রুটি ও সুখী জীবন
  2019-02-20 10:36:19  cri

জি সি জেলার ইয়াং ফাং গ্রাম চীনের চিয়াং সি প্রদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত। ছাং সিয়ে ওয়াং এখানে জন্মগ্রহণ করেন এবং বড় হন। ছোটবেলায় আকস্মিক এক সুযোগে তিনি প্রথমবার রুটি খান এবং তখন তার মনে হয়েছিল রুটি পৃথিবীতে সবচেয়ে সুস্বাদু একটি খাবার। তিনি তার মাকে বলেন, তার স্বপ্ন হল প্রতিদিন রুটি খাওয়া। তার মা হেসে বলেন, তুমি স্বপ্ন দেখো। সত্যি কথা বলতে, ৪০ বছর আগে পাহাড়ি অঞ্চলে অনেক মানুষ কখনও রুটি দেখেনি, আরো দূরের কথা বলার দরকার নেই।

১৯৮৪ সালে ছাং সিয়ে ওয়াং বাহিনীতে যোগ দেন এবং ফায়ার সার্ভিস বিভাগে কাজ করা শুরু করেন। প্রতি সপ্তাহে ফায়ার ব্রিগেডের জন্য রুটি ক্রয় করা তার অন্যতম কাজ। একদিন তিনি তার প্রধানকে বলেন, তিনি রুটি তৈরি করা শিখতে চান। কারণ, রুটি তৈরি করতে পারলে বাহিনী থেকে বের হবার পর তিনি সহজে আয় করেত পারবে। তার কথা শুনে তার প্রধান তাকে নিয়ে সামরিক ক্যাম্পের পাশে একটি রুটির দোকানে গেলেন। ওখানে তিনি ১৫ দিন রুটি তৈরি শিখলেন।

১৯৮৭ সালে, ছাং সিয়ে ওয়াং বাহিনী থেকে অবসর নেন এবং গ্রামে ফেরেন। তার বাবা তাকে জিজ্ঞান করেন, এখন কী করবে? তিনি উত্তর দেন, রুটি তৈরি করব। তবে তার প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হল। তিনি বুঝলেন, তাকে আরও শিখতে হবে। তবে তিনি রুটির দোকানের ধারণা গ্রামে নিয়ে আসেন। গ্রামের বাসিন্দা জং ওয়েন ছিও রুটির ব্যবসা শুরু করেন। তখন তার লক্ষ্য ছিল, এক বছরে ১০ হাজার ইউয়ান আয় করা। কিন্তু এক বছরে তিনি ৫০০০ ইউয়ান লোকসান দিলেন। তখন বিদেশে তৈররি রুটি তাইওয়ান ও হংকংয়ের মাধ্যমে চীনের ভূখন্ডে প্রবেশ করেছে। সেসব রুটি দেখে জুং ছি ওয়ান বুঝলেন, রুটিতে পরিবর্তন না-আনলে তিনি সববময় পেছনে থাকবেন। তাই তিনি নিজের রুটির আকার পরিবর্তন ও উন্নত করেন এবং নতুন প্রযুক্তি শেখেন। ওই বছরে, প্রথম ছয় মাসে তিনি ৩৫ হাজার ইউয়ান আয় করেন।

গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে, ছাং সিয়ে ওয়াং ও জুং ছি ওয়েন ছাড়া, গ্রামের ১০০০ মানুষ এবং সারা জেলার ২০ হাজার মানুষ রুটি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জি সিজেলার মানুষ রুটির মাধ্যমে সচ্ছল হবার স্বপ্ন দেখেছে।

ওই সময় অন্য একজন এ ব্যবসায় যোগ দেন। তার নাম সু ছুয়ান লং। তিনি একজন সরবরাহকারী। তিনি প্রতিদিন দোকানে রুটি সরবরাহ করেন। তিনি আগে কারখানায় কাজ করতেন। তবে রুটি সরবরাহ করার কাজে তার একদিনের আয় কারখানার ৭ মাসের বেতনের সমান। তিনি শুধু নিজে রুটি তৈরি শিখেছেন তা নয়, তিনি জেলায় একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রও চালু করেন। এতে আরও বেশি মানুষের জন্য রুটি তৈরির প্রযুক্তি শেখার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

জি সি জেলার ৪০ হাজার কৃষক নিয়ে গঠিত একটি 'রুটিদল' সারা চীনে ব্যবসা করে। ২০০৭ সালে জি সি রুটি একটি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

এখন ছাং সিয়ে ওয়াং দুটি বড় কোম্পানির মালিক এবং জং ছি ওয়েন চে চিয়াংয়ে ১০০টির বেশি রুটি দোকানের মালিক। এখন প্রতি সাড়ে তিনজন জিসি মানুষের মধ্যে একজন রুটির ব্যবসা করেন এবং জি সি মানুষের জীবনে সচ্ছলতা এনে দিয়েছে এই রুটি। এখন চীনে ৩০টি প্রদেশের ১০০০টি শহরে ৮০০০টি জি সি রুটি-দোকান আছে এবং তারা ১৪০ ধরনের রুটি বিক্রি করে। রাশিয়া, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশেও তাদের রুটি পাওয়া যায়।

স্বপ্ন দেখা মানুষের অধিকার এবং পাহাড়ি অঞ্চলের দরিদ্র মানুষরা রুটির মাধ্যমে বড় একটি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে।

(শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040