানের কম নয়। ৪ স্টার হোটেলের ভাড়া ৩২০ ইউয়ানের মতো। ৩ স্টার হোটেলের ভাড়া ২২০ ইউয়ান, ২ স্টার হোটেলের ১৬০ ইউয়ান, এবং ১ স্টার হোটেলের স্ট্যান্ডার্ড রুম সাধারণত একশ ইউয়ানের মতো ভাড়া।

চি নানের কিছু দর্শনীয় স্থান

 

তা মিং হ্রদ

তা মিং হ্রদ চি নানের একটি বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান। প্রাচীনকালে হ্রদটিতে পদ্ম ছিল। দু'বছরের সম্প্রসারণকাজের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর এই হ্রদটি আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা হয়। এটি ছিল তা মিং হ্রদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকারের সম্প্রসারণ ও মেরামত কাজ।

নতুন দর্শনীয় অঞ্চলে নতুন করে ৮টি দর্শনীয় স্থান বাড়ানো হয়। এ ছাড়া, নতুন করে চি নানের ঐতিহ্যবাহী লোক-রীতিনীতিসংশ্লিষ্ট ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। শহরবাসীরা তা মিং হ্রদ রোড থেকে শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা আরেক আকর্ষণীয় হ্রদের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। পুরনো দর্শনীয় স্থানটিতে বেড়াতে গেলে আপনাকে ৩০ ইউয়ানের টিকিট কাটতে হবে। কিন্তু নতুন দর্শনীয় স্থান সবার জন্য উন্মুক্ত। আর পুরো অঞ্চলটি গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াতে আপনার ১০ ইউয়ান খরচ হবে।

 

পাও থু ঝর্ণা

পাও থু ঝর্ণা চি নানের একটি প্রাকৃতিক ঝর্ণা। এই ঝর্ণা দর্শকদের জন্য দিনরাত সবসময় উন্মুক্ত থাকে। একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, পার্কের দক্ষিণ প্রবেশদ্বারের বোর্ডে ছিং রাজবংশের সম্রাট ছিয়ান লোংয়ের 'পাও থু ঝর্ণা' শিরোনামে লেখা রয়েছে। ঝর্ণার পানি দিয়ে বানানো চা খুবই মজার। পুরো এলাকাটি ঘুরে বেড়াতে ৪০ ইউয়ানের টিকিট কাটতে হয়।

 

ছিয়ান ফৌ শান বা হাজার বুদ্ধ পাহাড়

চীনের সুই রাজবংশের সময় শান তোং প্রদেশে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচলিত ছিল। ধর্মানুরাগীরা পাহাড়ের দেয়ালে পাথর খোদাই করে 'হাজার বুদ্ধ' নামের একটি মন্দির নির্মাণ করেছিল। তাই পাহাড়টির নাম 'হাজার বুদ্ধ পাহাড়' বা ছিয়ান ফৌ শান। পাহাড়ের পূর্বে বুদ্ধের মাথার একটি ভাস্কর্য আছে। এর উচ্চতা ৭ মিটার, প্রস্থ ৪ মিটারেরও বেশি। এটিকে 'বড় বুদ্ধের মাথা' বলে ডাকা হয়। এখানে যেতে টিকিট কাটতে হয়। টিকিটের দাম ৩০ ইউয়ান।

শহরের চারপাশ দিয়ে বয়ে চলা দর্শনীয় লেক

চিন নান শহরের চারপাশ দিয়ে বয়ে চলা দর্শনীয় লেকটি ২০০৯ সালের ১৮ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। এরপর থেকে শহরবাসী ও পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই লেক। পর্যটকরা প্রমোদতরীতে করে পুরো লেকটি ঘুরে দেখতে পারেন। লেকটি বেড়ানোর পথে হেই হু বা কালো টাইগার ঝর্ণা, ছুয়ান ছেং মহাচত্বর, পাও থু ঝর্ণা এবং তা মিং হ্রদসহ বিভিন্ন সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এ লেকের মধ্য দিয়ে খুব কাছ থেকে ঝর্ণা নগরের বৈশিষ্ট্যময় আকর্ষণীয় দৃশ্য অনুভব করা যায়। লেকটি ঘুরে দেখতে ৩০ মিনিট লেগে যাবে।

কালো টাইগার ঝর্ণা

কালো টাইগার ঝর্ণা হচ্ছে শহরটিতে নৌ-ভ্রমণের প্রবেশদ্বার। এখান থেকে প্রমোদতরীতে করে তা মিং হ্রদ পর্যন্ত ভ্রমণ করা যায়। পুরো যাত্রার টিকিট ৭৫ ইউয়ান। তবে এর পথে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে গেলে, আলাদা টিকিট কাটতে হবে।

রাতে ছুয়ান ছেং মহাচত্বরে বেড়ানো খুব আনন্দদায়ক। আয়তনে এ মহাচত্বরটি অনেক বড়। রাতের রঙিন আলোকসজ্জায় এলাকাটি আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। আর এর নিকটেই রয়েছে চমত্কার খাল, যেখানে নৌকায় ভ্রমণ করা যায়।

(রুবি/আলিম/স্বর্ণা)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040