ইরানি চিকিত্সকরা: চীন সত্তর বছর ধরে উন্নতি লাভ করছে
  2019-10-08 15:41:00  cri

ইরানের দুই জন চিকিত্সক ভাই রয়েছেন। তারা চীনে পড়াশোনা করেছেন, তাদের চীনা ভাষা বেশ সাবলীল। দুই ভাই ১৯৮০-এর দশকে চীনের চিকিত্সা বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য এসেছিলেন এবং তারা চীনের সংস্কার ও উন্মক্তকরণের গভীরতার সাক্ষী। একই সঙ্গে ইরানি চাইনিজ ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হিসাবে তারা ক্রমাগত চীনের সঙ্গে তাদের আলাপচারিতায় চীন সম্পর্কে তাদের জ্ঞান-গবেষণা আপডেট করে চলেছেন।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দশম চীন-ইরান ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলনে সিআরআই'র প্রতিবেদক এই দুই ভাইকে দেখছিলেন। বড় ভাই, মেহেদি নাদি ৫৫ বছর বয়সী এবং তিনি একজন ইউরোলজিস্ট সারজন। তিনি ইরান-চীন ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমিটির পরিচালক। প্রায় চল্লিশ বছর আগে, মেহেদী নাদি ইরানের সরকারি বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র হিসাবে চীনে আসেন। তিনি প্রথমে 'বেইজিং ভাষা ও সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ে' চীনা ভাষা অধ্যয়ন করেন এবং পরে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অফ মেডিসিনে সাধারণ মেডিসিন পড়তে যান। ছয় বছর পর, তিনি আরও অধ্যয়ন এবং ইন্টার্নশিপের জন্য পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগে যোগ দেন। তিনি তখন চীন থেকে মেডিসিন বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য আসার কথা বলেন,

"আমি যখন বিদেশে পড়াশোনা করার জন্য পরীক্ষা দেই, তখন অনেকগুলো দেশ নির্বাচনের সুযোগ পাই। ইরান ও চীন উভয়ই পূর্ব দিকের দেশ এবং তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। দু'দেশের সমৃদ্ধ রীতিনীতি ও সংস্কৃতি রয়েছে। সুতরাং, আমি চীনে এসে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেই। আমাকে অনেক কিছু শেখার এবং একটি দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য আমি চীনা জনগণ এবং চীন সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।"

মেহেদী নাদির প্রভাবে তার ভাই হামিদ নাদিও বড় ভাইকে অনুসরণ করে চীনে চলে আসেন। দুই ভাইয়ের লেখাপড়ার পদ্ধতি প্রায় একই। পার্থক্য হল ছোট ভাই চক্ষুবিজ্ঞান বিষয়টি বেছে নেন।

"আমার ভাই মেহেদী নাদি আমার চীন আসার অনুপ্রেরণা। তিনি আমাকে চীনে পড়াশোনা করতে উত্সাহিত করেছিলেন, তাই আমি তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চীনে চলে এসেছি। আমি প্রথমে বেইজিং ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটে চীনা ভাষা অধ্যয়ন করি। ১৯৯০ সালে আমি বেইজিং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। আট বছর পরে আমি চক্ষুবিজ্ঞানের সনদ অর্জন করি। সে বছর আমি যুক্তরাষ্ট্রে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাই, যেখানে আমি আমার পিএইচডি এবং পোস্টডক্টোরাল ডিগ্রি লাভ করি।"

তার ভাই মেহেদী নাদি ইরানে ফিরে আসার পরে তিনি চীন সম্পর্কে পরোক্ষভাবে কিছু জানতেন। ২০১৪ সালে, যখন তিনি আবারও চীনে পা রাখেন; তখন চীনের পরিবর্তনটি তার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। তিনি বলেন,

"রাস্তাগুলি আরও নতুন হয়ে উঠেছে, গাড়ির সংখ্যা আরও বেড়েছে, মানুষের অবস্থা পরিবর্তন হয়েছে এবং পোশাকও ফ্যাশনেবল হয়ে উঠেছে। চীনা জনগণের অনেক উন্নতি হয়েছে, যা আমাকে খুব খুশি করে। শহুরে প্যাটার্নেও অনেক পরিবর্তন হয়েছে।"

নাদি ভাই চীনের উন্নয়নের সাফল্যের প্রশংসা করেন। ভাই মেহেদী নাদি বলেন,

"বর্তমানে চীনের দরিদ্রতার হার অনেক কমেছে। মানুষের বস্তুগত জীবনযাত্রার মান খুব ভালো এবং চীন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য গর্ব হয়ে উঠেছে। বিগত ৭০ বছরে, চীন অগ্রগতি সাধন করেছে, বিজ্ঞান অনুসরণ করছে এবং উত্পাদন ও বিকাশের দিকে এগিয়ে চলেছে। তারা তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছিল এবং খুব সফল হয়েছিল। আমি চীনকে এ বিষয়ে অভিনন্দন জানাই!"

ছোট ভাই হামিদ নাদি বলেন যে, চীনে অধ্যয়ন তার ভ্রমণ তাকে কেবল জ্ঞান ও বন্ধুত্ব অর্জন করতেই দেয়নি, তবে ভাগ্যক্রমে চীন সংস্কারের দ্রুত বিকাশ এবং বিগত ৪০ বছরে তা প্রত্যক্ষও করেছেন।

তিনি বলেন,

"প্রথম দশ বছরে, যখন আমার ভাই চীনে পড়াশোনা করত, তখন চীন সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ শুরু করেছিল। দ্বিতীয় দশকে চীনে আমার নিজস্ব গবেষণা ও কাজের দশ বছর পূর্ণ হয়। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের ফলাফল ধীরে ধীরে দেখা দেয়। তৃতীয় ও চতুর্থ দশকে চীনে উন্নয়ন ও বিকাশের বিস্ফোরণ হয়। এ পরিবর্তন বেশ নাটকীয়! এই সময়ের মধ্য ২০০৮ সালের অলিম্পিক গেমস আয়োজনের মতো চীনে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটেছে। এ বছর গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী। আমি ৭০তম বার্ষিকীতে চীনকে অভিনন্দন জানাতে এসেছি!"

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040