বসন্ত উত্সবের যাত্রী পরিবহন:ছুন ইউন
  2018-02-14 09:30:35  cri



২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় 'ছুন ইউন' অর্থাত্ বসন্ত উত্সবের যাত্রী পরিবহন। বাড়ির উদ্দেশ্যে শুরু হয় বছরের সবচেয়ে আনন্দময় ও স্মরণীয় একটি যাত্রা। ৪০ দিনের মধ্যে চীনে ৩০০ কোটি পার্সন টাইমস মানুষ যাতায়াত করে বলে এটি বিশ্বের বৃহত্তম পর্যায়ক্রমিক জনসংখ্যার স্থানান্তর। গেল কয়েক দশকে নিয়মিত এ স্থানান্তর বা যাত্রায় দেখা যায় নানা পরিবর্তন। আজকের অনুষ্ঠানে আমরা 'ছুন ইউন' অর্থাত্ বসন্ত উত্সবের যাত্রী পরিবহন নিয়ে কথা বলব।

চীনা রেল কর্পোরেশন fযাত্রী পরিবহন বিভাগের উপ প্রধান হুয়াং সিন জানিয়েছেন, রেল পরিবহনে ঘটেছে ঐতিহাসিক ও বিশাল পরিবর্তন। ৪০ বছর আগে, যখন চীনে চালু হয় সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি, হুয়াং সিন তখনকার একজন শিক্ষার্থী। ছুটির সময় তিনি কুয়াং চৌ থেকে ফিরে যেতেন তাঁর জন্মস্থান ছাং শা শহরে। ট্রেনে এত ভীড় ছিল এমনকি সিটের নীচে বা লাগেজ তাকের ওপরও ছিল মানুষ। ছাং শা স্টেশনে পৌঁছার পর তিনি দরজার দিকে যেতে না পেরে জানালা দিয়ে বাইরে বের হয়েছেন। বর্তমানে চীনা মানুষের জন্য এ দৃশ্য অভাবনীয়।

২০১৭ সালে চীনা রেল পথের মোট দৈঘ্য ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার কিলোমটার। এর মধ্যে দ্রুত গতির রেল পথের দৈঘ্য ১৫ হাজার কিলোমিটার। চালু হয়েছে ঘণ্টায় ৩৫০ কিলোমটার গতির নতুন হাই স্পিড ট্রেন—ফু সিং ।

আনুমানিক হিসেব অনুযায়ী, এবার বসন্ত উত্সবের সময়ে সারা দেশে ২৯৮ কোটি পার্সন টাইমস যাত্রী যাতায়াত করবে। এ সংখ্যা ইউরোপ,আমেরিকা, আফ্রিকা ও অসিয়ানের লোকসংখ্যার প্রায় সমান।

অন্য দিকে, অনেক মানুষ নিজে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরে যাবে। সড়ক পথের নেটওয়ার্ক এতে বড় ভূমিকা পালন করে। সংস্কার ও উন্মুক্ত নীতি চালু হবার শুরু দিকে চীনে এক'শ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় সড়ক পথের গড় দৈঘ্য ৯.১ কিলোমিটার ছিল। এখন এ দৈর্ঘ্য ৫ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮.৯২ কিলোমটারে। চীনে সড়ক পথের ইতিহাস দীর্ঘ নয়। ১৯৮৮ সালে শাং হাই-চিয়া তিং চীনের প্রথম মহা সড়ক। বর্তমানে সারা চীনে সড়ক পথের দৈঘ্য ১৩৬ হাজার কিলোমিটার এবং ৯৭ শতাংশ লোকসংখ্যা এ নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত।

ট্রেন স্টেশন, বাস স্টেশন ও বিমান বন্দর থেকে বের হয়ে বাড়ি যাবার এ শেষ কয়েক কিলোমটার পথ আরও সুবিধাজনক। বসন্ত উত্সবে বেইজিংয়ে চালু হয় বিশেষ বাস যা কমিউনিটি থেকে ট্রেন স্টেশনের মধ্যে আসা-যাওয়া করে। কুয়াং স প্রদেশে চালু হয় নতুন একটি রেল প্লাস বাস পরিবহন পদ্ধতি। যেমন যেখানে হাই স্পিড ট্রেন চালু হয়নি সেখানে কাছাকাছি হাই স্পিড ট্রেন স্টেশনের টিকিট এবং দু জায়গার মধ্যকার বাস টিকিট একসাথে কিনতে পারে যাত্রীরা। তাহলে স্থানান্তরে অনেক সময় সাশ্রয় করা যায়। বাস কোম্পানি ও রেলের সম্পর্কও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সহযোগিতায় পরিণত হয়।

০.৪ সেকেন্ডে ইন্টারনেট আপানার একটি প্রাক্কলিত ভ্রমণ পরিকল্পনা দিতে পারে। সময়, দাম, ট্রান্সফার সবকিছু নিয়ে ০.৪ সেকেন্ড পর ওয়াবসাইট আপনাকে সবচেয়ে ভাল ও উপযোগী একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করবে। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী আপনি সবচেয়ে দ্রুত বা কম খরচে বাড়ি ফিরতে পারেন।

প্রযুক্তি পরিবহন পদ্ধতিকে পরিবর্তন করছে। কুয়াং চৌ দক্ষিণ স্টেশনে আপনি মো উই চ্যাটের মাধ্যমে স্টেশনের অ্যাকাউন্টকে অনুসরণ করতে পারেন। তারপর ব্লুটুথের মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারেন ইন্ডোর পজিশনিং নেভিগেশন সিস্টেম। স্টেশনে নিজের অবস্থান, ওয়াশরুম, চেকিং গেট, টিকিট অফিস সব খুঁজে পাবেন এবং হারিয়ে যাবেন না।

এখন চীনে অনেক হাই স্পিড ট্রেন স্টেশনে চালু হয়েছে ফেসিয়াল স্ক্যান ব্যবস্থা। ম্যানুয়াল টিকেট চেকের বদলে কম্পিউটার সিস্টেম আরও দ্রুতভাবে এ কাজ করতে পারে। ফেসিয়াল স্ক্যানে সময় লাগে মাত্র ৫ সেকেন্ড। আপনার হেয়ার স্টাইল ভিন্ন হলেও সিস্টেম সঠিকভাবে চিনতে পারে।

লিউ সিয়াও পিং রেল স্টেশনে ৪০ বছরের মতো কাজ শেষে সম্প্রতি তিনি অবসরে যান। নিজ চোখে দেখেছেন উ ছাং রেল স্টেশনের পরিবর্তন। এ স্টেশনের ইতিহাস ১০১ বছরের। ১০০ বছর আগে একটি রেল লাইন ও ছোট একটি টিকিট অফিস নিয়ে গঠিত ছিল এ স্টেশন। এখন সবচেয়ে ব্যস্ত সময়ে প্রতি ৩.৫ মিনিটে একটি ট্রেন এ স্টেশন অতিক্রম করে।

কয়েক দশক আগে, এক দিনে এ স্টেশনে মাত্র শতাধিক ট্রেন টিকিট বিক্রি হত তবে এখন টিকিট অফিসের একটি জানালা এক দিকের কয়েক হাজার টিকিট বিক্রয় করে এবং উই চ্যাট বা চিফুপাওসহ অনলাইন লেনদেন ব্যবহার করতে পারে মানুষ।

ট্রেন ছাড়া, বিমানেও দেখা যায় পরিবর্তন। প্রধান কয়েকটি চীনা এয়ারলাইন বিমানে চালু করেছে ওয়াইফাই সেবা। যাত্রীরা আকাশে থাকার সময়ও ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন।

বসন্ত উত্সব চীনের দুটি ৭দিন ছুটির অন্যতম। এ সময় অনেকে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। পরিবার নিয়ে অন্য শহরে বসন্ত উত্সব উদযাপন করা এখন একটি প্রবণতা। সুন থাওর বাড়ি কুই চৌতে এবং তিনি এখন বেইজিংয়ে কাজ করেন। বসন্ত উত্সব সময় বেইজিং থেকে কুই চৌ গেলে বিমান টিকিট ২ হাজার ইউয়ান তবে কুই চৌ থেকে বিমান যোগে বেইজিংয়ে আসলে খরচ মাত্র ৫০০ ইউয়ান। তাই তিনি দুটি টিকিট কিনে তাঁর বাবা মাকে বেইজিংয়ে নিয়ে আসেন।

২০১৮ সালের বসন্ত উত্সবের সময় ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি চীনা নাগরিক বিদেশে ভ্রমণ করবে। আনুমানিক হিসেব অনুযায়ী, এসময় প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ চীনের ১০০টি শহর থেকে বিশ্বের ৬০টি দেশের ২৮০টি গন্তব্যে যাবে। সবচেয়ে দূরের গন্তব্য দক্ষিণ মেরু।

এয়ার চায়না তার বহরে ২৬৮২টি ফ্লাইট বাড়িয়েছে।

চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স ৬০০০টি ফ্লাইট বাড়িয়েছে এবং দক্ষিণ চীন থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, উত্তর পূর্ব চীন থেকে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে অনেক ফ্লাইট বেড়েছে।

হাইনান এয়ারলাইন্স ২০০০টি ফ্লাইট বাড়িয়েছে এবং চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস ১০০০টি বিদেশি ফ্লাইট বাড়িয়েছে।

(শিশির/মহসীন)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040