১৯তম সিপিসি জাতীয় কংগ্রেস সংক্রান্ত বিশেষ সাক্ষাত্কার-দিলীপ বড়ুয়ার বক্তব্য
  2017-12-13 09:17:26  cri


সুপ্রিয় শ্রোতা, সাপ্তাহিক 'খোলামেলা' অনুষ্ঠানে আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, আমি ইয়াং ওয়েই মিং-স্বর্ণা। স্বর্ণ শরত্কালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এ অধিবেশনে চীনের নতুন নেতৃগ্রুপ গঠিত হবে। এবারের অধিবেশন চীন আর বিশ্বের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।

গত পাঁচ বছরে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে চীনে চোখে পড়ার মতো কী কী পরিবর্তন সাধিত হয়েছে? বিশ্বে চীনের ভূমিকা কিভাবে মূল্যায়ন করা যায়? সব বিষয় নিয়ে কথা বলছি বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী)-এর মহাসচিব দিলীপ বড়ুয়ার সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশের সাবেক শিল্পমন্ত্রী।

নিচে জনাব দিলীপ বড়ুয়ার সাক্ষত্কারের গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-

আমি মনে করি, সিপিসির জাতীয় গণকংগ্রেস আগামী বিশ্ব রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে, চীনের অভ্যন্তরীণ সমাজ বিনির্মাণে, সমাজতন্ত্রের উত্তরণকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে, এবং মার্ক্সসবাদকে চীনা প্রেক্ষাপটে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা জানি মার্ক্সবাদ হচ্ছে একটা সামাজিক বিজ্ঞান এবং এই বিজ্ঞানের সৃষ্টিশীলতার মূল বিষয় হচ্ছে অনুশীলন।চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এর সৃষ্টিলগ্ন থেকেই এই অনুশীলন অব্যাহত রেখেছে। চীনা কমিউন্টি পার্টির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, প্রতিটি কংগ্রেসের কতোগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সমাজ বিনির্মাণে ও মার্ক্সসবাদেকে এগিয়ে নিতে এসব সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমার ধারণা, ১৯তম কংগ্রেসেও চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে সিপিসি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করবে।

সিপিসির ১৮তম কংগ্রেসে দু'টি মৌলিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল: সমৃদ্ধশালী চীন গড়ে তোলা এবং সকল ক্ষেত্রে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ আরও গভীরতর করা। এর ভিত্তিতেই অর্থবহ ও সার্বিক উন্নয়ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে চীন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের কৌশলেও চীন পরিবর্তন ঘটিয়েছে। উন্নয়ন-কৌশলে সৃজনশীলতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ গভীরতর করায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশগ্রহণ বেড়েছে। জনগণের জানমালের সুরক্ষায় ও জীবনমান উন্নয়নে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি কাজ করা হয়েছে। আরও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যাতে সমাজের সকলে উন্নয়নের সুফল সমভাবে ভোগ করতে পারে।সরকার আইনের শাসনের উপর আরও বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। দেশের আইনী ব্যবস্থা আরো উন্নত করেছে। সামাজিক সুবিচার ও সমতা রক্ষায় সচেষ্ট থেকেছে চীনা সরকার।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টি রাষ্ট্রীয় পরিচালন ব্যবস্থা উন্নয়ন, সমাজতন্ত্র বিনির্মাণ, মানবিক সমাজ উন্নয়নের লক্ষ্যে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি সিপিসি মার্ক্সসবাদের তত্ত্বকে আরও উন্নত করে চীনা বৈশিষ্ট্যের সমাজতন্ত্রকে আরও উন্নত ও টেকসই করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি চীনা নেতৃত্ব সিপিসি'তে বাই প্রডাক্ট হিসেবে সৃষ্টি দুর্নীতি উচ্ছেদ করতে সচেষ্টা থেকেছেন। চীনা নেতৃত্ব এতে সফল হয়েছে। সিপিসির ১৮তম কংগ্রেসের পর চীন সরকার বিশাল সাফল্য অর্জন করেছে। আমি আশা করি, ১৯তম কংগ্রেসেও মার্ক্সবাদকে আরও বিকশিত করার উপাদান পাওয়া যাবে।

চীনা মডেল তথা অর্থনীতির চীনা মডেল সম্পর্কে চীনা নেতারা বলেন, চীনা মডেল রফতানি করার জিনিস নয়। তবে, অন্য দেশগুলো এ থেকে উপকৃত হতে পারে। নিজস্ব বৈশিষ্ট্যময় মডেলে চীনা মডেলের উপাদান যোগ করা যেতে পারে। তা ছাড়া, চীনা মডেল অনেক দেশই অনুশীলন করবে না। চীনা মডেল অনুসরণের জন্য চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মতো শক্তিশালী পার্টি থাকা দরকার। এ ধরনের পার্টি যদি কোনো দেশের ক্ষমতায় যায়, তবে চীনা মডেল সেখানে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

আমি বিশ্বাস করি, সিপিসি মার্ক্সসবাদের আলোকে সমাজ বিনির্মাণ করতে এবং সমন্বিত ও মানবিক সমাজ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। সিপিসি সি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ চীনকে কাবু করার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। শত্রুরা ভিতরে ঢুকে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। আরেকটা চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, অটোমেশানের ক্ষেত্রে দ্রুতগতিতে এগুনোর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। শ্রমবাজারের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বা পড়তে পারে, সেটা মোকাবিলা করাও হবে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আর উন্নয়নের ফলে চীনা সমাজেও একটা বড় গ্রুপ বেড়ে উঠছে, যাদের সুবিধা বেশি, সামর্থ্য বেশি। শত্রুরা যেন এই অংশটিকে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে না-পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

বাংলাদেশের জনগণের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ মানুষ চীনকে মিত্র বলে বিশ্বাস করে। অন্য কোনো দেশের এ প্রিভিলেজ নেই। চীন-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীন আরও বেশি বিনিয়োগ করতে পারে বাংলাদেশে। সামরিক, প্রশাসনিক, ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আদান-প্রদান বাড়ানো যেতে পারে। এতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। (স্বর্ণা/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040