মে মাসে চীনের বিদেশি মুদ্রার মজুত ছিল ৩,১০,১০০ কোটি মার্কিন ডলার (অর্থ-কড়ি; ১৫ জুন ২০১৯)
  2019-06-15 13:00:53  cri

১. মে মাসের শেষ দিক পর্যন্ত চীনের বিদেশি মুদ্রার মজুত ছিল ৩ ট্রিলিয়ন ১০১ বিলিয়ন (৩,১০১,০০ কোটি) মার্কিন ডলার, যা এপ্রিল মাসের চেয়ে ৬১০ কোটি ডলার বেশি। চীনের বিদেশি মুদ্রা ব্যবস্থাপনা ব্যুরো সম্প্রতি এ তথ্য জানায়।

ব্যুরো জানায়, চলতি বছর চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা স্থিতিশীল আছে এবং বিদেশি মুদ্রার বাজারেও ভারসাম্য বজায় রয়েছে। চীনের সুষ্ঠু অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিদেশি মুদ্রার মজুতের জন্য স্থিতিশীল ভিত্তি যুগিয়েছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারে অস্থিতিশীলতা বাড়লেও, বাইরের ঝুঁকি মোকাবিলায় চীনের বাজারের যথেষ্ট শক্তি রয়েছে বলেও ব্যুরো উল্লেখ করে।

২. সম্প্রতি বেইজিংয়ে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড রবার্ট মালপাস চীনা প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াংয়ের সঙ্গে দেখা করেন।

সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী লি বলেন, বিশ্বের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে চীন বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করতে ইচ্ছুক।

প্রধানমন্ত্রী লি আরও বলেন, মালপাস বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই চীনের সঙ্গে সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। এদিকে, চীন বিশ্বের বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালন করে আসছে। চীন আন্তর্জাতিক ব্যবসার জন্য আরও অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।

জবাবে মালপাস বলেন, ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাংক, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় প্লাটফর্মে, চীনের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী।

৩. আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সম্প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, বাণিজ্য-বিরোধ ও আর্থিক বাজারে আকস্মিক পরিবর্তন মার্কিন অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হবে।

আইএমএফ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ২০১৮ সালের ২.৯ শতাংশ থেকে ২০১৯ সালে ২.৬ শতাংশে হ্রাস পাবে। আর ২০২০ সালে প্রবৃদ্ধির হার ২ শতাংশে দাঁড়াবে।

আইএমএফ আরও বলেছে, মার্কিন সরকারের আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক ও অন্যান্য ব্যবস্থা বৈশ্বিক বাণিজ্যের শৃঙ্খলা নষ্ট করছে। এতে পণ্য ও সেবার বাণিজ্য কমে যাবে।

এদিকে, একই দিনে আইএমএফের ব্যবস্থাপনা-পরিচালক ক্রিস্টিন লাগার্দে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, বাণিজ্য-যুদ্ধে কোনো পক্ষ বিজয়ী হতে পারে না। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও মেক্সিকোসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে অবিলম্বে বাণিজ্য-চুক্তিতে উপনীত হতে তাগিদ দেন।

৪. চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি 'চীন-মার্কিন আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতায় চীনের লাভসংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন' প্রকাশ করে। এই রিপোর্টে সঠিকভাবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য-সংঘাতের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করা হয়। চীন আন্তর্জাতিক বেতার (সিআরআই) এক সম্পাদকীয়তে বলেছে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বাস্তবতা হচ্ছে, এতে বাণিজ্যিক উদ্বৃত্ত চীনের থাকলেও, কল্যাণ দু'পক্ষেরই। চীনের সঙ্গে বাণিজ্যে 'যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি হচ্ছে'—এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই।

উল্লেখ্য, চীনের সঙ্গে ৫০,০০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য-ঘাটতির অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এতে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চীন লাভবান হয়।

৫. কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (এমএল)-এর সাধারণ সম্পাদক সি.পি মাইনালি সম্প্রতি চীনা সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেন, চীন-মার্কিন বাণিজ্য-বিরোধ এড়াতে বেইজিং যে-প্রচেষ্টা চালিয়েছে, তা খুবই প্রশংসনীয়।

তিনি বলেন, চীন-মার্কিন বাণিজ্য-বিরোধ যে কেবল দেশ দু'টোর নিজেদের ক্ষতি করছে, তা নয়; বরং তা বিশ্বের অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাণিজ্য-বিরোধের প্রভাবে বিভিন্ন দেশের জিডিপি'র পরিমাণ কমে যাবে। সুতরাং, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংলাপের মাধ্যমে চীন-মার্কিন বাণিজ্য-বিরোধ শেষ হওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি 'চীন-মার্কিন আর্থ বাণিজ্যিক সংলাপে চীনের অবস্থান' শীর্ষক শ্বেতপত্র বেইজিংয়ে প্রকাশিত হয়েছে। এটি তিনি ভালো করে পড়েছেন। শ্বেতপত্রে চীনের স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। চীনের অবস্থান প্রশংসীয়।

৬. চীনের উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী ও চীন-মার্কিন বাণিজ্যিক সংলাপে চীনের প্রতিনিধিদলের উপ-প্রধান ওয়াং শৌ ওয়েন বলেছেন, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে বিদ্যমান আইন মেনে বৈধভাবে চীনে ব্যবসা করতে স্বাগত জানানো হয়। এক্ষেত্রে আইন অমান্য করলে, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে চীনের আইন অনুসারেই শাস্তি পেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, গত মার্চ মাসে চীন 'বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগ আইন' পাস করে। আইনের দৃষ্টিতে সব বিদেশি বিনিয়োগকারী সমান। তাদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করা হবে। তবে, তাদেরকে চীনের আইন মেলে চলতে হবে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি মার্কিন ফেডারেল এক্সপ্রেস চীনের একটি প্যাকেজ অন্য দেশে পাঠিয়ে দেয়। এটা চীনা আইনের লঙ্ঘন বিধায়, চীনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এই কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে।

৭. রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদ বিশ্বের শ্রুমবাজার ও অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তিনি সম্প্রতি জেনিভায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন।

মেদভেদেভ বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগেও কোনো কোনো দেশ ভিন্ন দেশের ওপর বাণিজ্যযুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছে ও বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদী নীতি মেনে চলছে। এমন আচরণ সার্বিকভাবে বিশ্বের জন্য ক্ষতিকর।

তিনি আরও বলেন, কোনো কোনো দেশের একতরফা সিদ্ধান্ত ও একগুয়েমির কারণে বৈশ্বিক শৃঙ্খলা হুমকির মুখে পড়ছে; আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কাঠামোও দুর্বল হচ্ছে। এর বিপরীতে রাশিয়া উন্মুক্ত নীতিতে অবিচল আছে এবং দেশের স্বার্থ ও সম্মান বজায় রাখার শর্তে যে-কোনো দেশের সঙ্গে সহযোগিতা করতে তৈরি আছে।

৮. প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পনির ও ভুট্টার উত্পাদন কমে যাওয়ায়, বিশ্বে খাদ্যের দাম একটানা ৫ মাস ধরে বেড়েছে। জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করে।

তখ্যানুসারে, মে মাসে খাদ্যমূল্যের সূচক ছিল ১৭২.৪, যা আগের মাসের চেয়ে ১.২ শতাংশ বেশি। খরার প্রভাবে ওশিয়েনিয়ার দেশগুলোর দুগ্ধজাত খাদ্যের রফতানি কমেছে। এতে দুগ্ধজাত খাদ্যের দাম মে মাসে আগের মাসের চেয়ে ৫.২ শতাংশ বেড়েছে। এই দাম গত ৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্টে অনেক জায়গায় বন্যার ফলে ভুট্টার উত্পাদন কমায় খাদ্যের দাম বাড়ে।

এফএও'র পূর্বাভাস অনুসারে, খারাপ আবহাওয়ার জন্য ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভুট্টার উত্পাদন ১০ শতাংশ কমবে। এর প্রভাবে চলতি বছর বিশ্বে খাদ্যশস্যের উত্পাদন ২.৬৮৫ বিলিয়ন টনে পৌঁছাবে।

৯. চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধির হার আরও হ্রাস পাবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সূচক দাঁড়াবে ৯৬.৩-তে, যা ২০১০ সালের মার্চ মাসের পর সবচেয়ে কম। সম্প্রতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রকাশিত সর্বশেষ বৈশ্বিক বাণিজ্যিক সূচক থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উত্তেজনা ‌ও অর্থনীতিতে বিদ্যমান অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে, এপ্রিল মাসে বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২.৬ শতাংশ। অথচ এক্ষেত্রে আগের অনুমান ছিল ৩.৭ শতাংশ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা আরও বলছে, ২০২০ সালে বৈশ্বিক বাণিজ্যে ৩.০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে।

১০. জি-টোয়েন্টির দু'দিনব্যাপী বাণিজ্য ও ডিজিটল অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন সম্প্রতি জাপানের ইবারাকি কেন শহরে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনশেষে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে, বিশ্বে স্বাধীন ও ন্যায়সঙ্গত বাণিজ্যিক পরিবেশ রক্ষা এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় সংস্কারের আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, জি-টোয়েন্টির উচিত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে বাণিজ্যসংক্রান্ত মতবিরোধ দূরীকরণে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ভূমিকা জোরদার করা। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্প্রসারণ হচ্ছে বিশ্ব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন সুনিশ্চিত করার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিদ্যমান বাণিজ্যিক ঝুঁকি বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমাতে পারে।

সম্মেলনে আন্তঃআঞ্চলিক ই-বাণিজ্যসংক্রান্ত নিয়মকানুন তৈরি করা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার কারণে 'বাণিজ্যে সংরক্ষণবাদের বিরোধিতা' বিবৃতিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি।

১১. জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পখাতের অবদান বৃদ্ধি এবং টেকসই উন্নয়নে শিগগিরই অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পনীতিমালা করবে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প দক্ষতা উন্নয়ন পরিষদ (আইএসআইএসসি) নীতিমালার একটি রূপরেখা প্রণয়নের কাজ করছে। সম্প্রতি ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত 'অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পখাতের জন্য নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন সংক্রান্ত দিক-নির্দেশনা' শীর্ষক কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়।

জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) আওতায় গঠিত অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প দক্ষতা উন্নয়ন পরিষদের (আইএসআইএসসি) আয়োজিত এ কর্মশালায় জানানো হয়, চলতি বছর জুনের মধ্যে সংস্থাটি এর খসড়া চূড়ান্ত করে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে এবং এর ভিত্তিতে শিল্প মন্ত্রণালয় নীতিমালা প্রণয়ন করবে।

প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, দেশের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৮৭ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প ক্ষেত্রে নিয়োজিত। প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ নারী-পুরুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে, যাদের প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পখাত। এখাতে নিয়োজিত শ্রমিক এবং উদ্যোক্তাদের নানামুখী সমস্যা থাকলেও, জাতীয় শিল্পনীতিতে তা বিবেচনায় নেয়া হয়নি। ফলে অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প ও অর্থনৈতিক খাতের টেকসই বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে।

 

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040