কানাডায় জি-৭ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যু
  2018-06-17 19:01:19  cri

বিশ্বের শিল্পোন্নত ৭টি দেশের জোট জি-৭ এর বৈঠক হলো গত সপ্তাহে কানাডার কুইবেকে। এ সম্মেলনের আউটরিচ অধিবেশনে আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর্থসামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করেছে এমন দেশগুলোকে জি-৭ এর আউটরিচ অধিবেশনে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রিত রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। এর আগে ২০০১ ও ২০১৬ সালেও শেখ হাসিনা জি-৭ সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।

৯ জুন কুইবেকের লা মানোয়া রিশেলো হোটেলে এবারের জি-৭ বৈঠকের আউটরিচ অধিবেশন শুরু হয়। সম্মেলন স্থলে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। আউটরিচ অধিবেশনে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চার দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবগুলো হলো:

এক. জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজস্ব মাতৃভূমিতে সুষ্ঠু, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে তাগাদা দেয়া।

দুই. শর্তহীনভাবে শিগগির রাখাইন অ্যাডভাইজর কমিশনের ( কফি আনান কমিশন) সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে তাগাদা দেয়া।

তিন. রোহিঙ্গা নিপীড়নে জড়িতদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ।

চার. রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো অমানবিক নিপীড়নে জড়িতদের জবাবাদিহি ও বিচার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জি-৭ভুক্ত দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ মিয়ানমার। তাই মিয়ানমারকেই এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে- যাতে রোহিঙ্গারা সসম্মানে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে।

আউটরিচ সম্মেলনে যোগ দেয়ার পরদিন ১০ জুন শেখ হাসিনা কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। কুইবেকে হোটেল শ্যাতো ফাঁতেনেকে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত দেয়াসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন শেখ হাসিনা।

নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠাতে কানাডার আইনি জটিলতার কথা উল্লেখ করে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কষ্ট তিনি বোঝেন, কিন্তু আইনি কারণে নূর চৌধুরীকে ফেরত দেয়া যাচ্ছে না। তবে, তাকে কানাডা সিটিজেন স্ট্যাটাস দেয়নি বলে জানান ট্রুডো। এ সময় ট্রুডো রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকার ভূঁয়সী প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সম্পূর্ণ মানবিক কারণে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি কানাডার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

একই দিন কুইবেক থেকে টরন্টো গিয়ে কানাডা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগদেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের সুনাম বেড়েছে বলেই জি-৭-এর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বসম্মেলনে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে এ আমন্ত্রণ তারই স্বীকৃতি।

প্রবাসীদের একসঙ্গে মিলেমিশে থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কানাডায় পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করতে তাদের সহায়তা প্রয়োজন। তাকে ফেরাতে তার সরকার প্রয়োজনে কানাডার আদালতে লড়বে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিতে তার সরকারের সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যাশার চেয়ে বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে বর্তমান সরকার। আগামীতে দেশকে আরো উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

১১ জুন কানাডার মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত বব রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার হোটেল স্যুটে দেখা করেন। এ সময় কানাডার দূত কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ত্রাণকার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিত বিদেশি ত্রাণকর্মীদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার অনুরোধ জানান। শেখ হাসিনা ত্রাণকার্যে বিদেশি ত্রাণকর্মীদের ভূমিকার প্রশংসা করে বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন।

জি-৭ এর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রিত হয়ে অংশগ্রহণ এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে চারদফা প্রস্তাব এ সমস্যার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণ করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। যার ফলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে সহযোগিতার পাশাপাশি এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040