‌চীনের বৃহত্তম প্রাইভেট কোম্পানি হুয়াওয়েই (অর্থ-কড়ি; ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮)
  2018-09-01 13:22:44  cri


১. চীন সম্প্রতি প্রকাশ করেছে তার বৃহত্তম ৫০০টি প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজের তালিকা। তালিকার শীর্ষস্থানে আছে টেলিকম ইকুইপমেন্ট জায়ান্ট হুয়াওয়েই এবং ই-কমার্স ফার্ম সুনিং। তালিকাটি প্রকাশ করেছে অল চায়না ফেডারেশন অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড কমার্স। আর এটি প্রকাশিত হয় লিয়াওনিং প্রদেশের রাজধানী শেনইয়াংয়ে আয়োজিত 'সামিট অব চায়না টপ ফাইভ হান্ড্রেড প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজেস, ২০১৮'-এ।

তালিকার শীর্ষ ৯টি প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব ২০১৭ সালে ৩০,০০০ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়। এই ৯টি কোম্পানি হচ্ছে: হুয়াওয়েই, সুনিং, আমর ইন্টারন্যাশনাল, জেডি ডটকম, ওয়েইছিয়াও পাইওনিয়ারিং গ্রুপ, লেজেন্ড হোল্ডিংস, এভারগ্রান্দে, গোমে হোল্ডিংস, এবং হ্যংলি গ্রুপ।

তালিকার প্রথম ৬১টি কোম্পানির রাজস্ব ২০১৭ সালে ১০,০০০ কোটি ইউয়ান বা তারচেয়ে বেশি ছিল। ২০১৬ সালে যেখানে ৫০টি কোম্পানির রাজস্ব ১০,০০০ কোটি ইউয়ান বা তারচেয়ে বেশি ছিল।

এদিকে, ২০১৭ সালে চীনের ১৮টি প্রাইভেট কোম্পানি বিশ্বের ৫০০টি শীর্ষ কোম্পানির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল।

২. চীনের কুইচৌ প্রদেশ ২০২০ সালের মধ্যে দেশের শীর্ষ চা রফতানিকারক প্রদেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। ওই সাল থেকে প্রদেশটি বছরে ৫০,০০০ টন চা রফতানি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০১৭ সালে কুইচৌয়ে ৪৭৮,০০০ হেক্টর জমিতে চা চাষ হয়। সে-বছর চা চাষের জমির হিসেবে প্রদেশটি দেশের শীর্ষস্থানে অবস্থান করছিল। সম্প্রতি প্রাদেশিক কৃষি কমিশন জানায়, বিদেশে রফতানি বাড়াতে স্থানীয় চা-কোম্পানিগুলোকে সহায়তা করা হবে। কোনো কোনো চা-রফতানিকারককে কর ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধাও দেওয়া হবে।

২০১৭ সালে কুইচৌ প্রদেশে ৩২৭,০০০ টন চা উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে বিদেশে রফতানি হয়েছে ২,৮৫২.৬ টন।

৩. চীনে মোবাইলে লেনদেন ক্রমশ বাড়ছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকেও এই ধারা অব্যাহত ছিল। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি এ-তথ্য জানায়।

বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনে মোবাইলে লেনদেন হয়েছে ১৪৯২ কোটি বার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৩ শতাংশ বেশি। আর এই ১৪৯২ কোটি লেনদেনের মোট আর্থিক মূল্য হচ্ছে ৬২.৮৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (এক ট্রিলিয়ন=১০০০ বিলিয়ন; এক বিলিয়ন=১০০ কোটি), যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি।

৪. চীনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর) মার্কেট ক্রমশ বড় হচ্ছে। আগামী কয়েক বছর ধরেই এই ধারা অব্যাহত থাকবে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

বিশেষজ্ঞ ওয়াং ফেং বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে চীনের ভিআর মার্কেট ৯০০০ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এই খাতে প্রবৃদ্ধি হবে বছরে গড়ে ১২০ শতাংশ।

পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৭ সালে চীনের ভিআর মার্কেট ছিল ১৬০০ কোটি ইউয়ানের, যা আগের বছরের চেয়ে ১৬৪ শতাংশ বেশি।

৫. চীন-ব্রিটেন আর্থ-বাণিজ্যিক কমিশনের ত্রয়োদশ সম্মেলন সম্প্রতি বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী চুং শান ও ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী লিয়াম ফক্স।

সম্মেলনে দু'পক্ষ দু'দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক, 'এক অঞ্চল, এক পথ' সহযোগিতা, চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ, চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মত বিনিময় করে।

সম্মেলনে চুং শান বলেন, বর্তমানে চীন-ব্রিটেন সম্পর্ক 'স্বর্ণ যুগে' রয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরিসা মে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা নিয়ে ব্যাপক ঐকমত্যে পৌঁছান। আর এবারের সম্মেলনের উদ্দেশ্য হল, দু'দেশের নেতাদের যৌথ সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন করা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু'দেশের সহযোগিতায় নতুন অগ্রগতি অর্জন করা।

সম্মেলনে ফক্স বলেন, ব্রিটেন দু'দেশের আর্থিক সম্পর্কের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং আশা করে যে, দু'দেশ বিভিন্ন ইস্যুতে নীতিগত সমন্বয় জোরদার করবে।

চীন-মার্কিন বাণিজ্য-যুদ্ধ সম্পর্কে চুং শান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আচরণ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মের সরাসরি লঙ্ঘন। বাণিজ্য-যুদ্ধে কেউই জয়ী হতে পারে না। চীন এই যুদ্ধ করতে চায় না, তবে একে ভয়ও পায় না। চীন সরকার দৃঢ়ভাবে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে রক্ষা করবে।

এ-প্রসঙ্গে ব্রিটিশ মন্ত্রী আশা করেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্যের প্রশ্নে নিজেদের মধ্যে বিরাজমান মতবিরোধ দূর করবে।

৬. চীন ও ইউরোপের মধ্যে মালবাহী ট্রেনের মোট ট্রিপ-সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ২০১১ সাল থেকে চীন ও ইউরোপের মধ্যে মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এর পর থেকেই ট্রিপ-সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে থাকে।

৭. চীনের উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী ছিয়ান খ্য মিং সম্প্রতি বেইজিংয়ে বলেন, তাঁর দেশের সঙ্গে সহযোগিতার প্রস্তাবিত নতুন ব্যবস্থায় আফ্রিকার নিজস্ব উন্নয়ন-সামর্থ্য বাড়বে। সেপ্টেম্বরে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের বেইজিং শীর্ষসম্মেলন চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার নতুন ব্যবস্থা উত্থাপিত হবে।

পরিসংখ্যান অনুসারে, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে আফ্রিকায় ২৫টি আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতাকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এই ২৫টি কেন্দ্রে ৪০০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে আফ্রিকান কর্মীর সংখ্যা ৪১ হাজার।

এ ছাড়া, চীন টানা নয় বছর ধরে আফ্রিকার বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০১৭ সালে আফ্রিকার সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ১.৭ কোটি মার্কিন ডলার, যা ২০১৬ সালের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি।

উল্লেখ্য, ৩০টিরও বেশি দেশ বেইজিং শীর্ষসম্মেলনে অংশ নেবে। আফ্রিকার ৭ শতাধিক প্রতিষ্ঠান সম্মেলনে অংশ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে।

৮. ইথিওপিয়া গত ৮ জুলাই শেষ-হওয়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চীনে ২৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে, যা দেশটির মোট রফতানির ৮.৬৫ শতাংশ। ২০০০ সালে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরাম প্রতিষ্ঠার পর থেকেই চীনে ইথিওপিয়ার রফতানি ক্রমশ বাড়ছে বলে জানিয়েছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় জানায়, সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে ইথিওপিয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট ২৮৩ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২৩ কোটি মার্কিন ডলার।

৯. বাণিজ্য-বিরোধ যত দীর্ঘায়িত হবে, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকরা তত বেশি অপ্রচলিত ক্ষতির সম্মুখীন হবে। মার্কিন গণমাধ্যমে সম্প্রতি এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বাণিজ্য-বিরোধের ফলে কৃষি খাতে আয় লক্ষণীয়ভাবে কমে যাবে। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে চলতি বছর কৃষি খাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আয় ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম হবে। ২০১৩ সালে যেখানে কৃষি খাতে আয় ছিল ১২,৩০০ কোটি মার্কিন ডলার, সেখানে চলতি বছর তা নেমে দাঁড়াবে মাত্র ৬০০০ কোটি ডলারে।

মার্কিন গণমাধ্যম 'দি হিল'-এর এক প্রবন্ধে বলা হয়, আয় কমে যাওয়ায় কৃষকদের আর্থিক দুর্দশা তীব্রতর হবে, তাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা কমে যাবে, দেউলিয়া হয়ে যাওয়া খামারের সংখ্যা বাড়বে। আর কৃষি খাতে ক্ষতির ফলে কৃষকের সংখ্যাও কমতে থাকবে।

১০. চলতি বছরের প্রথমার্ধে ইউরোপে বিদ্যুতচালিত গাড়ি বিক্রি হয়েছে ৪০ শতাংশ বেশি। ফলে ইউরোপে বিদ্যুতচালিত গাড়ির সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। সম্প্রতি ইবি-ভল্যুম নামক একটি ডাটাবেজ থেকে এ-তথ্য পাওয়া গেছে।

ডাটাবেইজ অনুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে ইউরোপে বিদ্যুতচালিত গাড়ি বিক্রি হয়েছে ১৯৫,০০০টি, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪২ শতাংশ বেশি। বর্তমান ধারা বজায় থাকলে বছরশেষে ইউরোপে বিদ্যুতচালিত গাড়ির সংখ্যা দাঁড়াবে ১৩ লাখ ৫০ হাজারে।

বিদ্যুতচালিত গাড়ি বিক্রির দিক দিয়ে ইউরোপে নরওয়ে এগিয়ে আছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেশটিতে বিদ্যুতচালিত গাড়ি বিক্রি হয়েছে ৩৬,৫০০টি।

১১. চলতি বছর রাশিয়ার কয়লা রফতানির মোট পরিমাণ ২০০ মিলিয়ন টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সম্প্রতি দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী এ-কথা বলেন।

তিনি বলেন, এর মধ্যে অর্ধেক কয়লা যাবে পশ্চিমে এবং বাকি অর্ধেক পূর্বে। রাশিয়া ২০১৮ সালে ৪২০ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন করবে বলেও জানান মন্ত্রী।

উল্লেখ্য, বিশ্বের কয়লা-বাজারের প্রায় ১৪ শতাংশ রাশিয়ার দখলে আছে।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040