আট মাসে চীনের উন্নয়ন ব্যাংক দারিদ্র্যবিমোচন খাতে ১৪,২৯০ কোটি ইউয়ান ঋণ দিয়েছে(অর্থ-কড়ি; ১২ অক্টোবর ২০১৯)
  2019-10-12 17:08:51  cri

১. সদ্যসমাপ্ত জাতীয় দিবসের ছুটিতে চীনের বেশ কয়েকটি ভোগ্যসূচক ইতিহাসের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ১ থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত চীনের খুচরা বিক্রি ও বিভিন্ন রেস্তোরাঁর আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৫ শতাংশ বেশি ছিল। এসময় দেশের পর্যটন খাতে আয় ছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৪৭ শতাংশ বেশি। এসব সূচক প্রমাণ করে যে, অনিশ্চিত উপাদান বাড়লেও, ভোগ বৃদ্ধি চীনের অর্থনীতির উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তিতে পরিণত হচ্ছে।

চীনের ভোগ্যবাজারের টেকসই উন্নতি ঘটছে। এর মূল কারণ, নাগরিকদের ভোগের সামর্থ্য ও আগ্রহ বাড়ছে এবং শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য ও সেবার মান দিন দিন উন্নততর হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনের নাগরিকদের মাথাপিছু বার্ষিক গড় আয় ছিল ১৫২৯৪ ইউয়ান, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৫ শতাংশ বেশি। চীনে বর্তমানে ৪০ কোটি মধ্যবিত্ত আছে, যা ভোগ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। অন্যদিকে, চীনের শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো অব্যাহতভাবে নতুন নতুন পণ্য ও সেবা উদ্ভাবন করছে।

জাতীয় দিবসের ছুটিতে ভোগ্যবাজারের স্থিতিশীল সমৃদ্ধি প্রমাণ করেছে যে, ভোগ চীনের অর্থনীতিতে শক্তি যোগাচ্ছে। আর এই কারণে চীনের অর্থনীতি বাইরের ঝুঁকি প্রতিরোধ করতেও সক্ষম হবে।

২. চলতি বছরের প্রথম আট মাসে চীনের উন্নয়ন ব্যাংক (সিডিবি) দারিদ্র্যবিমোচন খাতে ১৪,২৯০ কোটি ইউয়ান ঋণ দিয়েছে। বিগত অগাস্ট পর্যন্ত দারিদ্র্যবিমোচন খাতে এই ব্যাংকের বকেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১.১৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান। চলতি বছর দারিদ্র্যবিমোন খাতে মোট ৩০,০০০ কোটি ইউয়ান ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ব্যাংকটি।

৩. হংকং কৃত্রিমভাবে বৈদেশিক মুদ্রার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করবে না। হংকং ডলার বিদেশি মুদ্রার সঙ্গে স্বাধীনভাবে বিনিময় করা যায় এবং মৌলিক আইনে হংকংয়ে পুঁজির স্বাধীন চলাচলের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি হংকং প্রশাসনিক অঞ্চলের সরকারের অর্থ বিভাগের প্রধান পল চান সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে এ কথা পুনরায় জোর দিয়ে বলেন।

তিনি বলেন, হংকংয়ের বিদেশি মুদ্রার মজুত পর্যাপ্ত। বর্তমানে হংকংয়ের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত আছে ৪৩,০০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি।

পল চান আরও বলেন, বিগত কয়েক মাসে হংকংয়ে, দাঙ্গাহাঙ্গামা সত্ত্বেও, ব্যাংকিং ব্যবস্থা স্থিতিশীল ও শক্তিশালী ছিল। আর্থিক বাজারও সুষ্ঠুভাবে চলছে। হংকংয়ের মুদ্রা ও আর্থিক স্থিতিশীলতা সুরক্ষায় বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের সরকার সক্ষম।

৪. ১৯৮০ সালে চীন আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থায় যোগ দেয়। ২০১৮ সালে চীনে দেশি-বিদেশি পেটেন্ট আবেদনের সংখ্যা ছিল ৪২ লাখেরও বেশি। পেটেন্ট আবেদনের সংখ্যার দিক দিয়ে চীন টানা ৮ বছর ধরে বিশ্বের প্রথম স্থানে রয়েছে। বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থার মহাপরিচালক ফ্রান্সিস গুরি একবার বলেছিলেন, চীন ১৯৮৪ সালে প্রথম পেটেন্ট আইন জারি করে। অথচ মাত্র ৩০-৪০ বছরের মধ্যে চীন বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর মেধাস্বত্বব্যবস্থা স্থাপন করেছে। চীন এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।

বস্তুত, চীন টেকসই মেধাস্বত্ব-ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে এবং মেধাস্বত্ব রক্ষার কাজ জোরদার করে চলেছে। এ কাজ শুধু দেশীয় উদ্ভাবন ও বৈজ্ঞানিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে, তা নয়; তা কার্যকরভাবে বৈদেশিক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈধ মেধাস্বত্বকেও রক্ষা করেছে।

আগে চীন ছিল মেধাস্বত্বসংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক নিয়মের অনুসরণকারী। আর এখন চীন এ ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে। চীনের উচ্চ মানের উন্নয়ন-প্রক্রিয়ায় মেধাস্বত্ব আরও বড় ভূমিকা পালন করছে ও করবে।

৫. সম্প্রতি জাম্বিয়ার রাজধানী লুসাকায় দ্বিতীয় তথ্য-যোগাযোগ ও প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিযোগিতার আয়োজন করে চীনের একটি টেক জায়ান্ট। প্রতিযোগিতায় জাম্বিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সহস্রাধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা পরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় জাম্বিয়াকে প্রতিনিধিত্ব করবে।

গত বছর আয়োজিত প্রথম প্রতিযোগিতায় ৭০০ জাম্বিয়ান শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ১১ জনকে বাছাই করা হয়। এই ১১ জনের মধ্যে প্রথম ৩ জন পরে দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজিত আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তৃতীয় স্থান দখল করে।

৬. ব্রিটেনের এশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আন্তঃরাজনৈতিক পার্টির 'এক অঞ্চল, এক পথ' ও 'চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর' কর্মগ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা আফতাব সিদ্দিকি সম্প্রতি সিআরআই-কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাত্কারে বলেন, দারিদ্র্যবিমোচন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় চীনের ভূমিকা দৃষ্টান্তমূলক।

সিদ্দিকি বলেন, বিগত ৭০ বছরে চীন উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বিশেষ করে দারিদ্র্যবিমোচন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা অন্যান্য দেশের জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ। যেসব দেশ দারিদ্র্যমুক্ত ও শক্তিশালী হতে চায়, চীন সেসব দেশের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। চীন বহু বছর ধরে দ্রুত ও স্থিতিশীল উন্নয়নের ধারা বজায় রেখেছে। চীন বৈশ্বিক অর্থনীতির উন্নয়নে নিজের অবদান রাখছে।

তিনি আরও বলেন, মানবজাতির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলা করা। এ ক্ষেত্রে চীন বিরাট অবদান রেখে চলেছে। বিশেষ করে, কার্বন নির্গমন কমানোর ক্ষেত্রে চীন বিশ্বে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে। চীন নবায়নযোগ্য জ্বালানির দামকে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রে চীন সক্রিয় ব্যবস্থা নিয়েছে; 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগের আওতায় 'সবুজ প্রবৃদ্ধি' ত্বরান্বিত করেছে, এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি উন্নয়নের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

৭. প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৭০ বছরে অর্থনীতির উন্নয়ন, জীবিকার মান বৃদ্ধি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন, ও শিক্ষার বিস্তারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশাল সাফল্য অর্জন করে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন। চীনের উন্নয়ন কোটি কোটি মানুষের জন্য সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি সিনহুয়া বার্তা সংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে চীনে সিরিয়ার সাবেক রাষ্ট্রদূত হালেফ জিহাদ এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে আগ্রহী উন্নয়নশীল দেশগুলো। আগে দরিদ্র ও পশ্চাত্পদ ছিল চীন। কিন্তু বিগত কয়েক দশকের দ্রুত উন্নয়নের ফলে চীন এখন উন্নত ও ধনী হতে চলেছে। চীনের উন্নয়নে উপকৃত হচ্ছে এর জনগণ। চীন উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য একটি সত্যিকারের দৃষ্টান্ত। চীন আরও সামনে এগিয়ে যাবে।

'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই উদ্যোগের গভীর সাংস্কৃতিক অর্থ আছে। এ উদ্যোগ বিশ্বের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।

৮. সম্প্রতি চীনের শাংহাইয়ে শেষ হয় পর্যটন উত্সব। এতে দেশি-বিদেশি ২৫.৭ মিলিয়ন পর্যটক অংশগ্রহণ করে, যা গত বছরের চেয়ে ৪৮ শতাংশ বেশি।

১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত উত্সবের কুচকাওয়াজে ১৯টি দেশ ও অঞ্চলের দেড় সহস্রাধিক পারফর্মার অংশগ্রহণ করেন। উত্সব চলাকালে শতাধিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় এবং ৭৯টি পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকরা অর্ধেক মূল্যে প্রবেশের সুযোগ পান।

১৯৯০ সাল থেকে প্রতিবছর শাংহাই পর্যটন মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

৯. চলতি বছর জাতীয় দিবসের ছুটি চলাকালে দেশের বাইরে ভ্রমণকারী চীনা পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৭০ লক্ষাধিক।

চীনা পর্যটকরা মূলত জাপান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ইতালি ও রাশিয়া ভ্রমণ করেন। তবে পাশাপাশি এবার চেক প্রজাতন্ত্র, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, শ্লোভাকিয়া, পোল্যাণ্ড, ক্রোয়েশিয়া, মালটার মতো দেশগুলোতেও চীনা পর্যটকরা আগের বছরের চেয়ে বেশি সংখ্যায় ভ্রমণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ।

১০. গত বুধবার (৯ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় 'বেইজিং বিশ্ব উদ্যান মেলা, ২০১৯'-এর সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এবারের মেলা পরিদর্শন করেছেন ৯৩ লক্ষাধিক লোক। মেলা চলাকালে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের ৩২৮৪টি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, যা ৩১ লক্ষাধিক দর্শক উপভোগ করেন।

১১. ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, তাঁর দেশ ইসরাইলের কাছে প্রায় ৪৩ কোটি মার্কিন ডলার পায়। এই অর্থ ইসরাইল ফিলিস্তিনি সরকারের পক্ষে সংশ্লিষ্ট ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে কর হিসেবে আদায় করেছে।

আব্বাস বলেন, দু'পক্ষের অমীমাংসিত আর্থিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে ফিলিস্তিনের সঙ্গে যৌথ কমিটি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে একমত হয়েছে ইসরাইল সরকার।

তিনি আরও বলেন, একদিকে ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে আদায় করা করের অর্থ দিতে অস্বীকার করছে ইসরাইল এবং অন্যদিকে, ট্রাম্প সরকার ফিলিস্তিনে কয়েক কোটি মার্কিন ডলারের সাহায্য হ্রাস করেছে। তাই বিগত কয়েক মাস ধরে ফিলিস্তিন সরকার আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে ১৯৯৪ সালে স্বাক্ষরিত 'প্যারিস অর্থনৈতিক প্রোটোকল' অনুযায়ী ফিলিস্তিনে পাঠানো পণ্যের ওপর কর আদায় করে ইসরাইল। তা ছাড়া, ইসরাইলে কর্মরত ফিলিস্তিনিদের ব্যক্তিগত আয়করও আদায় করে ইসরাইল এবং নিয়মিতভাবে তা ফিলিস্তিন সরকারের কাছে হস্তান্তর করে। এই করের বার্ষিক পরিমাণ প্রায় ২৩০ কোটি মার্কিন ডলার, যা ফিলিস্তিন সরকারের বাজেটের দুই-তৃতীয়াংশ।

১২. ইরান দেশটির চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৭.৮৬ মিলিয়ন টন লৌহ আকরিক বিদেশে রফতানি করেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি। ফাইনানশিয়াল ট্রিবিউন পত্রিকা সম্প্রতি এ তথ্য জানায়। ২১শে মার্চ থেকে ২২ অগাস্ট পর্যন্ত ইরানি অর্থবছর গণনা করা হয়।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040