সুরের ধারায়--ইন্টারনেট সংগীত
  2018-01-25 14:39:39  cri



সংগীত বিভিন্ন রকমের হয়। রক সংগীত, পপ সংগীত, ব্যালেড সংগীত ইত্যাদি। তবে এসব ছাড়াও চীনে এক বিশেষ সংগীত শোনা যায়। সেটি হলো 'ইন্টারনেট সংগীত।' আজকের অনুষ্ঠানে চীনের 'ইন্টারনেট সংগীতে'র সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো।

ইন্টারনেট সংগীত-এই নাম থেকেই বোঝা যায়, ইন্টারনেটের সঙ্গে এর গভীর সম্পর্ক আছে। ইন্টারনেট সংগীত আসলে কি ধরনের সংগীত? ইন্টারনেট সংগীত আসলে নতুন কোনো সংগীতশৈলী নয়। বেশিরভাগ ইন্টারনেট সংগীত হলো পপ সংগীত। যেসব গান ইন্টারনেটে প্রকাশ করে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারিত ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, সেসব গানকে চীনারা ইন্টারনেট গান বলে।

অতীতে গান শুনতে হলে রেডিও, টেপ বা সিডি প্রয়োজন হতো। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে, চীনে ইন্টারনেটের দ্রুত উন্নয়ন হয়। অনেকের এখন নিজস্ব কম্পিউটার ও এমপিথ্রি প্লেয়ার রয়েছে। ইন্টারনেট থেকে গান ডাউনলোড করে এমপিথ্রি দিয়ে গান শোনা জনপ্রিয় ও ফ্যাশনেবল বলে মনে করা হয়। ইন্টারনেটের উন্নয়ন গান তৈরি ও প্রচারে অনেক সুবিধা দেয়। চীনের অনেক সংগীত অনুরাগী ইন্টারনেট নিজের গান প্রকাশ করে। তারা তেমন পেশাদার নয়। কিন্তু গানগুলো অনেক জনপ্রিয়তা পায়। প্রায় সারা দেশের রাস্তার দোকানে ও গাড়িতে এসব গান শোনা যায়। ইন্টারনেট শিল্পীদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। এভাবেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া জনপ্রিয় গানগুলোকেই মূলত 'ইন্টারনেট গান' বলা হয়।

ইন্টারনেট গানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য হলো তার সহজ ও আকর্ষণীয় সুর। কয়েক বার শুনলেই গানের সুর মনে থাকে। ইন্টারনেট গান খুব দ্রুত ও ব্যাপক জনপ্রিয় হওয়ার এটাই মূল কারণ। সুরের পাশাপাশি ইন্টারনেট গানের কথাগুলোও সাধারণ মানুষের জীবনের খুব কাছাকাছি। ইন্টারনেট গানের প্রধান বিষয় সাধারণত প্রেম, যৌবন, বিনোদন ইত্যাদি। এর মধ্যে প্রেমের গানগুলো নেটিজেনদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়। ইন্টারনেটের লাভ সংগুলোতে খুব সরাসরি ভালোবাসার কথা বলা হয়। বর্তমান তরুণ সমাজ অব্যক্ত গানের চেয়ে এ ধরনের গানগুলো পছন্দ করে।

কোনো কোনো ইন্টারনেট গানের জনপ্রিয়তার কারণে গায়ক বেশ বিখ্যাত হয়ে যান। তারা পেশাদার গায়ক না হলেও অনেক মানুষ তাদেরকে চিনে ও পছন্দ করে। এরকম কোনো কোনো ইন্টারনেট গায়ক পেশাদার গায়কদের চেয়েও বিখ্যাত। এ জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগায় সংগীত কোম্পানিগুলো। তারা নেট গায়কের সঙ্গে চুক্তি করে। এভাবেই অনেক ইন্টারনেট গায়কের পেশাদার সংগীত জীবন শুরু হয়। পেশাদারদের কাতারে নাম লেখার পর তারা নেপথ্য থেকে মঞ্চে আবির্ভূত হন, নিজস্ব অ্যালবাম প্রকাশ করেন, বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়, এমনকি কনসার্টও করেন!

তাও লাং এমনই একজন গায়ক। ২০০৪ সালে তিনি তার মৌলিক গান '২০০২ সালের প্রথম তুষার'-এর জন্য সারা চীনে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

তাও লাংয়ের কণ্ঠ অনেক আকর্ষণীয়। '২০০২ সালের প্রথম তুষার' জনপ্রিয় হওয়ার পর তিনি একটানা কয়েকটি অ্যালবাম প্রকাশ করেন। সবগুলোই বেশ জনপ্রিয় হয়।

ফাং লোংও খুব বিখ্যাত একজন ইন্টারনেট গায়ক। আসলে তিনি পেশাদার গায়ক। কিন্তু তার গান ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারিত ও জনপ্রিয় হওয়ায় সবাই তাকে ইন্টারনেট গায়ক হিসেবে মনে করে। ফাং লোং তার প্রেমের গানের জন্য বিখ্যাত। তার গান এত জনপ্রিয় যে প্রায় সব মানুষ তার গান গাইতে পারে। ভালোবাসার রোমান্টিক ঘটনা তার গানে ফুটে ওঠে।

ইন্টারনেট গান উল্লেখ করলে 'চাঁদের উপরে' গানটি শুনতেই হবে। ২০০৬ সাল চীনা সংগীত দল 'ফিনিক্স লিজেন্ড' এই গানটি প্রকাশ করে। এই গানে চীনা লোকসংগীতের ছাপ রয়েছে। সঙ্গে আছে র‍্যাপ ঢং। কোনো প্রচারণা ছাড়াই গানটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। গানটির সঙ্গে নাচও বেশ মানায়। এখনও পার্ক বা চত্বরে এই গানের তালে 'গণনৃত্য' করতে দেখা যায়!

ধীরে ধীরে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি আরো উন্নত হয়েছে। মানুষ সাধারণত মোবাইল ফোনেই বেশি গান শুনে থাকে। যে কোনো গায়কের জন্য গান প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম ইন্টারনেট। ইন্টারনেটে শিল্পীরা নিজস্ব গান প্রকাশ করে। আর 'ইন্টারনেট' একটি সীমাহীন জগত! ইন্টারনেট গান ও গায়ক চীনাদের কাছে সুন্দর স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে।

(তুহিনা/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040