'২০২০ সালেই চীন সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত হবে' (অর্থ-কড়ি; ১৯ অক্টোবর ২০১৯)
  2019-10-19 14:13:30  cri

১. বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা সম্প্রতি জেনিভায় 'বিশ্ব বাণিজ্য রিপোর্ট, ২০১৯' প্রকাশ করে। রিপোর্টে বলা হয়, সেবাবাণিজ্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সবচেয়ে অগ্রসর অংশে পরিণত হয়েছে।

বস্তুত, সেবাবাণিজ্যের উন্নয়ন বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পদ্ধতির রূপান্তর, শিল্পের কাঠামোর সুসংহতকরণ, এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সহায়ক।

বিশ্বে সেবাবাণিজ্যসম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করতে সেবাবাণিজ্যের সামনের বাধা দূর করতে হবে। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন মঞ্চ সম্প্রসারণ করতে হবে। যেমন, চীন সক্রিয়ভাবে 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট সেবাবাণিজ্য সহযোগিতা জোরদার করছে। ২০১৮ সালে চীন এবং 'এক অঞ্চল, এক পথ' উদ্যোগসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে সেবাবাণিজ্যের মোট আর্থিক মূল্য ছিল ১২,১১০ কোটি মার্কিন ডলার।

২. সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী লি খ্য ছিয়াং চীনের শ্যানসি প্রদেশের সি'আন শহরে একাধিক প্রদেশের প্রধান সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সভায় মিলিত হন। সভায় দেশের সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সভায় প্রধানমন্ত্রী লি বলেন, চলতি বছর থেকে আন্তর্জাতিক পরিবেশ জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে; বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ধীর গতিতে। চীনের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিও বহু চ্যালেঞ্জ ও জটিলতার সম্মুখীন। এ অবস্থায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন বিভাগ, প্রেসিডেন্ট সি'কে কেন্দ্র করে সিপিসি'র কেন্দ্রীয় কমিটির দৃঢ় নেতৃত্বে, সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে অর্থনীতি সমষ্টিগতভাবে স্থিতিশীল আছে, অর্থনীতির কাঠামো বিন্যাসের কাজ স্থিতিশীলভাবে সামনে এগুচ্ছে, এবং জনগণের জীবিকার মানও উন্নত হচ্ছে। তবে, এটাও খেয়াল রাখার বিষয় যে, বর্তমানে অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে; অর্থনীতির সামনের প্রতিবন্ধকতাগুলোও স্পষ্ট।

প্রধানমন্ত্রী লি আরও বলেন, পণ্য ও সেবার অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমছে এবং সররবাহ ও চাহিদার সম্পর্কের কারণে কোনো কোনো খাদ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায়, প্রেসিডেন্ট সি'র প্রস্তাবিত 'নতুন যুগের চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতান্ত্রিক চেতনা'র ভিত্তিতে, উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে এবং সংস্কারের মাধ্যমে উন্নয়নের চালিকাশক্তি খুঁজে বের করতে হবে।

৩. চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্যকার্যালয় সম্প্রতি 'চীনের খাদ্যশস্য নিরাপত্তা' শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। ১৯৯৬ সালের পর, খাদ্যশস্যের নিরাপত্তাসংক্রান্ত চীন সরকারের দ্বিতীয় শ্বেতপত্র এটি।

শ্বেতপত্রে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৭০ বছরে চীনে খাদ্যশস্যের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়। চীনের খাদ্যশস্যের বাজার অনেক উন্মুক্ত হয়েছে। বিশ্বের খাদ্যশস্যের বাণিজ্যিক উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, খাদ্যশস্য ও কৃষির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গভীরতর করা এবং বৈশ্বিক খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা সুরক্ষা করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে চীন।

শ্বেতপত্র প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে জাতীয় খাদ্যশস্য ও পণ্য মজুত প্রশাসনের মহাপরিচালক চাং উ ফোং বলেন, নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর চীন জনগণের খাদ্যসমস্যার সমাধানকে প্রধান কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-র নেতৃত্বে নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে চীন, দুর্বল কৃষি-ব্যবস্থা ও অতি দারিদ্র্যের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে, প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের খাদ্যসমস্যার সমাধান করেছে এবং নাগরিকদের জীবনমান ও পুষ্টির মানও উন্নত করেছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বের ৯ শতাংশ আবাদি জমি ও ৬ শতাংশ টাটকা জলসম্পদ দিয়ে বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষের খাদ্যসমস্যার সমাধান করেছে চীন। এখন চীন সার্বিকভাবে সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এটা একটা বিশাল অর্জন।

.

৪. ২০১৮ সালেও চীনের ক্যুরিয়ার ডেলিভারি ব্যবসার পরিমাণ ছিল বিশ্বের শীর্ষে। এ নিয়ে টানা ৫ বছর এই খাতে চীন শীর্ষ স্থান অধিকার করল।

সম্প্রতি প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, গত বছর চীনে ক্যুরিয়ার ডেলিভারি ব্যবসার আওতায় অনলাইনে খুচরা বিক্রয় হয়েছে প্রায় ৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান মূল্যের পণ্য এবং দুই লক্ষাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

৫. চীন জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে সংশ্লিষ্ট সদস্য-চাদা পরিশোধ করে সংস্থার আর্থিক সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছে। সম্প্রতি বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কেং শুয়াং এক নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ আহ্বান জানান।

কেং শুয়াং বলেন, পর্যাপ্ত অর্থ জাতিসংঘের স্বাভাবিক পরিচালনার ভিত্তি। সময়মতো ও শর্তহীনভাবে জাতিসংঘের সদস্য-চাদা পরিশোধ করা প্রতিটি সদস্যরাষ্ট্রের কর্তব্য। অথচ যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘসময় ধরে সদস্য-চাদা দেওয়া থেকে বিরত আছে। সদস্য-চাদা বাবদ জাতিসংঘ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মোট ১০৫.৫ কোটি মার্কিন ডলার পায়। এই অংক জাতিসংঘের মোট বকেয়া সদস্য-চাদার ৭৬ শতাংশ।

কেং শুয়াং আরও বলেন, চীন দৃঢ়ভাবে বহুপক্ষবাদ সমর্থন করে এবং বাস্তব কাজের মাধ্যমে জাতিসংঘকে সমর্থন করে। জাতিসংঘের দ্বিতীয় বৃহত্তম সদস্য-চাদা পরিশোধ করে চীন। চীন বরাবরই জাতিসংঘে নিজের আর্থিক দায়িত্ব পালন করে আসছে এবং চলতি বছরের সদস্য-চাদাও সময়মতো পরিশোধ করেছে। মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরহিস এর জন্য চীনের ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেহিস বলেন, জাতিসংঘ বিগত দশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। সদস্য-দেশগুলো ২০১৯ সালের বাজেটের মাত্র ৭০ শতাংশ চাদা হিসেবে পরিশোধ করায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

৬. বিমান নির্মাতা কোম্পানি এয়ারবাস ইস্যুতে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-র ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের রফতানিপণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের অধিকার পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি জেনিভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার 'বিতর্ক সমাধান বিভাগ' আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে অনুমোদন দেয়। নির্মাতাদেশ ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ও স্পেন এয়ারবাস কোম্পানিকে অবৈধভাবে ভর্তুকি দিয়ে আসছে বলে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ দায়ের করার পর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এই রায় দিল।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিতর্ক সমাধান বিভাগের সভায় ইইউ'র প্রতিনিধি এ সিদ্ধান্তকে 'অদূরদর্শী' বলে আখ্যায়িত করে বলেন, এর ফলে বিশ্বের বিমান খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এদিকে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অনুমোদন পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ইইউ'র বিভিন্ন রফতানিপণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র এয়ারবাসের বিমানের ওপর ১০ শতাংশ এবং ইইউ'র বিভিন্ন রফতানিপণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করবে।

৭. চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অগাস্ট পর্যন্ত মোট ১,২০৯,৩১২ জন চীনা পর্যটক ফিলিপিন্স ভ্রমণ করেছেন। গত বছর দেশটিতে মোট চীনা পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১,২৫৫,২৫৮ জন। ফিলিপিন্সের পর্যটন বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে।

পর্যটন বিভাগ জানায়, জানুয়ারি থেকে অগাস্ট পর্যন্ত দেশটিতে মোট বিদেশি পর্যটক আসে ৫,৫৫৪,৯৫০ জন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪.০৮ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের শুধু অগাস্টে বিদেশি পর্যটক আসে ৭০২,৮৪৩ জন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭.৫৪ শতাংশ বেশি। অগাস্টে সবচেয়ে বেশি পর্যটক এসেছে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে আছে চীন।

চলতি বছর ফিলিপিন্স ৮২ লাখ বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১০ লাখ বেশি। ২০১৮ সালে ফিলিপিন্স ভ্রমণ করেন ৭,১২৭,১৬৮ জন বিদেশি পর্যটক। গত বছর ফিলিপিন্সের অর্থনীতিতে পর্যটন খাতের হিস্যা ছিল ১২.৭ শতাংশ।

৮. ২০১৯ সালে ভিয়েতনামের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৬ শতাংশ। বিশ্ব ব্যাংক সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দিয়েছে। ২০১৮ সালে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭.১ শতাংশ। রফতানি হ্রাস পাওয়ায় এবং কৃষি-উত্পাদন কমে যাওয়ায় প্রবৃদ্ধি কমবে বলে জানিয়েছে ব্যাংক।

৯. চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭.২ শতাংশ হবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে 'বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট রিপোর্টে' এ তথ্য জানানো হয়। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়ং টিমবন বলেন, উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করতে হলে মানসম্পন্ন চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট রিপোর্টে বলা হয়, মোট জিডিপি প্রবৃদ্ধির মধ্যে কৃষিখাতে প্রবৃদ্ধি হবে ৩ শতাংশ, যা গত অর্থবছর সরকারি হিসেবে হয়েছিল ৩.৫ শতাংশ। এ ছাড়া শিল্পখাতেও প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ৯ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ১৩ শতাংশ। সেবাখাতে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়াবে ৭ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে ছিল ৬.৫ পাঁচ শতাংশ।

১০. সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে সরকারের দেওয়া কিছু বিধিনিষেধের কারণে বাংলাদেশে এ খাতে বিনিয়োগ কমছে। আগের মতো বর্তমানে যে-কেউ চাইলেই ঢালাওভাবে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছেন না। ফলে অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৩ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। আর অগাস্টে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকার। এর আগের মাস জুলাইয়ে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১৬১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। এক মাসের ব্যবধানে বিক্রি কমেছে ৬৬১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040