বাচ্চাদের শিক্ষাদান নিয়ে চীনা শিক্ষাবিদদের সেমিনার
  2018-10-08 13:34:28  cri

 


বর্তমানে চীনা সমাজে পিতামাতা উভয়েই চাকরি করার কারণে বাচ্চাদের বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় দাদা-দাদী ও নানা-নানী সাহায্য করে থাকেন। এ প্রক্রিয়ায় বাচ্চাদের যত্ন বা শিক্ষাদানে পিতামাতা ও দাদা-দাদীর মধ্যে ভিন্ন ধারণা রয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়টি নিয়ে চীনের মূলভূভাগ ও তাইওয়ান প্রদেশের বিশেষজ্ঞরা পারিবারিক শিক্ষাদানবিষয়ক এক সেমিনারে গভীরভাবে আলোচনা করেন।

আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতে তাঁদের আলোচনার কিছু ফলাফল তুল ধরবো। সেই সঙ্গে চীনের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে সরকারের নতুন পদক্ষেপের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো।

বাচ্চাদের যত্ন বা শিক্ষাদানে পিতামাতা ও দাদা-দাদীর ধারণা

সম্প্রতি চীনের শানতুং প্রদেশের ছিংতাও শহরে 'পারিবারিক শিক্ষাদান-বিষয়ক সেমিনার' আয়োজিত হয়। এতে চীনের মূলভূভাগ ও তাইওয়ান প্রদেশের বিশেষজ্ঞরা পারিবারিক শিক্ষাদানের কয়েকটি বিষয় নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করেন।

ক. বাচ্চার বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় 'দাদা-দাদী ও নানা-নানীর অংশগ্রহণের' সুবিধা-অসুবিধা

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আধুনিক চীনা পরিবারে পিতামাতা উভয়েই চাকরির জন্য ব্যস্ত। তাই পরিবারের বাচ্চাদের বিশেষ করে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হওয়ার আগে নানা-নানী ও দাদা-দাদী ব্যাপকভাবে বাচ্চাদের যত্ন নেওয়ার কাজে অংশ নেন।

এ প্রেক্ষাপটে কিছুটা সুবিধা ও অসুবিধা দেখা দেয়। এতে দেখা যায়, একদিকে বাচ্চাদের যত্নে দাদ-দাদীর অভিজ্ঞতা থাকার কারণে তা যুবক পিতামাতাকে সহায়তা দিতে সক্ষম, অন্যদিকে দাদা-দাদী, নানা-নানী বাচ্চাদের সাথে সবসময় থাকার কারণে বাচ্চা ও পিতামাতার মধ্যকার সম্পর্কে কিছু দূরত্ব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

এ বিষয়টি নিয়ে চীনের শিক্ষা পরিষদের পারিবারিক শিক্ষা কমিটি বিশেষ জরিপ পরিচালনা করে। ২০১৭ সালে বেইজিং, কুয়াংচৌ ও ছেংতুসহ ৬টি শহরে পরিবারে বয়স্ক আত্মীয়স্বজনের অংশগ্রহণের পরিমাণ নিয়ে জরিপটি করা হয়। তা থেকে জানা যায় যে, পরিবারে বাচ্চাদের যত্ন ও শিক্ষাদানে মোট চারটি পদ্ধতি রয়েছে। বড় শহরের মধ্যে বিভিন্ন পরিবারে বয়স্ক আত্মীয়স্বজনের অংশগ্রহণের পরিমাণ ৮০ শতাংশেরও বেশি, তাদের মধ্যে ৩৬.৫ শতাংশ দাদা-দাদী বা নানা-নানী বাচ্চাদের যত্ন নেওয়ার জন্য ছেলে বা মেয়ের বাড়িতে অবস্থান করেন। তবে ছোট বাচ্চার শিক্ষাদানে দাদা-দাদী বা নানা-নানীর অংশগ্রহণের পরিমাণ বেশি নয়, তাঁরা মূলত পরিবারের জীবনযাপনে যত্ন নেন।

পিতা-মাতা যদি বাচ্চাদের যত্ন বা শিক্ষাদানে অংশ না নেন তাহলে বাচ্চার মানসিক অবস্থায় দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তাদের আচরণে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। যেসব বাচ্চা পিতা-মাতার যত্নে বড় হন, এমন বাচ্চার নিজেকে যত্ন নেওয়ার দক্ষতা অনেক ভালো হয়।

এ সম্পর্কে পারিবারিক শিক্ষা কমিটির উপ-মহাসচিব ইউয়ে খুন বলেন, পরিবারে সিনিয়র আত্মীয়স্বজনের যত্নে বড় হওয়া বাচ্চাদের মানসিক ও আচরণে অনেক সমস্যা দেখা দেয়, তবে পিতামাতাকে কেন্দ্র করে দাদা-দাদী বা নানা-নানীর সহায়তায় বড় হওয়া বাচ্চার অবস্থা অনেক স্বাস্থ্যকর।

জরিপ থেকে বোঝা যায়, বাচ্চাদের ওপর পিতা-মাতার প্রভাব অনেক বেশি, তাই যদি তাদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি ভুল হয়, তাহলে তা বাচ্চাদের মানসিক ও আচরণের উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করবে।

খ. যৌথভাবে বাচ্চার যত্নে প্রধান দায়িত্বশীল ব্যক্তি নির্ধারণ

চীনের গণরাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য, মিনজিন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, পারিবারিক শিক্ষা কমিটির পরিচালক অধ্যাপক চু ইয়োং সিন বলেন, 'দাদা-দাদী বা নানা-নানীর অংশগ্রহণে' কিছু প্রাধান্য রয়েছে, যেমন তাদের অভিজ্ঞতা, ভালোবাসা ও আবেগ, তবে সাথে সাথে অনুন্নত চিন্তাধারা ও অতিরিক্ত হস্তক্ষেপে কিছু সমস্যাও দেখা দেয়। কিভাবে প্রাধান্য কাজে লাগিয়ে প্রতিকূলতা এড়ানো যায়? এ সম্পর্কে তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, এ ক্ষেত্রে পারিবারিক শিক্ষাদানের চিন্তাধারা উন্নত করা, পারিবারিক শিক্ষাদানের কমিউনিটি গড়ে তোলা এবং বয়স্ক আত্মীয়স্বজনের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা উচিত।

তাহলে বয়স্ক আত্মীয়স্বজনের বাচ্চা যত্ন নেওয়ার সীমাবদ্ধতা কোথায়? চীনের যুব গবেষণাগারের পারিবারিক শিক্ষা-বিষয়ক পণ্ডিত সুন ইউয়ুন সিয়াও মনে করেন, বাচ্চাদের জন্য বাবা মায়ের দায়িত্ব কেউ পরিবর্তন করতে সক্ষম নয়, তাঁরা হবেন প্রধান দায়িত্বশীল ব্যক্তি। দাদা-দাদী ও নানা-নানী শুধু শ্রেষ্ঠ সহকারী। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, একজন শিশু নৃত্যশিল্পী ছোটবেলা থেকে নানীর বাসায় বড় হয়েছেন, তাঁর লেখাপড়া ও নৃত্য খুব চমত্কার। তবে যখন তাঁর ৪০ বছর বয়স তখন তিনি গণমাধ্যমকে জানান যে, ছোটবেলা থেকে তাঁর বাবা মা কখনো তাঁকে যত্ন নেন নি এবং দীর্ঘকাল ধরে নানীর বাসায় থাকার কারণে তিনি মনে কোনো সুখ অনুভব করতে পারেন না এবং এতে পারিবারিক জীবনে তিনি ব্যর্থ। এ সম্পর্কে সুন ইউয়ুন সিয়াও মনে করেন, বাবা মাকে বাচ্চার মনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হতে হবে।

চীনের তাইওয়ান প্রদেশের চিয়া'ই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ওয়াং ই রেন সেমিনারে বলেন, তাইওয়ান প্রদেশে বয়স্ক লোকদের 'চিনি খেয়ে নাতী-নাতনীদের সাথে সুন্দর সময় কাটানো'র ঐতিহ্যিক জীবনযাপনও সমাজের দ্রুত উন্নয়নের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। যুব পিতা-মাতা এবং বয়স্ক বাবা মার বাচ্চাদের শিক্ষাদানে অসঙ্গতি থাকলে কি করতে হবে? এ সম্পর্কে অধ্যাপক ওয়াং বলেন, এ সময় স্বাধীন ও খোলামেলা মন দিয়ে সমস্যা সমাধান করতে হবে। তিনি তাঁর মেয়ে ও নাতীর সাথে সবসময় খোলামেলা কথা বলেন এবং পরিবারে পারস্পরিক সম্পর্কও চমত্কার। এমন সম্পর্ক বাচ্চাদের মানসিক অবস্থার উন্নয়নে সহায়ক।

গ. বাচ্চার শিক্ষাদানে পরিবার

সেমিনার চলাকালে কিন্ডারগার্টেনে নাতী-নাতনীর সাথে অনুষ্ঠানে উপস্থিত দাদা-দাদীদের সাক্ষাত্কার নিয়েছেন সংবাদদাতা। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, বাচ্চার যত্নে পিতামাতার পরামর্শ শুনতে হবে, কেউ কেউ মনে করেন দাদা-দাদীর সিদ্ধান্ত আরো গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চারা যখন দাদা-দাদী বা বাবা মায়ের সাথে থাকে তখন ভিন্ন অবস্থায় অভিন্ন আচরণ দেখা দেয়, তারা সহজভাবে নিজের পদ্ধতি সমন্বয় করতে সক্ষম। তবে ভিন্ন লোকের সামনে ভিন্ন আচরণ করা বাচ্চাদের মানসিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন তাইওয়ান প্রদেশের সিনপেই শহরের পারিবারিক শিক্ষা সমিতির পরিচালক উ ছেং বো।

তিনি বলেন, বাচ্চাকে দেখাশোনা করা হলো পিতামাতার প্রাকৃতিক দায়িত্ব। এ বিষয়ে দাদা-দাদী ও নানা-নানীকে অনুসরণ করতে হবে। একটি বাচ্চার বিশেষ করে তাদের ১৫ থেকে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত এ বিশেষ সময়পর্বে মনের সঠিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। তাই বাবা মাকে কেন্দ্র করে বাচ্চার শিক্ষাদান ও দেখাশোনা অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

চীনের গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে অনুন্নত মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলের দূরবর্তী এলাকায় বাবা মায়ের কাছ থেকে আলাদাভাবে থাকা বাচ্চাদের সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে দাদা-দাদী বাচ্চাকে যত্ন নেওয়ার দৃশ্য সহজভাবেই দেখা যায়। এ সম্পর্কে চিয়াংসি প্রদেশের শিক্ষা ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি গবেষণাগারের প্রধান উ চোং হান তাঁর গবেষণায় 'বাবা মা ও বাচ্চাদের মানসিক যোগাযোগ' এমন চিন্তাধারা তুলে ধরেন। তিনি মনে করেন, যদি বাবা-মা বাইরে চাকরি করার কারণে সবসময় বাচ্চাকে দেখাশোনা করতে না পারেন, তাহলে নিয়মিতভাবে বাচ্চাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। বাবা-মা বাচ্চাদের সাথে আবেগগত দিক থেকে যুক্ত থাকলে তা বাচ্চাদের মানসিক অবস্থার উন্নয়নে সহায়ক হবে। যদি এ চিন্তাধারা কার্যকর হয়, তাহলে চাকরির কারণে বাবা মায়ের সাথে বিচ্ছিন্ন বাচ্চাদের দেখাশোনা ও শিক্ষাদানে নতুন ধারণা তৈরি হবে।

যদিও সাংবাদিকদের দেওয়া সাক্ষাত্কারে অনেক নানা-নানী নিজের দেখাশোনার পদ্ধতিকে অগ্রহণযোগ্য বা পুরনো বলে মনে করেন, তবে পরিবর্তন করতে চান না। তা থেকে বোঝা যায়, শিক্ষার তত্ত্বগত দিকে ব্যাপক সচেতনতা ও বাস্তব কার্যক্রমে অনেক পদক্ষেপ নিত হবে।

এ সম্পর্কে চীনের ছিংতাও শহরের নারী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান লিউ ছিং হুয়া তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। আবাসিক কমিউনিটি, রেডিও, পত্রিকা ও ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে 'পিতামাতার ক্লাস' চালু করা, তা থেকে চমত্কার পারিবারিক দেখাশোনার দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া এবং বিভিন্ন পরিবারের সুষম সম্পর্ক গঠনে মানসিক পরামর্শ দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

চীনের তাইওয়ান প্রদেশের সিনপেই শহরের পারিবারিক শিক্ষা সমিতির পরিচালক উ ছেং বো বলেন, 'আত্ম সচেতনতা' না থাকলে মানুষ কঠিনভাবে পরিবর্তন হবে। এ ক্ষেত্রে 'আত্ম সচেতনতা' নিয়ে পারিবারিক শিক্ষা পরিষদের ধারাবাহিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। এটি বই পড়া বা মুখে পরামর্শ দেওয়ার তুলনায় অনেক কার্যকর।

এ বিষয় নিয়ে চীনের দুই তীরের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিবারের উন্নয়ন শুধু বাচ্চাদের বড় হওয়াকে কেন্দ্র করে নয়, পরিবার একটি সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনা, পরিবারের সদস্যের অবস্থান এ পরিবারের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। পেশাগত ব্যক্তি প্রশিক্ষণ করে পেশাগত ব্যবস্থা গড়ে তুলে সুশৃঙ্খলভাবে পরিবারের সম্মুখীন সমস্যা সমাধান করা হবে পারিবারিক সেবার মূল উদ্দেশ্য।

প্রিস্কুল শিক্ষা আইন এনপিসি'র স্ট্যান্ডিং কমিটির আইন প্রণয়নকারী পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত

প্রিস্কুল শিক্ষা মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব সৃষ্টি করে। প্রিস্কুল শিক্ষা আইনকে চীনের জাতীয় কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির আইন প্রণয়ন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপক আহ্বান জানিয়েছে চীনা নাগরিকরা।

এ সম্পর্কে এনপিসি'র প্রতিনিধি লি লি হুয়া মনে করেন, প্রিস্কুল শিক্ষা আইন প্রণয়ন দ্রুততর করা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাদান কর্তব্যের সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে এবং প্রিস্কুল শিক্ষা কর্তব্যের উন্নয়নে আইনগত ভিত্তি স্থাপন করবে।

পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের প্রিস্কুল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুতভাবে স্থাপিত হয়েছে। ২০১৭ সালে চীনে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা ২ লাখ ৫৫ হাজারটি এবং শিশুর সংখ্যা ৪.৬ কোটি। চীনের প্রিস্কুল শিক্ষা কার্যক্রম অনুযায়ী ২০২০ সালে চীনে মোটামুটি গুণগতমান প্রিস্কুল শিক্ষা সেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, বাচ্চাদের প্রিস্কুল ভর্তির হার ৭৫ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

প্রিস্কুল শিক্ষা চীনের শিক্ষা কর্তব্যের উন্নয়নে সবচেয়ে দ্রুত অংশ এবং চলমান শিক্ষা ব্যবস্থার সবচেয়ে দুর্বল বিষয়। চলতি বছরের মার্চ মাসে চীনের শিক্ষামন্ত্রী ছেন বাও শেং বলেন, বর্তমানে চীনের প্রিস্কুল শিক্ষাদানে কিছু সমস্যা দেখা যায়। যেমন শিক্ষক সংখ্যার অভাব, শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের সংখ্যা কম এবং জনকল্যাণমূলক কিন্ডারগার্টেন যথেষ্ঠ নয়, প্রশাসন আর নিরাপত্তায় কিছু দুর্বলতা রয়েছে এবং বাচ্চাকে দেখাশোনার চিন্তাধারা আরো উন্নত করতে হবে।

এ সম্পর্কে সমাজের বিভিন্ন মহলে পেশাগত প্রিস্কুল শিক্ষা আইন প্রণয়ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে সঠিক ব্যয়, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও সুশৃঙ্খল প্রশাসন নিশ্চিত করা যায়।

জানা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত এনপিসি'র শিক্ষা, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্য কমিটি চীনের থিয়ানচিন, আনহুই, ইউয়ুননান, চিলিন ও সিছুয়ানসহ বিভিন্ন এলাকায় জরিপ চালু করেছে। বিভিন্ন এলাকার প্রিস্কুল শিক্ষার উন্নয়ন ও আঞ্চলিক আইন প্রণয়নে সম্মুখীন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ সংগ্রহ করা হয়েছে।

তরুণ তরুণী ও বাবা মায়ের সম্পর্ক

সম্প্রতি বাবা মা ও পরিবারের তরুণ ছেলে মেয়ের সুষম সহাবস্থান ও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ব্যাপারটি ব্যাপক মনোযোগের বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ অনেক পিতা-মাতা খেয়াল করেছেন যে, নিজের বাচ্চা ১১ বছর পর থেকে বাবা মায়ের জন্য মনের দরজা বন্ধ করে দেয়।

এ সমস্যা সমাধানে বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক ইয়াং স্যু বলেন, সাধারণত ১১ বছর বয়সের আগে বাচ্চাদের মনে কিছু সমস্যা থাকলে বাবা মাকে শেয়ার করতে চায়, তবে ১২ বছর থেকে তারা খুব সম্ভবত বন্ধুদের সাথে নিজের সম্মুখীন সমস্যা বিনিময় করে, তারপর শিক্ষকের সাথে, অবশেষে নিজের বাবা মায়ের সাথে। বাবা মাও এ ব্যাপারে অতি উদ্বিগ্ন। এ সমস্যা সমাধানে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাধীন ও নিরাপদ পারিবারিক পরিবেশ গড়ে তোলা হলো বাবা মা ও বাচ্চাদের সাথে ব্যবধান দূর করার শ্রেষ্ঠ উপায়।

বাচ্চার বয়স বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে নিজের সম্মুখীন সমস্যা বাবা মায়ের সাথে শেয়ার করা একটি লজ্জার ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এ সময় পরিবারে 'মনের কথা শোনা'এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে, যাতে বাচ্চারা মনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার বা ঝামেলা বাবা মায়ের সাথে শেয়ার করতে সক্ষম হয়। সময় দিয়ে বাচ্চার সাথে কিছু কাজ করা বা একসাথে ডিনার খাওয়ার পর গল্প করা একটি ভালো পদ্ধতি।পিতা-মাতার সমান চোখে বাচ্চাকে দেখা উচিত। এভাবে বাচ্চার মন ভালো থাকবে এবং সহজভাবে মনের কথা শেয়ার করতে পারবে।যেমন সাপ্তাহিক ছুটিতে একসাথে খেলাধুলার পর স্কুলের কিছু ঘটনা নিয়ে আলোচনা করাও একটি বিনিময়ের ভালো সুযোগ।

তাছাড়া, বাচ্চাদের জীবনযাপন পুরোপুরি বাবা মায়ের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এমন অনুভূতি কমিয়ে দিতে হবে। বাচ্চারা বড় হওয়ার সাথে সাথে নিজের জায়গাও চায়, তাদের স্বাধীনভাবে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।

তরুণ তরুণীদের দেখাশোনায় অব্যাহতভাবে সংলাপ ও বিনিময় করতে হবে এবং বাচ্চাদের সাথে সহাবস্থানের সম্পর্ক সমন্বয় করতে হবে। আন্তরিক আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু পারিবারিক পরিবেশ গড়ে তুললে বাচ্চাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ ইয়াং।

সুপ্রিয় বন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়। আজকের 'বিদ্যাবার্তা' অনুষ্ঠানও তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে এলো। আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের চিঠি লিখতে ভুলবেন না। আমাদের যোগাযোগ ঠিকানা ben@cri.com.cn,caoyanhua@cri.com.cn

রেডিওতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনতে না পারলে বা মিস করলে আপনারা আমাদের ওয়েবসাইটে শুনতে পারবেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো- www.bengali.cri.cn

এবার তাহলে বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন। আবারো কথা হবে। চাইচিয়ান। (সুবর্ণা/টুটুল)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040