প্রসঙ্গ: চীনের সিয়ামেনে ব্রিক্সের আসন্ন নবম শীর্ষসম্মেলন
  2017-08-19 20:28:51  cri

ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের নবম শীর্ষসম্মেলন আগামী ৩ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর চীনের সিয়ামেনে অনুষ্ঠিত হবে। ব্রিক্সের পালাক্রমিক সভাপতিরাষ্ট্র হিসেবে চীন এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। এসব কর্মসূচি আয়োজিত হচ্ছে 'ব্রিক্সের অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গভীরতর করা এবং উজ্জ্বলতর ভবিষ্যত সৃষ্টি'—এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে।

সম্প্রতি চীনের ছুয়ানচৌতে আয়োজিত 'ব্রিক্স দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রশাসনসংক্রান্ত আলোচনা সভা' হচ্ছে এ ধরনের একটি অনুষ্ঠান। এ সভায় চীন, রাশিয়া, ভারত, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইথিওপিয়া ও মেক্সিকোসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।

গত দশ বছর ধরে বৈশ্বিক আর্থিক সংকট বিভিন্ন দেশের উন্নয়নের পথে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিদ্যমান ছিল। উক্ত সময়কালে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ছিল অত্যন্ত মন্থর। এ প্রেক্ষাপটে চীন ও ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে শেখার আছে অনেককিছু। আলোচনা সভায় বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

অধ্যাপক স্মরণ সিং

ভারতের নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক স্মরণ সিং আলোচনা সভায় বলেন, "চীনের দেশ-প্রশাসন পদ্ধতি গোটা বিশ্বের সামনে ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অর্থনীতিতে দ্রুত প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখার পাশাপাশি চীন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দারিদ্র্যবিমোচনের ক্ষেত্রেও লক্ষ্যণীয় সুফল পেয়েছে। এ সভায় চীনা প্রতিনিধিরা দেশ-প্রশাসনের নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও সফলতা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। উন্নয়নশীল দেশগুলো এ থেকে শেখার সুযোগ পেয়েছে।"

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব-এশিয়া গবেষণা ও সমাজবিজ্ঞান একাডেমির পরিচালক শ্রীমতি চক্রবর্তী বলেছেন, চীন-ভারত সহযোগিতার ভিত্তি মজবুত এবং দু'দেশের অভিন্ন উন্নয়নের লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার কৌশলগত চাহিদাও আছে। দু'পক্ষের উচিত মতভেদগুলো পাশে সরিয়ে রেখে, অভিন্ন স্বার্থগুলোকে আমলে নেওয়া এবং উন্নয়নের জন্য একযোগে কাজ করা।

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং 'ব্রিক্স চেতনা' হিসেবে 'উন্মুক্তকরণ, সহনশীলতা, সহযোগিতা, ও সকলের সফলতা'-র কথা বলেছেন। এ চেতনার আলোকে ব্রিক্সভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃযোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রচুর সফলতাও অর্জিত হয়েছে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব-এশিয়া গবেষণা ও সমাজবিজ্ঞান একাডেমির পরিচালক শ্রীমতি চক্রবর্তী বলেন, "যে-কোনো দেশের সচেতন জনসাধারণ ও সরকার সহজেই বুঝতে সক্ষম যে, ব্রিক্স দেশগুলোর অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গোটা বিশ্বের জন্য কল্যাণকর। তা ছাড়া, বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় এই পাঁচটি দেশ পরস্পরের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, ব্রিক্সের ভবিষ্যত অত্যন্ত উজ্জ্বল।"

অর্থনীতিবিদ লিউ ইয়োং

চীনের জাতীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ লিউ ইয়োং শ্রীমতি চক্রবর্তীর সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, "ব্রিক্স দেশগুলোর উচিত পরস্পরের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা, অর্থনৈতিক কাঠামো সুবিন্যস্ত করার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, ব্রিক্স দেশগুলো বৈশ্বিক অবস্থানকে মধ্য-নিম্ন স্থান থেকে মধ্য-উচ্চ স্থানে উন্নীত করা চেষ্টা অব্যাহত রাখা, বিনিয়োগ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করা, পারস্পরিক বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজতর করা, আর্থিক খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করা, এবং পারস্পরিক মুদ্রা বিনিময়ের ঝুঁকি কমানো। আমাদের সকলের প্রয়াসে, পরবর্তী দশ বছর ব্রিক্স দেশগুলোর জন্য আরও কল্যাণ সৃষ্টি হবে বলে আমার বিশ্বাস।"

ভারত-চীন মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি তরুণ ভিজে

ভারতের পালার্মেন্টের ভারত-চীন মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি তরুণ ভিজে বলেন, "আমাদের উচিত সব কাজকে মানবজাতির সেবা ও জীবনকে আরও সুন্দর করার লক্ষ্যে নিবেদিত করা। এটা হলো ব্রিক্স ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য। প্রেসিডেন্ট সি'র উত্থাপিত 'অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি' ধারণার সাথে এটি সংগতিপূর্ণ।"

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং একবার বলেছিলেন, 'ব্রিক্স দেশগুলো পাঁচটি আঙুলের মতো।... একসাথে মিলে হয় একটি শক্ত মুষ্টি।' আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারীদের প্রায় সবার বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট সি'র বক্তব্য প্রতিফলিত হয়েছে। তারা বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলো শুধু আন্তরিকতা নিয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করলে এবং বিভিন্ন ইস্যুতে একাট্টা থাকলে বড় ধরনের উন্নয়ন সম্ভব। তারা বিশ্বাস করেন, সিয়ামেন শীর্ষসম্মেলন ব্রিক্স সহযোগিতা আরও জোরদারের ক্ষেত্রে আরেকটা সূচনা হতে পারে এবং এর মাধ্যমে শুরু হতে পারে ব্রিক্সের পরবর্তী 'স্বর্ণ দশক' সৃষ্টির প্রক্রিয়া। (ইয়ু/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040