আজকের টপিক-১০ অক্টোবর
  2017-10-17 10:18:06  cri


মুক্তা- শ্রোতা বন্ধুরা বেইজিং গণ মহাসম্মেলন কেন্দ্রে আগামী বুধবার শুরু হচ্ছে কমিউনিষ্ট পার্টি অব চায়না বা সিপিসি'র উনবিংশ তম কংগ্রেস। সারা দেশ থেকে …প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশ নিবেন। তাঁরা নির্বাচিত করবেন আগামী পাঁচ বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব। যাদের হাতে থাকবে দেশ পরিচালনার গুরু দায়িত্ব।

বিশ্বে চীন এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি। কৃষি, শিল্প, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান প্রতিটি ক্ষেত্রে চীন অর্জন করেছে প্রণিধানযোগ্য সাফল্য। মানুষের জীবনমানে এসেছে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন। চীনের উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মর্যাদাপূর্ণ স্থান অধিকারে আসন্ন এই কংগ্রেস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্ধুরা আজকের টপিক অনুষ্ঠানে আমরা আপনাদেরকে সিপিসি এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় এই দলের সাফল্যের কারণ সমন্ধে অবহিত করব।

চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি চীনের শ্রমিক শ্রেণীর অগ্রনী বাহিনী। চীনা জনগণ ও চীনা জাতির অগ্রনী বাহিনী। চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি চীনের স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতান্ত্রিক ব্রতের প্রধান নেতৃস্থানীয় শক্তি। চীনা কমিউনিষ্ট পার্টি চীনের অগ্রনী উত্পাদন শক্তির ধারক। চীনের উন্নত সংস্কৃতির অগ্রগতি আর চীনের জনসাধারনের মৌলিক স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে।

 চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির সর্বোচ্চ আদর্শ ও চুড়ান্ত লক্ষ্য হলো সাম্যবাদ বাস্তবায়ন করা। চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির সনদে বলা হয়েছে, মাক্সবাদ-লেনিনবাদ, মাও সে তুঙ চিন্তাধারা, তেং সিয়াও পিং তত্ব আর তিন প্রতিনিধিত্বের গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাধারা হচ্ছে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির পথ নির্দেশক।

মহসীন ভাই, আপনি কি শ্রোতাদের সিপিসির ইতিহাস সম্পর্কে কিছু বলবেন ?

মহসীন- ১৯২১ সালের জুলাই মাসে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। একই বছরের ২১ থেকে ৩১ জুলাই সিপিসি চীনের শাংহাইতে প্রথম বারের মত প্রতিনিধি সম্মেলন আয়োজন করে। তখন সদস্য ছিল মাত্র ১৩ জন। তখন ছিল প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময়কাল। ১৯২১ সাল থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির নেতৃত্বে চীনা জনগণ কঠোর সংগ্রাম চালিয়ে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ আর আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের শাসন উচ্ছেদ করে গণ প্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠিত করে। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি সমগ্র চীনের বিভিন্ন জাতির জনগনকে পরিচালিত করে দেশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সমুন্নত রেখেছে, সাফল্যের সংগে চীনকে নয়া গনতান্ত্রিক দেশ থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশে রুপান্তরিত করেছে, চীনে সুপরিকল্পিতভাবে বিরাটাকারের সমাজতান্ত্রিক গঠনকাজ চালিয়েছে, ফলে চীনের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্রতে অভুতপূর্ব বিরাট উন্নতি হয়েছে।

 ১৯৫৬ সালে সিপিসি অষ্টম প্রতিনিধি সম্মেলন আয়োজন করে। সেটি ছিল গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর প্রথম বারের মত পূর্ণাঙ্গ প্রতিনিধি সম্মেলন।

 ১৯৭৬ সালের অক্টোবর মাসে তথাকথিত "সাংস্কৃতিক বিপ্লবের" অবসান ঘটার পর চীন এক নতুন ঐতিহাসিক উন্নয়ন পর্বে প্রবেশ করে। ১৯৭৮ সালের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত পার্টির ১১তম জাতীয় কংগ্রেসের তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর সুগভীর তাত্পর্যসম্পন্ন মহত্ রুপান্তর সম্পন্ন করা হয়েছে।

১৯৭৯ সাল থেকে চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি তেং সিয়াও পিংয়ের উথ্থাপিত সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর করতে শুরু করে। সংস্কার অভিযান শুরু হওয়ার পর চীনের জাতীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার মত বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমুল পরিবর্তন ঘটেছে, এই সময়পর্ব নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর সবচেয়ে ভালো সময়পর্ব। এই সময়পর্বে জনসাধারণ সবচেয়ে বেশী সুযোগসুবিধা পেয়েছেন।

মুক্তা, আপনি কি শ্রোতা বন্ধুদের সিপিসির নীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলবেন ?

মুক্তা - চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি সক্রিয়ভাবে বিদেশের সংগে সম্পর্ক প্রসারের পক্ষপাতী। চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি চীনের সংস্কার, উন্মুক্ততা আর আধুনিকায়ন গঠনকাজের জন্য অনুকুল আন্তর্জাতিক পরিবেশ পাওয়ার প্রয়াস চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র শান্তিপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে। চীনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে, আধিপত্যবাদী শক্তির রাজনীতির বিরোধিতা করে, বিশ্বশান্তি অক্ষুন্ন রাখা আর মানবজাতির অগ্রগতি তরান্বিত করার প্রচেষ্টা চালায়। শান্তিপূর্ন সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতি অর্থাত্ পরস্পরের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখন্ডতার প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন, পারস্পরিক অনাক্রমন, পরস্পরের অভ্যন্তরীন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা, সমতা ও পারস্পরিক কল্যান আর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংগে সম্পর্ক প্রসার করেছে।

চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি ইতোমধ্যে পৃথিবীর ১২০টি দেশের তিনশরও বেশী রাজনৈতিক দলের সংগে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং বজায় রেখেছে।

মহসীন- মুক্তা শ্রোতা বন্ধুরা নিশ্চয়ই সিপিসির সদস্য এবং কীভাবে এই দলের সদস্য হওয়া যায় সে সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। আপনি কি সে সম্পর্কে কিছু বলবেন ?

মুক্তা- চীনের কমিউনিষ্ট পার্টি নিজের কর্মসুচী ও সনদ অনুসারে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতি অনুসারে সংগঠিত একটি রাজনৈতিক পার্টি। চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির সনদ অনুসারে চীনের শ্রমিক, কৃষক, সৈনিক, বুদ্ধিজীবী আর সমাজের অন্যান্য স্তরের অগ্রনী ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে, যারা কমিউনিষ্ট পার্টির কর্মসূচী ও সনদ স্বীকৃতি দেন, পার্টির একটি সংগঠনে অংশ নেন এবং সক্রিয়ভাবে কাজ করেন, পার্টির সিদ্ধান্ত মেনে নেন এবং নিয়মিতভাবে ফি জমা দেন, তারা চীনের পার্টিতে যোগ দেয়ার আবেদন জানাতে পারেন।

 চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সংগঠনের মধ্যে আছে পার্টির জাতীয় কংগ্রেস, কেন্দ্রীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরো, কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মন্ডলী, কেন্দ্রীয় কমিটির সামরিক কমিশন ও কেন্দ্রীয় কমিটির শৃঙ্খলা তত্ত্বাবধান কমিটি। পার্টির জাতীয় কংগ্রেস প্রতি পাঁচ বছরে একবার অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় কংগ্রেস শেষে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় কমিটি চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির সর্বোচ্চ নেতৃস্থানীয় সংস্থা।

চীনের কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্য সংখ্যা সাত কোটি, বর্তমানে সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং।

মহসীন ভাই, সিপিসির অসামান্য সাফল্যের রহস্য নিয়ে আপনার একটা লেখা সম্প্রতি আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। সিপিসির সাফল্যের কারণ নিয়ে আপনি শ্রোতা বন্ধুদের কিছু বলুন।

মহসীন- ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর সিপিসি অনেক বড় বড় বাঁধা সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করেছে। দৃঢ়ভাবে শিকড় আঁকড়ে ধরে উদ্ভাবনের সাথে এগিয়ে গিয়ে এই দল চীনকে বিশ্ব মঞ্চে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। বিশ্লেষকরা এই সাফল্যের পেছনে যেসব কারণ খুঁজে পেয়েছেন তা আমরা শ্রোতা বন্ধুদেরকে জানাতে পারি

মার্ক্সবাদে বিশ্বাস

বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক দলসমূহ তাদের ভাববাদী ভিত্তির প্রতি বিশ্বস্ত থাকাকে অত্যাবশ্যকীয় মনে করেছে। সিপিসিও এর ব্যতিক্রম নয়।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে 'মার্ক্সবাদ' এই দলের মৌলিক বিশ্বাস আর 'কমিউনিজম' এর শীর্ষ আদর্শ হিসেবে পরিগনিত হয়ে আসছে। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে সিপিসি এবং গোটা জাতিকে উন্নয়নের পথে পরিচালিত করার প্রয়াসে 'মার্ক্সবাদ' চীনা কমিউনিস্টদের উদ্ভাবিত সকল তত্ত্বের মূল ভিত্তি।

২০১৬ সালে সিপিসি'র ৯৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সমাবেশে সিপিসি'র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং মার্ক্সবাদ থেকে বিচ্যুতি অথবা তা পরিত্যাগের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, এ ধরণের মৌলিক পরিচালন তত্ত্ব ব্যতিরিকে দল তার আত্মা হারাবে, হারাবে সঠিক গতিপথ।

মানব কেন্দ্রিক উন্নয়ন

সিপিসির জন্ম হয়েছে জনগণের মধ্য থেকে। সুতরাং জনগণকেই এর শক্তি এবং প্রজ্ঞার উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

২০১২ সালে সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর গণমাধ্যমকে সি চিন পিং বলেছিলেন, "মানুষের সুখী জীবনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করাই আমাদের লক্ষ্য"।

সি বার বারই জোর দিয়ে বলেছেন যে, দলের সফল হওয়া নির্ভর করে জনগণের সমর্থনের ওপর।

১৯৭৮ সালে সংস্কার এবং উম্মুক্তকরণ নীতি গ্রহণের পর চীনে ৭০ কোটি মানুষ দারিদ্র থেকে মুক্তি লাভ করেছে। এই মুহূর্তের লক্ষ্য ২০২০ সালের মধ্যে সমগ্র দেশ থেকে দারিদ্র দূর করা।

ধারাবাহিক সংস্কার ও উদ্ভাবন

সংস্কার এবং উম্মুক্তকরণ নীতি উদ্ভাবন, নতুন ধারণা, পদ্বতি এবং নীতি প্রবর্তনে নব যুগের সূচনা করেছে সিপিসি।

সি'র নেতৃত্বে সার্বিক সংস্কার গভীরতর করার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব-গ্রুপ প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত ৩৮ টি সভা করেছে। দেশব্যাপী বর্তমানে ১ হাজার সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও তদারকি করা হচ্ছে।

অভ্যন্তরীণ দলীয় কঠোর পরিচালন ব্যবস্থা

দলের অভ্যন্তরে তদারকির জন্য সিপিসির গঠনতন্ত্র হচ্ছে ভিত্তি। স্বয়ংক্রিয় শৃঙ্খলা এবং কঠোর পরিচালন নীতি বজায় রাখতে গঠনতন্ত্রে বেশ কয়েকবার সংশোধনী আনা হয়েছে।

১৯৬২ সালে দল 'আত্ম-শৃঙ্খলা' নীতি প্রস্তাব করে। আর ১৯৮৫ সালে প্রস্তাব করে 'কঠোর অনুশাসন' নীতির। ২০১৪ সালে সি তুলে ধরেন যে, কঠোর এবং সার্বিকভাবে দলকে পরিচালনা করা একটি অত্যাবশ্যকীয় ব্যাপার।

কঠোর পরিচালন নীতি আর দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা সিপিসিকে শক্তিশালী হিসেবে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে।

যোগ্যতর ব্যক্তি নির্বাচন

সিপিসি সব সময়ই সঠিক এবং যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচন ও নিয়োগকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে আসছে।

অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর আধিকারিকদের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সংস্কার আরও গভীরতর করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, তাঁরা শুধু ভোট,নম্বর, বয়স অথবা তাঁর এলাকার অর্জিত জিডিপির ভিত্তিতে নয় বরং ব্যাপক সংখ্যক বাছাই সূচকের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রাপ্ত হন।

সি বলেন, 'দলের কাজ সুসম্পন্ন করতে বিস্তৃত ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে সদস্য সংগ্রহ করা গুরুত্বপূর্ণ'।

তিনি এ বৈচিত্রের গুরুত্ব বুঝেন কারণ দরিদ্র পীড়িত অঞ্চলের গ্রামের একজন কর্মকর্তা থেকে সিপিসি'র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে উন্নীত হয়েছেন সি।

মুক্তা - আসন্ন কংগ্রেসে নির্বাচিত নতুন নেতৃত্ব চীনের বিস্ময়কর উন্নয়নকে আরও সামনে নিয়ে যাবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

শ্রোতা বন্ধুরা, আজকের টপিক অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করব। আমাদের অনুষ্ঠান শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। (মুক্তা/মহসীন)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040