জুন মাসশেষে চীনের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ৩.১১২১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (অর্থ-কড়ি; ১৪ জুলাই;২০১৮)
  2018-07-14 14:47:02  cri


১. চীনের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বেড়েছে। চলতি বছরের জুন মাসশেষে মজুতের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩.১১২১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মে মাসের চেয়ে ০.০৫ শতাংশ বেশি। চীনের গণব্যাংক সম্প্রতি এ-তথ্য জানায়। এর আগে ধারণা করা হচ্ছিল যে, জুন মাসশেষে মজুত ৩.১০২৮ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াতে পারে। (এক ট্রিলিয়ন= ১০০০ বিলিয়ন; এক বিলিয়ন= ১০০ কোটি)

চীনা গণব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সংরক্ষণবাদী নীতির ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সংকট সৃষ্টি হলেও, চীনের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত স্থিতিশীল থাকবে।

গণব্যাংক আরও জানায়, জুনে স্বর্ণের মজুত অপরিবর্তিত রয়েছে। ওই মাসশেষে চীনের স্বর্ণের মজুত দাঁড়ায় ৫৯.২৪ বিলিয়ন আউন্সে, যার বর্তমান বাজারমূল্য ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

২. ২০১৭ সালে চীনের বনশিল্পের মোট আউটপুট ভ্যালু ৭.১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বা ১.১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়। সম্প্রতি চীনের জাতীয় বন ও তৃণভূমি প্রশাসন এক প্রতিবেদনে এ-তথ্য জানায়।

প্রতিবেদন অনুসারে, ১৯৯৪ সালে চীনের বনশিল্পের আউটপুট ভ্যালু ছিল মাত্র ১৩৪ বিলিয়ন ইউয়ান, যা বর্তমান ভ্যালুর পঞ্চাশ ভাগের এক ভাগ।

প্রশাসন আরও জানায়, ২০১৭ সালে চীনে বনপণ্যের বাণিজ্য হয়েছে ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। তা ছাড়া, এ-পর্যন্ত এই শিল্পে ৫ কোটির বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।  

৩. চীনে যারা চাকরি করতে চান, তাদের জন্য সুখবর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'লিঙ্কডইন' সম্প্রতি চালু করেছে বিশ্বব্যাপী নিয়োগ-প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় বিদেশিরা চীনে যে-ধরনের কাজ করার সুযোগ পাবেন, সেগুলোর মধ্যে আছে: শাওলিন মন্দিরের কুংফু শিক্ষানবিশ, জায়ান্ট পান্ডা কেয়ারটেকার, দ্রুতগতির ট্রেন রক্ষণাবেক্ষণকর্মী, চাংচিয়েচিয়ে জাতীয় বনপার্কে আবর্জনা সংগ্রহকারী, ইউয়েলু একাডেমির ভারপ্রাপ্ত ডিন, গরুর মাংসের নুডলস্‌ রান্নায় দক্ষ পাচক, ছিংহাই-তিব্বত মহাসড়কের জন্য ট্রাক-চালক, ইত্যাদি।

'আই অ্যাম ইন চায়না' শীর্ষক এই ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য চীনের সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে তুলে ধরা। আগামী ছয় মাস ধরে এই ক্যাম্পেইন চলবে এবং 'লিঙ্কডইন'-এর ৫২ কোটি বিদেশি সদস্য এই সময়ের মধ্যে নিবন্ধন করাতে পারবেন।

'লিঙ্কডইন চায়না'র মার্কেটিং ও পাবলিক রিলেশন্স ডিরেক্টর বিলি হুয়াং জানান, এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে যেসব কাজের সুযোগ বিদেশিদের দেওয়া হচ্ছে, সেসব কাজ চীনের সংস্কৃতি ও সমাজসংশ্লিষ্ট। বিদেশিরা খুব কাছ থেকে চীনের সংস্কৃতি ও সমাজ সম্পর্কে জানতে পারবেন।

উল্লেখ্য, লিঙ্কইনের এক পরিসংখ্যান অনুসারে, চীনের বেইজিং, শাংহাই, শেনচেন, কুয়াংচৌ ও হাংচৌয়ে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছেন।

৪. বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সাম্প্রতিক তেজিভাব সত্ত্বেও, ২০১৭ সালে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে। এ-নিয়ে টানা তিন বছর ল্যাটিন আমেরিকায় এফডিআই কমল। ইকনোমিক কমিশন ফর ল্যাটিন আমেরিকা অ্যান্ড দা ক্যারিবিয়ান সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ-তথ্য জানায়।

প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৭ সালে ল্যাটিন আমেরিকায় এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৬,১৬৭ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৩.৬ শতাংশ কম। ২০১১ সালের তুলনায় এ-অঙ্কটি আরও কম, প্রায় ২০ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৭ সালে ল্যাটিন আমেরিকার অধিকাংশ দেশে এফডিআই বেড়েছে। তবে, ব্রাজিল, চিলি, ও মেক্সিকোর মতো বড় দেশগুলোতে এফডিআই কমেছে যথাক্রমে ৯.৭, ৪৮, ও ৮.৮ শতাংশ।

এদিকে, মধ্য-আমেরিকায় গত আট বছর ধরেই এফডিআই বেড়েছে। ২০১৭ সালে এ-অঞ্চলে এফডিআই বেড়ে দাঁড়ায় ১৩০৮ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে পানামায় এফডিআই বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। ২০১৭ সালে দেশটিতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৬০৭ কোটি মার্কিন ডলার। অন্যদিকে, ২০১৭ সালে ক্যারিবীয় দেশগুলোতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ২০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৮৩ কোটি মার্কিন ডলার।

৫. মঙ্গোলিয়ার অর্থনীতিতে ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক এই পূর্বাভাস দিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে, খনি খাতে বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আসবে ওই সময়কালে। দেশটির অর্থনীতিতে মূলত এ-কারণেই ২০১৯-২০ সময়কালে তেজিভাব লক্ষ্য করা যাবে।

এদিকে, মঙ্গোলিয়ার সরকারি হিসেব অনুসারে, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে দেশটির অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় যথাক্রমে ১.২ শতাংশ ও ৫.১ শতাংশ। আর ২০১৮ সালের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৬.১ শতাংশ।

৬. চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে রাশিয়ার বাণিজ্য-উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ৮১৪০ কোটি মার্কিন ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪২.৬ শতাংশ বেশি। রুশ ফেডারেল কাস্টম্‌স সার্ভিস সম্প্রতি এক বিবৃতিতে এ-তথ্য জানিয়েছে।

প্রকাশিত তথ্যানুসারে, প্রথম পাঁচ মাসে রাশিয়ার বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২৭,৩০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩.৩ শতাংশ বেশি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, উক্ত সময়কালে রাশিয়া যেসব পণ্য রফতানি করেছে তার ৬৩.৯ শতাংশই জ্বালানি ও জ্বালানিপণ্য। গত বছরের চেয়ে এক্ষেত্রে পরিমাণ বেড়েছে ৫.২ শতাংশ এবং রফতানিপণ্যের দাম বেড়েছে ২৭.৮ শতাংশ।

৭. সঞ্চয়পত্র থেকে অর্থ পাওয়ায় গেল ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের প্রায় পুরো সময় ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি বাংলাদেশ সরকার। তবে অর্থবছরের শেষে এসে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ায় সরকারের নিট ব্যাংকঋণ দাঁড়িয়েছে ৯২৬ কোটি টাকায়। ফলে সরকারের মোট ব্যাংকঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯০ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত সরকারের মোট ব্যাংকঋণের স্থিতি ছিল ৮৯ হাজার ৭১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুন শেষে সামান্য বেড়ে হয়েছে ৯০ হাজার ৬৪২ কোটি ছয় লাখ টাকা। সেই হিসাবে সদ্যঃসমাপ্ত অর্থবছরে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ বেড়েছে ৯২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বা ১.০৬ শতাংশ।

৮. বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, ওষুধ, জাহাজ শিল্প ও সেবাখাতে আরও বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন সিঙ্গাপুরের একদল ব্যবসায়ী। বিনিয়োগের জন্য চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে অন্তত ৩০০ একর জমিও চেয়েছেন তারা। বাংলাদেশ সফরের সময় সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশনের একটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-র কার্যালয় পরিদর্শন করেন।

এসময় বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী প্রতিনিধিদলের সামনে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে একটি পরিকল্পিত শিল্পশহর উন্নয়নে 'বেজা' কাজ করছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এ অঞ্চলে একটি বাণিজ্যিক বন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডিও করছে।

৯. হ্যান্ডিক্রাফট রফতানি থেকে বাংলাদেশের আয় বাড়ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় হ্যান্ডিক্রাফট রফতানি থেকে দেশটির আয় বেড়েছে ১৫ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-র হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুসারে, গত অর্থবছরে এক কোটি ৬৭ লাখ ডলারের হ্যান্ডিক্রাফট পণ্য বিদেশে রফতানি করে বাংলাদেশ। এর আগের অর্থবছরে রফতানি হয়েছিল এক কোটি ৪৪ লাখ ডলার মূল্যের হ্যান্ডিক্রাফট।

অর্ধশতাধিক দেশে হ্যান্ডিক্রাফট রফতানি করে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে রফতানিপণ্যের মধ্যে আছে পাটের তৈরি পণ্য, বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন ধরনের ঝুড়ি, মেঝে ঢাকার মাদুর, নকশি কাঁথা ইত্যাদি। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এসব পণ্য রফতানি হয়।

১০. যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় বা রেমিটেন্স আসা বাড়ছে। সদ্যসমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯৯ কোটি ৭৪ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। আগের অর্থবছরে এসেছিল ১৬৮ কোটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার। সে-হিসাবে এক বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় বেশি এসেছে ৩০ কোটি ৮৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে এ-তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখনও সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় পাঠান সৌদি আরব থেকে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। চতুর্থ মালয়েশিয়া ও পঞ্চম কুয়েত। এ ছাড়া ষষ্ঠ ওমান, সপ্তম যুক্তরাজ্য, অষ্টম কাতার, নবম ইতালি ও দশম স্থানে আছে বাহরাইন।

প্রবাসী আয় আসায় শীর্ষ ৩০টি দেশের যে-তালিকা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, তাতে ৩০তম অবস্থান চীনের। গত অর্থবছরে চীন ছিল ২৮তম স্থানে। সে-বছর দেশটি থেকে ১ কোটি ২৮ লাখ ২০ হাজার ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৪৯৮ কোটি ডলার প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১৭.৩২ শতাংশ বেশি।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040