শতায়ু হবার রহস্য
  2018-02-11 14:48:40  cri

বসন্ত উত্সব উপলক্ষ্যে প্রতিবছরই চীনের কোনো কোনো প্রদেশে শতায়ু ব্যক্তিদের খোঁজ-খবর একটু বিশেষভাবেই নেয় স্থানীয় সরকারগুলো। শতায়ুদের জীবনযাপন কেমন? তাঁদের সুস্থতার জন্য কী কী করা উচিত?—এ ধরনের প্রশ্নগুলোর উত্তরও খোঁজার চেষ্টা করা হয়। চীনের শান তুং প্রদেশ ও সি ছুয়ান প্রদেশে শতায়ুদের ওপর জরিপ চালানো হয়েছিল। জরিপের ফল অনুসারে, 'আশাবাদী' হওয়া হচ্ছে শতায়ু তথা দীর্ঘায়ু হবার মূল রহস্য। আজকের 'জীবন যেমন' অনুষ্ঠানে আমরা এ-বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা একবার ৭০০ জন শতায়ু ব্যক্তির ওপর ৩ বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। এসব পরীক্ষায়ও উঠে এসেছে এই 'আশাবাদী' হবার ব্যাপারটি। এঁরা কখনও রাগ করেন না। জীবনজুড়ে তাঁরা থাকেন শান্ত।

চীনের শান তুং প্রদেশে শতায়ুদের যে চতুর্থ তালিকা করা হয়েছিল, তাতে দ্বিতীয় স্থানে আছেন শান ছেং জেলার অধিবাসী, ১১৫ বছর বয়সী চাং ছুন হ্য। তাঁর দীর্ঘায়ুর রহস্য কী? এ-সম্পর্কে তাঁর মেয়ে চাং এ চি বলেন, 'আমার বাবা শান্ত প্রকৃতির মানুষ। তিনি সহনশীল ও বিশাল হৃদয়ের অধিকারী।' সত্যি কথা বলতে কি, চাং ছুন হ্যকে দেখলে ৭০ বছর বয়সী মনে হয়!

আরেকজন শতায়ু প্রবীণ হচ্ছেন ১০১ বছর বয়সী ছেন থুং শৌ। জানালেন, তিনি কখনও রাগ করেন না ও বই পড়তে খুবই পছন্দ করেন। বই পড়ার মাধ্যমে অনেককিছু শেখা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমি যে-কোনো ধরনের বই পড়তে পছন্দ করি। মাঝেমধ্যে ছোটের কাছে জানতে চাই তাদের পছন্দের বই সম্পর্কে। আমি তাঁদের পছন্দের বইগুলো কিনে পড়ি।" তাঁর মতে, যারা আশাবাদী, তাদের রাতের ঘুম ভালো হয়; অনিদ্রা তাদের ত্বাড়িত করে না। তিনি প্রতিদিন রাতে ঘুমের আগে গোসল করতে অভ্যস্ত বলেও জানালেন।

এদিকে চীনা প্রবীণ সমিতির রিপোর্ট অনুসারে, চীনা শতায়ুদের দীর্ঘায়ুর জন্য ১৫ শতাংশ জিনগত কারণ, ১০ শতাংশ সামাজিক কারণ, ৮ শতাংশ চিকিত্সাব্যবস্থা উন্নয়ন, ৭ শতাংশ জলবায়ুর অবস্থা উন্নয়ন, ও বাকি ৬০ শতাংশ নিজেদের জীবনাচার দায়ী।

এ পর্যায়ে এসে একটা প্রশ্ন উঠতে পারে। প্রশ্নটা হচ্ছে: দীর্ঘায়ুর জন্য আমাদের কী কী করা উচিত? বিশেষজ্ঞরা মাত্র ৪টা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আসুন জেনে নিই পরামর্শগুলো।

পরামর্শ ১: শরীরের গঠন বা ফিগারের ওপর গুরুত্ব দিন

শরীরের গঠন বা ফিগার ভাল থাকলে মানুষকে সুন্দর দেখায়। বয়স বাড়লে ফিগার আর আগের মতো সুন্দর থাকে না। এসময় স্থুলকায় হয়ে যাবার আশঙ্কাও দেখা দেয়। তাই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের উচিত আরও বেশি ফিগারসচেতন হওয়া। নিত্যদিনের খাওয়া-দাওয়ার ওপর খেয়াল করা উচিত আমাদের। চীনে একটি মজার কথা প্রচলিত: যদি তুমি নিজের মুখ নিয়ন্ত্রণ করতে না-পারো, তবে পা চালাও। এর মানে যদি খাওয়া একটু বেশি হয়, তবে সেই অতিরিক্ত খাবার হেঁটে তথা ব্যয়াম করে বার্ন করতে হবে।

পরামর্শ ২: বেশি বেশি হাসুন

মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো থাকে। আর মন ভালো থাকার প্রতিক্রিয়া হচ্ছে 'হাসি'। চীনের এক প্রবাদে আছে: যারা বেশি বেশি হাসেন, তাদের বয়স অন্তত দশ বছর কমে যায়। আসলে হাসি আমাদের শরীর ও মনকে প্রসন্ন করে; আমাদের মানসিক উত্তেজনা প্রশমিত করে; শরীরের রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে; এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমরা যখন যে অবস্থাতেই থাকি না কেন, প্রতিদিন প্রচুর হাসতে হবে। হাসির কোনো কারণ নেই? তবুও হাসুন।

পরামর্শ ৩: নিয়মিত শরীরচর্চা করুন

স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের চীনে আরও একটি কথা প্রচলিত আছে, আর তা হলো, 'দীর্ঘজীবন চাইলে বেশি বেশি পায়চারি করুন'। আসলে এখানে পায়চারি বা হাঁটা বলতে শরীরচর্চাকে বোঝানো হয়েছে। নিয়মিত শরীরচর্চা আমাদের শরীর সুন্দর ও সুঠাম রাখে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরচর্চা হিসেবে পায়চারি করা, আস্তে দৌড়ানো, থাইজি মুষ্টিযুদ্ধ, শরীরগঠনমূলক ব্যায়াম ও ইউগা ইত্যাদি ভালো।

পরামর্শ ৪: সময়মত ঘুমান, রাত জাগবেন না

তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে খুব ভোরে জেগে ওঠার অভ্যাস একজন মানুষকে স্বাস্থ্যবান রাখে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আধুনিক সমাজে আমাদের অনেকেরই রাত জাগার বদভ্যাস গড়ে উঠেছে। আর স্বাভাবিকভাবেই এ-অভ্যাসের কারণে আমাদের অনেককেই প্রতিনিয়ত নানান সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়। কেউ কেউ তো শেষ পর্যন্ত ইনসোম্‌নিয়া বা নিন্দ্রাহীনতায় ভুগছেন। সুতরাং, দেরিতে না-ঘুমানোর সংকল্প করুন এবং তা মনে রাখার চেষ্টা করুন।

(ওয়াং হাইমান/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040