লাহু জাতির লোকসংখ্যা ৪ লাখ ৫৪ হাজার। চীনের ৩১টি প্রদেশ, স্বায়ত্বশাসিত এলাকা ও মহানগরে বাস করে তারা। এর মধ্যে ৯৮.৬৬ শতাংশের বাস ইউন নান প্রদেশে। লান ছাং চীনের একমাত্র লাহু জাতির স্বায়ত্তশাসিত জেলা এবং অর্ধেক লাহু জাতির মানুষ এখানে বাস করে। ইউন নান ছাড়া, শুধু শান তুং ও হ্য নান প্রদেশে লাহু জাতির মানুষ ১০০০ ছাড়িয়েছে। মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওসসহ বিভিন্ন দেশে ১.৬ লাখ লাহু জাতির মানুষ আছে।
লান ছাং নদীসংলগ্ন পাহাড়ি অঞ্চল লাহু জাতিঅধ্যুষিত এলাকা। লাহু জাতির মানুষ নিজেদের ডাকে লাহু না (কালো লাহু), লাহু সি (হলুদ লাহু), লাহু পু (সাদা লাহু), ইত্যাদি নামে। লাহু মানে বাঘ। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর জাতির ইচ্ছা অনুযায়ী 'লাহু' নাম দেয়া হয়। 'লা' মানে 'হাতে হাত ধরা' এবং 'হু' মানে সুখী।
লাহু ভাষা ই, লিসু, নাসি ও হানি ভাষার মতো স্বাধীন একটি ভাষা। লাহুসি ও লাহুনা নামে দুটি আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে। লাহু ভাষায় পশুপাখির শব্দ সব লিসু ও ই ভাষায় একই। তার মানে জাতি তিনটির মধ্যে ঘনিষ্ঠ ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। হান ও তাই জাতির সঙ্গে বেশ যোগাযোগ করার কারণে তারা হান ও তাই ভাষাও বলতে পারেন।
দীর্ঘসময়ে লাহু জাতির বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও বিশেষ সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। তাদের পূর্বপুরুষ নানা ধরনের উত্পাদনকাজে জড়িত ছিলেন। শুরুতে তারা একটি যাযাবর জাতি ছিল। পরে তারা বসতি স্থাপন করে কৃষিকাজ শুরু করে। তবে যাযাবরদের বৈশিষ্ট্য তাদের যায়নি। শিকার এখনও তারা করে। লাহু একটি সাহসী জাতি।
লাহু জাতির পুরুষ ও নারীরা নগ্নমস্তক পছন্দ করে। মাথার উপর শুধু কিছু চুল রাখে, এ চুলকে বলা হয় 'আত্মা চুল'। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর, মেয়েরা বিষের আগে লম্বা চুল রাখে, তবে বিয়ের পর সব চুল কেটে ফেলে। তাই নারীর জন্য নগ্নমস্তক বিবাহিত হবার প্রতীক।
লাহু জাতির মানুষ কালো রঙের পোশাক পছন্দ করে। তারা কালো পোশাকের ওপর অন্য রঙের কাপড় বা লাইন প্যাটার্ন তৈরি করে।
লাহু জাতির মূল খাবার ভাত ও ভুট্টা। মুর্গি ও ভাত বা ভুট্টা দিয়ে জাউ তৈরি করে তারা। তারা ঝাল স্বাদের খাবার পছন্দ করে। তাদের খাবার সাধারণত মসলাযুক্ত হয়।
লাহু জাতির মানুষ কুকুর খায় না। কিংবদন্তি অনুযায়ী, কুকুর তাদেরকে খাদ্যের বীজ এনে দিত এবং কুকুর শিকারীর ভাল বন্ধু। তাই কুকুর খাওয়া, হত্যা করা, বা কুকুরকে আঘাত করা অনৈতিক মনে করে লাহু মানুষ।
লাহু জাতিঅধ্যুষিত গ্রামের নাম তিন রকমের। একটি গ্রামের প্রতিষ্ঠাতার নামে গ্রামের নামকরণ হয়। আবার গ্রামের প্রধানের নাম গ্রামের নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া, ভূখণ্ড বা পাহাড়ের আকার অনুসারে গ্রামের নামকরণ করা হয়।
লাহু মানুষ শিশুর জন্মের ওপর বেশ গুরুত্ব দেয়। নারী অন্তঃসত্ত্বা হলে একা একা বাইরে যেতে পারে না, কঠিন কাজ করতে পারে না। তার আত্মীয়স্বজন সবসময় পাশে থাকে। তারা বিশ্বাস করে, প্রথম সন্তান ছেলে হলে মুর্গি দিয়ে পূজা করা উচিত। এতে দ্বিতীয় সন্তান মেয়ে হবে।
লাহু জাতির বড় উত্সব ৫টি। বসন্ত উত্সব, সমাধি পরিষ্করণ উত্সব, ড্রাগন নৌকা উত্সব (তুয়ান উ উত্সব), মধ্য শরত্ উত্সব ও মশাল উত্সব।
বসন্ত উত্সব দু'রকমের: বড় নববর্ষ ও ছোট নববর্ষ । তারা বড় নববর্ষকে নারীর নববর্ষ এবং ছোট নববর্ষকে পুরুষের নববর্ষ বলে ডাকে। নববর্ষের প্রথম চার দিন বড় নববর্ষ এবং সপ্তম থেকে নবম দিন পর্যন্ত ছোট নববর্ষ। নববর্ষের আগে সবাই স্নান করে নতুন পোশাক পরে। প্রথম দিনের ভোরে, সবাই পানি আনতে যায়। তারা বিশ্বাস করে, যে সবার আগে বাড়িতে পানি নিয়ে আসবে, তার জমিতে ফসল বেশি হবে।
তুয়ান উ উত্সব লাহু জাতির গাছ ও ফুল রোপণের সময়। এদিন কোন গাছ কাটা নিষিদ্ধ।
প্রতিবছরের ষষ্ঠ মাসের ২৪ তারিখ মশাল উত্সব। রাতে প্রতিপরিবার বাড়ির সামনে ও পিছনে দুটি মশাল জ্বালিয়ে রাখে এবং গোটা পরিবার একসঙ্গে খাবার খায়।(শিশির/আলিম/রুবি)