চীন-মার্কিন বাণিজ্য মতভেদ, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য 'আধিপত্য'?
  2018-04-24 08:29:41  cri
সুপ্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান। এখন শুনুন 'আজকের টপিক',

আজ আমরা দু'জন অব্যাহত 'চীন-মার্কিন বাণিজ্য মতভেদ'-এ সজাগ দৃষ্টি রাখবো।সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, ইস্পাত ও আ্যালুমিনিয়াম পণ্যের শুল্ক আরোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ অংশে এ দু'টি পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া, এ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানি জানিয়েছে, এ ধরনের শুল্ক তাদের ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া ছুন ইং এ প্রতিবেদন নিয়ে চীনের মন্তব্য জানিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২২ মার্চ চীনের উপর ৫০ থেকে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আমদানিকৃত পণ্যের শুল্ক আরোপের নির্দেশিকায় স্বাক্ষর করেন। এতে চীন থেকে আমদানিকৃত ১৩৩ ধরনের ৫০০০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা যাবে। এ পণ্যগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তথ্য ও টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি, বিমান চলাচল ও মহাকাশযান, যন্ত্রমানব, ওষুধ ও যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। ৫ এপ্রিল ট্রাম্প এক বিবৃতিতে মার্কিন বাণিজ্যিক প্রতিনিধিকে চীনা পণ্যের ওপর আরো ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার শুল্ক আরোপের কথা বিবেচনা করার প্রস্তাব দেন।

এর আগে ৪ এপ্রিল চীন সমান ও পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত সয়াবিনসহ কৃষি পণ্য, গাড়ি, রাসায়নিক পণ্য এবং বিমানসহ অন্য পণ্যের ওপর সমানভাবে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করে। এর মূল্য প্রায় ৫০০০ কোটি মার্কিন ডলার।

এবার আপনার কথার উত্তরে বলা যায়, হুয়া ছুন ইং ব্রুকিং ইনস্টিটিউশনের প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে বলেছে, মার্কিন-চীন বাণিজ্য সংঘাতের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ২৭০০ কাউন্টিতে ২.১ মিলিয়নেরও বেশি লোক কর্মসংস্থান হারাবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের পর মার্চ মাসে ট্রাম্পের প্রতি দেশটির আইন প্রণেতারা এক চিঠিতে মার্কিন অর্থনীতি ও এর শ্রমিকদের অনিচ্ছাকৃত নেতিবাচক পরিণতি এড়াতে বিস্তৃত শুল্কের ধারণা পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানান।

এরপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প 'পারস্পরিক সুবিধাদান'-এর কথা উল্লেখ করেন।

এ প্রসঙ্গে হুয়া ছুন ইং বলেন, শুল্কের পারস্পরিক সুবিধাদানের বিষয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কোনো নীতি নেই, আসলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রের ভিন্ন শুল্ক মানদণ্ড আছে। একটি দেশের নিজের চাহিদা ও কল্যাণের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এ প্রেক্ষাপটে নির্ধারিত মানদণ্ড অন্য দেশের মানদণ্ড নয়। পরিবর্তে, আমাদের উচিত সমান পরামর্শের উপর নির্ভর করে একীভুত আন্তর্জাতিক নিয়ম ও মানগুলো প্রণয়ন করা, এবং অবশ্যই নিয়ম ও মানগুলোকে সম্মান করতে হবে।

চীনের চোখে যুক্তরাষ্ট্রের আচরণের পেছনে আধিপত্যবাদ রয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন সরকার চীনের টেলিকম সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক ZTE-এর বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণা করেছে। গত শুক্রবার এ কোম্পানি উত্তর দিয়েছে যে, দৃঢ়ভাবে এ 'অন্যায় ও অযৌক্তিক শাস্তি'র বিরোধিতা করা হবে এবং সমস্ত বৈধ আইনের উপায়ের মাধ্যমে তার বৈধ অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষা করা হবে।

জিনিয়া: গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মার্কিন সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, আগামী ৭ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের টেলিকম সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক ZTE কোন মার্কিন প্রযুক্তিগত দ্রব্য কিনতে পারবে না। এর পর ZTE উপরের উত্তর দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত শুধু চীনের কোম্পানির ওপর গুরুতর ভূমিকা পালন করবে তা নয়, কিন্তু বিশ্বের টেলিকম শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন গবেষক বলেন, মার্কিন সরকারের এ ধরনের আচরণে চীনা কোম্পানিগুলোকে মার্কিন বাজারে প্রবেশ আগের চেয়ে আরো কঠিন হয়ে পড়বে। চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সন্দেহ 'ভিত্তিহীন'। ZTEর উপর নিষেধাজ্ঞা চীনের ইলেকট্রনিক্স শিল্পের ভিত্তির ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চিপস আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি বছর ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে চীন।

চীন অবশ্যই নিজেকে নির্ভর করে স্ব-উন্নত ইলেক্ট্রনিক চিপ তৈরি করবে।

আচ্ছা বন্ধুরা, 'আজকের টপিক' অনুষ্ঠান এখানে শেষ। আগামীদিনে আরো চমত্কার টপিক অনুষ্ঠান শুনবেন। বন্ধুরা, ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন। চাই চিয়েন।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040