বয়স যখন ৫০: সুস্থ, সুন্দর, ও দীর্ঘ জীবনের জন্য যা করবেন এবং যা করবেন না
  2018-04-15 18:53:58  cri



আজ আমরা তাঁদের নিয়ে আলোচনা করব, যাদের বয়স ৫০ বা তারচেয়ে বেশি। তার মানে কি এই যে, ৫০-এর কম বয়সীরা আমাদের এ-অনুষ্ঠান থেকে উপকৃত হবেন না? না, মোটেই তা নয়। যাদের বয়স ৫০-এর কম, তাঁরাও একসময় ৫০ অতিক্রম করবেন। তাই, আমাদের আলোচনা তাদের জন্যও প্রযোজ্য।

আমরা প্রায় সবাই দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন চাই। ৫০-এর পর নাকি এই চাওয়া আরও বেড়ে যায়। কথাটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না-ও হতে পারে। তবে, এ-কথা তো না-মেনে উপায় নেই যে, স্বাভাবিকভাবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক সমস্যাও বাড়তে থাকে আমাদের। তো, এ-সব সমস্যা থেকে যতদূর সম্ভব দূরে থেকে, সুন্দর বাকি জীবন কাটানোর চেষ্টা আমাদের সবারই করা উচিত, কী বলেন? তো, চলুন আজকের মূল আলোচনায় যাই।

বয়স যাদের ৫০, তাদের জীবনাচার কেমন হওয়া উচিত? তাঁরা কী করবেন এবং কী করবেন না? আমরা বিশেষজ্ঞদের কয়েকটি পরামর্শ নিয়ে আজ আলোচনা করব। আশা করি, আপনারা উপকৃত হবেন।

পরামর্শ ১. নিজেকে সবসময় তরুণ ভাবুন

কথায় বলে, মানুষের বয়স বাড়ে মনে, শরীরে নয়। ইংরেজিতে আরেকটি কথা প্রচলিত আছে: লাইফ বিগিনস্‌ অ্যাট ফরটি (জীবন ৪০ থেকে শুরু হয়)। ৫০-এর পর সুস্থ, সুন্দর ও দীর্ঘ জীবনের জন্য আমাদেরকে মানসিকভাবে তরুণ থাকতে হবে। মনের নাকি কোনো বয়স হয় না। অনেকেই বলেন, আমি সেই পঁচিশেই আটকে আছি। তাদের জন্য সুখবর। নিজেকে তরুণ ভাবতে পারাটা একটা ভালো গুণ। যুক্তরাষ্ট্রে একটি জরিপ হয়েছিল। জরিপে অংশগ্রহণ করেন ৭০-এর বেশি বয়সী লোকজন। তাদের দীর্ঘ ও সুন্দর জীবনের রহস্য ভেদ করতে গিয়ে জানা গেল যে, তাঁরা সবসময় নিজেদেরকে বাস্তবের তুলনায় কম বয়সী ভাবতে পছন্দ করেন। মোদ্দাকথা, নিজেকে বৃদ্ধ ভাবা চলবে না। শরীরকে হয়তো তরুণের মতো চালাতে পারবেন না; কিন্তু মনকে তাজা রাখা সম্ভব।

পরামর্শ ২. পেটে চর্বি জমতে দেবেন না

বয়স যখন ৫০, তখন পেটে তো খানিকটা চর্বি জমবেই!—এমন ভাবনা যাদের আছে, তারা ভুল ভাবছেন। পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে গেলে আপনি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। অসুখ-বিসুখ নিয়ে কি ভালো জীবন কাটানো যায়? যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পেটে অতিরিক্ত চর্বিওয়ালা নারীদের আয়ু সাধারণ মানুষের চেয়ে ২০ শতাংশ কম হয়ে থাকে। পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে গেলে চলাফেরায়ও সমস্যা হয়। কোমরের একটা মাপও বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন। পুরুষদের কোমর ৯০ সেন্টিমিটার এবং নারীদের কোমর ৮৫ সেন্টিমিটারের বেশি হওয়া চলবে না।

পরামর্শ ৩. খোশ মেজাজে থাকুন; বন্ধুর সংখ্যা বাড়ান

চীনে একটি কথা প্রচলিত আছে: যার বন্ধু যত বেশি, তার সমস্যা সমাধানের উপায়ও তত বেশি। শুধু আমাদের দৈনন্দিন সমস্যার কথা এখানে বলা হচ্ছে না, মনের সমস্যার কথাও বলা হচ্ছে। বয়স যখন ৫০, তখন ব্যস্ততাও থাকে তুঙ্গে। বন্ধু-বান্ধবরাও থাকে ব্যস্ত। এ-অবস্থায় বন্ধুর সংখ্যা যত বেশি হবে, তত বন্ধুর সঙ্গ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। একজন বন্ধু ব্যস্ত, তো অন্যজনকে ফোন করুন—এই আরকি। অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে উঠে এসেছে মজার তথ্য। অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব হলে মানুষ দীর্ঘায়ু হতে পারে। গবেষণা অনুসারে, অন্তত ৫ জন ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা, বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য দরকার। বন্ধুর সংখ্যা ৫-এর কম হলে আয়ু কম হবার আশঙ্কা ২২ শতাংশ বেশি। ভালো বন্ধু মনের ওপর চাপ কমায়। বয়স যখন ৫০, তখন অন্তত কয়েকজন বন্ধু আপনার থাকা দরকার, যারা সময়ে-অসময়ে আপনার পাশে থাকবে; হোক সেটা ফোনে বা যোগাযোগ-মাধ্যমে।

পরামর্শ ৪. নাক-ডাকাকে অবহেলা করবেন না

অনেকেই ভুল করে মনে করেন যে, নাক ডাকার অর্থ ভালো ঘুম হচ্ছে। তাই বোধকরি এমন কথা প্রচলিত: তিনি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন! না, নাক-ডাকা ভালো না। এটা একটা রোগ। ১৮ বছর ধরে চালানো এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, ঘুমের সময় যাদের নাক ডাকে, তারা দীর্ঘায়ু হন না। নাক-ডাকা উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ অনেক রোগের কারণ হতে পারে। সুতরাং, আপনার নাক-ডাকা সমস্যা যদি গুরুতর হয়, তবে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।

পরামর্শ ৫. সন্তানদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভর করবেন না

সন্তানকে সুষ্ঠুভাবে লালন-পালন করা পিতামাতার দায়িত্ব। সন্তানদেরও উচিত বৃদ্ধ বয়সে পিতামাতার খেয়াল রাখা, তাদের যত্ন নেওয়া। তবে, পিতামাতার উচিত নয় সন্তানের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়া। ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এমনভাবে করতে হবে যেন, সন্তানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে না-হয়। এটা সন্তানের সঙ্গে পিতামাতার সম্পর্ক মধুর রাখারও একটা উপায়। ৫০-এর পরেও যদি আপনি আগের মতোই নিজের ওপর, নিজের সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করতে পারেন, তবে আপনার আত্মবিশ্বাস থাকবে তুঙ্গে। আর আত্মবিশ্বাস মানুষকে দীর্ঘায়ু হতে সাহায্য করে। আত্মবিশ্বাস মানুষের মনকেও রাখে শান্ত ও স্বাভাবিক। সুতরাং ধরেই নিন যে, সন্তান বড় হলে নিজ নিজ কাজে ও জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়বে; আপনাকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারবে না। অর্থ-কড়ির দিক দিয়েও সন্তানের ওপর কখনও নির্ভরশীল হয়ে পড়া ঠিক না। এতে আপনার আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যাবে; আপনি মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বেন। এটা সন্তানের জন্যও ক্ষতিকর।

পরামর্শ ৬. খাদ্যগ্রহণে নিয়মিত হোন; ক্যালরিগ্রহণ কমান

দীর্ঘায়ুদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, তাদের সবাই সারা জীবন কখনও খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম করেননি। তারা নিয়মিত খাবার খেয়েছেন এবং পরিমিত খাবার খেয়ে এসেছেন। তা ছাড়া, তাদের খাদ্য-তালিকায় উচ্চক্যালরিযুক্ত খাবার কম থাকত। শাক-সবজি তাঁদের নিত্যদিনের খাদ্য-তালিকায় এক অপরিহার্য অংশ। দীর্ঘায়ুদের ৯০ শতাংশেরই প্রতিদিন শাক-শবজি খাওয়ার অভ্যাস আছে। বেশি লবণ, তেল, চিনি ও ঝালযুক্ত খাবার কম খাবেন। এক সময়ের খাবার অন্য সময়ে খাবেন না।

পরিবেশ ৭. নিয়মিত হাসুন

চীনে একটি কথা প্রচলিত: যারা হাসতে পছন্দ করেন, তাদের ভাগ্য খারাপ হয় না। হাসি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। যারা নিয়মিত হাসেন তাদের রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। আজকাল 'হাসি ক্লাব'-এর কথা শোনা যায়। হাসার উপলক্ষ্য না-থাকলেও হাসুন।

পরামর্শ ৮. পর্যাপ্ত ঘুমান

ঘুমের কথা আগের অনুষ্ঠানে আমরা তো অনেকবার আলোচনা করেছি। হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে পর্যাপ্ত ঘুম সুস্থ জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যাদের ঘুমের অভাব হয়, তাদের উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। সাবধান না-হলে, দীর্ঘকাল ধরে ঘুমের অভাব হলে, ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি। অতএব পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। বয়স যখন ৫০, তখন এ-কথা আরও বেশি করে প্রযোজ্য।

(ওয়াং হাইমান/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040