আছাং জাতি
  2019-10-09 10:17:42  cri

আছাং জাতি কেবল ইয়ুননান প্রদেশে বাস করা ৭টি সংখ্যালঘু জাতির অন্যতম। এ জাতির লোকসংখ্যা ৩০ হাজারের কিছু বেশি। তারা মূলত ইয়ুননান প্রদেশের তাই ও চিংপো জাতি স্বায়ত্তশাসিত এলাকার হু সা, নাং সং, চিউ পাও নামক তিনটি উপজেলায় বাস করে। মিয়ামারেও কিছু আছাং জাতির মানুষ আছে।

প্রাচীন চীনা গ্রন্থে আছাং জাতির নাম উল্লেখ আছে 'এ্য ছাং'। তারা নিজেদের মেং সা, তাই সা, ছেন সাসহ নানা নামে ডাকতো। ১৯৫৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকার, এ জাতির মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী, জাতির নামকরণ করে 'আছাং'।

আছাং জাতির মৌখিক ভাষা আছে, কিন্তু কোনো লিখিত ভাষা নেই। এই জাতির আঞ্চলিক ভাষা দু'রকমের। তারা দীর্ঘসময় হান ও তাই জাতির সঙ্গে বাস করে বলে এ দুটি জাতির ভাষা যেমন বলতে পারে তেমন লিখতে পারে।

আছাং জাতির মানুষ মূলত কৃষিকাজ করে। তারা ধান চাষ করে। ধানের চাষ ও ফসল তোলার সময় পরস্পরকে সহায়তা দেয়া তাদের একটি ঐতিহ্য। বন্ধু ও প্রতিবেশীরা পরস্পরকে সহায়তা দেয়। ফসল তোলা সময়, প্রথমদিনে খাওয়ার সময় প্রথমে কুকুরকে খাবার দিতে হয়। কারণ, তারা বিশ্বাস করে কুকুর প্রথমে খাদ্যের বীজ তাদের কাছে নিয়ে আসে।

আছাং জাতির মানুষ গান গাইতে পছন্দ করে। ক্ষেতে বা পাহাড়ে, যে-কোনো সময় তারা গান গাইতে পারে। গান গাইতে গাইতে পথে অপরিচিত মানুষ দেখে যদি একে অপরকে পছন্দ করে, তবে তারা ঘন্টার পর ঘন্টা গান গাইতে থাকে। শিকার বা মাছ ধরার পর তারা বয়স নির্বিশেষে সবকিছু সমানভাবে ভাগ করে নেয়।

আছাং জাতির মানুষ ভাত খায় এবং টক স্বাদের খাবার খেতে পছন্দ করে। তারা মদ্যপান করে। বিবাহিত নারীরা সুপারি খায়। সুপারি খেলে দাঁত কালো হয়ে যায় এবং তারা মনে করে, এটা দেখতে সুন্দর।

আছাং অতিথিপরায়ণ জাতি। কোন অতিথি বাসায় আসলে তারা সবকিছু বের করে আপ্যায়ন করে। যদি অতিথি অনেক দূর থেকে আসে, তাহলে তারা গ্রামের প্রবেশপথে তাদের নিজেদের তৈরি মদ দিয়ে স্বাগত জানায়। তারা বন্ধু, স্বজন বা প্রতিবেশির সঙ্গে মাঝে মাঝে যোগাযোগ করে এবং পরস্পরকে সাহায্য করে।

বিভিন্ন জায়গার আছাং জাতির মানুষ ভিন্ন উত্সব পালন করে। যেমন, হু সা উপজেলায় বাসকারী আছাং জাতির মানুষ সবচেয়ে বেশি উত্সব পালন করে। তারা নববর্ষ, মশাল উত্সব, পানি বিচ্ছুরণ উত্সবসহ নানা উত্সব পালন করে।

আছাং জাতির সবচেয়ে মনোজ্ঞ উত্সব 'আলুওলুও'। লিয়াং হ্য এলাকার আছাং জাতির মানুষ ওলুও নামের একটি উত্সব পালন করত। চেভামি ও চেমিমা নামের দুজন মানুষের পূর্বপুরুষ হিসেবে পূজা করত তারা। অন্যদিকে, লং চুয়ান এলাকার আছাং জাতির মানুষ Theravada Buddhism –এ বিশ্বাস করে বলে 'হুই চে' নামের একটি উত্সব পালন করত। এ দুটি উত্সব মিলে তারা 'আলুওলুও' নামের নতুন একটি উত্সব সৃষ্টি করে। ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতিবছরের ২০-২১ মার্চ তারা এ উত্সব পালন করে। বিভিন্ন জায়গার আছাং মানুষ এ উত্সব পালন করে।

আছাং জাতির মানুষের র্ধমীয় বিশ্বাস নানা রকমের। লিয়াং হ্য, লং লিং এলাকার আছাং মানুষ হান জাতির প্রভাবে আদিম ধর্ম বিশ্বাস করে। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রকৃতির সবকিছুর নিজের আত্মা আছে। অন্যদিকে লং ছুয়ান ও হু সা এলাকার আছাং মানুষ তাই জাতির প্রভাবে Theravada Buddhism বিশ্বাস করে। (শিশির/আলিম)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040