বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট ২০১৯-২০ : জনকল্যাণমূলক বনাম উচ্চবিত্ত-কল্যাণ
  2019-06-16 19:20:04  cri

সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের শিরোনামে বাংলাদেশের ৪৮তম এবং নিজের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেছেন নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ১৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের এ বাজেট পেশ করেন তিনি।

রেকর্ড ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার এ বাজেটে রাজস্ব আয়ে লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২০ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৫ শতাংশে সীমিত রাখার কথা বলা হয়েছে বাজেটে।

খাতওয়ারী হিসাবে যোগাযোগ ও মানবসম্পদ খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ ৬৪ হাজার ৮২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুর জন্য বরাদ্দ ৫ হাজার ৩৭০ কোটি।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় বরাদ্দ শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ৪১ হাজার ২২২ কোটি টাকা। প্রতিরক্ষায় ৩২ হাজার ৫৫৮ কোটি, কৃষিতে ২৪ হাজার ৩৫৩ কোটি, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির জন্য ২৪ হাজার ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। উন্নয়ন বাজেট-এডিপির বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় এবারের বাজেটকে স্মার্ট বাজেট হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এতে সমাজের সকল স্তরের মানুষের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। জানান, বাজেটের ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার অভীস্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট তৈরি করেছেন বলে দাবি করেন। ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, পুঁজিবাজার, সঞ্চয়পত্র, করের আওতা বাড়ানো ও সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাতে বেশ কিছু সংস্কারের সুপারিশ রয়েছে বাজেটে।

অর্থমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় ১৪ জুন বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রারম্ভিক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে একে জনকল্যাণমূলক বাজেট হিসেবে অভিহিত করেন। বাজেট বাস্তবায়নের অন্যতম অনুসঙ্গ রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করতে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ যাতে না পড়ে সে বিষয়ে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। কৃষিখাতে সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত থাকা, শিক্ষা-সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাজেট বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রশ্নোত্তর পর্বে এক প্রশ্নের জবাবে ব্যাংক খাতকে বাঁচানোর জন্য ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলে প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে ব্যাংক সুদের হার এক ডিজিটে আনেনি যে সব বেসরকারি ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও কথা বলেন তিনি।

অর্থপাচার বন্ধেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ২০১২ সালের ভ্যাট আইনকে ব্যবসায়-বান্ধব করা হয়েছে উল্লেখ করে এটি বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চান শেখ হাসিনা।

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বাজেটকে স্বাগত জানিয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাজেট ব্যবসায়-বান্ধব ও দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য সহায়ক হবে।

তবে, বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি জানায় সার্বিক বিবেচনায় বাজেট বাস্তবসম্মত হয়নি। বাজেটে স্বচ্ছল ও উচ্চবিত্তরা সুবিধা পেলেও মধ্যবিত্তরা সুবিধা পাবে না বলে দাবি করে সংস্থাটি। ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের কথা বলা হলেও বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মপরিকল্পনা নেই বলে জানান সিপিডির ডিস্টিংগুইসড ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। মুদ্রা বিনিময় হার সংশোধন না করে গার্মেন্টসসহ কিছু রপ্তানি খাতে প্রণোদনা দেয়াটাকে বাজেটের ভুল বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।

বাজেটের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো প্রতিফলিত হয়নি জানিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ আসা উচিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। কৃষিতেও বরাদ্দ আরো বেশি হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

সামাজিক নিরাপত্তাসহ বাজেটে কিছু ইতিবাচক বিষয় থাকলেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার বিরোধিতা করেন ড. দেবপ্রিয়। বলেন, এতে করে মানুষ কর ফাঁকি দিতে উৎসাহিত হয়। তা ছাড়া অপ্রদর্শিত আয় ও বেআইনি আয়কে আলাদা করা হয়নি বলেও জানান তিনি। ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনসহ অনেক বিশ্লেষকই কমবেশি এমন অভিমত পোষণ করেন।

আগামী অর্থবছরের এ বাজেট নিয়ে চলতি মাসের বাকি দিনগুলো সংসদে আলাপ-আলোচনা হবে। প্রয়োজনীয় সংশোধন ও বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো গ্রহণ করেই আগামী ৩০ জুন বাজেট পেশ হবে বলে আশা দেশবাসীর।

ঢাকা থেকে মাহমুদ হাশিম।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040