তিন বছরে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে গাইডলাইন প্রকাশ করেছে চীন সরকার (অর্থ-কড়ি; ২৫ অগাস্ট ২০১৮)
  2018-08-27 14:35:54  cri


১. ২০২০ সালের মধ্যে তথা আগামী ৩ বছরে দেশকে সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত করতে সম্প্রতি একটি গাইডলাইন প্রকাশ করেছে চীন সরকার। এতে বলা হয়েছে, আগামী তিন বছরে দারিদ্র্যসীমার নিচে-রয়ে-যাওয়া বাকি ৩ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করা একটা আয়াসসাধ্য কাজ। গাইডলাইনটি প্রকাশ করেছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ও রাষ্ট্রীয় পরিষদ।

গাইডলাইনে বলা হয়েছে: দরিদ্র মানুষের খাদ্য ও বস্ত্রের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে; দরিদ্র পরিবারের শিশুদের বাধ্যতামূলক ৯ বছরের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে; দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা ও বাসস্থানের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে।

গাইডলাইন অনুসারে, হতদরিদ্র অঞ্চলগুলোর দারিদ্র্যবিমোচনে অধিক যত্নবান হতে হবে। হতদরিদ্র অঞ্চলগুলোর মধ্যে আছে তিব্বত, সিচুয়ান প্রদেশে লিয়াংশান ঈ স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেক্চার, ইউননান প্রদেশের নুচিয়াং লিসু স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেস্চার।

গাইডলাইনে লক্ষ্যভিত্তিক ত্রাণ-তৎপরতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে; দেওয়া হয়েছে উপযুক্ত শিল্পের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্থানান্তর, পরিবেশ সংরক্ষণ, ও শিক্ষার ওপর গুরুত্ব।

গাইডলাইনে দরিদ্র অঞ্চলগুলোতে অবকাঠামো উন্নয়ন, আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, এবং দারিদ্র্যবিমোচনে পার্টির নেতৃত্বের শক্তিশালী ভূমিকার কথাও বলা হয়েছে।

২. চীনের মূল ভূখণ্ডে চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসে ৪৯,৬৭০ কোটি ইউয়ান, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২.৩ শতাংশ বেশি। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ-তথ্য জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ডলারের হিসেবে চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে এফডিআই এসেছে ৭৬০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.৫ শতাংশ বেশি।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, সাত মাসে উচ্চ-প্রযুক্তির শিল্পে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭.৫ শতাংশ বেশি এফডিআই এসেছে। এই খাতে এফডিআই মোট এফডিআই-য়ের ২১.৫ শতাংশ।

এ ছাড়া, সাত মাসে চীনের এগারটি পরীক্ষামূলক মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলে এফডিআই আসে ৬৫৮০ কোটি ইউয়ান, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি। এসময় এই অঞ্চলগুলোতে পাঁচ হাজারের বেশি বিদেশি বিনিয়োগনির্ভর নতুন শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।

৩. ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি মার্কিন অর্থনীতির ক্ষতি করবে। সম্প্রতি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশান ফর বিজনেস ইকনোমিকস্‌ (এনএবিই)-র একটি জরিপ থেকে এ-তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপ অনুসারে, এনএবিই'র প্যানেলের ২৫১ জন অর্থনীতিবিদ একবাক্যে উক্ত আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা ট্রাম্পের শুল্কনীতির সমালোচনা করেন।

এনএবিই ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন সুইফট্ বলেছেন, সংস্থার জরিপ প্যানেলের ৯০ শতাংশের বেশি অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি মার্কিন অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়া, অর্থনীতিবিদরা নাফটা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসারও তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা চলতি বছরের শুরুর দিকে ট্রাম্প প্রশাসনের ট্যাক্স হ্রাসের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। জরিপটি ১৯ জুলাই থেকে ২ অগাস্টের মধ্যে চালানো হয়।

৪. জার্মানি চলতি বছর ২৯৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের 'কারেন্ট একাউন্ট সারপ্লাস' অর্জন করবে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। মিউনিখভিত্তিক ইফো ইনস্টিটিউট ফর ইকনোমিক রিসার্চ-এর বরাত দিয়ে সম্প্রতি জার্মান গণমাধ্যম এ-খবর দিয়েছে। ইফো'র হিসেব অনুসারে, এক্ষেত্রে ২০,০০০ কোটি ও ১১,০০০ কোটি ডলার নিয়ে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকবে জাপান ও হল্যান্ড।

উল্লেখ্য, 'কারেন্ট একাউন্ট সারপ্লাস' একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সূচক। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ থেকে একটি দেশের বাণিজ্যের ভারসাম্য (আমদানি ও রফতানি) ও নেট আয় (অথবা লস) যোগ করে 'কারেন্ট একাউন্ট সারপ্লাস' বের করা হয়।

৫. চীনের উন্মুক্তকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি এবং জার্মান গাড়িনির্মাতা কোম্পানি বিএমডব্লিউ এর পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করবে। সম্প্রতি মিউনিখে এ-কথা বলেন বিএমডব্লিউর অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট থমাস বেকার।

সিনহুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই তাঁদের কোম্পানি 'গ্রেটওয়াল' ও 'পাইতু'র মতো বড় চীনা কোম্পানির সঙ্গে বড় ধরনের সহযোগিতা-প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, বিএমডব্লিউ চীনে ব্যবসার সব সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে চায়।

৬. মেক্সিকোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরস সম্প্রতি বলেছে, বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অন্যতম বড় ঝুঁকি হচ্ছে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য-বিরোধ। পাঁচ সদস্যের বোর্ড তাদের সর্বশেষ নীতি-নির্ধারণী বৈঠকে এ-মন্তব্য করে বলে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর সংরক্ষণবাদী নীতির কুফল বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ইতোমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে।

৭. তৃতীয় অ্যাপারেল টেক্সটাইল সোর্সিং কানাডা (এটিএসসি ২০১৮) প্রদর্শনী সম্প্রতি মন্ট্রিলে অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনীটি যৌথভাবে আয়োজন করে চায়না চেম্বার অব কমার্স ফর ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সাপোর্ট অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (সিসিসিটি) এবং চীনের চিয়াংসু ট্রেড প্রমোশন অ্যাসোসিয়েশান।

১১,৪০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়, যা আগের বছরের প্রায় দ্বিগুণ। প্রদর্শনীতে কানাডা, চীন, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, নেপাল ও ইউক্রেনসহ ২০টির বেশি দেশ অংশগ্রহণ করে।

প্রদর্শনী চলাকালে ২০টির বেশি লেকচার ও ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়। এসব লেকচার ও ফোরামে বিশ্বখ্যাত বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

৮. সম্ভাব্য সাইবার আক্রমণ ঠেকাতে দেশের ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি দেশের সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে এবিষয়ে সার্কুলার পাঠানো হয়।

সার্কুলারে বলা হয়, সম্ভাব্য সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থার নিরাপত্তা বাড়াতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

সার্কুলারে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও গণমাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এক্ষেত্রে সাইবার অপরাধীরা পেমেন্ট সিস্টেমস হ্যাক করে দেশের ভেতরে এবং দেশের বাইরে থেকে এ অর্থ হাতিয়ে নেয়। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এ ধরনের সাইবার সিকিউরিটি এবং হ্যাকিং সংক্রান্ত নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে।

"এমতাবস্থায়, সম্ভাব্য সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থার নিরাপত্তা বৃদ্ধিকল্পে ২০১৬ সালের ০৩ মার্চ এবং ২০১৭ সালের ২৪ অগাস্ট জারি করা এ সংক্রান্ত সার্কুলার দুটি পরিপালনসহ সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে নিবিড় তদারকি নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে।"

তবে বোংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এটা নতুন কিছু নয়। মাঝে-মধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে এ ধরনের সতর্ক করে দেওয়া হয়।"

৯. ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশের পণ্য প্রদর্শনের জন্য একটি স্থায়ী প্রদর্শনকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই লক্ষ্যে সম্প্রতি কনফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনস এবং ইন্দো-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একটি সমাঝোতাপত্র স্বাক্ষর হয়।

এর আগে দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পপতিদের এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। কলকাতার একটি অভিজাত হোটেলে এই বৈঠকের আয়োজন করে কলকাতার 'কনফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনস' বা সিডব্লিওবিটিএ এবং 'ইন্দো-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি'। সহযোগিতায় ছিল কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন।

সেমিনারে আলোচকেরা দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে আরও বেশি করে দুই দেশের পণ্য আমদানি এবং রফতানি বৃদ্ধি করার ওপর জোর দেন। তারা বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারত পরস্পরের বন্ধু ও প্রতিবেশী। এই দুই দেশকে অর্থনৈতিক দিক থেকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে আরও বেশি করে পণ্য আমদানি-রফতানির ওপর জোর দিতে হবে। পাশাপাশি তারা বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে এবং উন্নয়নশীল দেশের তকমা পেতে চলেছে। তাই বাংলাদেশের পণ্য ভারতে যাতে আরও বেশি করে আমদানি করা হয়, সেদিকে দুই দেশের শিল্পপতিদের খেয়াল রাখতে হবে; আমদানি-রফতানির পথে যাবতীয় বাধা দূর করতে হবে; এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে দুই দেশের বণিক সভাগুলোর মধ্যে।

(আলিমুল হক)

 

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040