চুয়াং জাতির নারী তু লি ছুন। তিনি সাধারণ কাজে অসাধারণ সাফল্য লাভ করেছেন। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর সাথে তাঁর দু'বার দেখা হয়েছে। তু লি ছুন বলেন, 'প্রেসিডেন্ট সি জাতীয় ঐক্য এবং এইডস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ওপর বেশি গুরুত্ব দেন। আমাদের নিজেদের কাজগুলো ঠিকঠাকমতো না-করার কোনো কারণ নেই।'
৫২ বছর বয়সী তু লি ছুন কলেজ পাস করার পর নাননিং শহরের চতুর্থ গণহাসপাতালে নার্স হিসেবে যোগ দেন। ২০০৫ সালে হাসপাতালে এইডস বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি স্বেচ্ছায় বিভাগটির হেড নার্সের দায়িত্ব চেয়ে আবেদন জানান। এটি ছিল কুয়াংসি'র কোনো হাসপাতালের প্রথম এইডস বিভাগ। এরপর থেকেই তিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এইডস্ রোগীদের সেবা করে যাচ্ছেন। তিনি এইডস প্রতিরোধে বিশেষ এক পদ্ধতিও আবিষ্কার করেন। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে তু লি ছুন চীনের জাতীয় চিকিত্সা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি পুনরায় আন্তর্জাতিক নার্স হিসেবে সর্বোচ্চ পুরস্কার নাইটিংগেল পদক লাভ করেন।
তু লি ছুন নাইটিংগেল পদক লাভ করার কয়েক দিন পর প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তার সাক্ষাত হয়। সাক্ষাতে তার সঙ্গে ছিলেন অন্তর্মঙ্গোলিয়া, কুয়াংসি, তিব্বত, নিংসিয়া ও সিনচিয়াংয়ের ১৩ জন বিশিষ্ট প্রতিনিধিও। ব্যাপারটি তু লি ছুনের মনের ওপর একটি গভীর ছাপ ফেলে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আমাদের সঙ্গে আলাদাভাবে করমর্দন করেছেন। আমি প্রেসিডেন্ট সিকে ধন্যবাদ জানিয়েছি, আমাদের সবার প্রতি খেয়াল রাখার জন্য। আমি তাকে কুয়াংসি ভ্রমণে আসার জন্য নিমন্ত্রণ জানাই। প্রেসিডেন্ট সি আমার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। তিনি আমাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। আমরা প্রেসিডেন্ট সি'র সদয় ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছি।"
তু লি ছুন জানান, প্রেসিডেন্ট সি তাঁদেরকে জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন, "প্রেসিডেন্ট সি বলেন, 'আমরা চীনারা হচ্ছি একই পরিবার। চীনের ৫৬টি জাতি হচ্ছে এ পরিবারের সদস্য। জাতীয় ঐক্য বিভিন্ন জাতির জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের উচিত একসঙ্গে জাতির ও দেশের ঐক্য সুরক্ষা করা।' প্রেসিডেন্টের কথা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আগে আমি শুধু নিজের কাজটা ভালোভাবে করার কথা ভাবতাম। কিন্তু প্রেসিডেন্ট সি'র সঙ্গে আলাপের পর এখন আমার মনে জাতীয় ঐক্য সম্পর্কেও ভাবনার উদয় হয়েছে। আমি জাতীয় ঐক্য নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি।"
তু লি ছুন জানান, নাননিং শহরের চতুর্থ গণহাসপাতালে এইডস রোগীদের মধ্যে ৫০ শতাংশেরও বেশি হলেন সংখ্যালঘু জাতির মানুষ। তিনি তাঁদের যত্ন নেওয়ার সময়, তাদের সংস্কৃতি ও জীবনাচার সম্পর্কে সচেতন থাকেন। ফলে তাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক দ্রুত বন্ধুত্বের পর্যায়ে উন্নীত হয়।
তু লি ছুনের বিভাগে নিয়মিতভাবে রোগীদেরকে এইডস্সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান দেওয়া হয়; রোগীদের বিভিন্ন বিষয়ে সতর্ক করা হয়। গতবছর তাঁর নেতৃত্বে চীনের নাইটিঙ্গেল স্বেচ্ছাসেবী দলের কুয়াংসি শাখা ও কুয়াংসি রেড ক্রস নাইটিঙ্গেল স্বেচ্ছাসেবী দল প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি সবসময় জনসাধারণের মাঝে এইডস প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে জ্ঞান বিতরণ করেন এবং মাদকের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান। তাঁর হাসপাতাল কুয়াংসি'র বিভিন্ন জাতির শতাধিক চিকিত্সক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
তু লি ছুন বলেন, 'সীমান্তে ও সংখ্যালঘু জাতির অঞ্চলে এইডস রোগীর সংখ্যা বেশি। কুয়াংসি চীনের সীমান্তে অবস্থিত। আমি এখন কুয়াংসির সংখ্যালঘু জাতির এইডস রোগীদের সহজে সেবা দেওয়ার উপায় নিয়ে গবেষণা করছি। আমাদের লক্ষ্য, বিভিন্ন জাতির রোগীদের প্রয়োজনে অগ্রাধিকার দেওয়া। কোনো কোনো প্রত্যন্ত এলাকায়ও এইডস্ ছড়াতে পারে। তাই সেসব অঞ্চলের মানুষকেও এ রোগ সম্পর্কে সচেতন করা দরকার। আর যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের চিকিত্সার ব্যবস্থা করাও জরুরি।"
২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কুয়াংসি পরিদর্শনে আসেন। পরিদর্শনের সময় তিনি একটি আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন। তু লি ছুন সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট সি'র সামনে নিজের কাজ তুলে ধরেন। প্রেসিডেন্ট সি তাঁকে তখন বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এ সম্পর্কে তু লি ছুন বলেন, 'আমি নিজের কাজের সাথে প্রেসিডেন্টকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। তারপর প্রেসিডেন্ট সি আমাকে চারটি প্রশ্ন করেন। প্রশ্নগুলো ছিল: ১. এইডসে আক্রান্ত হবার প্রবণতা এখনো প্রবল কি? এইডস্-এর প্রকোপ কিছুটা কমেছে কি? ২. এখনও একই সূচের মাধ্যমে মাদক ব্যবহার করে এইডস্ আক্রান্ত হবার ঘটনা ঘটছে কি? ৩. বর্তমাননে এইডস্ রোগে মৃত্যুর হার কতো? ৪. ককটেল থেরাপির ফলাফল কেমন? প্রেসিডেন্ট সি'র প্রশ্নগুলো ছিল খুবই প্রাসঙ্গিক। প্রেসিডেন্ট ও ক্ষমতাসীন দলের প্রধান হিসেবে তার কতো কাজ! তারপরও তিনি এমন প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করেছেন!'
তু লি ছুন এখন আরো বেশি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করেন। তিনি তাঁর বিভাগের সকল নার্সের সঙ্গে অব্যাহতভাবে এইডস রোগীদের সেবা করে যাচ্ছেন। তু লি ছুন সিপিসি'র ঊনবিংশ জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবেও নির্বাচিত হন। একজন প্রতিনিধি হিসেবে তিনি বলেন, কুয়াংসিতে এইডস্ রোগের প্রকোপ মারাত্মক। এ অঞ্চলটি এইডস রোগীর সংখ্যার দিক দিয়ে চীনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তবে আগামীতে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। তিনি বলেন, 'আমাদের হাসপাতালে কর্মীদের মধ্যে ৮ জাতির মানুষ রয়েছে। সিপিসি'র জাতীয় ঐক্য নীতির আলোকে আমরা বিভিন্ন জাতির সহকর্মীরা একসঙ্গে এইডস প্রতিরোধে কাজ করছি। সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের কাজে নিয়োজিত একজন সংখ্যালঘু জাতির কর্মী হিসেবে আমি জানি যে, এইডস নির্মূল করা দীর্ঘমেয়াদি ও কঠিন কাজ। আমরা জীবনকে সম্মান করি।'