চলতি বছরের ফসল উঠেছে। আনহুই প্রদেশের ফেংইয়াং জেলার সিয়াওকাং গ্রামে ধানের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। ৫৫ বছর বয়সী ছেং সি বিং হলেন ফেংইয়াং জেলার 'শস্য বিশেষজ্ঞ'। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি আলাদাভাবে অন্য কৃষকাদের কাছ থেকে ০.৩ বর্গ কিলোমিটার জমি কিনেছেন। এখন তাকে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, "বর্তমানে ১০ হাজার বর্গমিটার জমির দাম প্রায় ১২ হাজার ইউয়ান। এদিকে, যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়, তাহলে ফসল কম হয়। তখন ১০ হাজার বর্গমিটার জমিতে উত্পাদিত ফসল থেকে আয় ১.৫ লাখ ইউয়ান কম হবে। এটা আমার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।"
৪০ বছর আগে সিয়াওকাং গ্রামের ১৮টি পরিবার একটি বিশেষ চুক্তি স্বাক্ষর করে চীনা গ্রামগুলোর সংস্কার-কাজের সূচনা করেন। কিন্তু চীনের অধিকাংশ গ্রামের মতো সিয়াওকাং গ্রামও গত শতাব্দীর শেষ দিকে কঠিন অবস্থায় পড়েছিল। গ্রামগুলোতে দ্রুতই বাসিন্দাদের খাওয়া-পরার সমস্যার সমাধান হয়েছিল। কিন্তু বিশ বছরেও ধনী হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। সিয়াওকাং গ্রামে বিনিয়োগকারী কোম্পানি ফানফান গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান ছাই চিন আন এ সম্পর্কে বলেন, "গ্রামগুলোর সমৃদ্ধির পথে সাধারণ বাধা হল শিল্প। সহায়ক শিল্প না-হলে সমৃদ্ধি আসবে না।"
আসলে শিল্প-উন্নয়ন, প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, ও আয় বৃদ্ধি হল সিয়াওকাং গ্রামবাসীদের প্রত্যাশা। ইয়ান হং ছাং গ্রাম-সংস্কার কার্যক্রমের বিশেষ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী প্রথম ব্যক্তিদের অন্যতম। ১৯৯২ সালে ইয়ান হং ছাং'র ছেলে ইয়ান ইউ শান বাইরের শহরে গিয়ে কাজ করতেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমরা সিয়াওকাং গ্রাম-সংস্কার অভিজ্ঞ ব্যক্তি। ১৯৭৮ সালে সংস্কার শুরু হয়। আমরা দ্রুতই খাওয়া-পরার সমস্যার সমাধান করি। তখন আমার বাবা আশা করেছিলেন, কৃষির স্থিতিশীল উন্নয়নের পাশাপাশি, গ্রামের শিল্পও উন্নত হবে। কিন্তু তখন গ্রামের পরিবেশ ও অবকাঠামো ছিল খারাপ। বর্তমানে গ্রামে শিল্প-উন্নয়নের সুযোগ বেশি।"
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ইয়ান ইউ শানসহ সিয়াওকাং গ্রামের তরুণ বাসিন্দারা বাইরের শহরগুলোয় শিল্প-উন্নয়নের অভিজ্ঞতা নিয়েছেন। তাঁরা গ্রামটিতে ফিরে এসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে শুরু করেন। তবে, তার কাজ সহজ ছিল না। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "সিয়াওকাং গ্রামে এখনও প্রধান শিল্প হচ্ছে ঐতিহ্যগত কৃষি। ২০১৪ সালে শিল্প-সংস্কারের সুযোগ ছিল। এক্ষেত্রে সরকারের নীতি ছিল অনুকূল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, নতুন যুগে আমাদের ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে। আমরা জানি যে, সংস্কার, নবায়ন ও উদ্ভাবন পাশাপাশি চলা উচিত।"
সিয়াওকাং গ্রামের সড়কের পাশে 'সংস্কারের সাহস' শ্লোগানসম্বলিত বোর্ড আছে। হেলংচিয়াং বেইদাহুয়াং গোষ্ঠী সিয়াওকাং গ্রামে ০.৩ বর্গকিলোমিটারের ধানক্ষেতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে। গোষ্ঠীর প্রযুক্তিবিদ চাও মিং উ সিয়াওকাং গ্রামে কাজ করছেন এক বছর ধরে। সিয়াওকাং গ্রামের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চাও মিং উ বলেন, "কোনো কোনো মানুষ সিয়াওকাং গ্রামের উন্নয়নের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চান। চার বাক্যে এ সম্পর্কে বলা যায়। গ্রামটিকে নিজস্ব কৃষিপণ্যের ব্রান্ড গড়ে তুলতে হবে; কৃষিশিল্পের একীকরণ সম্পন্ন করতে হবে; কৃষিচাষের একটি উঁচু মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা করতে হবে; এবং কৃষিখাত পরিচালনার যথাযথ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হাবেআ।"
আসলে বেইদাহুয়াং গোষ্ঠী সিয়াওকাং গ্রামে যখন প্রথম আসে, তখন গ্রামের অবস্থা ও পরিবেশ ভাল ছিল না। গোষ্ঠিটি মানসম্পন্ন চাষ-প্রযুক্তি সিয়াওকাং গ্রামে ব্যবহার করে। কৃষিভিত্তিক সিয়াওকাং গ্রামের বাসিন্দারা বিজ্ঞানসম্মতভাবে চাষের শক্তি সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন, বুঝেছেন এর গুরুত্ব। এ সম্পর্কে চাও বলেন, "আমরা সিয়াওকাং গ্রামে অনেক পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালিয়েছি। পরীক্ষার পর আমরা দুই ধরনের ধান বাছাই করেছি। এই ধানগুলোই হবে এই গ্রামের ব্রান্ড। আমরা আশা করি, আরও অধিক হারে গ্রামবাসী বিজ্ঞানসম্মত চাষ-পদ্ধতি গ্রহণ করবেন।"
সংস্কার ও উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় সিয়াওকাং গ্রামে নবায়ন ও উদ্ভাবন এবং উন্নয়নের অভ্যন্তরীণ শক্তি সৃষ্টি হয়েছে। আনহুই প্রদেশের ফেংবাও খাদ্য গোষ্ঠীর জেনারেল ম্যানেজার ফান মিয়াও মিয়াও বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অধিক থেকে অধিকরত তরুণ-তরুণী জন্মস্থানে ফিরে এসে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। তিনি নিজেও খাদ্য উত্পাদন কারখানা গড়ে তুলেছেন নিজের জন্মস্থানে। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, "আমাদের উত্পাদিত খাদ্যের বর্তমান দাম এক কেজি ২ থেকে ৩ ইউয়ান আরএমবি। এ ছাড়া, আমরা নিজেদের উত্পাদিত পণ্য দিয়ে পাস্তা তৈরি করি। আমাদের পাস্তার দাম এক কেজি ৩০ ইউয়ান। সেজন্য আমাদের পণ্যের চাহিদাবৃদ্ধি সম্ভাবনা অনেক। সিয়াওকাং গ্রামের শিল্প ক্ষেত্র আসলে আমাদের প্রয়োজনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। সেজন্য আমরা গ্রামটিতে কারখানা গড়ে তুলেছি।"
সিয়াওকাং গ্রাম দ্রুত উন্নত হচ্ছে। বাসিন্দাদের আয় বৃদ্ধির জন্য ২০১৮ সালে গ্রামটি 'ওয়েবসাইট প্লাস ঠিকাদারী ব্যবস্থা' নিয়েছে। ফেংইয়াং সিয়াওকাং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ওয়াং হুই এ সম্পর্কে বলেন, "একটা নির্দিষ্ট সড়কের প্রতিটি বাড়ির দরজায় তাঁদের অনলাইন দোকানের দ্বি-মাত্রিক কোড আছে। তাঁদের পণ্য বিক্রি বা পরিবহন নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। আমরা তাঁদের সঙ্গে ভোক্তাদের সরাসরি যোগাযোগ করিয়ে দিই একটা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। এ পর্যন্ত আমারা তিন শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দাকে অনলাইন দোকান খোলায় সহায়তা করেছি। কোনো কোনও পরিবার বছরে ২০ সহস্রাধিক ইউয়ান করে থাকে। প্রতিমাসে গড়পরতা আয় এক থেকে দুই হাজার ইউয়ান।"
সংস্কার-প্রক্রিয়া চলছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে। কৃষির উন্নয়ন এবং কৃষকদের আয় বৃদ্ধির পথে সিয়াওকাং গ্রামের সংস্কারের গল্পও চলতে থাকবে।