রোববারের আলাপন-191006
  2019-10-06 15:08:52  cri

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন 'রোববারের আলাপন'। আপনাদের সঙ্গে আছি এনামুল হক টুটুল এবং শিয়েনান আকাশ।

টুটুল: চাং চিয়ান কুও ১৯৮৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হচ্ছেন চীনের উ সি শহরের একজন স্বাস্থ্য ও মহামারী প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ। তার পরিবারের প্রবীণ সদস্যরা তাকে নাম দিয়েছেন 'চিয়ান কুও', এর অর্থ 'দেশ নির্মাণ করা'। পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের প্রত্যাশা অনেক পরিষ্কার। তারা আশা করেন, তিনি দেশ নির্মাণের জন্য নিজের অবদান রাখবেন। এ বছর চাং চিয়ান কুও বাংলাদেশে যান। বাংলাদেশে বসবাসকারী চীনাদের স্বাস্থ্য ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ সাহায্য করেন তিনি।

এ বছরের বর্ষা ঋতুতে বাংলাদেশে মারাত্মকভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রায় ১০ বছর ধরে চাকরি করছেন ম্যাডাম চৌ মিং টোং। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের চীনা পরিচালক। তিনি গত বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। এ রোগে তার শরীর অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে তিনি বলেন,

রুবি: ডেঙ্গু শরীরের জন্য অনেক ক্ষতি বয়ে আনে। এজন্য এ রোগের প্রতিরোধ হচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বাংলাদেশে তার প্রতিরোধের ব্যবস্থা কার্যকর। তাতে রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে এখন কাজ হচ্ছে। দেখা যায় যে, ঢাকায় প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় মশক নিধন ওষুধ স্প্রে করা হয়। কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের সদরদপ্তরও আমাদেরকে অনেক মনে রাখে, বিশেষ করে আমাদেরকে মশা নিরোধক মেইল করেছে।

টুটুল:প্রবাসী চীনাদের সুস্থতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছু কিছু মশা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।তারা সংশ্লিষ্ট মহামারি প্রতিরোধে কাজ করেন এবং প্রবাসী চীনাদের সংশ্লিষ্ট রোগ প্রতিরোধের তথ্য জানান। ডেঙ্গু প্রতিরোধের বিশেষজ্ঞ হিসেবে, চাং চিয়ান কুও ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ঢাকায় পৌঁছান। সে সময় তার কাজ নিয়ে তিনি বলেন,

আকাশ: এবারে আমরা প্রায় দশ দিন ঢাকায় থাকবো। আমরা বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা দূতাবাসের ভেতরে ও আশেপাশে মশা নিধনে কাজ করবো, যাতে মশার আধিক্য কমে যাবে এবং ডেঙ্গু আক্রান্তের সম্ভাবনাও কমে যাবে।

টুটুল:চিয়াং চিয়ান কুওকে মহামারি প্রতিরোধের একজন অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ হিসেবে মাঝে মাঝে বিদেশে পাঠানো হয়। তিনি আফ্রিকা ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দশটিরও বেশি দেশে গিয়ে মশা বিস্তার প্রতিরোধে কাজ করেছেন। তার স্মৃতিতে সবচেয়ে মারাত্মকভাবে একবার মশা বিস্তার ঘটে আফ্রিকান দেশ নিজারে। তিনি বলেন,

আকাশ: নিজারে অবস্থিত চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশে অনেক পানি আছে, এজন্য মশার আধিক্য অনেক। মানুষ বাইরে যেতে ভয় পায়। আমাদের দিক-নির্দেশনায় সবার প্রচেষ্টায় এক মাস পর মশার আধিক্য ৮০ শতাংশ কমে যায়। তখন একসাথে কাজ করা আফ্রিকান অংশীদার অনেক মুগ্ধ হয়ে যায়। তারা তখন এসব বিষয়ে শিখতে ও উন্নতি করার জন্য চীনে আসার আশা প্রকাশ করেন।

টুটুল:কাজের জন্য তাকে মাঝে মাঝে অনেক বিপজ্জনক জায়গায় যেত হয়। ২০১৭ সালে তিনি দক্ষিণ সুদান যান। তিনি বলেন,

আকাশ: "তখন দক্ষিণ সুদান যুদ্ধের অবস্থায়। চীনা পুঁজি বিনিয়োগকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে মাঝে মাঝে বন্দুক ও কামানের আওয়াজ শোনা যায়। প্রথমে আমি অনেক ভয় পাই, তারপর আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যাই। আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, বাইরে ১০০ মিটারের মধ্যে লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। লাশের আশেপাশে লোকজন পণ্যদ্রব্য বিক্রি করছে। তার কাছাকাছি বাসিন্দাদের বাসাও রয়েছে। এ ধরনের পরিবেশে খুব সহজেই মহামারি ঘটার সম্ভাবনা থাকে।"

টুটুল: প্রবাসে কাজ করার শর্ত অনেক কড়া। চিয়াং চিয়ান কুও'র কাজ করা গবেষণা ইনস্টিটিউটের নেতারা তাদের জন্য বিশেষ যত্ন নিয়ে থাকেন। তার গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান চাও সিয়ান মেই বলেন,

আকাশ: আমরা বিদেশে নিযুক্ত আমাদের সহকর্মীদের নিরাপত্তা ও সুস্থতার উপর উচ্চ গুরুত্ব দেই। তাদের জন্য বিশেষ নিশ্চিত ব্যবস্থা ও নীতি আছে। যাতে তারা দুশ্চিন্তা না করে এবং মন দিয়ে কাজ করতে পারে।

টুটুল:প্রবাসে কাজ করার এ কয়েক বছরে, চিয়াং চিয়ান কুও এ চাকরি ত্যাগ করে মহামারি থেকে দূরে থাকার চিন্তা করেছেন। কিন্তু সেখানে বসবাসরত প্রবাসী চীনা ও স্থানীয় জনগণের মহামারিতে আক্রান্ত হওয়ার কষ্ট দেখে তিনি মহামারি থেকে দূরে থাকার চিন্তা ত্যাগ করেন। তিনি তাদের বসবাসের পরিবেশের উন্নতিতে কিছু অবদান রাখতে চান। একথা ভেবে তিনি মনকে অনেক শক্ত করেন। প্রবাসে কাজ করার এ কয়েক বছরে তিনিও দেখেছেন, কিছু কিছু দেশে, জনগণের প্রাণও অনেক বিপদের মধ্যে আছে। তার কোনো গ্যারান্টি নেই। মাতৃভূমি শক্তিশালী না হলে জনগণের সুখী জীবনও নিশ্চিত হবে না। এজন্য চিয়াং চিয়ান কুও চীনদেশের জন্য অনেক গৌরব বোধ করেন। তিনি বলেন,

আকাশ: "নয়াচীনের ৭০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আন্তরিকভাবে আমাদের মহান মাতৃভূমির আরো সমৃদ্ধি কামনা করি। দেশের সব জনগণের সুখ ও শান্তি কামনা করি। প্রবাসী চীনাদের সুস্থ, সুন্দর জীবন কামনা করি।"

সংগীত

আকাশ:বন্ধুরা, পয়লা অক্টোবর হচ্ছে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী। এ বিশেষ দিন উপলক্ষে আমরা বর্তমানে দু'জন বেইজিংবাসীর গল্প শুনবো।

টুটুল: তাই না কি? তাদের বয়স কত?

আকাশ: তাদের একজনের অর্থাত্ জনাব মা চংয়ের বয়স ৭৫ পঁচাত্তর, আরেকজনের অর্থাত্ ম্যাডাম চাংয়ের বয়স ৭০ বছর। তারা দু'জন স্বামী-স্ত্রী।

টুটুল: তাইনা কি? তাহলে তাদের বয়স নয়াচীনের প্রায় সমান।

আকাশ: হুম, তাই। আসলে আমরা তাদের গল্পের মাধ্যমে চীনের ৭০ বছরের পরিবর্তন দেখতে পাবো। চলুন আমরা একসাথে তাদের গল্প শুনি, কেমন?

সংগীত

টুটুল: জনাব মা চং চীনের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের কান সু প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যখন হাই স্কুলে পড়েন তখন তিনি চিকিত্সক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। হাই স্কুল পাস করার পর তিনি লান চৌ চাইনিজ মেডিসিন কলেজে ভর্তি হন। তারপর সেখান থেকে ডিপ্লোমা অর্জনের পর তিনি চীনা মেডিসিন চিকিত্সক হন।

১৯৭৩ সালে চীনের ক্যাপিটাল স্টিল অ্যান্ড আয়রন ফ্যাক্টরি নির্মাণে

সহায়তা দেয়ার জন্য তিনি ক্যাপিটাল স্টিল অ্যান্ড আয়রন ফ্যাক্টরির হাসপাতালে এসে চীনা মেডিসিন চিকিত্সকের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। চীনের ৭০ বছরের পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি সাংবাদিকদের কাছে তার অনুভূতি শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন,

(০২:১০)আকাশ: আমার অনুভূতি হচ্ছে এখনকার জীবন আগের চেয়ে ভীষণ পরিবর্তনশীল হয়েছে। এখন আমি অনেক সুখী বোধ করি। যখন হাই স্কুলে পড়ি তখন আমার জীবন ছিলো অনেক কঠিন, কিন্তু এখন জীবনের সুখ দিন দিন বাড়ছে।

টুটুল: সাংবাদিক জিজ্ঞাস করেন, জীবনের পরিবর্তনের কিছু বিস্তারিত অবস্থা আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন? জনাব মা বলেন,

(৪:৫২)আকাশ: ডিপ্লোমা অর্জনের পর যখন প্রথম কাজ করি, তখন প্রতিমাসে আমার বেতন ছিলো ৪২ বিয়াল্লিশ ইউয়ান। এখন কত? তখনের চেয়ে ১০০ গুনেরও বেশি। এখন প্রায় ৬০০০ ইউয়ান। তখন আমি প্রায় দু'মাসের বেতন খরচ করে একটি 'সাংহাই' ব্র্যান্ডের ঘড়ি কিনি এবং তিন মাসের বেতন খরচ করে একটি 'ফ্লাইং পিজন' ব্র্যান্ডের সাইকেল কিনি। সাইকেল কেনার সময় সারা হাসপাতালের সহকর্মীদের মাত্র একটি সাইকেল কেনার সুযোগ আছে। আমি টসের মাধ্যমে এ সাইকেল কেনার সুযোগ পেয়েছি। কেনার সময় আমার যথেষ্ট টাকাও ছিলো না। আমি অন্যের কাছ থেকে ৫০ ইউয়ান ধার করি। এখন আমার ধারণা, আমার একমাসের বেতন দিয়ে আমি কমপক্ষে ২০টিরও বেশি সাইকেল কিনতে পারবো, ভালো ঘড়ি কয়েক ডজন কিনতে পারবো। আমাদের দেশের উন্নতির গতি আসলে অনেক দ্রুত।

০৭:২০টুটুল: জনাব মা ইতোমধ্যে অবসর নিয়েছেন, কিন্তু তিনি এখনও রোগীদের চিকিত্সা করেন। প্রতি সপ্তাহে তিন দিন হাসপাতালে গিয়ে তিনি প্রায় ৪০জন রোগী দেখেন। তিনি প্রতিদিন চীনা মেডিসিনের বই পড়েন এবং এখনো চীনা মেডিসিন নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি চীনের হাসপাতাল ও চিকিত্সা খাতের পরিবর্তন নিয়ে বলেন,

আকাশ:(৭:৪‌১) এখন আসলে আগের সাথে তুলনা করা যায় না। এখন আমরা বলতে পারি যে, চীনের মেডিকেল মান এখন বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর। চীনের মেডিকেল ইনস্যুরেন্সের পরিমাণ এখন অনেক বেশি। অর্থাত্ ইনস্যুরেন্স থেকে অনেক সহায়তা পাওয়া যায় । এজন্য এখন অনেক বয়স্ক নাগরিকদের রোগ সুষ্ঠুভাবে চিকিত্সা করা সম্ভব। এজন্য চীনাদের আয়ু এখন অনেক বেড়েছে। 'রোগের কারণে গরীব হওয়া' এখন অনেক কম। কারণ দেশের নীতি ও ব্যবস্থা এ অবস্থাকে দূর করা নিশ্চিত করেছে। এখন লোকজন অবসর নেয়ার পর তাদের চিন্তাও অনেক কমেছে।

টুটুল: সাংবাদিক আরো জিজ্ঞাস করেন: এখন রোগীদেরকে চিকিত্সা দেয়ার সময় পদ্ধতি বা যন্ত্রপাতি ইত্যাদি আগের চেয়ে কেমন? তিনি বলেন,

আকাশ: এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। রক্ত পরীক্ষা যেমন ধরুন, আগে ৭ বা ৮ টিউব রক্ত দরকার হতো, এখন মাত্র একটি টিউব রক্ত যথেষ্ট। আগে কার্ডিয়াক ইনফ্র্যাকশন, সেরিব্রাল ইনফ্র্যাকশন এ ধরনের রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি ছিলো, এখন অনেক আধুনিক পরীক্ষা বা চিকিত্সা পদ্ধতি আছে। এখন যদি আগেই এ রোগ আবিষ্কার করা যায়, তাহলে সুষ্ঠু চিকিত্সা প্রদান করা সম্ভব, তাহলে মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক কম। হয়তো আগে আমরা মাত্র এক্স-রে ব্যবহার করতাম। এখন আমাদের অনেক আধুনিক মেডিকেল যন্ত্রপাতি আছে। পারমাণবিক ম্যাগনেটিক অনুরণন, করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি ইত্যাদি অনেক রোগ পরীক্ষার আধুনিক পদ্ধতি বা যন্ত্রপাতি এখন আমরা ব্যবহার করি। এখন আমরা আধুনিক পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে অনেক আগেভাগেই টিউমার আবিষ্কার করতে পারি। এ কারণে এখন দেশের লোকজনের জীবনের আয়ু বেড়েছে, কারণ এখন আমাদের চিকিত্সা পদ্ধতির মান উন্নত হয়েছে।

টুটুল: সাংবাদিক জনাব মা কে জিজ্ঞাস করেন, আপনার শখ কি কি?

তিনি বলেন,

আকাশ: আমি ফটোগ্রাফি পছন্দ করি। এ ছাড়া সব ধরনের খেলাধুলার প্রতিযোগিতার টিভি অনুষ্ঠান দেখতে আমার অনেক ভালো লাগে। বাস্কেটবল, ফুটবল, পিংপং, ব্যাডমিন্টন সব খেলাধুলার প্রতিযোগিতা আমি দেখি।

টুটুল: এ খাতে ৭০ বছরের পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি বলেন, আগে আমার টেলিভিশন ছিলো খুবই ছোট একটি সাদা-কালো টেলিভিশন, এখন আমাদের এলইডি টিভি অনেক বড়, যা আমাকে খেলাধুলা উপভোগের জন্য অনেক সুবিধা দেয়। এ ছাড়া, এখনকার টিভি অনুষ্ঠান সব ডিজিটাল, যদি লাইভ অনুষ্ঠান দেখতে না পারি তাহলে হয়তো পরে দেখতে পারবো, তা আমাকে অনেক সুবিধা দিয়েছে। আগের টিভি হলো সাদা-কালো এবং তখন লাইভ দেখতে না পারলে আর কখনো দেখতে পারতাম না।

ফটোগ্রাফির দিক নিয়ে তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের দিকে তখন তিনি একটি ক্যানন ক্যামেরা কেনেন, প্রায় ৬ মাসের বেতন দিয়ে। কিন্তু বর্তমানের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন,

আকাশ: (১৫:৩৪) একটি ভালো মোবাইল দিয়ে সব করা যায়,এখন

ক্যামেরা আর দরকার হয় না, পেন ড্রাইভের মাধ্যমে ইচ্ছা মতো ডিভেলপ করা যাবে। সব ছবি কম্পিউটার বা মোবাইলে দেখতে পারবে, ডিভেলপ করা লাগবে না, আগের পুরানো ছবিও ডিজিটাল ছবিতে পরিণত করা যায়। আগে এসব অসম্ভব ছিলো। সব ডিভেলপ করতে হবে। নইলে কি ভাবে দেখতে পারবো?

টুটুল: জনাব মা চীনের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল থেকে এসেছেন। তার জন্মস্থানের গরুর মাংসের নুডলস চীনে অনেক বিখ্যাত ও জনপ্রিয়। খাবারের দিকে তিনি বলেন,

আকাশ:(১৭:৫৯) বেইজিংয়ে এখন আমার জন্মস্থানের খাবার, যেমন গরুর মাংসের নুডলস, সব ধরনের সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। আমরা এখন মাত্র ফার্স্ট ক্লাস মাংস খাই, এখন আমরা ফ্যাট মাংস খাই না। জীবন এখন অনেক সমৃদ্ধ, যে ধরনের মাংস খেতে চাই, তা ইচ্ছা মতো খেতে পারবো।

টুটল: সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞাস করেন, আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? তিনি উত্তর দেন,

আকাশ:এখন আমার বয়স ৭৫ পঁচাত্তর বছর, আমি আরো সুষ্ঠুভাবে রোগীদের চিকিত্সা দেওয়ার চেষ্টা করি। প্রত্যেক রোগীকে চিকিত্সা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি তাদেরকে কিভাবে রোগ প্রতিরোধ করা যায়, কিভাবে আরো সুস্থ থাকা যায় তা নিয়ে অনেক জ্ঞান তাদের সাথে শেয়ার করি।

টুটুল: ম্যাডাম চাং হচ্ছেন জনাব মা'র স্ত্রী। তিনিও তার স্বামীর সাথে একই হাসপাতালে চাকরি করতেন। এখন তিনি চাকরি থেকে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। তার বয়স ৭০ বছর, অর্থাত তিনি নয়াচীনের একই বছরে জন্মগ্রহণ করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

আকাশ: আমি দেশের সাক্ষী। কিছু কিছু সময় আমি ভাবি, এ ৭০ বছরে মাতৃভূমির উন্নয়নের প্রক্রিয়া ও আমার নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমি একটি বই লিখবো। বেইজিংয়ের গ্রামাঞ্চলে আমার জন্ম। দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের নির্মাণে সহায়তা দেয়ার জন্য আমার পরিবারের সব সদস্য ওখানে গিয়েছিল। এ ৭০ বছরে সত্যি অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

টুটুল: হাসপাতাল থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি তার বসবাসরত কমিউনিটিতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অনেক কাজ ও সেবা করেছেন। কমিউনিটির সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ক্ষেত্রের পরিবর্তন নিয়ে তিনি বলেন,

আকাশ: কমিউনিটির সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আগের চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে। ছোটবেলা থেকে আমি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পছন্দ করি। এজন্য স্কুলে বা হাসপাতালেও আমি মাঝে মাঝে এ ধরণের কার্যক্রমে অংশ নেই। কিন্তু আগেকার বসবাসরত কমিউনিটিতে এত ভালো সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ছিলোনা। এখন গ্রন্থাগার, পিং পিংসহ খেলাধুলার কক্ষ আমাদের কমিউনিটিতে আছে। পাশাপাশি Intangible Cultural Heritage ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ সম্পর্কে লেকচারও প্রদান করা হয় কমিউনিটির বাসিন্দাদের।

টুটুল: কমিউনিটিতে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি আরো জানান, এখন নাচ, গান গাওয়া, পেইন্টিং, ক্যালিগ্রাফি, কুংফু অর্থাত থাই চি ছুয়ান মার্শাল আর্টস চর্চা ও শেখানোসহ বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আয়োজন করা হয় কমিউনিটিতে। বাসিন্দারা ইচ্ছা মতো তার পছন্দের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে।

তিনি আরো জানান, ২০০৯ সালে বেইজিংয়ের বার্ড নেস্ট স্টেডিয়ামে তিনিসহ মোট বিশ হাজারের বেশি বেইজিংবাসী একসাথে থাই চি ছুয়ান মার্শাল আর্টস চর্চা করেন এবং প্রদর্শন করেন। তা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি লোকের একসাথে থাই চি ছুয়ান মার্শাল আর্টস চর্চা করার রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

তিনি আরো জানান, এ ছাড়া মাঝে মাঝে স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা কমিউনিটিতে আবর্জনা তোলা, কমিউনিটি পরিষ্কার করা ও রোগীদের দেখা এ ধরনের কার্যক্রমও আয়োজন করা হয় কমিউনিটিতে। তিনি আরো বলেন,

আকাশ: আমরা কমিউনিটির বাসিন্দাদের বিনা পয়সায় চুল কাটার সেবাও প্রদান করি।

টুটুল: ৭০ বছরের পরিবর্তন নিয়ে তিনি বলেন,আপনি দেখেন,আমাদের বাসা বাড়ি, বিয়ে করার পর মোট ৫ বার পরিবর্তন হয়েছে। একটা পর একটা বড় বাসা হয়েছে। আমার মেয়েদেরও বিয়ে হওয়ার পর সবার একটা অ্যাপার্টমেন্ট আছে।

নিজেদের মেয়েদের সম্পর্কে তিনি জানান, একজন মেয়ে বেইজিং ফরেন স্টাডিজ ইউনিভার্সিটিতে বিদেশিদেরকে চীনা ভাষা শিখাচ্ছেন। আরেকজন গৃহিনী।তিনি বলেন, মেয়েদের অবস্থাও অনেক ভালো, জীবনযাপন নিয়ে তিনি এবং তার স্বামী অনেক খুশি।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, কমিউনিটিতে তারা যে সেবা প্রদান করেন, তা অন্যদেরকে সুবিধা দেয় এবং এতে তিনি নিজেও আনন্দ পান, তিনি ভবিষ্যতে অব্যাহতভাবে এ কাজ করে যাবেন।

আকাশ: ভাই, তাদের গল্প শুনে কেমন লাগছে?

টুটুল:..

আকাশ: বন্ধুরা, জনাব মা এবং ম্যাডাম চাংয়ের বয়স প্রায় নয়াচীনের সমান। তাদের গল্প আসলে দেশের গল্প। আমরা কামনা করি চীন আরো উন্নয়ন, আরো উন্মুক্তকরণ, আরো সুখী ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে, দেশের জনগণের জীবনমান আরো উন্নত হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে চীন বিশ্বের উন্নয়নের জন্য আরো ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের আশাবাদ।

আকাশ: অনুষ্ঠান শেষে, একটি চীনা গান উপহার হিসেবে সবাইকে শেয়ার করবো, কেমন? গানটির নাম হচ্ছে 'আমি এবং আমার মাতৃভূমি'।

টুটুল: গানটির কথা প্রায় এমন,

আমি এবং আমার মাতৃভূমি,

এক মুহূর্তের জন্যও পৃথক করা যাবে না।

আমি যেখানেই যাই

আমি প্রশংসার গান গাই।

প্রতিটি পাহাড়ের জন্য আমি গান গাই

প্রতিটি নদীর জন্য আমি গান গাই,

ছোট ছোট গ্রাম,

সুন্দর দৃশ্য।

আমার সবচেয়ে আপন মাতৃভূমি,

সবসময় আমার মনে পড়ে।

আমার মাতৃভূমি এবং আমি,

সাগর ও সাগরের একটি ঢেউয়ের মতো।

ঢেউ হচ্ছে সাগরের ছেলে,

সাগর হচ্ছে ঢেউয়ের সমর্থন

আমি সাগরের দুশ্চিন্তা গ্রহণ করি,

আমি সাগরের আনন্দ শেয়ার করি।

আমার সবচেয়ে প্রিয় (আপন) মাতৃভূমি,

তুমি হচ্ছো সীমানাহীন সাগর,

সবসময় আমাকে সবকিছুই দাও।

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040