চীনা কোম্পানি হুয়াওয়েই নিয়ে এলো ৫জি স্মার্টফোন 'মেট এক্স' (Mate X) (অর্থ-কড়ি; ২ মার্চ ২০১৯)
  2019-03-02 16:35:22  cri


১. চীনা কোম্পানি হুয়াওয়েই সম্প্রতি ৫জি স্মার্টফোন 'মেট এক্স' (Mate X) জনসম্মুখে এনেছে। স্পেনের বার্সেলোনায় প্রায় তিন হাজার দর্শকের উপস্থিতে এই নতুন স্মার্টফোন প্রদর্শন করা হয়। এই ফোন ভাঁজ করা যাবে।

মেট এক্স-এর স্ক্রিন ৬.৬ ইঞ্চি। তবে, ভাঁজ খুললে তা দাঁড়াবে আট ইঞ্চিতে। ফোনে থাকছে 'পালং ৫০০০' প্রসেসর, ৮ গিগাবাইট র‍্যাম, ও ৫১২ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমোরি। এটি ওজনে হালকা হবে। ভাঁজ করা অবস্থায় এর পুরুত্ব হবে মাত্র ১১ মিলিমিটার। মাত্র আধা ঘন্টায় চার্জযোগ্য ব্যাটারি হবে ৪৫০০ মিলিএম্পিয়ারের। স্মার্টফোনটির দাম পড়বে আড়াই হাজার মার্কিন ডলারের কিছু বেশি। আাগামী জুন-জুলাইয়ে ফোনটি বাজারে আসবে।

২. 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট ৪৭টি দেশে গেল জানুয়ারিতে চীনের অ-আর্থিক সরাসরি বিনিয়োগ (ওডিআই) আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ৮.১ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই ৪৭টি দেশের চীনের অ-আর্থিক ওডিআই ছিল ১৩৩ কোটি মার্কিন ডলার। চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করে।

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১৩৭টি দেশ ও অঞ্চলের ৯৭৩টি কোম্পানিতে চীনের অ-আর্থিক ওডিআই ছিল ৯১৯ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কিছুটা কম।

৩. যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য–বিরোধ বিশ্ব অর্থনীতির জন্য 'হুমকিস্বরূপ' বলেছে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ বা আইসিসিবি। সংগঠনটি বলেছে, দুই দেশের মধ্যে বিবদমান শুল্ক–বিরোধ বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে নাড়া দিতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে চীনের সবচেয়ে বড় রফতানিবাজার; আর চীন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুত বর্ধনশীল রফতানিবাজার। সম্প্রতি আইসিসিবির ত্রৈমাসিক বুলেটিনের সম্পাদকীয়তে এ শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালে চীন-মার্কিন বাণিজ্য ৫৮ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছায়। আর এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের জন্যই চীন হচ্ছে একক বৃহত্তম বাজার। ফলে চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ এ অঞ্চলের জন্য সুখকর নয়।

৪. চীনের কৃষি ও গ্রামবিষয়ক মন্ত্রী হান ছাং ফু বেইজিংয়ে বলেন, ২০১৮ সালে চীনের কৃষি ও গ্রামের উন্নয়ন-কার্যক্রমে নতুন উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়, দারিদ্র্যবিমোচনকাজ দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যায়, এবং গ্রামের সঞ্জীবনীশক্তি পুনরুদ্ধারকাজে ভালো সূচনা হয়।

তিনি বলেন, সর্বশেষ প্রকাশিত 'কৃষি ও গ্রামের উন্নয়নের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া সংক্রান্ত সিপিসি'র কেন্দ্রীয় কমিটির রাষ্ট্রীয় পরিষদের প্রস্তাব' অনুযায়ী, চীন ভূমিব্যবস্থার সংস্কারকে কাজে লাগিয়ে গ্রামাঞ্চলে নতুন দফা সংস্কার-কার্যক্রম চালাবে এবং গ্রামীণ উন্নয়নের প্রাণশক্তি যোগাবে।

মন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে চীনে উত্পাদিত খাদ্যশস্যের মোট পরিমাণ ছিল ৬৫.৮ কোটি টন। এ নিয়ে চীন একটানা ৭ বছর ধরে বার্ষিক ৬০ কোটি টনেরও বেশি খাদ্যশস্য উত্পাদন করল। মাংস, ডিম, দুধ, ফল, সবজি ও মাছসহ প্রধান কৃষিজাত দ্রব্যের সরবরাহ ছিল যথেষ্ট। এ ছাড়া, এসময় কৃষকদের আয় দ্রুত বেড়েছে এবং গ্রামের নাগরিকদের মাথাপিছু বার্ষিক নিট আয় ছিল ১৪,৬১৭ ইউয়ান রেনমিনপি। গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে নতুন প্রবণতাও দেখা গেছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রামাঞ্চলের জমি সমষ্টিগত মালিকানায় থাকা উচিত। একে প্রাইভেটাইজেশন করা যাবে না। কৃষিজমিতে কৃষিকাজ করা এবং কৃষকদের স্বার্থ সুনিশ্চিত করা উচিত। ভূমিব্যবস্থার সংস্কারকে কাজে লাগিয়ে গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নের প্রাণশক্তি যোগান দেওয়া যাবে।

৫. চলতি বছর তথা ২০১৯ সালে ৭০ লাখ চীনা নাগরিক বিদেশ ভ্রমণ করবেন, যা ২০১৮ সালের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি। আর বরাবরের মতোই থাইল্যান্ড, জাপান ও ইন্দোনেশিয়াসহ প্রতিবেশী দেশগুলো হবে চীনা পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্যস্থান। চীনের সংশ্লিষ্ট পর্যটন সংস্থা সম্প্রতি এ পূর্বাভাস দিয়েছে।

২০১৮ সালে চীনের জিডিপি প্রথমবারের মতো ৯০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়ে যায়। সেবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.৫ শতাংশ। বস্তুত, চীনাদের আয় বেড়েছে, সুখ এবং নিরাপত্তার অনুভূতিও বেড়েছে। তাই এখন বিদেশভ্রমণের মাধ্যমে বসন্ত উত্সব কাটানো বহু চীনার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এবারের বসন্ত উত্সবের সময়ও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

গত বছর ইন্দোনেশিয়ায় চীনা পর্যটকের সংখ্যা ছিল প্রায় ২০ লাখ। ইন্দোনেশিয়ার পর্যটনমন্ত্রী আরিয়েফ ইয়াহিয়া জানান, চীনা পর্যটকরা প্রতিবার ভ্রমণের সময় গড়ে ১১০০ মার্কিন ডলারেরও বেশি খরচ করে, যা তাঁর দেশের জন্য বিদেশি মুদ্রা আয়ের স্থিতিশীল উত্স।

এদিকে, ২০১৮ সালে বিশ্বে মোট পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১৪০ কোটি, যা একটি রেকর্ড। এই রেকর্ড গড়তে চীনা পর্যটকরা রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে, বৈশ্বিক অর্থনীতির উন্নয়নে পর্যটন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

৬. চীনে খাবার সরবরাহ শিল্প দারিদ্র্যবিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কারণ, সরবরাহকর্মীদের অধিকাংশই দরিদ্র গ্রামাঞ্চলে থেকে আসা।

এক হিসেব অনুসারে, পণ্য-সরবরাহ সেবা প্রদানকারী বিশাল প্রতিষ্ঠান মেইথুয়ান-তিয়ানফিংয়ের ২৭ লাখ সরবরাহকর্মীর ৭৭ শতাংশই গ্রাম থেকে আসা। এই কর্মীদের মধ্যে ৬ লাখ ৭০ হাজার এসেছে হতদরিদ্র অঞ্চল থেকে।

এদের অর্ধেকের বেশি প্রতিদিন ৪ ঘন্টার কম কাজ করেন এবং খাবার সরবরাহকর্মীদের ৩০ শতাংশ প্রতিমাসে গড়ে ৫ হাজার ইউয়ান করে আয় করেন।

৭. ২০১৮ সালে চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সিনচিয়াং ইউগুর স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশের সঙ্গে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বৈদেশিক বাণিজ্য ছিল ২৯,১৫০ কোটি ইউয়ান, যা আগের বছরের চেয়ে ১৩.৫ শতাংশ বেশি। সম্প্রতি স্থানীয় শুল্ক বিভাগ এ তথ্য জানায়।

শুল্ক বিভাগ আরও জানায়, গত বছর সিনচিয়াংয়ের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯৮.২ শতাংশই ছিল 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে। এর মধ্যে সিনচিয়াং রফতানি করেছে ১৫২১০ কোটি ইউয়ান মূল্যের পণ্য ও সেবা এবং আমদানি করেছে ১৩৯৪০ কোটি ইউয়ান মূল্যের পণ্য ও সেবা।

পরিসংখ্যান অনুসারে, রাশিয়া ও মধ্য-এশিয়ার দেশগুলো সিনচিয়াংয়ের মূল বাণিজ্য-অংশীদার। এর মধ্যে কাজাখস্তানের সঙ্গে সিনচিয়াংয়ের বাণিজ্যের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ১০৪৯০ কোটি ইউয়ান। দ্বিতীয় স্থানে আছে রাশিয়া।

আর্মেনিয়া, স্পেন, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি ও বুলগেরিয়াসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গেও সিনচিয়াংয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়ছে।

৮. ২০১৮ সালে আলজেরিয়া চীনের কাছ থেকে ৭৮৫ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য ও সেবা আমদানি করেছে। এ নিয়ে গত ৬ বছর ধরে চীন আলজেরিয়ায় বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ হিসেবে রয়েছে।

এক্ষেত্রে ফ্রান্স আছে দ্বিতীয় স্থানে। ২০১৮ সালে ফ্রান্স আলজেরিয়ায় রফতানি করেছে ৪৭৮ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা। ইতালি (৩৬৫ কোটি), স্পেন (৩৫৩ কোটি) ও জার্মানি (৩১৮ কোটি) আছে যথাক্রমে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে।

এদিকে, ২০১৮ সালে আলজেরিয়ার বাণিজ্য-ঘাটতি কমেছে ৫৩.৭৩ শতাংশ। এ বছর বাণিজ্য-ঘাটতি ছিল ৫০৩ কোটি মার্কিন ডলার। আগের বছর তথা ২০১৭ সালে দেশটির বাণিজ্য-ঘাটতি ছিল ১০৮৭ কোটি মার্কিন ডলার।

৯. ২০১৮ সালে পেরুর অর্থনীতিতে ৩.৯৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আইএনইআই সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।

আইএনইআই-এর তথ্যানুসারে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পেরুর অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় ৪.৭৩ শতাংশ।

আইএনইআই আরও জানায়, ২০১৮ সালে পেরুর মত্স্য খাতে ৩৯.৭৩ শতাংশ, কৃষি খাতে ৭.৫৪ শতাংশ, উত্পাদন খাতে ৬.১৭ শতাংশ, অর্থ ও বীমা খাতে ৫.৭৪ শতাংশ, এবং টেলিযোগাযোগ খাতে ৫.৫২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়।

১০. ২০১৮ সালে বেলারুশের পণ্য-রফতানি আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে ১৫.৩ শতাংশ। গেল বছর দেশটি পণ্য-রফতানি করেছে ৩৩৭০ কোটি মার্কিন ডলারের। বেলারুশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্লাদিমির মাকেই সম্প্রতি এ তথ্য জানান।

১১. বাংলাদেশে কেমিক্যাল আমদানি বাড়ছে। দেশটিতে গত দেড় দশকে কেমিক্যাল-পণ্য আমদানি ৫ গুণেরও বেশি বেড়েছে। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কেমিক্যাল-পণ্যের আমদানি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১২৬ কোটি মার্কিন ডলারের কেমিক্যাল-পণ্য আমদানি হয়েছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশে কেমিক্যাল-পণ্য হিসেবে অর্গানিক কেমিক্যাল, ফার্মাসিউটিক্যালস, ফার্টিলাইজার, ডায়িং ইত্যাদি আমদানি হয়। এসব কেমিক্যাল চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প, টেক্সটাইল, রঙ, কসমেটিক্স, ওষুধ, সার কারখানা প্রভৃতিতে ব্যবহৃত হয়। যেসব পণ্য বাংলাদেশ থেকে রফতানি করা হয়, সেসবের অনেক পণ্যে এসব কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়।

সাধারণত চীন ও ইতালি থেকে কেমিক্যাল-পণ্য আমদানি হয় বাংলাদেশে।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040