২০১৮ সালে চীনের আমদানি-রফতানির মোট পরিমাণ ছিল ৩০.৫১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (অর্থ-কড়ি; ১৯ জানুয়ারি ২০১৯)
  2019-01-19 13:45:16  cri


১. ২০১৮ সালে চীনের আমদানি ও রফতানির মোট পরিমাণ ছিল ৩০.৫১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (এক ট্রিলিয়ন=১০০০ বিলিয়ন; এক বিলিয়ন=১০০ কোটি), যা আগের বছরের চেয়ে ৯.৭ শতাংশ বেশি। দেশটির শুল্ক বিভাগ সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।

শুল্ক বিভাগের তথ্যানুসারে, ২০১৮ সালে চীন রফতানি করেছে ১৬.৪২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান মূল্যের পণ্য ও সেবা, যা আগের বছরের চেয়ে ৭.১ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, ২০১৮ সালে চীন আমদানি করেছে ১৪.০৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ান মূল্যের পণ্য ও সেবা, যা আগের বছরের চেয়ে ১২.৯ শতাংশ বেশি।

প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, ২০১৮ সালে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে চীনের বাণিজ্য বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। সেবছর এই দেশগুলোর সঙ্গে চীনের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ১৩.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।

২. ২০১৮ সালে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান ৫০ শতাংশেরও বেশি ছিল। গত সোমবার প্রকাশিত চীনের শুল্ক বিভাগের এক পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে,

প্রকাশিত তথ্যানুসারে, ২০১৮ সালে চীনের বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর আমদানি-রফতানির মোট পরিমাণ ছিল ১২.১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের চেয়ে ১২.৯ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে রফতানির পরিমাণ ছিল ৭.৮৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা আগের বছরের চেয়ে ১০.৪ শতাংশ বেশি।

এ ছাড়া, গত বছর বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানাগুলোর আমদানি-রফতানির পরিমাণ ছিল ১২.৯৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ান এবং চীনের রাষ্ট্রীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর আমদানি-রফতানির পরিমাণ ছিল ৫.৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান।

৩. গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়কালে তথা দেশের ২০১৮-১৯ শস্যবছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনে চিনির উত্পাদন ও বিক্রি দুটোই বেড়েছে। দেশটির কৃষি ও গ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করে।

প্রকাশিত তথ্যানুসারে, উক্ত সময়কালে চীনে ২৪ লাখ টন চিনি উত্পাদিত হয়, যা আগের অর্থবছরের প্রথমা প্রান্তিকের চেয়ে ৩.৪ শতাংশ বেশি। আর উক্ত সময়কালে বিক্রি হয়েছে ১৩ লাখ টন চিনি, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি।

৪. ২০১৯ সালে তিব্বতের দেড় লাখ দরিদ্র লোক পুরোপুরিভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হবেন। এর ফলে অঞ্চলটির ১৯টি জেলা দারিদ্র্যমুক্ত হবে এবং গোটা তিব্বত থেকে দারিদ্র্য নির্মূল হবে। সিনহুয়া বার্তা সংস্থা সম্প্রতি এ পূর্বাভাস দেয়।

সিনহুয়ার তথ্যানুসারে, গত বছর তিব্বতে দারিদ্র্যবিমোচন প্রকল্পের সংখ্যা ছিল মোট ৭০৭টি। এসব প্রকল্পের আওতায় ৩৬০০০ দরিদ্র কৃষক ও পশুপালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং নতুন করে ৪৭০০০টি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়।

খবরে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালে তিব্বতে গ্রামের সঞ্জীবনীশক্তি পুনরুদ্ধারের কৌশলের সঙ্গে দারিদ্র্যবিমোচনের কৌশলকে সংযুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হবে, শিল্প ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, এবং দরিদ্র পাহাড়ি অঞ্চলের অবকাঠামো ও গণসেবার মান উন্নয়নেএর কাজ আরও গতিশীল করা হবে।

৫. চীন তার যন্ত্রনির্মাণ শিল্পকে বিদেশিদের জন্য আরও উন্মুক্ত করবে, এই শিল্পের পরিবেশ উন্নত করবে, শিল্পে শুল্ক ও ব্যয় কমাবে, এবং শিল্পের গুণগত মান উন্নয়নের গতি বাড়ানোর দিকে নজর দিবে। চীনের শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মিও সু সম্প্রতি বেইজিংয়ে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, চীনের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার, পূর্ণাঙ্গ শিল্পব্যবস্থা, ক্রমবর্ধমান সৃজনশীলতা, এবং সুবিধানজক অবকাঠামো ও ব্যবসা-পরিবেশ আছে। তাই বাইরের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীন সক্ষম।

৬. সম্প্রতি বেইজিংয়ে শেষ হয় চীন-মার্কিন উপমন্ত্রী পর্যায়ের আর্থ-বাণিজ্যিক সংলাপ। আর্জেন্টিনায় দু'দেশের নেতৃবৃন্দের বৈঠকে অর্জিত মতৈক্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আয়োজিত প্রথম সংলাপ ছিল এটি।

সংলাপে দু'পক্ষ অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও কাঠামোগত ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছে। সিআরআই এক সম্পাদকীয়তে বলেছে, সংলাপে পারস্পরিক আস্থা বেড়েছে এবং দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের একটা ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে।

সম্পাদকীয়তে বলা হয়, সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত কোনো কোনো প্রস্তাব, যা চীনের জাতীয় ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ও চিন্তাধারার সঙ্গে সম্পর্কিত, তা চীনের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আবার উত্থাপিত কিছু প্রস্তাব চীনের সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক সংঘর্ষ থাক বা না-থাক, মেধাস্বত্বের সুরক্ষা, প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা, বাণিজ্যে বিভিন্ন বাধাসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান চীনের চলমান উন্নয়ন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই করতে হবে।

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ তীব্রতর হবার ৯ মাস পর, উপমন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপে অগ্রগতি অর্জিত হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, দু'পক্ষ তথা সারা বিশ্ব বাণিজ্যযুদ্ধের ক্ষতি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।

৭. চায়না একাডেমি অব মডার্ন ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স-এর বিশ্ব অর্থনৈতিক গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাবেক প্রধান ছেন ফেং ইং বলেছেন, চলতি বছর চীনে উচ্চমানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা বজায় থাকবে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি সম্প্রতি বেইজিংয়ে চীন সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত এক সেমিনারে এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, গেল বছর বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ছিল ১৯৬০ থেকে ২০০৮ সালের গড় প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি। আর ২০১৯ সালে বিশ্বের অর্থনীতি নানান জটিলতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হবে।

সেমিনারে ২০১৯ সালের অর্থনীতির ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনশেষে তিনি চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ, সংস্কার, বহুপক্ষবাদসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

সেমিনারে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের পাশাপাশি, বেইজিংয়ে অবস্থিত বিভিন্ন দূতাবাসের তথ্য-কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

৮. রাশিয়া-চীন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বর্তমানে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। তবে, ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে। গতকাল (বুধবার) রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লাভরভ চীন আন্তর্জাতিক বেতারের একজন সাংবাদিকের সংশ্লিষ্ট প্রেশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন।

লাভরভ বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়াতে দু'দেশের অনেক পরিকল্পনা আছে। দু'দেশের নেতৃবৃন্দ ২০১৮ সালে একাধিক বৈঠকে এসব পরিকল্পনা নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করেছেন। দু'দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে মস্কো সম্পূর্ণ আশাবাদী।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে চীন-রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১০,০০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি।

৯. আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর প্রধান অর্থনীতিবিদের দায়িত্ব পেলেন গীতা গোপীনাথ। জন্মসূত্রে তিনি ভারতের কলকাতার একজন সাধারণ কৃষকের মেয়ে। গীতা গোপীনাথ প্রতিষ্ঠানটির একাদশ প্রধান অর্থনীতিবিদ। তিনিই প্রথম নারী হিসেবে এই দায়িত্বে নিযুক্ত হলেন। তা ছাড়া, রঘুরাম রাজনের পর তিনি এই দায়িত্ব-নেওয়া দ্বিতীয় ভারতীয়।

নয়াদিল্লির 'লেডি শ্রীরাম কলেজ' থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং 'স্কুল অব ইকোনমিক্স' থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। দিল্লি ও যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষাশেষে ৪৮ বছর বয়সী এই নারী ২০০৫ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে যোগ দেন এবং ২০১০ সাল থেকে স্থায়ী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্বপালন শুরু করেন। এর আগে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন তিনি।

একসময় জি২০-এর অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শদাতা কমিটির সদস্য ছিলেন গীতা। তিনি কেরালার পিনারাই বিজয়ন সরকারের আর্থিক উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন। বিশ্বের ৪৫ বছরের কম বয়সী ২৫ জন প্রথম সারির অর্থনীতিবিদ হিসেবে ২০১৪ সালে আইএমএফের স্বীকৃতি পান গীতা।

১০. বাংলাদেশের ধানের কুঁড়ার তেল (রাইস ব্র্যান অয়েল) এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশ থেকে ২০ হাজার টন কুঁড়ার তেল রফতানি হয়েছে। এই তেলের প্রায় পুরোটাই উৎপন্ন হয়েছে বগুড়ায় আর তা মূলত রফতানি হচ্ছে ভারতে। পাশাপাশি, শ্রীলঙ্কা, জাপান, চীন ইত্যাদি দেশেও রফতানির প্রক্রিয়া চলছে।

গত ১০ বছরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধানের কুঁড়ার তেলের ১২টি কারখানা গড়ে ওঠে। পাবনার ঈশ্বরদীতে ২০১১ সালে রশিদ অয়েল মিলস লিমিটেড 'হোয়াইট গোল্ড ব্র্যান্ড' নামে ধানের কুঁড়ার তেল উৎপাদন শুরু করে। প্রায় একই সময়ে গড়ে ওঠে ময়মনসিংহে 'স্পন্দন' ব্র্যান্ডের আরেকটি কারখানা।

তবে বর্তমানে বগুড়ার মজুমদার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ও তামিম অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ বেশি তেল উৎপাদন করছে। মজুমদার গ্রুপের তেলের ব্র্যান্ড 'স্বর্ণা'। মজুমদার গ্রুপের কারখানায় প্রতিদিন তেল উৎপাদন হয় ৯০ থেকে ১০০ টন। এ ছাড়া রংপুরের গ্রিন অ্যান্ড পোলট্রি ফিড ইন্ডাস্ট্রিজও কিছু তেল উৎপাদন করে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিদিন ২৫০–৩০০ টন কুঁড়ার তেল উৎপাদিত হয়। বছরে হয় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টন। সাড়ে ছয় কেজি কুঁড়া থেকে এক লিটার তেল হয়। আর ধান থেকে চাল তৈরি করলে ৭ থেকে ৮ শতাংশ কুঁড়া পাওয়া যায়। তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিদিনের কুঁড়ার চাহিদা ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টন। আর দেশের চালকল থেকে বছরে ৩৭ লাখ টনের বেশি কুঁড়া উৎপাদিত হয়।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040