চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতিতে ৬.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত (অর্থ-কড়ি, ৭ জুলাই ২০১৮)
  2018-07-09 15:25:51  cri


১. চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতিতে ৬.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চীনা সমাজবিজ্ঞান একাডেমির ন্যাশনাল একাডেমি অব ইকনোমিক স্ট্র্যাটেজি (এন এ ই এস) সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে এ-তথ্য জানায়। এন এ ই এস আরও জানায়, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬.৭ শতাংশ। আর গোটা বছরে চীনা অর্থনীতিতে ৬.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলেও রিপোর্টে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

২. চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য-ঘাটতির যে-হিসেব দেওয়া হয়ে থাকে, সেটি ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন চীনের ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও সমাজ পরিসংখ্যান কেন্দ্রের পরিচালক স্যু সিয়ান ছুন। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ভুলের মধ্যে আছে। সম্প্রতি বেইজিংয়ে এক অর্থনৈতিক ফোরামে তিনি এ-মন্তব্য করেন। স্যু বলেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য-ঘাটতির জন্য চীনে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা রয়েছে।

তিনি বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে হিসেব করলে বাণিজ্য-ঘাটতির পরিমাণ বেশি হয়। তা ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান ও চীনের পরিসংখ্যানের মধ্যেও বিশাল ব্যবধান রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ বের করার সনাতন পদ্ধতি নতুন আন্তর্জাতিক পরিবেশের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য ইস্যুটি শুধু দু'টি রাষ্ট্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না।

স্যু সিয়ান ছুন বলেন, চীনে প্রচুর বিদেশি প্রতিষ্ঠান আছে। বিশেষ করে চীনে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্য-ঘাটতিতে বিশাল ভুমিকা রাখছে। চীনে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উত্পাদিত পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করলে সেটাও চীনের রফতানি হিসেবে গণ্য করা হয়। অথচ এই রফতানির লাভের বড় অংশই আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত যায়।

৩. চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য-কার্যালয় থেকে ২৮ জুন প্রথমবারের মতো 'চীন ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা' শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশিত হয়। শ্বেতপত্রে বিগত ১৭ বছরে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-তে চীনের শর্তাবলী পূরণ, বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থার পক্ষে চীনের দৃঢ় অবস্থান, বিশ্বের জন্য চীনের অবদান, এবং নিজেকে বিশ্বের জন্য আরও উন্মুক্ত করার আগ্রহ ও ইচ্ছা তুলে ধরা হয়।

শ্বেতপত্রে বলা হয়, ২০১০ সালের অগাস্টে ডব্লিউটিও-তে যোগ দেওয়ার পর থেকেই চীন পণ্য-বাণিজ্য, সেবা-বাণিজ্য ও মেধাস্বত্ব সংরক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের প্রতিশ্রুতি পূরণ করে এসেছে।

শ্বেতপত্রে আরও বলা হয়, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেওয়ার পর বিগত ১৭ বছরে চীন বিশ্বের বৃহত্তম রফতানিকারক ও দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়। এই ১৭ বছরে চীন নিজেকে আরও উন্মুক্ত করেছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তা ছাড়া, ২০০২ সালের পর বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে চীনের অবদান প্রায় ৩০ শতাংশ ছিল এবং এই ধারা এখনও অব্যাহত আছে। চীন বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়নের চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে।

৪. এদিকে, গত পয়লা জুলাই থেকে চীনের ভোক্তারা আমদানিকৃত গাড়ি কিনতে পারছেন আগের চেয়ে কম শুল্ক দিয়ে। আগে যেখানে ২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো, সেখানে এখন দিতে হচ্ছে ১৫ শতাংশ করে। আগে গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশের ওপর শুল্কের হার ছিল ক্ষেত্রবিশেষে ৮ শতাংশ, ১৫ শতাংশ, ২০ শতাংশ ও ২৫ শতাংশ করে। এখন সবক্ষেত্রে শুল্কের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৬ শতাংশে।

ডব্লিউটিও-তে যোগ দেওয়ার সময় চীন আমদানিশুল্ক কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। গাড়ির ওপর শুল্ক কমানো সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের অংশ। চীনের আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও অর্থনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ডব্লিউটিও গবেষণালয়ের পরিচালক থু সিন ছুয়ান বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে ডব্লিউটিওর সদস্য হবার পর চীন সার্বিকভাবে শুল্ক কমানোর প্রতিশ্রুতি পালন করে আসছে এবং একটি সুষ্ঠু শুল্ক-ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।

অবশ্য ২০১০ সালেই চীন আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্কের হার কমানোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন শুরু করে। তখন শুল্কের হার ২০০১ সালের ১৫.৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯.৮ শতাংশ করা হয়। শুল্ক কমানো ছাড়া, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চীন নিজেকে আরও অধিক উন্মুক্ত করেছে এবং সেবা-বাণিজ্য খাতে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর থেকে বিধিনিষেধ ধাপে ধাপে শিথিল করছে।

৫. চীনের জাতীয় তথ্যকেন্দ্রের অর্থনীতি পূর্বাভাস বিভাগের পরিচালক নিউ লি সম্প্রতি বলেছেন, আরও উন্মুক্ত চীন বিশ্বের জন্য আরও বেশি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করবে। আগামী ৫ বছরে চীন ৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করবে এবং ৬০০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে। তা ছাড়া, এসময়কালে চীন বিদেশে ৭৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং বিদেশে চীনা পর্যটকের সংখ্যা ৭০ কোটিতে পৌঁছাবে।

৬. ২০১৭ সালে চীনের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ১৫.১ শতাংশ বেড়ে ১৯,৫০০ কোটি দিরহাম (৫২৬৫ কোটি মার্কিন ডলার)-এ দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি ইউএই-র রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ডব্লিউএএম এ-তথ্য জানায়।

প্রকাশিত তথ্যানুসারে, চীন-ইউএই দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ৪৮ শতাংশ সরাসরি বাণিজ্য। বাকি ৫২ শতাংশ হয়েছে চীনের সঙ্গে ইউএই-র মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলের। ২০১৭ সালে ইউএই-র মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের ১৪.৭ শতাংশ হয়েছে চীনের সঙ্গে। ইউএই চীন থেকে যেসব পণ্য আমদানি করে সেগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফোন ডিভাইস, ডাটা প্রসেসিং যন্ত্র, ভিজুয়াল রিডার্স ইত্যাদি।

৭. যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ওয়ালমার্ট চীনের সিছুয়ান প্রদেশের রাজধানী ছেংতু-তে আগামী পাঁচ বছরে আরও ৩০ থেকে ৪০টি সুপারস্টোর খুলবে। সম্প্রতি ছেংতুর মিউনিসিপাল সরকারের সঙ্গে 'ওয়ালমার্ট চায়না'-র এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নতুন স্টোরগুলোর মধ্যে থাকবে 'স্যামস্‌ ক্লাব', 'ওয়ালমার্ট হাইপারমার্কেট' ও 'ওয়ালমার্ট সুপারমার্কেট'।

ওয়ালমার্ট ছেংতুতে ১৯৯৭ সালে প্রথম ব্যবসা শুরু করে। বর্তমানে ছেংতুতে একটি 'স্যাম্‌স ক্লাব' ও ১৩টি 'ওয়ালমার্ট হাইপারমার্কেট' রয়েছে।

উল্লেখ্য, ছেংতুর জনসংখ্যা দেড় কোটির বেশি। ২০১৭ সালে এর জিডিপি ১.৩৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ২০,৯০০ কোটি মার্কিন ডলার)-এ পৌঁছায়।

৮. বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য-যুদ্ধের বড় শিকার হবেন মার্কিন ভোক্তারা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি গত শতাব্দীর আশির দশকের খারাপ নীতিরই পুনরাবৃত্তি মাত্র। ব্যাংক অব আমেরিকা মেরিল লিঞ্চ-এর এক সর্বশেষ রিপোর্টে এ-দাবি করা হয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত শতাব্দীর আশির দশকে অনুসৃত বাণিজ্যনীতির নেতিবাচক প্রভাব এখনও রয়ে গেছে। বাণিজ্যিক বাধা সৃষ্টি করে বাণিজ্য-ঘাটতি কমানো যায় না। আপাতদৃষ্টিতে এতে কিছু ইতিবাচক ফল পাওয়া গেলেও, সার্বিকভাবে মার্কিন অর্থনীতি এ-নীতির ফলে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হবে।

৯. বিশ্বে ভবিষ্যতে কৃষিপণ্যের উত্পাদন রেকর্ড পরিমাণ বাড়বে। অধিকাংশ শস্য, মাংস, দুগ্ধজাত পণ্য, ও মাছের উত্পাদনের ক্ষেত্রে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে যাবে। সম্প্রতি প্যারিসে প্রকাশিত অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি) এবং জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)-র একটি যৌথ প্রতিবেদনে এই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়।

রিপোর্টে বলা হয়, ভবিষ্যতে অধিকাংশ কৃষিপণ্যের উত্পাদন স্থিতিশীলভাবে বাড়বে। তা ছাড়া, আগামী ১০ বছরে কৃষিপণ্য ও খাদ্যের চাহিদা কমে যাওয়া প্রধান প্রধান কৃষিপণ্যের দামও কমে যাবে।

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, সাহারার দক্ষিণাঞ্চলের আফ্রিকা এবং এশিয়ার দেশগুলোতে জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়বে এবং এর ফলে এসব দেশ ও অঞ্চলে কৃষিপণ্য ও খাদ্যের আমদানি বৃদ্ধি পাবে।

১০. ব্রাজিলে নতুন গাড়ির বিক্রি বেড়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেশটিতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে গাড়ি বিক্রি বেড়েছে ১৪.৫ শতাংশ।

পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্রাজিলে ১,১৬৬,৬৬৩টি নতুন কার, ভ্যানগাড়ি, বাস ও ট্রাক বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে জুনে বিক্রি হয়েছে ২০১,৯৮৭টি নতুন গাড়ি।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040