চীনে বিদেশি বিনিয়োগে নতুন শিল্প-প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ৬৯.৮ শতাংশ (অর্থ-কড়ি; ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)
  2019-02-16 15:32:54  cri


১. ২০১৮ সালে চীনে বিদেশি বিনিয়োগে নতুন প্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৬০ হাজার ৫৩৩টি, যা আগের বছরের চেয়ে ৬৯.৮ শতাংশ বেশি। একই বছর চীনে ব্যবহৃত বৈদেশিক পুঁজির পরিমাণ ছিল ৮৮,৫০০ কোটি ইউয়ান, যা আগের বছরের চেয়ে ০.৯ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানায়।

মন্ত্রণালয় জানায়, গত বছর চীনের উত্পাদনশিল্পে ব্যবহৃত বৈদেশিক পুঁজি ৩০.৬ শতাংশ বাড়ে। এ ছাড়া, চীনের মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলে বৈদেশিক পুঁজির ব্যবহারও বেড়েছে। ২০১৮ সালে পশ্চিমাঞ্চলে ব্যবহৃত বৈদেশিক পুঁজির পরিমাণ ছিল ৬৪৬০ কোটি ইউয়ান, যা আগের বছরের চেয়ে ১৮.৫ শতাংশ বেশি।

২. চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চীনে পণ্যের আমদানি-রফতানি বেড়েছে। চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বহুমুখী বিভাগের পরিচালক ছু শি জিয়া এ তথ্য জানান।

ছু শি চিয়া বলেন, বর্তমানে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের উন্নয়নপথ মসৃণ নয়। তবে, এতে ইতিবাচক উপকরণ বেশি। এদিক, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ধীর গতিতে হলেও, প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। চীনও নিজেকে আরও উন্মুক্ত করছে এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সুপ্তশক্তি বাড়াতে সচেষ্ট আছে। এসবই চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

তিনি আরও বলেন, চলতি বছর চীন বহুমুখী বাজার উন্নয়নের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে, আন্তর্জাতিক বাজারের কাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে, এবং আমদানি বাড়াবে।

৩. এদিকে, জানুয়ারি মাসে চীনের আমদানি-রফতানির মোট পরিমাণ ছিল ২.৭৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা গত বছরের জানুয়ারি মাসের চেয়ে ৮.৭ শতাংশ বেশি। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত চীনা শুল্ক সাধারণ প্রশাসনের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যান অনুসারে, জানুয়ারিতে চীনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আমদানি-রফতানি বৃদ্ধির হার ছিল দুই অঙ্কের। আর বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আমদানি-রফতানি বেড়েছে ২.২ শতাংশ।

পরিসংখ্যান আরও বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আসিয়ান ও জাপান এবং 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে চীনের আমদানি-রফতানির পরিমাণ ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। আর জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের আমদানি-রফতানির পরিমাণ ছিল ২৫,২১১ কোটি ইউয়ান, যা গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ১.৯ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ৬৩৭১ কোটি ইউয়ান, যা গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ৩৮.৬ শতাংশ কম।

৪. আগামী এপ্রিল মাসে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় 'এক অঞ্চল, এক পথ' আন্তর্জাতিক সহযোগিতা শীর্ষ ফোরাম। সম্প্রতি চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়।

চীনা উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী ছিয়ান খ্যে মিং সাংবাদিকদের বলেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ বাস্তবায়ন শুরুর পর, বিগত ৫ বছরে, চীন নয়টি দেশের সঙ্গে 'ই-কমার্স সহযোগিতাচুক্তি' স্বাক্ষর করেছে। এই সময়কালে চীন ও মধ্য-ইউরোপের মধ্যে ৬৩৬৩টি ট্রেন চলাচল করেছে। ২০১৮ সালে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে চীনের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৭ সালের চেয়ে ১৬.৩ শতাংশ বেশি।

তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে চীন বিদেশি বিনিয়োগ প্রবেশে বিধিনিষেধ আরেক দফা শিথিল করে, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে সচেষ্ট থাকে, এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সেবার মান উন্নত করে।

৫. সকল দেশের উচিত সক্রিয় কর্মসংস্থাননীতি প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করা। সম্প্রতি জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি মা চাও সুই নিইউয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে আয়োজিত 'সক্রিয় কর্মসংস্থাননীতি' শীর্ষক এক সভায় এ মন্তব্য করেন।

মা চাও সুই বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন কর্মসংস্থানের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছে। ফলে দেশে স্থিতিশীলভাবে কর্মসংস্থান বাড়ছে। পাশাপাশি, কর্মসংস্থানের গুণগত মানও বাড়ছে। ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ চীনে কর্মসংস্থানের সংখ্যা ছিল প্রায় ৭৮ কোটি।

তিনি আরও বলেন, 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ গ্রহণের পরবর্তী ৫ বছরে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতেও চীন ২ লাখ ৪০ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

৬. চীনের বসন্ত উত্সবের ছুটিতে, তথা ৪ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, দেশে খুচরা বিক্রি ও রেস্তোরাঁসমূহে খাদ্য বিক্রয়ের মোট পরিমাণ এক ট্রিলিয়ন (এক ট্রিলিয়ন=১০০০ বিলিয়ন; এবং ১ বিলিয়ন=১০০ কোটি) ইউয়ানেরও বেশি ছিল, যা গত বছরের চেয়ে ৮.৫ শতাংশ বেশি। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রণালয় জানায়, উত্সবের সময় দেশের পণ্যবাজার স্থিতিশীল ছিল। ভোক্তারা পণ্যের গুণগত মানের ওপর এবার আগের তুলনায় বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তা ছাড়া, এবারের বসন্ত উত্সবের ছুটিতে ঐতিহ্যবাহী পণ্য, স্মার্ট পণ্য, নতুন ধরনের ডিজিটাল পণ্য ইত্যাদির ব্যাপক বিক্রি ছিল উল্লেখ করার মতো।

৭. এদিকে, চলতি বছরের বসন্ত উত্সবকালে চীনে বাইরে থেকে এসেছেন এবং চীন থেকে বাইরে গেছেন প্রায় সোয়া কোটি লোক, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০.৯৯ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে চীনে প্রবেশ করেছেন ৬২.২২ লাখ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯.৫১ শতাংশ বেশি। আর চীন ছেড়েছেন ৬৩.১১ লাখ লোক, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২.৪৮ শতাংশ বেশি। উত্সব চলাকালে মোট ৩.৬৩ লাখ বিমান, জাহাজ, ট্রেন ও গাড়ি যাত্রী পরিবহনকাজে ব্যবহৃত হয়, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১.৪৭ শতাংশ বেশি।

চলতি বছর বসন্ত উত্সবে শুধু চীনা নাগরিকদের মধ্যে দেশে প্রবেশ করেছেন ও দেশের বাইরে গেছেন মোট ৭২ লাখ ২২ হাজার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫.৯৭ শতাংশ বেশি। এবার দেশের বাইরে চীনাদের মূল গন্তব্য ছিল থাইল্যান্ড, জাপান, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের হংকং, ম্যাকাও ও তাইওয়ান।

৮. এবার বসন্ত উত্সবের সময়ে হংকংয়ে পর্যটকের সংখ্যা গত বসন্ত উত্সবের সময়ের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি ছিল। চীনের হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যান অনুসারে, ৪ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বসন্ত উত্সবের ছুটিতে হংকংয়ের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে আসা-যাওয়া করা পর্যটকের মোট সংখ্যা ছিল ৭০ লাখ ২০ হাজার। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ। ৪ লাখ ৩০ হাজার অভ্যন্তরীণ পর্যটক হংকং-চুহাই-ম্যাকাও সেতু এবং কুয়াংচৌ-শেনচেন-হংকং দ্রুতগতির রেলপথ ব্যবহার করে হংকংয়ে পৌঁছান।

৯. তৃতীয় আন্তর্জাতিক তেল সম্মেলন সম্প্রতি মিসরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল: 'উত্তর আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগর: ভবিষ্যতের জ্বালানিসম্পদের চাহিদা মেটানো'।

মিসরের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা মাদবুলি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, এ সম্মেলন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। এ থেকে সকল পক্ষই লাভবান হবে।

সম্মেলনে জ্বালানিসম্পদের নিরাপত্তা, নারীদের স্বাস্থ্য, পরিবেশ, ব্যাংকিং ও বিনিয়োগ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া, সম্মেলনে প্রথমবারের মতো জ্বালানিসম্পদ খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়েও আলোচনা হয়। বিভিন্ন দেশের দুই শতাধিক সরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ এবং ১২ শতাধিক প্রতিনিধি এতে অংশ নেয়।

১০. বাংলাদেশে বৈষম্য বাড়ছে। কাঙ্ক্ষিত কর্মসংস্থানও হচ্ছে না। ১৯৯১-৯২ থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মধ্যে অর্থাৎ ১৫ বছরে দেশের সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ মানুষের আয় ১২১ গুণ বেড়েছে। আর এখন প্রতিবছর ৮ লাখ বেকার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হচ্ছে। সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ তথ্য তুলে ধরে।

সিপিডির মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে বাংলাদেশে সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ মানুষের হাতে ছিল মোট সম্পদের ১৮.৮৫ শতাংশ। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭.৮৯ শতাংশে। একইভাবে ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে সবচেয়ে গরিব ৫ শতাংশের কাছে ছিল ১ শতাংশের কিছু বেশি সম্পদ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা কমে নেমেছে ০.২৩ শতাংশে।

প্রবন্ধে আরও বলা হয়েছে, প্রতিবছর গড়ে ১৩ লাখ নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। ২০১৩ থেকে প্রতিবছর গড়ে ২১ লাখ তরুণ-তরুণী শ্রমবাজারে প্রবেশ করছেন, যা ২০২৩ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এর ফলে প্রতিবছর গড়ে ৮ লাখ বেকার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হচ্ছে।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040