চীনা মানুষের কফিপানের অভ্যাস এবং কফিশপের বারিস্তা
  2018-10-12 09:37:24  cri
চীনাদের মধ্যে কফি খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। প্রবণতা বাড়ছে মানে চীনের কফিশপগুলোতে কফিপ্রেমীদের আনাগোনা বাড়ছে। আর কফিপ্রেমীদের আনাগোনা মানেই বারিস্তাদের ব্যস্ততা বাড়া। কফিশপে যারা কফি তৈরির কাজ করেন তাদের ডাকা হয় 'বারিস্তা'। পেশা হিসেবেও বারিস্তার কদর আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতে এই পেশা ও এই পেশায় নিয়োজিত চীনাদের সম্পর্কে খানিকটা আলোকপাত করব।

প্রতিভোরে কফিবিন ভেঙে কফির গুড়া তৈরির করার মাধ্যমে বেইজিংয়ের ছিয়ানমেন এলাকায় অবস্থিত একটি কফিশপের বারিস্তা মাদাম লিউ তার দিনের কাজ শুরু করেন। তিনি এই কফিশপে কাজ করছেন বিগত ৮ বছর ধরে। বর্তমানে পেশা হিসেবে বারিস্তা তাঁর কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

"২০১০ সালে আমি এ কফিশপে বারিস্তা হিসেবে কাজ শুরু করি। তখন আমার কাছে বারিস্তা মানে ছিল কফিযন্ত্র দিয়ে কফি তৈরি করার কারিগর। কিন্তু পরে আমি আস্তে আস্তে কফিবিন রোস্ট করা ও ভাঙার কৌশল আয়ত্ত করি। আমি নিজেকে সত্যিকারের বারিস্তা মনে করি।"

চীনারা এখন কফি ও কফিশিল্প সম্পর্কে জানার পাশাপাশি, বারিস্তা পেশা সম্পর্কেও আগের চেয়ে বেশি জানে। প্রায় ১৮০ বছর আগে চীনের দক্ষিণাঞ্চলের শহর কুয়াংচৌতে প্রথম কফিশপ খোলা হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ চীনা মানুষ ১৯৭৮ সালে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ নীতি কার্যকর হওয়ার পর কফি সম্পর্কে জেনেছেন। কিন্তু শুরুতে চীনারা কফির স্বাদ নিতে ইচ্ছুক ছিলেন না। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিদেশি বিখ্যাত কফি ব্রান্ড স্টারবাকস ও কোস্টা চীনের বাজারে প্রবেশ করে। তখন থেকেই চীনাদের মধ্যে কফির প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে; তারা কাপুচিনো ও লাত্তেসহ বিভিন্ন কফি সম্পর্কে জানতে শুরু করেন। তখন থেকে চীনে কফিশপের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। এখনও এই সংখ্যা বাড়ছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১২ সালে চীনে কফিশপের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩০ হাজার। আর এখন চীনে কফিশপের সংখ্যা এক লাখ ৪০ হাজারের বেশি।

চীনা কফিশপগুলো দিনে দিনে উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। আজকাল অনেকে চীনা রেডিমেড কফি খেতে চান না। কফিশপের একজন অতিথি মাদাম শেন বলেন, তিনি হাত ধুয়ে কফি খেতে বেশি পছন্দ করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

"আমি হাত ধুয়ে কফি খেতে বেশি পছন্দ করি। আমি চিনি ছাড়া কফি খেতে চাইা। এ ধরণের কফি সত্যিই মজার। কফি খাওয়ার আগে পানি খাওয়া উচিত। পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করা উচিত। এর মাধ্যমে কফির আসল স্বাদ পাওয়া যায়।"

চীনে বারিস্তাদের পেশাগত মান ও প্রতিভা মূল্যায়নের কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে, মাঝেমাঝে এ-ক্ষেত্রে কিছু কাজ হচ্ছে না, তা নয়। কিছুদিন আগে চীনে প্রথম 'বারিস্তা প্রতিযোগিতা'-র আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতার উদ্দ্দেশ্য ছিল দেশে বারিস্তাদের পেশাগত মানদণড ও প্রতিভা মূল্যায়নব্যবস্থা গড়ে তোলা। চীনা বাণিজ্য ও অর্থনীতি সেমিনারের কফি বিভাগের পরিচালক দু হং কুও এ সম্পর্কে বলেন,

"এটি এ ধরনের প্রথম দেশীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। আমরা বিশেষ করে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিতদের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রতিযোগিতার মানদণ্ড ও পদ্ধতি প্রণয়ন করেছি। প্রতিযোগিতায় দুটি অংশ ছিল: একটি তাত্ত্বিক অংশ এবং অন্যটি ব্যবহারিক।"

শাংহাই'র মাদাম লিং আগে একটি কফিশপের মালিক ছিলেন। বর্তমানে তিনি একজন মিডিয়া-ব্যক্তিত্ব। তাঁর দৃষ্টিতে ভাল বারিস্তা গুরুত্বপূর্ণ। বারিস্তা-প্রশিক্ষণের পাশাপাশি চীনে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কফিশপ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তিনি বলেন,

"আমাদের উচিত ইন্সট্যান্ট কফি ত্যাগ করে, নিজেদের হাতে কফি তৈরি করে খাওয়া। আমরা যখন এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠব, তখন আমাদের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কফি বাজার গড়ে উঠবো।"

পরিসংখ্যান অনুসারে, চীনাদের মধ্যে যারা নিয়মিত কফি পান করে থাকেন, তাদের ৮০ শতাংশই ইন্সট্যান্ট কফির ভক্ত। মাত্র ১৬ শতাংশ টাটকা কফিবিন থেকে কফিগুড়া তৈরি করে তা দিয়ে কফি বানান। অন্যদিকে, গোটা বিশ্বের কফিভক্তদের ৮৭ শতাংশই টাটকা কফিবিন থেকে তৈরি কফি ব্যবহার করেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমান চীনে ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরা কফির প্রধান ভোক্তা। তারাই একসময় চীনের কফিবাজারের চেহারা পাল্টে দিবে।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040