বেইজিংয়ের চংগুয়ানছুনে অবস্থিত ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত বেইজিং মেগভি কোম্পানি লিমিটেড একটি উচ্চ পর্যায়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোম্পানি। ২০১৮ সালে কোম্পানিটি বিশ্বের কোম্পিউটার ভিশন এইআই প্রযুক্তি এ ধরনের শীর্ষ দশটি কোম্পানির একটি হিসেবে স্বীকৃতি পায়। কোম্পানিটির কেন্দ্রীয় প্রযুক্তি হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান স্যিয়ে ই নান বলেন, কোম্পানি প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে নিজের বৈশিষ্ট্য গড়ে তোলার জন্য উচ্চ প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে থাকে।
বহু প্রতিষ্ঠানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করার পাশাপাশি, কোম্পানিটি অনেক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসমৃদ্ধ হার্ডওয়্যার পণ্য তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে সনাতন শিল্পের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। স্যিয়ে ই নান একটি ছোট দোকানকে উদাহরণ হিসাবে টেনে বলেন, তাঁর কোম্পানি একটি স্মার্ট ক্যামেরা ও একটি স্মার্ট বক্স দিয়ে দোকানটিকে ব্যাপক ডেটা সরবরাহ করছে। এটি ছোট দোকানের শ্রমের খরচ কমাবে এবং মুনাফা বাড়াবে। স্যিয়ে ই নান বলেন, "তিন থেকে চার শ' বর্গমিটারের ছোট দোকান আমাদের সরঞ্জাম ব্যবহার করে একটি ডিজিটাল দোকানে পরিণত হয়েছে। আমাদের সরঞ্জামের মাধ্যমে প্রতিদিনকার পণ্যের বিক্রির পরিমাণ ও ক্রেতার সংখ্যা এবং মুনাফার বিস্তারিত হিসাব পাওয়া যায়।"
বেইজিং মেগভি কোম্পানির দৃষ্টিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের বিকল্প নয়। কিন্তু এতে কাজ ও জীবন আরো সুবিধাজনক হবে এবং মানুষের কর্মদক্ষতা বাড়বে।
বেইজিংয়ের চংগুয়ানছুনে বেইজিং মেগভি কোম্পানির মতো আরও কোম্পানি আছে। ২০১৮ সালে চংগুয়ানছুনে উচ্চ প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ২২ হাজারেরও বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট আয় ৫.৮ ট্রিলিয়ান ইউয়ান আরএমবি ছিল, যা ২০১৭ সালের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকে চংগুয়ানছুন একটি 'ইলেকট্রনিক পণ্যের রাস্তা' থেকে চীনের 'সিলিকন ভ্যালি'-তে পরিণত হয়। গত বছর এখানে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানগুলো মোট ৮৬ হাজার পেটেন্ট-আবেদন করেছে, যা ২০১৭ সালের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।
এ পর্যন্ত চংগুয়ানছুন এলাকায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গবেষণায় সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সারা চীনের অর্ধেকেরও বেশি। এখানে অবস্থিত ১০টিরও বেশি জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগার আছে। আর এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪ শতাধিক। সিবি ইনসাইটস্ (CB Insights) ২০১৮ সালে প্রকাশিত বিশ্বের ১০০টি শ্রেষ্ঠ এআই প্রতিষ্ঠানের যে নাম-তালিকা প্রকাশ করে, সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর ৮০ শতাংশ চংগুয়ানছুনে অবস্থিত।
চংগুয়ানছুনের দংশেং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এলাকায় জুসফুয়ান বিগ ডেটা নামের একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বিগ ডেটার উন্নয়ন। চীনের ৮০টিরও বেশি স্থানীয় সরকারের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান লাং ফেই ফেই বলেন, "গত বছর আমাদের রাজস্ব আয় ৭০ কোটি ইউয়ান ছাড়িয়ে যায় এবং মুনাফা ছিল ৩০ কোটি ইউয়ানেরও বেশি। আমরা বেইজিং শহরের জন্য ৭ কোটি ইউয়ানের কর আদায় করেছি। আমাদের ২ হাজারেরও বেশি কর্মীর অধিকাংশই হলেন গবেষক। এ পর্যন্ত আমাদের প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার সফ্টওয়্যার কপিরাইট ও পেটেণ্ট পেয়েছে দুই শতাধিক। আমরা সারা চীনের বিভিন্ন স্থানীয় সরকারের সঙ্গে ৫০০ বিগ ডেটা প্ল্যাটফর্ম ও ব্যবসা ব্যবস্থাপনা করেছি।"
বেইজিং উচ্চ পর্যায়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য শিল্প ও জ্ঞান গবেষণার প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছে। এই প্লাটফর্মের আওতায় সরকার সেবা সরবরাহ করে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বাজারে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে। বেইজিং পৌর সরকারের ডেপুটি মেয়র লিন খ্যে ছিং বলেন, যত্নসহকারে প্রতিটি এলাকার নেতৃস্থানীয় শিল্প-পরিকল্পনা প্রণয়ন করা ও শিল্পের ওপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অর্থ, ভূমি ও দক্ষ মানবসম্পদের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। চংগুয়ানছুনে ২০টি নতুন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি, উচ্চ প্রযুক্তি শিল্পের প্রধান পরিকল্পনা সমন্বয়ের ব্যবস্থাও উন্নত করা হবে।"