চীন-মার্কিন বাণিজ্য-ঘাটতির জন্য বেইজিং দায়ী নয়: চীনের উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী (অর্থ-কড়ি; ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮)
  2018-10-02 16:02:14  cri


১. চীনের অন্যায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা-কৌশলের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে বিশাল বাণিজ্য-ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে বলে যে-অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন ও বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সম্প্রতি চীনের উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী ফু চি ইং বেইজিংয়ে এ-কথা বলেন।

তিনি বলেন, চীন-মার্কিন বাণিজ্যের ফলে একদিকে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো বেশি করে প্রক্রিয়াকরণের ফি লাভ করে এবং অন্যদিকে মার্কিন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ডিজাইন ও খুচরা যন্ত্রাংশের জন্য বিশাল মুনাফা অর্জন করে। তা ছাড়া, সস্তা ও গুণগত মানসম্পন্ন চীনা পণ্য মার্কিন নাগরিকরা ব্যবহার করতে পারেন।

উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য-ঘাটতি দুই দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোসহ অন্যান্য অনেক ফ্যাক্টরের সঙ্গেও জড়িত।

তিনি আরও বলেন, গাড়ি, বিমান, কৃষিপণ্য ও সেবা শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য-উদ্ধৃত্ত আছে। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক বাণিজ্য-ঘাটতি চীনে বিভিন্ন মার্কিন পণ্যের রফতানি-নিষেধাজ্ঞার সঙ্গেও সম্পর্কিত।

২. এদিকে, সম্প্রতি চীনের পিপলস ডেইলি পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, চীন-মার্কিন বাণিজ্য-ঘাটতি দূর করার একমাত্র পদ্ধতি হচ্ছে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা।

নিবন্ধে বলা হয়, দু'দেশের সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে আর্থ-বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে মার্কিন সরকারের নেতিবাচক আচরণ এই সুসম্পর্ককে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এতে চীন-মার্কিন সম্পর্কই শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, বিশ্বের বহুপক্ষবাদ ও অবাধ বাণিজ্যও হুমকি মুখে পড়েছে।

নিবন্ধে সম্প্রতি প্রকাশিত 'চীন-মার্কিন বাণিজ্য-ঘাটতির বাস্তবতা ও চীনের অবস্থান' শীর্ষক শ্বেতপত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, এতে তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে দু'দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্কের ধরন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। শ্বেতপত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি হিসেবে পারস্পরিক কল্যাণ ও স্বার্থের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, মার্কিন সরকারের সাম্প্রতিক আচরণ বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদ ও আধিপত্যবাদের বহিঃপ্রকাশ।

নিবন্ধে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে চীন-মার্কিন পণ্য-বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৫৮ হাজার ৩৭০ কোটি মার্কিন ডলার, যা ১৯৭৯ সালের ২৩৩ গুণ। এটা এখন প্রমাণিত সত্য যে, আধুনিক দু'টি দেশের মধ্যে আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা 'উইন-উইন' পরিস্থিতির সৃষ্টি করে; এটা কোনো 'জিরো-সাম গেইম' নয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও নাগরিকরা এ-সহযোগিতায় লাভবান হয়েছে এবং চীনের অর্থনীতিও এ-থেকে উপকৃত হয়েছে। পাশাপাশি এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিশ্বের দু'টি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকবে; থাকবে মতভেদ। এই সমস্যা ও মতভেদ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা উচিত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সেই গ্রহণযোগ্য পথে না-গিয়ে, বর্তমানে একতরফাভাবে চীনের ওপর বাণিজ্যযুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। এতে সমস্যার সমাধান হবে না, বরং তা দু'পক্ষকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, চীন বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র বৃহত্তম উন্নত দেশ। দু'দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিশ্বের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দু'দেশের মতভেদ পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে দূর করা প্রয়োজন। এ-ক্ষেত্রে সহযোগিতা হচ্ছে একমাত্র সঠিক পদ্ধতি এবং এর মাধ্যমেই কেবল দু'দেশের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে উঠতে পারে।

৩. জার্মান প্রযুক্তি গ্রুপ হেরাইউসের ব্যবস্থাপনা পরিষদের চেয়ারম্যান জান রিনার বলেছেন, বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদ থেকে কোনো পক্ষই লাভবান হতে পারে না। সম্প্রতি শাংহাইয়ে সিনহুয়াকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাত্কারে তিনি এ-মন্তব্য করেন।

২০১৭ সালে ইউরোপের শীর্ষ ৫০০ কোম্পানির অন্যতম এই গ্রুপের চেয়ারম্যান আরও বলেন, অথনীতির বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া অনেকদূর এগিয়ে গেছে। এখন আর পেছনের দিকে যাওয়ার উপায় নেই। এখন বিশ্বায়নকে অস্বীকার করা বাস্তবসম্মত নয়। বিশ্বায়ন থেকে সকল পক্ষই লাভবান হয়। অন্যদিকে, বাণিজ্য-যুদ্ধে কোনো বিজয়ী পক্ষ নেই।

উল্লেখ্য, মধ্য-সেপ্টেম্বরে হেরাইউস চীনের চিয়াংসু প্রদেশের রাজধানী নানচিংয়ে ১২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে।

৪. সদ্যসমাপ্ত দ্বাদশ গ্রীষ্মকালীন দাভোস ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং চীনের অর্থনীতি ভালোর দিকে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। সম্প্রতি বেইজিংয়ে এক নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কেং শুয়াং এ-কথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী লি'র ভাষণে বাইরের দুনিয়াকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়া হয়েছে। বার্তাগুলো হচ্ছে: চীন দৃঢ়ভাবে অর্থনীতির বিশ্বায়ন-প্রক্রিয়াকে রক্ষা করবে; চীনের অর্থনীতি ভালোর দিকে যাচ্ছে; এবং চীন চলমান সংস্কার-কার্যক্রম সম্প্রসারিত করবে ও নিজেকে বহির্বিশ্বের জন্য আরও উন্মুক্ত করবে।

মুখপাত্র কেং শুয়াং বলেন, চীন অব্যাহতভাবে নিজের বাজারে বিদেশিদের প্রবেশের নিয়মকানুন আরও শিথিল করবে এবং শুল্কের হার কমাবে বলেও প্রধানমন্ত্রী লি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন।।

৫. বর্তমানে চীনে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ আরও উন্নত করার এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন করে প্রাণশক্তি যোগানোর প্রচেষ্টা চলছে। আর এ-লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে নতুন নীতিমালা। সম্প্রতি বেইজিংয়ে রাষ্ট্রবিষয়ক এক ফোরামে অংশগ্রহণকারী সামরিক কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতিনিধিরা এ-তথ্য জানান।

ফোরামে জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, প্রথম শ্রেণীর ব্যবসা-পরিবেশ সৃষ্টি করা চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) এবং রাষ্ট্রীয় পরিষদের নতুন কর্তব্য। আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব রক্ষা-ব্যবস্থা এবং বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ন্যায্য অধিকার সংরক্ষণ-ব্যবস্থা আরও কার্যকর করার প্রচেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান।

৬. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-ব্যবস্থায় সংস্কার চালানো উচিত। তবে, সেটা হতে হবে মতৈক্যের ভিত্তিতে। কোনো একক দেশের ইচ্ছা এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হবে না। চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই)-এর ভাষ্যকাররা সম্প্রতি এ-মন্তব্য করেছেন।

‌ ভাষ্যকারদের মতে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিরোধ নিষ্পত্তি বিভাগে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ দূর করতে হবে। ইউরোপীয় কমিশন ও কানাডা এ-বিভাগের কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক হস্তক্ষেপে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ-সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তাবে কানাডা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিতর্ক নিষ্পত্তি-ব্যবস্থা সুরক্ষার প্রস্তাব দিয়েছে।

সিআরআইয়ের ভাষ্যকাররা সংরক্ষণবাদ ও একতরফাবাদের বিরোধিতা করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের একতরফাবাদ এ বাণিজ্যিক সংরক্ষণবাদ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিমালা লঙ্ঘন করছে এবং বিশ্বের বহুপক্ষীয় বাণিজ্য-ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে বলে তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

ভাষ্যকাররা আরও বলেন, আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্যে পৌঁছানো জরুরি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সংস্কার বিভিন্ন পক্ষের স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত। উন্নয়নশীল দেশগুলোসহ সকল পক্ষের মতাততের ভিত্তিতেই সংস্কার সাধন করতে হবে।

৭. সাবেক মার্কিন অর্থমন্ত্রী হেনরি পলসন সম্প্রতি শিকাগোতে বলেছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্কে বিরোধ ও সুযোগ দীর্ঘকাল পাশাপাশি থাকবে।

স্থানীয় সময় ২১ সেপ্টেম্বর শিকাগোতে যুক্তরাষ্ট্রে চায়না জেনারেল চেম্বার অব কমার্সের একটি সম্মেলনে তিনি বলেন, দু'দেশের সম্পর্ক একটি নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে। কোনো সন্দেহ নেই, দু'দেশের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু পাশাপাশি এটাও সত্যি যে, দু'দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগও রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সামনে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে ক্ষেত্রে কঠিন সময় যেমন অপেক্ষা করছে, তেমনি দু'দেশের জনগণের মধ্যে আদান-প্রদান বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

৮. গত অগাস্টে চীন ৪.৭১ মিলিয়ন টন তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫১.৫ শতাংশ বেশি। আর চলতি বছরের প্রথম আট মাস চীন এলএনজি আমদানি করেছে ৩২.৬৩ মিলিয়ন টন, যা আগের বছরের একই সময়কালের চেয়ে ৪৭.৮ শতাংশ বেশি।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়াকে পিছনে ফেলে বিশ্বে দুই নম্বর স্থানটি দখল করে।

৯. স্বল্প সুদে সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহঋণ দিতে রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি হয়েছে।

চুক্তি অনুসারে, আগামী পয়লা অক্টোবর থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। মাত্র ৫ শতাংশ সরল সুদে তারা সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহনির্মাণ ঋণ নিতে পারবেন। তবে, চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন। আর আবেদনের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা হবে ৫৬ বছর। ঋণ পরিশোধের জন্য সর্বোচ্চ সময় হবে ২০ বছর। এ ঋণের জন্য ব্যাংক গড়ে ১০ শতাংশ হারে সুদ নেবে, তবে ঋণগ্রহীতাকে দিতে হবে ৫ শতাংশ। বাকিটা সরকারের পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হবে।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040