চাং মি মান: চীনা নারীদের গর্ব
  2018-06-02 16:14:45  cri

চলতি বছরের ২২ মার্চ, ৮২ বছর বয়সী মাদাম চাং মি মান ২০১৮ সালের "বিশ্বের উল্লেখযোগ্য মহিলা বিজ্ঞানী পুরস্কার" পেয়েছেন। প্যারিসের ইউনেস্কো সদরদফতরে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি ইংরেজিতে একটি বক্তৃতা দেন। তাঁর পাঁচ মিনিটের বক্তৃতার মধ্যে তিনি ফরাসি, চীনা, রুশ এবং সুইডিশ ভাষাও ব্যবহার করেন।

স্বাগতিক ফ্রান্সকে সম্মান দেখাতে তিনি তাঁর বক্তৃতা শুরু করেন ফরাসি ভাষায়। নিজের প্রাথমিক গৃহশিক্ষকদের ধন্যবাদ জানানোর সময় তিনি রুশ ও সুইডিশ ভাষায় তাঁদের নাম বলেন; প্রকাশ করেন তাঁদের প্রতি তাঁর অসীম কৃতজ্ঞতা।

মিস চাং বিশেষভাবে তার কন্যাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন: "যখন তার বয়স মাত্র এক মাস, আমি তাকে তার নানীর কাছে রেখে এসেছিলাম। সে যখন আমার কাছে ফিরে আসে, তখন তার বয়স ১০ বছর। এ-জন্য সে কখনই অসন্তোষ প্রকাশ করেনি।"

চাং মি মান হলেন নয়াচীনের প্রথম দিককার একজন ভূতাত্ত্বিক ছাত্রী। পরে তিনি মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যালিওবাইওলজি (paleobiology) নিয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পান। তখন থেকেই তিনি জীব-বিবর্তনের "হারিয়ে যাওয়া বিশ্ব" অন্বেষণ করতে শুরু করেন।

গত শতাব্দীর আশির দশকের গোড়ার দিকে, সুইডেনের প্রাকৃতিক ইতিহাস যাদুঘরে অধ্যয়নরত চাং মি মান, চীনের ইয়ুননান প্রদেশের ছুইজিং শহরের ইয়াংওলেপিস (Youngolepis) মাছ ও ডাইয়াবোলেপিস (Diabolepis) মাছের গঠন নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁর গবেষণা থেকে উঠে-আসা-সত্য ছিল এ-ব্যাপারে প্রচলিত তত্ত্বের বিরুদ্ধে।

তাঁর আবিষ্কারটি বিশ্ব জীবাশ্মবিজ্ঞান (paleontology) মহলকে বিস্মিত করে। শুরু হয় টেট্রাপোডের উৎপত্তির ওপর নতুন দফা গবেষণা। পরে একসময় চাং মি মানের দৃষ্টিভঙ্গি সংশ্লিষ্ট কমিউনিটির স্বীকৃত পায়।।

২০১৬ সালে চাং মি মান Society of Vertebrate Paleontology-র সর্বোচ্চ পুরষ্কার Rommel Simpson lifetime achievement award অর্জন করেন।

এতসব অর্জনের পরও চাং মি মান তাঁর গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। তিনি তখন মনোযোগ দেন তুলনামূলকভাবে নতুন ক্ষেত্র Cenozoic cyprinid-এর দিকে। তিনি বলেন, সিনোজোয়িক সাইপ্রিনিড জীবাশ্ম সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পৃথিবীর পরিবর্তনের প্রতিফলন। ভবিষ্যতে মলিকিউলার বায়োলজি (molecular biology)-র সঙ্গে যুক্ত করে এ-ক্ষেত্রে নতুন কিছু আবিষ্কার করা সম্ভব হবে।

মাদাম চাং-ই হলেন প্রথম নারী জীবাশ্মবিদ যাকে এবার ইউনেস্কো " বিশ্বের বিশিষ্ট মহিলা বিজ্ঞানী পুরস্কার " প্রদান করল। এটা চীনের জীবাশ্মবিজ্ঞান তথা বিশ্বের জীবাশ্মবিজ্ঞানের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ।

চীনের নারী-গবেষকদের জন্যও এটি একটি বিরাট অনুপ্রেরণার বিষয়। পুরষ্কার পাওয়ার পর এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, চীনের নারী-গবেষকদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। তবে, সেখানে টপ মানের দক্ষ নারী-গবেষকের সংখ্যা আরও বেশি হওয়া দরকার।

তিনি বলেন, বিভিন্ন পেশায় এখনও নারীদের সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় কম। গবেষণাক্ষেত্রে তো আরও কম। ইউনেস্কোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মহিলাদের হার মাত্র ২৮ শতাংশ। আর ১৯০১ সাল থেকে বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন যারা, তাদের মাত্র ৩ শতাংশ নারী।

নারীরা যে বিশ্ব পর্যায়ের সাফল্য অর্জন করতে পারেন, মাদাম চাং মি মান তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। চাং মি মান চীনা নারী তথা বিশ্বের নারীদের গৌরব। (প্রেমা/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040