চীনে ব্যবসা করা এখন আগের চেয়ে অনেক সহজ: বিশ্বব্যাংক রিপোর্ট
  2019-11-02 18:23:34  cri

১. চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, বর্তমানে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ফলে কিছু জটিল সমস্যা দেখা দিলেও, অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের প্রবণতা অপরিবর্তনীয়। বিভিন্ন দেশের স্বার্থের ক্রমবর্ধমান সংমিশ্রণ হলো সাধারণ প্রবণতা এবং উন্নত জীবনের আকাঙ্ক্ষা সকল দেশের মানুষের সাধারণ আকাঙ্ক্ষা। চীন অর্থনৈতিক বিশ্বায়নে অবদান রাখছে এবং এর সুবিধাও ভোগ করছে। তিনি সম্প্রতি কুয়াংচৌ-এ 'চীনকে জানুন' শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে পাঠানো এক শুভেচ্ছাবার্তায় এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, চীন দৃঢ়ভাবে শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথ অনুসরণ করবে, পারস্পরিক কল্যাণকর ও জয়-জয় কৌশল অনুসরণ করবে, এবং উন্মুক্ত বৈশ্বিক অর্থনীতির বিকাশে অবদান রেখে যাবে।

প্রেসিডেন্ট সি আরও বলেন, বিশ্বের সকল দেশের জনগণের সঙ্গে চীন আরও বেশি উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, ও ভারসাম্যপূর্ণ বৈশ্বিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে যৌথভাবে কাজ করে যাবে।

২. চীনে ব্যবসা করা এখন আগের চেয়ে সহজ। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বিশ্বের শতাধিক দেশের তালিকা করা হয়। এই তালিকায় উপরের দিকে আছে সেসব দেশ, যেসব দেশে ব্যবসা করা সবচেয়ে সহজ। চীন আছে তালিকার ৩১ নম্বর স্থানে। আগের বছরের তালিকায় চীনের অবস্থান ছিল ৪৬।

৩. দ্বিতীয় চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা আগামী ৫ থেকে ১০ নভেম্বর শাংহাই শহরে অনুষ্ঠিত হবে। এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী শিল্প-প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আগেরবারের তুলনায় অনেক বেশি হবে। মেলায় অনেক নতুন পণ্য ও প্রযুক্তিও প্রদর্শিত হবে।

দ্বিতীয় আমদানি মেলায় সেবা-বাণিজ্য, গাড়ি, সাজ-সরঞ্জাম, চিকিত্সা-সরঞ্জাম ও ওষুধ, খাদ্য ও কৃষিজাত পণ্য ইত্যাদির জন্য আলাদা প্রদর্শনী এলাকা থাকবে। মেলায় চালকবিহীন গাড়ি চালানোর এলাকাও থাকছে।

জানা গেছে, বিশ্বের বৃহত্তম প্রসাধন-সামগ্রী প্রস্তুতকারক গ্রুপ ফ্রান্সের ল'রিয়াল দ্বিতীয় বারের মতো আমদানি মেলায় অংশ নিচ্ছে। বর্তমানে চীন বিশ্বে ল'রিয়াল গ্রুপের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজারে পরিণত হয়েছে। ২০‌১৮ সালে চীনে ল'রিয়াল গ্রুপের মুনাফা ৩৩ শতাংশ বাড়ে। এবারের মেলার জন্য গ্রুপটি প্রায় ৬ মাস ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এর আগে জানিয়েছিল যে, দ্বিতীয় চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলায় ১৫০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ৩ সহস্রাধিক শিল্প-প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে।

উল্লেখ্য, প্রথম চীন আন্তর্জাতিক আমদানি মেলা গত বছর শাংহাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৫ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। সেটি ছিল বিশ্বে এ ধরনের প্রথম মেলা।

৪. চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে, চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের রাজধানী কুয়াংচৌয়ের জিডিপি ৬.৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৭৮ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে। কুয়াংচৌয়ের স্থানীয় সরকার এ তথ্য জানিয়েছে।

স্থানীয় সরকারের হিসেব অনুসারে, উক্ত তিন প্রান্তিকে শহরটিতে বিনিয়োগ বেড়েছে, ভোক্তা-বাজার স্থিতিশীল ছিল, এবং আমদানি-রফতানিও খানিকটা বেড়েছে।

সরকারি তথ্যানুসারে, বছরের প্রথম নয় মাসে ফিক্সড-অ্যাসেট ইনভেস্টমেন্ট বেড়েছে ২১.১ শতাংশ। এর মধ্যে অবকাঠামো, শিল্প ও রিয়েল এস্টেস খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে যথাক্রমে ২৭.৬, ২৫.৯, ও ১৮.৯ শতাংশ।

এ ছাড়া, বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে শহরে খুচরা পণ্যের বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭৩৪.৬৯ বিলিয়ন ইউয়ানের, যা আগের বছরের একই সময়কালের তুলনায় ৮.২ শতাংশ বেশি।

আগের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে কুয়াংতুং প্রদেশের জিডিপি, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৭.৭২ ট্রিলিয়ন ইউয়ানে।

৫. দুটি দারিদ্র্যবিমোচন তহবিলের মাধ্যমে, চীনের দরিদ্র অঞ্চলগুলোতে ২০০০ কোটি ইউয়ানের বেশি বিনিয়োগ করেছে রাষ্ট্রায়াত্ত স্টেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশান (এসডিআসি)।

উক্ত দুটি দারিদ্র্যবিমোচন তহবিল পরিচালিত হয় এসডিআইসি ছুয়াংই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফান্ড ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির দ্বারা। এই কোম্পানি এখন পর্যন্ত ১১৯টি প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। ২৭টি প্রাদেশিক অঞ্চলে এই প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করা হয়েছে ২০১৫ কোটি ইউয়ান। এসব প্রকল্পে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রায় ৪ লাখ ৮০ হাজার কর্মংস্থান সৃষ্টি হবে বলে জানা গেছে।

.

৬. গত ৩০ বছরে প্রায় ৩৭ লাখ দরিদ্র মেয়েকে সাহায্য করেছে দি স্প্রিং বাড প্রজেক্ট। ১৯৮৯ সালে প্রকল্পটি চালু করে 'চায়না চিল্ড্রেন অ্যান্ড টিনএজারস ফান্ড' (সিসিটিএফ)। প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল দরিদ্র মেয়েদের স্কুলশিক্ষা শেষ করতে সাহায্য করা।

গত ৩০ বছরে এই প্রকল্প অর্থ সংগ্রহ করে ২১২ কোটি ইউয়ান এবং ১৮১১টি 'স্প্রিং বাড' স্কুল গড়ে উঠতে সাহায্য করে। সম্প্রতি অল চায়না উইমেনস্‌ ফেডারেশান (এসিডব্লিউএফ) এবং সিসিএফটি গত ৩০ বছরে প্রকল্পের অর্জিত সাফল্য তুলে ধরে এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে।

৭. প্রতিবছর বাড়ছে বাংলাদেশ চিনি শিল্প করপোরেশনের লোকসানের পরিমাণ। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে করপোরেশনের ১০০১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা লোকসান হয়। তার আগের অর্থবছরে লোকসান হয় ৮৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। করপোরেশনের হিসাব শাখার নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে দৈনিক ইত্তেফাক।

পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, চলতি ২০১৯-২০ মাড়াই মৌসুমে করপোরেশনের ১৫টি চিনিকলে ১ লাখ ২৫ হাজার টন চিনি উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। আখ মাড়াই করা হবে ১৫ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। চিনি রিকভারি হার ধার্য করা হয়েছে ৮ শতাংশ। গত মাড়াই মৌসুমে ১১ লাখ ৮২ হাজার টন আখ মাড়াই করে ৬৯ হাজার মেট্রিক টন চিনি উত্পাদিত হয়েছিল। চিনি রিকভারির হার ছিল ৫.৮৩ শতাংশ। চিনিকলগুলো হচ্ছে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, সেতাবগঞ্জ, শ্যামপুর, রংপুর, জয়পুরহাট, নর্থ বেঙ্গল, নাটোর, রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, দর্শনা (কেরু), মোবারকগঞ্জ, ফরিদপুর ও জিলবাংলা। দেশে কৃষিভিত্তিক বৃহত্তম শিল্প হচ্ছে চিনি শিল্প। অনেক দিন ধরে এ শিল্প সংকটের মধ্য দিয়ে চলেছে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিয়মিত বেতন পান না। দুই মাসের বেতন বাকি পড়েছে। এদিকে, মিলগুলোর গুদামে ১৮ কোটি ৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্যের ৩২ হাজার ৮৪৬ মেট্রিক টন চিনি মজুত রয়েছে। করপোরেশনের প্রতি কেজি চিনির দাম ৫৫ টাকা তথা প্রতিটনের দাম ৫৫ হাজার টাকা। বাজারে বেসরকারি মিলগুলোর চিনির দাম কম। তাছাড়াও দেশে উত্পাদিত চিনির ক্রেতা কম। ফলে চিনির মজুত রয়ে গেছে।

এরই মধ্যে চলতি মৌসুমে মিলগুলোতে উত্পাদন শুরু হতে যাচ্ছে। চিনি কলগুলোর প্রধান কাঁচামাল আখ। আখ এক বছরের ফসল। চাষিরা জানায়, এখন আর আখ চাষ করে লাভ হয় না। চাষিরা অন্য ফসল চাষে ঝুঁকছে। মিলগুলো চাহিদামতো আখ পায় না। এ ছাড়াও মিলগুলোতে আখ বিক্রি করে টাকার জন্য দিনের পর দিন ঘুরতে হয় চাষিদের। এ কারণেও চাষিরা আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বছরে মাত্র ৩ মাস মিলগুলো চালু থাকে। বাকি ৯ মাস বন্ধ থাকে। চিনির পাশাপাশি অন্য পণ্য উত্পাদন করা গেলে লোকসান কমিয়ে আনা যাবে বলে করপোরেশনের কর্মকর্তারা মনে করেন।

৮. বাংলাদেশে কর্মে নিয়োজিতদের বড়ো অংশ যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাচ্ছেন না। তাদের বেশিরভাগ খণ্ডকালীন কাজে এবং কম বেতনে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশে আন্ডারএমপ্লয়মেন্ট বা অর্ধবেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩৯ লাখ ২১ হাজারে। তাদের মধ্যে ১ কোটি ১৫ লাখ ৬৯ হাজার পুরুষ এবং সাড়ে ২৩ লাখ নারী। দেশে অর্ধবেকারদের ৭০ ভাগেরই বয়স ৩০ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে। 'স্টাডি অন এমপ্লয়মেন্ট প্রডাক্টিভিটি অ্যান্ড সেক্টরাল ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এই প্রতিবেদনটি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে জিইডি সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, এটি একটি গবেষণামূলক প্রতিবেদন। নমুনা জরিপের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে। দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান নিয়ে জাতীয় পরিকল্পনা তৈরিতে এ তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে আগামী ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এর প্রতিফলন থাকবে। এতে দেশের অর্ধবেকারদের তিনভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে: যারা কর্মসংস্থানে থাকার পরেও বাড়তি আয়ের চেষ্টা করছেন, যারা নতুন কাজ খুঁজছেন অথবা আয় বাড়াতে বাড়তি শ্রম দিতে চেয়েও পারছেন না। এ ধরনের শ্রমশক্তিকে আন্ডারএমপ্লয়মেন্ট বা অর্ধবেকার বলা হচ্ছে। তাদের সংখ্যা গ্রামের তুলনায় শহরে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

বাংলাদেশে মোট ১৬ কোটি ৬৩ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ১১ কোটি ১৫ লাখ মানুষ কর্মক্ষম, যাদের বয়স ১৫ বছরের ওপরে। এদের মধ্যে শ্রমবাজারে রয়েছে ৬ কোটি ৩৯ লাখ মানুষ। আর কর্মে নিয়োজিত রয়েছে ৬ কোটি ১৯ লাখ। মানে বেকার রয়েছেন ৩.১ শতাংশ বা ২০ লাখ শ্রমশক্তি। ২০১৭ সালের তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশিত শ্রমশক্তি জরিপে বলা হয়েছে, দেশে বেকার রয়েছে ৪.২ শতাংশ বা ২৬ লাখ ৮০ হাজার। অন্যদিকে ২০১৮ সালের তথ্যের ভিত্তিতে জিইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বেকারের সংখ্যা ২০ লাখ। দৃশ্যত বেকারত্বের হার কমে এসেছে। কিন্তু বড়ো অংশ তাদের কর্মসংস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। আন্ডারএমপ্লয়মেন্ট বা অর্ধবেকার সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা গেছে সেবা খাতে ৪৫.৩ শতাংশ।

সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত বাংলাদেশের উন্নয়ন হালনাগাদ প্রতিবেদনেও মানসম্পন্ন শিক্ষা ও শোভন কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, শিক্ষার সঙ্গে কর্মসংস্থানের অনেক ফারাক রয়েছে। দেশে একদিকে যেমন যোগ্যরা চাকরি পাচ্ছে না, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানগুলো যোগ্য লোক খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থা কাটাতে হলে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের পাশাপাশি কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষাব্যবস্থা সাজাতে হবে।

(আলিমুল হক)

© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040