চীন ও নেপাল যৌথভাবে নেপালের নয়তলা মন্দিরটি মেরামত করছে
  2019-10-22 14:40:02  cri
৪০০ বছরেরও বেশি ইতিহাসসমৃদ্ধ নয়তলা মন্দিরটি নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দুর্বার স্কয়ারে অবস্থিত। রাজধানী কাঠমান্ডু বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০১৫ সালে নেপালে ৮.১ মাত্রার ভূমিকম্পে এটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং আংশিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। ২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে, চীন সরকার নেপালের দুর্বার স্কয়ারে নয়তলা মন্দিরটি মেরামতে সহায়তা করছে। নির্মাণে পাঁচ বছর সময় লাগবে বলে ধারণা করা হয়। চীন ও নেপালের বিশেষজ্ঞ ও কারিগররা কীভাবে এই সুন্দর ভবনটি মেরামত করছেন? বিস্তারিত শুনবেন আজকের অনুষ্ঠানে।

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দুর্বার স্কয়ারটি একটি প্রাচীন স্থান। স্কয়ারের প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে আপনি দেখতে পাবেন নেপালের প্রাচীন প্রাসাদ নয়তলা মন্দির। নয়তলা মন্দিরটি বর্তমানে সবুজ প্রতিরক্ষামূলক জাল দ্বারা ঢাকা রয়েছে। বাইরে প্রচুর পর্যটক রয়েছে। ভিতরে কয়েক ডজন শ্রমিক মেরামতের কাজে ব্যস্ত রয়েছে।

নেপাল জরিপ ও ম্যাপিং ইঞ্জিনিয়ার উত্তম কুমার চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন যে, নয়তলা মন্দিরটির মেরামত কাজে অংশ নিতে পেরে তিনি গর্বিত। তিনি বলেন,

"এখানে অতীতে রাজবাড়ির আঙ্গিনা ছিল। এর স্থাপত্যশৈলীও রাজপরিবারের মতো। আমি এই প্রকল্পে কাজ করতে আসার আগে কখনও এ জাতীয় সুন্দর কাঠের খোদাই কাজ এবং খোদাই করা জানালা দেখিনি। এ ধরনের নির্মাণকৌশল কেবল দুর্বার স্কয়ারেই দেখা যায়। আমার জন্ম দক্ষিণ-পূর্ব নেপালের একটি ছোট্ট শহরে। এর আগে আমি রাজধানী কাঠমান্ডুতে কখনও আসিনি। আমি আগে কখনও ভাবিনি এমন রাজকীয় মন্দির এবং বিল্ডিংগুলিতে প্রবেশ করতে পারব। এখানে কাজ করতে পেরে আমি খুব আনন্দিত।"

নয়তলা মন্দিরটি নেপালের প্রাচীনতম রাজবাড়ি। এটির ৪০০ বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাস রয়েছে। ২০১৫ সালে নেপালে ৮.১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। তখন নয়তলা মন্দিরের সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ৮০ শতাংশ দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের বিকৃতি ও ভাঙন ধরে। ২০১৭ সালের অগাস্ট মাসে, চীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নেপালের দুর্বার স্কয়ারের নয়তলা মন্দির মেরামত প্রকল্প চালু করে। চাইনিজ কালচারাল হেরিটেজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রকল্পদল কাঠমান্ডুতে গিয়ে কাজ শুরু করেন এবং এই প্রাচীন ভবনটি মেরামত করতে নেপালের অভিজ্ঞ কাঠের কারিগরদের সঙ্গে কাজ করেন।

চীনা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি সংরক্ষণ প্রকৌশলী কুও ছিয়েন রু বলেন,

"নয়তলা মন্দিরটি মেরামতের মূল নীতিটি হলো 'নূন্যতম হস্তক্ষেপ নীতি'; যা নয়তলা মন্দিরের মূল কাঠামো রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা। সুতরাং, মেরামত প্রক্রিয়ায় আমরা স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করেছি, স্থানীয় কারিগরদের ভাড়া করেছি এবং নয়তলা মন্দিরটি সবচেয়ে অভিজ্ঞ কারিগর দিয়ে মেরামত করেছি।"

৯ই অক্টোবর, নেপালি মানুষ তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশাই উত্সব উদযাপন করছিলেন। ২৯ বছর বয়সী ভগবান টিন থারু কাজে ফিরে এসেছেন। নয়তলা মন্দিরের প্ল্যাটফর্মে সহকর্মীদের সঙ্গে ইস্পাতের পাইপগুলো পরিমাপ ও পরিচালনা করছেন। তিনি বলছিলেন যে, তিনি এখানে প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন এবং নয়তলা মন্দিরটি খানিকটা মেরামত হয়েছে দেখে তিনি খুব আনন্দিত।

তিনি বলেন,

"দুর্বার স্কয়ার একটি বৈশ্বিক ঐতিহ্য। প্রতিদিন এখানে পর্যটকের স্রোত দেখা যায়। মন্দিরটি মেরামত করার ক্ষেত্রে আমার কাজের জন্য আমি খুব গর্বিত। আমি জানতাম যে, নেপাল সরকারের পক্ষে নয়তলা মন্দিরটির মেরামত করা কিছুটা কঠিন হবে। তবে এ প্রকল্পে কাজ হচ্ছে দেখে আমি খুব আনন্দিত।"

এই প্রকল্পের আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো, চীন ও নেপাল উভয়ই আইন অনুযায়ী সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি মেরামত করছে। ভূমিকম্পের পর, নেপালে সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি পুনরুদ্ধার সম্পর্কে দু'টি আইন ও বিধিমালা জারি হয়। চীন সম্পূর্ণভাবে নিয়ম মেনেছে। মান নিশ্চিত হওয়ার পর দুই দলের মধ্যে সহযোগিতা আরও সুন্দর হয়েছে। চীনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি সংরক্ষণ প্রকৌশলী কুও ছিয়েন রু বলেন,

"নেপাল ভূমিকম্পের পরে দুটি বিশেষ আইন ও বিধি প্রবর্তন করেছে, একটি হলো " মেরামত মানদণ্ড" এবং অন্যটি "মেরামত গাইড"। "মেরামত গাইড" নীতিগুলোর সঙ্গে সুনির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি পুনরুদ্ধার অনুসরণ করা প্রয়োজন। "মেরামত মানদণ্ডে" নির্দিষ্ট কার্যক্রম উল্লেখ করা হয়েছে।"

প্রকৃতপক্ষে, চীন ও নেপালের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার জন্য, চীন সরকারের সহায়তায় নেপালের দুর্বার চত্বরে নয়তলা মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। চীন ও নেপালের সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ মেরামত কর্মীরা একসঙ্গে কাজ করে এই প্রাচীন ভবনটিকে ধীরে ধীরে মেরামত করতে চায়। চীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাংস্কৃতিক পুরাকীর্তি সংরক্ষণ প্রকৌশলী কুও ছিয়েন রু বলেন,

"আমি নেপালের নয়তলা মন্দিরটি পুনর্নির্মাণের জন্য দু'বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছি। আমার সবচেয়ে বড় ইচ্ছা ভূমিকম্পের পর নয়তলা মন্দিরটি পুনরুদ্ধার করা। বহু বছর পর, যদি আমি আবার কাঠমান্ডুর দুর্বার স্কয়ারে আসি, আমি আমার আশেপাশের পর্যটকদের বলবো যে, এই মন্দিরটি চীন ও নেপাল সুষ্ঠুভাবে মেরামত করেছে। আমাদের নয়তলা মন্দিরের বন্ধুত্বের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।"

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040