৯২ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত এক চীনা শিক্ষকের ব্যস্ত শিক্ষাদান জীবন এবং চীনের চরম দরিদ্র গ্রামে শিক্ষার উন্নয়ন
  2019-08-26 15:40:17  cri

 


৯২ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত এক চীনা শিক্ষকের ব্যস্ত শিক্ষাদান জীবন

গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলাকালে প্রতিদিন ভোর ৫টায় ঘুম থেকে জেগে ওঠেন শিক্ষক ইয়ে লিয়ান পিং। নাস্তা করে তিনি বাসার পাশে ক্লাসরুমের চেয়ার ও টেবিল সাজিয়ে নতুন একদিনের জীবন শুরু করেন। ৯২ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জনাব ইয়ে গত ১৯ বছর ধরে এভাবে শিক্ষাদানের কাজ করছেন।

জনাব ইয়ে চীনের আনহুই প্রদেশের হো জেলার উচিয়াং উপজেলার পুছেন গ্রামে বাস করেন। স্থানীয় অঞ্চলের বাবা মায়ের সাথে না থাকা বাচ্চাদের পড়ান তিনি। পুছেন গ্রামটির যুবকরা চাকরির জন্য বিভিন্ন বড় শহরে থাকেন, তাই গ্রামে প্রবীণ ও বাচ্চারা বসবাস করে থাকেন। ২০০০ সালে জনাব ইয়ে স্থানীয় বাচ্চাদের জন্য ইংরেজি ক্লাস চালু করেন। গত ১৯ বছরে বিনা খরচে সহস্রাধিক বাচ্চাকে পড়ান তিনি। স্থানীয় অঞ্চলে এ ইংরেজি ক্লাস চালু করার জন্য তিনি প্রায় তার সব সঞ্চয় ব্যবহার করেন। ২০১২ সালে জনাব ইয়ে উচিয়াং উপজেলার সরকার ও পুছেন গ্রামের স্কুলের যৌথ উদ্যোগে মোট ৬০ হাজার ইউয়ান সংগ্রহ করেন, যা স্থানীয় বৃত্তি হিসেবে বাচ্চাদের দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ১৩০ জনেরও বেশি বাচ্চাকে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে, যার পরিমাণ লক্ষাধিক ইউয়ান।

জনাব ইয়ে'র সন্তান নেই, তিনি স্ত্রীর সাথে দরিদ্র জীবনযাপন কাটান এবং ৩০ বছর আগে নির্মিত পুরনো বাড়িতে থাকেন। তবে এ বাড়িটিকে বাচ্চাদের আশ্রয়স্থলও বলা চলে। যেসব বাচ্চাদের নিজেদের বাসা স্কুল থেকে অনেক দূরে, তারা জনাব ইয়ে'র বাসায় থাকে এবং বিনাখরচে তাদের বাসস্থান ও খাবারদাবারের সব ব্যবস্থা করেন তিনি। যদিও বাচ্চাদের জীবনযাপনের ভালো যত্ন নেন তিনি, তবে তিনি নিজের ক্ষেত্রে একেবারে মিতব্যয়ী। বাইরে যাওয়ার সময় তিনি নিজের জন্য এক বোতল পানিও কেনেন না।

জনাব ইয়ে'র বাসার পাশে ক্লাসরুমের টেবিলে এক ধাতব পাত্র রাখা। তার ভিতরে ছোট ছোট টুকরা। তিনি কখনো এই টুকরা ফেলে দেন না। শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, শিক্ষাদান যেন বীজ বপনের মতো, ছাত্রছাত্রীদের সাফল্য হলো শিক্ষকদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

২০১৮ সালের গ্রীষ্মকালে জনাব ইয়ে সাইকেল চালিয়ে সবজি কেনার পথে হঠাত্ পড়ে গিয়ে আঘাত পান। হাসপাতালে চিকিত্সার ৪ দিন পর তিনি ক্লাসরুমে ফিরে যান। অসুস্থ শরীর নিয়েও বাচ্চাদের পড়ান তিনি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জনাব ইয়ে'র গল্প ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। তিনি অনেক পুরস্কার ও প্রশংসাও পান। ক্লাসরুমের দেওয়ালে বড় অক্ষরে 'গ্রামের উজ্জ্বল মোমবাতির আলো' লিখে রাখা হয়েছে। প্রতি শীতকালীন বা গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে চীনের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে স্নাতকরা ইন্টার্নশিপ শিক্ষক হিসেবে জনাব ইয়েকে সহায়তা করেন। তারা স্থানীয় অঞ্চলের বাচ্চাদের ইংরেজি, চীনা ভাষা ও গণিত পড়ান।

জনাব ইয়ে বলেন, তার সবচেয়ে অভাবের জিনিস হলো সময়। সময়ের সাথে প্রতিযোগিতা করে প্রতিদিন ৫ ঘন্টার মতো ক্লাস নেন তিনি। ক্লাস শেষ করে তিনি বাচ্চাদের জন্য পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন।

নিজের ব্যস্ত জীবন সম্পর্কে জনাব ইয়ে বলেন, আজ আমি সবার সাথে কথা বলছি, কাল খুব সম্ভবত আর কথা বলার সুযোগ নাও পেতে পারি। আমার জন্য আর কত দিন বাকি আছে আমি ঠিক তাও জানি না। তাই সর্বোচ্চ সময় ও শক্তি দিয়ে বাচ্চাদের শিক্ষাদান করি। আমি যেন এক জোনাকির মতো, আস্তে আস্তে আলো ছড়িয়ে ধীরে ধীরে বিলীন হবো। আমি আশা করি, জীবনের শেষ মুহূর্ত ক্লাসরুমের টেবিলের সামনে কাটাবো। যতদিন বেঁচে আছি শিক্ষাদানে আমি আমার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো। মৃত্যুর পর আমার লাশ চিকিত্সা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে প্রদান করবো।


1  2  
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040