চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনের আমদানি-রফতানি ৭.৯ শতাংশ বেড়েছে (অর্থ-কড়ি; ২১ জুলাই ২০১৮)
  2018-07-21 12:54:45  cri


১. চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, তাঁর দেশ ও ইউরোপের উচিত একযোগে বিশ্বের মুক্ত-বাণিজ্যব্যবস্থাকে রক্ষা করা। তিনি সম্প্রতি বেইজিংয়ে ইউরোপীয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট দোনালত্‌ তুস্ক ও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লদ ইয়ুঙ্কার সঙ্গে বৈঠককালে এ-মন্তব্য করেন।

বৈঠকে সি চিন পিং বলেন, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) হচ্ছে বিশ্বশান্তির প্রবক্তা, বৈশ্বিক উন্নয়ন-কার্যক্রমে ইতিবাচক ভূমিকা পালনকারী, এবং আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার অন্যতম রক্ষক। পারস্পরিক সম্মান, সমতা, ন্যায্যতা, সহযোগিতা, ও কল্যাণের ভিত্তিতে চীন ‌ইইউ'র সঙ্গে সার্বিক কৌশলগত অংশিদারিত্বের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সি চিন পিং আরও বলেন, দু'পক্ষকে বহুপক্ষবাদের ভিত্তিতে মুক্ত বিশ্ব-অর্থনীতিকে রক্ষা করে বৈশ্বিক শান্তি ও উন্নয়নের জন্য আরও অবদান রাখতে হবে।

২. গত জুনে চীনে অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২.৩ শতাংশ কমেছে। চীনের জাতীয় পরিসাংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস) সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।

এনবিএস জানায়, জুনে চীনে ১৫.৮৫ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল উৎপন্ন হয়েছে এবং ৪৯.৭৮ মিলিয়ন টন অপররিশোধিত তেল শোধন করা হয়েছে। চীন তার চাহিদার ৬০ শতাংশ তেল বিদেশ থেকে আমদানি করে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীন ২২৫ মিলিয়ন টন অপরিআশোধিত তেল আমদানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.৮ শতাংশ বেশি।

এদিকে, জুনে চীনে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদিত হয়েছে ১২.১৮ বিলিয়ন ঘনমিটার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.৬ শতাংশ বেশি।

৩. চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনের মোট আমদানি-রফতানির পরিমাণ ছিল ১৪.১২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা গতবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭.৯ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে আমদানি ১১.৫ শতাংশ এবং রফতানি ৪.৯ শতাংশ বেড়েছে। চীনের বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যুরো সূত্রে এ-তথ্য জানা গেছে।

এদিকে, চীনের বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যুরোর উপ-পরিচালক সুং সিয়ান মাও বলেছেন, চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য রফতানির সুযোগ বৃদ্ধি করছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালের প্রথম তিন মাসে চীনের আমদানি-বৃদ্ধি বৈশ্বিক আমদানি-বৃদ্ধির ১৩.২ শতাংশ ছিল।

৪. চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধেও চীনের অর্থনীতিতে স্থিতিশীল উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মুখপাত্র মাও সেং ইউং সম্প্রতি বেজিংয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ-আশাবাদ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসের অর্থনৈতিক উপাত্ত থেকে দেখা যাচ্ছে যে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির নির্ণায়ক শক্তিতে পরিণত হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদার মূল অংশ হল ভোগ। বছরের দ্বিতীয়ার্ধেও পণ্য ও সেবার ভোগ স্থিতিশীলভাবে বৃদ্ধি পাবে।

মুখপাত্র আরও বলেন, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বিনিয়োগ খাতেও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। যন্ত্রনির্মাণ শিল্পে টানা ৩ মাস দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে এবং রিয়্যাল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ প্রথম ৬ মাসে ৯.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও তিনি জানান।

৫. চলতি ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে চীনের জিডিপি দাঁড়ায় ৪১ লাখ ৮৯ হাজার ৬১০ কোটি ইউয়ান, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬.৮ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি প্রকাশিত চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন থেকে এ-তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৬,৮ ও ৬.৭ শতাংশ। বিগত ১২টি প্রান্তিকে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৭ থেকে ৬.৯ শতাংশের মধ্যে উঠানামা করেছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে চীনারা জনপ্রতি গড়ে ব্যয় করেছে ৯৬০৯ ইউয়ান করে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬.৭ শতাংশ বেশি।

৬. বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-তে চীনের গেল দু'বছরের বাণিজ্যনীতির পর্যালোচনা সম্প্রতি জেনিভায় শেষ হয়। পর্যালোচনা চলাকালে ডব্লিউটিও-র সদস্যদেশগুলো চীনকে ১৯৬৩টি লিখিত প্রশ্ন করে এবং পর্যালোচনায় অংশগ্রহণকারী ৭০ জন সদস্য বক্তৃতা করেন। এটি ছিল ডব্লিউটিও-তে চীনের বাণিজ্যনীতির সপ্তম পর্যালোচনা।

উল্লেখ্য, ডব্লিউটিও-র নিয়ম অনুযায়ী, নিয়মিত বিরতিতে সংস্থার সকল সদস্যদেশের বাণিজ্যনীতির পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনার উদ্দেশ্য, সদস্যদেশগুলোর বাণিজ্যনীতির স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং সংস্থার নীতি মেনে চলতে ও প্রতিশ্রুতি পালন করতে তাগিদ দেওয়া।

৭. 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী কঠিন অবস্থায় পড়েছে বলে সম্প্রতি ব্রিটেনের ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস্‌ পত্রিকা যে-মন্তব্য করেছে, তা একেবারেই সঠিক নয়। সম্প্রতি বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া ছুন ইং এ-দাবি করেন।

তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্কের কারণে আজ পর্যন্ত একটি দেশও ঋণগ্রস্ত হয়নি। যেসব দেশের ঋণ-সংকট আছে, সেসবের জন্য চীন দায়ী নয়।

মুখপাত্র বলেন, পারস্পরিক আলোচনা ও কল্যাণের ভিত্তিতে যৌথভাবে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই উদ্যোগের ফলে ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট দেশগুলো শুল্ক হিসেবে ২২০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে এবং এসব দেশে ২ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া, এই উদ্যোগের আওতায় যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, সেগুলো সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জনগণের কাছেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে এই উদ্যোগকে ঋণ-সংকটের কারণ মনে করার কোনো যুক্তি নেই।

৮. ২৬তম আরব অর্থনৈতিক ফোরাম গত ১২ ও ১৩ জুলাই লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অনুষ্ঠিত হয়। ফোরামে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা মনে করেন, চীন-আরব সহযোগিতার সম্ভাবনা উজ্জ্বল এবং 'এক অঞ্চল, এক পথ' কাঠামোতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরব দেশগুলো চীনের সঙ্গে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।

এবার ফোরামের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল: আরব দেশগুলোর সামনে বিরাজমান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং সংস্কার ও বিনিয়োগ পরিবেশ। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সা'দ হারিরি ফোরামে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া, এতে আরব দেশগুলোর বিভিন্ন মহলের পাঁচ শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।

ফোরামে আরব দেশগুলোর 'ফেডারেশান অব এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড কমার্সিয়াল অ্যাসোসিয়েশান'-এর একজন কর্মকর্তা জানান, চীনের 'এক অঞ্চল, এক পথ' প্রস্তাব ইতোমধ্যেই অনেক আরবদেশে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটি চীন সরকার কর্তৃক উত্থাপিত একটি বাস্তব কৌশল।

লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফুয়াদ সিনিয়োরা বলেন, চীন-আরব সহযোগিতার সম্ভাবনা অনেক। আরব দেশগুলো পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিনিময় জোরদার করতে ইচ্ছুক।

৯. মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি মাসের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা-আস্থা-সূচক ছিল ৯৭.১, যা বিগত ৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। মার্কিন সরকারের শুল্কনীতি অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে—এমন আশঙ্কায় সূচকের পতন ঘটেছে বলে পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়।

পরিসংখ্যান তৈরির সঙ্গে জড়িত একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ট্রাম্প সরকারের শুল্কনীতির ফলে মার্কিন ভোক্তাদের দুশ্চিন্তা দিন দিন বাড়ছে। আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমতে পারে এবং মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশের শুল্কনীতি অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ৩৮ শতাংশ মার্কিনি মনে করেন। মে মাসে এ-হার ছিল ১৫ শতাংশ।

১০. বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকা অনুসারে ভারত এখন পৃথিবীর ষষ্ঠ অর্থনৈতিক শক্তি। এই স্থানে উঠে আসতে দেশটি ইউরোপের একাধিক দেশকে পেছনে ফেলেছে। সম্প্রতি আইএমএফ কর্তৃক প্রকাশিত তালিকা অনুসারে ভারতের জিডিপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৫৯৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে। গত অর্থবছরে দেশটির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.৭ শতাংশ, চলতি বছরের প্রথমার্ধে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৭ শতাংশ।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040