চীনের মেধা বিশ্বের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে
  2018-12-17 18:33:00  cri

১৯৭৮ সালের ১৮ (আঠার) থেকে ২২ (বাইস) ডিসেম্বর পর্যন্ত বেইজিংয়ে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিসি'র একাদশ কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ অধিবেশনে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের সূচনা হয়। এরপর ৪০ বছর পার হয়েছে। দীর্ঘ এ সময়ে চীনে ৭০ কোটিরও বেশি মানুষ চরম দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে এবং চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক সত্তায় পরিণত হয়েছে। চীনের উন্নয়নের অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক সমাজের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। চীনের এই মেধা বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইতিবাচক ভূমিকার পালন করছে। প্রিয় শ্রোতা এ সম্পর্কে বিস্তারিত শুনবেন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

১৯৭৮ সালে চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ শুরু হয়। তখনকার অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা উন্নয়ন ও সমাজের সৃষ্টিশীলতাকে বাধা দেয়। সে সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য 'কুপন' দিয়ে কিনতে হতো। ফ্রান্সের এইসি-এর চেয়ারম্যান আন্দ্রে ছিং ফ্রান্সে জন্মগ্রহণকারী প্রবাসী চীনা মানুষ। তিনি ৪০ বছর ধরে ফ্রান্স-চীন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। ১৯৭৮ সাল থেকে তিনি প্রথমবার চীনে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তখনকার বেইজিং তাঁকে অনেক প্রেরণা দিয়েছিল।

তিনি বলেন, সে সময় আমরা প্রথমবার চীনে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করি। পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে সত্যি অনেক পার্থক্য ছিল। সে সময় আমাদের কিছু জিনিস কিনতে হলে শুধু টাকা নয়, বরং কুপনও প্রয়োজন হতো। খাবারের জন্য কুপন, কাপড় কেনার জন্য কুপন ইত্যাদি। সত্যিই পশ্চিমা দেশের চেয়ে এখানকার জীবন ছিল একেবারেই ভিন্ন ধরনের।

চীনে তাঁর জীবন শুরুর প্রথম দিকে দেশের জনসংখ্যা ছিল ৯৬ কোটি। এর মধ্যে ৭০ কোটিরও বেশি মানুষ ছিল দরিদ্র! এ ধরনের অবস্থা থেকে যাত্রা শুরু করে দেশকে উন্নত করতে হলে, চীনা বৈশিষ্ট্যময় সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রয়োজন।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। চীনের জিডিপি ৮.২৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ানেরও বেশি! ৭০ কোটিরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। মানবজাতির ইতিহাসে কখনও কোনো দেশ এত অল্প সময়ে এ ধরনের সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।

ফ্রান্সের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডোমিনিক ভিল্লেপিন মনে করেন, চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ সফল হওয়ার মূল কারণ হলো প্রায়োগিক দিক ও সহযোগিতা।

তিনি বলেন, মাত্র ৪০ বছরে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও বিশ্বের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে চীনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ৪০ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দুটি বিষয় শিখতে পারি। একটা হচ্ছে- বাস্তবসম্মত বা প্রায়োগিক দিক এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় পরিবর্তন বাস্তবায়ন করা। দ্বিতীয় বিষয় হলো- নির্মাণ ও উন্নয়নের জন্য উন্মুক্তকরণ ও সহযোগিতা।

৯০ বছরেরও বেশি বয়সী জার্মান সাংবাদিক মার্টিন কুমের বিগত ৪০ বছর ধরে ছবির মাধ্যমে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণে চীনের পরিবর্তন রেকর্ড করেছেন। ১৯৭৬ সালে তিনি প্রথম জার্মান সরকারের কর্মকর্তার সঙ্গে চীনের শাংহাই ও শেনচেন সফর করেন। তারপর তিনি ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিক গেমস, ২০০৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৬০বছর পূর্তি, ২০১০ সালে শাংহাই বিশ্ব মেলা ইত্যাদি কর্মসূচির ছবি ধারণ করেন। এতে চীনের একেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহুর্ত রেকর্ড হয়েছে। ২০১০ সালে তিনি জার্মানিতে ধারাবাহিক প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। তিনি আশা করেন, এর মাধ্যমে জার্মানির মানুষ আরও সুষ্ঠুভাবে উন্নয়নশীল চীনকে জানতে পারবে।

তিনি বলেন, কয়েক যুগ আগে অনেকে ভেবেছিলেন যে, সমাজতান্ত্রিক দেশ চীন সবসময় দরিদ্র ও পেছনে পড়ে থাকবে। কিন্তু সংস্কার ও উম্নুক্তকরণের ৪০ বছর পর চীন একেবারে বদলে গেছে। আমি বিশ্বাস করি বর্তমান চীনের প্রভাব বিশ্বের জন্য দারুণ।

বিশ্বায়ন হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের প্রবণতা। আদানপ্রদান জোরদার করে যৌথ উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়া বিভিন্ন দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির একমাত্র পথ। চীনের সংস্কার ও উম্নুক্তকরণ ইতিহাসের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। ভবিষ্যতে চীন আরও উন্মুক্ত হবে এবং বিশ্বকে আলিঙ্গন করবে।

(আকাশ/তৌহিদ)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040